ডলার সংকট প্রকট
ভাই
আমাকে বাঁচান। আমাকে নিয়ে যান। না হলে আমি মরে যাবো। একরাতে ছেলে আসে, আর
এক রাতে বাপ আসে। আমি আর থাকতে পারছি না। আমার ঠ্যাং বেয়ে রক্ত পড়ছে। আমাকে
বাঁচান ভাই, আমাকে বাঁচান। সৌদি আরবে গৃহকর্মে যাওয়া এক নারী গতকাল মোবাইল
ফোনে এভাবেই তার দুর্দশার কথা তুলে ধরে দেশে ফেরার আকুতি জানান।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মিডিয়া শাখার এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে তিনি তার এই দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। ওই নারী জানান, তিনি ৪ মাস আগে সেদেশে গেছেন। দেশটির আল বাহার এলাকার একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হয়েছে তাকে। একমাস সেখানে ভালোই ছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই তার ওপর শুরু হয়েছে নির্যাতন।
নির্যাতিত নারীর বাড়ি খুলনা জেলায়। তার ছোট বোন রুমা জানান, ১৫ বছর আগে তার বোনের স্বামী মারা যান। একমাস পর তার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এরপর তিনি রাজমিস্ত্রি জোগালের কাজ নেন। সৌদি যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই কাজেই নিয়োজিত ছিলেন। সেখানে দিনমজুরের কাজ করে যা পেতেন তা দিয়েই দু’জনের পেট চালাতেন। একইসঙ্গে ছেলের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছিলেন।
রুমা জানান, হঠাৎ করেই তার বোন জানান, সৌদি আরব যাবেন। সেখানে গৃহকর্মীর কাজ করবেন। আয়-রোজগার ভালো। এতে তার ছেলেটা ভালোভাবে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। রুবি বলেন, আমরা তাকে বিদেশ যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু কথা শোনেনি। বলেছেন, তার ছেলের ভবিষ্যতের জন্য তাকে যেতে হবে। কে তাকে সৌদি আরব যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জানতে চাইলে নির্যাতিতার বোন জানান, সে যেখানে কাজ করতো সেখানকার একব্যক্তি তাকে পরামর্শ দেয়।
ওই ব্যক্তির স্ত্রীও একই সময় সৌদিতে যান। তিনিও এখন খুব কষ্টে আছেন। তার ওপরও বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে সৌদির গৃহকর্তারা। নির্যাতিতার ছোট বোন বলেন, সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর তার বোন বলেছিলেন তিনি ভালো আছেন। কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি তার কষ্টের কথা জানান। রোজার ঈদের দিন ফোন করে অনেক কান্নাকাটি করেন। বলেন, ওইদিন তিনি শুধু পানি খেয়ে ছিলেন। তাকে কোন খাবার দেয়নি। গৃহকর্তারা খাবার পরও তাকে থালা-বাসন ধুতে দিয়েছে। মাঝে মাঝে তাকে কোনো খাবার দেয় না। একদিন ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে একটা আপেল খেয়েছিল, সেদিন তাকে অনেক মারধর করে।
সব কাজ ছাড়াও ওই বাড়িতে দু’জন বয়স্ক মানুষ থাকে যারা চলাফেরা করতে পারে না। তার বোন তাদের পরিচর্যাসহ পেশাব-পায়খানা পরিষ্কার করেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে ধর্না দিয়েও নির্যাতিতাকে ফেরত আনার কোনো উপায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের শরণাপন্ন হন। শুধু ওই নারীই নন। সংস্থাটি একই সময়ে আরো ১৭ নির্যাতিত নারীর পরিবারের কাছ থেকে একই ধরনের অভিযোগ পান। পরে গত ২৫শে জুলাই তাদেরকে ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে অভিযোগ জানান। একইসঙ্গে বেসরকারি এ সংস্থাটি নির্যাতিতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।
গতকাল খুলনার এই নির্যাতিত নারীর সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের এক কর্মকর্তার। ওই কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড মানবজমিনের হাতে এসেছে। রেকর্ডের কথোপকথন হুবহু তুলে দেয়া হলো-
কাঁদতে কাঁদতে হতভাগা এই নারী ব্র্যাক কর্মকর্তাকে বলেন, আপনি আমার আপন ভাই, আমাকে বাঁচান, রাত্রিরি...। এক রাত্রিরি ছেলে আসে, আরেক রাত্রিরি বাবা আসে। আমার জানডা বোরোয় যাচ্ছে। ‘ওই জায়গায়’ হালিস বেরোয় গেছে। জানডা বেরোয় যাচ্ছে। থাকতি পারতিছি নে ভাই। আমারে একটু বাঁচান ভাই। আমারে একটু নিয়ে যান ভাই। (কাঁদতে কাঁদতে) ওরে ভাই, আমি মরে গিলাম ভাই। কতদিন সেখানে গেছেন জিজ্ঞেস করলে ওই নারী জানান, চার মাস হলো গেছেন। এর মধ্যে এক মাস তিনি ভালো ছিলেন। বলেন, ‘চার মাসে একমাস ভালো ছিলাম আর তিন মাসে আমার জানডা বেরোয় গেছে ভাই। আমি এখানে থাকলে বাঁচতি পারবো নানে।’ ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে পুলিশের কাছে যাওয়ার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না ভাই, বাইর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনটা গেটে তালা দিয়ে রাখে।’ তিনি বলেন, ‘ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা কলি নেই না। খালি একটা বড়ি দেয়। ডাক্তারের কাছে নিলি আমি দেহাবানে, কয়ে দিবানে, তাইতি নেয় না।’ নারী বিলাপ করতে করতে আবারো বলেন, আমাকে বাঁচান ভাই। না হলি, আমি বাংলাদেশে যাতি পারবো নানে। আমাকে নিয়ে যান। আমি বাংলাদেশে কাজ করে খাবানে। একেনে কাজ করতি পারবো নানে। আমার ঠ্যাং বেয়ে বেয়ে রক্ত পড়ছে। এ সময় নারী অঝোরে কান্না করতে থাকেন। একইসঙ্গে ভীতসন্ত্রস্ত মনে হয় তাকে।
জানা গেছে, খুলনার ওই নারী গত ৩রা এপ্রিল আল মিনার ওভারসিজ (আরএল নং- ১২৩৫) নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যান। এ ব্যাপারে এজেন্সির মালিক মো. আকতার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, এসব নারীদের সৌদি পাঠাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি। তারাই তাদের বিদেশ পাঠিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু যখন তারা বিপদে তখন এসব এজেন্সি কোন দায় নিতে চায় না। উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে তারা খারাপ আচরণ করে। তিনি বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলেই কেবল তারা এসব অসহায় ভুক্তভোগী এসব নারীদের দায়ভার নিতে বাধ্য হবে। এ ছাড়া সৌদিতে আমাদের নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, সেদেশ নারীকর্মী পাঠানোর ব্যাপারে নতুন করে ভাববার সময় হয়েছে।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মিডিয়া শাখার এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে তিনি তার এই দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। ওই নারী জানান, তিনি ৪ মাস আগে সেদেশে গেছেন। দেশটির আল বাহার এলাকার একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হয়েছে তাকে। একমাস সেখানে ভালোই ছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই তার ওপর শুরু হয়েছে নির্যাতন।
নির্যাতিত নারীর বাড়ি খুলনা জেলায়। তার ছোট বোন রুমা জানান, ১৫ বছর আগে তার বোনের স্বামী মারা যান। একমাস পর তার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এরপর তিনি রাজমিস্ত্রি জোগালের কাজ নেন। সৌদি যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই কাজেই নিয়োজিত ছিলেন। সেখানে দিনমজুরের কাজ করে যা পেতেন তা দিয়েই দু’জনের পেট চালাতেন। একইসঙ্গে ছেলের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছিলেন।
রুমা জানান, হঠাৎ করেই তার বোন জানান, সৌদি আরব যাবেন। সেখানে গৃহকর্মীর কাজ করবেন। আয়-রোজগার ভালো। এতে তার ছেলেটা ভালোভাবে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। রুবি বলেন, আমরা তাকে বিদেশ যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু কথা শোনেনি। বলেছেন, তার ছেলের ভবিষ্যতের জন্য তাকে যেতে হবে। কে তাকে সৌদি আরব যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জানতে চাইলে নির্যাতিতার বোন জানান, সে যেখানে কাজ করতো সেখানকার একব্যক্তি তাকে পরামর্শ দেয়।
ওই ব্যক্তির স্ত্রীও একই সময় সৌদিতে যান। তিনিও এখন খুব কষ্টে আছেন। তার ওপরও বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে সৌদির গৃহকর্তারা। নির্যাতিতার ছোট বোন বলেন, সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর তার বোন বলেছিলেন তিনি ভালো আছেন। কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি তার কষ্টের কথা জানান। রোজার ঈদের দিন ফোন করে অনেক কান্নাকাটি করেন। বলেন, ওইদিন তিনি শুধু পানি খেয়ে ছিলেন। তাকে কোন খাবার দেয়নি। গৃহকর্তারা খাবার পরও তাকে থালা-বাসন ধুতে দিয়েছে। মাঝে মাঝে তাকে কোনো খাবার দেয় না। একদিন ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে একটা আপেল খেয়েছিল, সেদিন তাকে অনেক মারধর করে।
সব কাজ ছাড়াও ওই বাড়িতে দু’জন বয়স্ক মানুষ থাকে যারা চলাফেরা করতে পারে না। তার বোন তাদের পরিচর্যাসহ পেশাব-পায়খানা পরিষ্কার করেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে ধর্না দিয়েও নির্যাতিতাকে ফেরত আনার কোনো উপায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের শরণাপন্ন হন। শুধু ওই নারীই নন। সংস্থাটি একই সময়ে আরো ১৭ নির্যাতিত নারীর পরিবারের কাছ থেকে একই ধরনের অভিযোগ পান। পরে গত ২৫শে জুলাই তাদেরকে ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে অভিযোগ জানান। একইসঙ্গে বেসরকারি এ সংস্থাটি নির্যাতিতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।
গতকাল খুলনার এই নির্যাতিত নারীর সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের এক কর্মকর্তার। ওই কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড মানবজমিনের হাতে এসেছে। রেকর্ডের কথোপকথন হুবহু তুলে দেয়া হলো-
কাঁদতে কাঁদতে হতভাগা এই নারী ব্র্যাক কর্মকর্তাকে বলেন, আপনি আমার আপন ভাই, আমাকে বাঁচান, রাত্রিরি...। এক রাত্রিরি ছেলে আসে, আরেক রাত্রিরি বাবা আসে। আমার জানডা বোরোয় যাচ্ছে। ‘ওই জায়গায়’ হালিস বেরোয় গেছে। জানডা বেরোয় যাচ্ছে। থাকতি পারতিছি নে ভাই। আমারে একটু বাঁচান ভাই। আমারে একটু নিয়ে যান ভাই। (কাঁদতে কাঁদতে) ওরে ভাই, আমি মরে গিলাম ভাই। কতদিন সেখানে গেছেন জিজ্ঞেস করলে ওই নারী জানান, চার মাস হলো গেছেন। এর মধ্যে এক মাস তিনি ভালো ছিলেন। বলেন, ‘চার মাসে একমাস ভালো ছিলাম আর তিন মাসে আমার জানডা বেরোয় গেছে ভাই। আমি এখানে থাকলে বাঁচতি পারবো নানে।’ ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে পুলিশের কাছে যাওয়ার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না ভাই, বাইর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনটা গেটে তালা দিয়ে রাখে।’ তিনি বলেন, ‘ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা কলি নেই না। খালি একটা বড়ি দেয়। ডাক্তারের কাছে নিলি আমি দেহাবানে, কয়ে দিবানে, তাইতি নেয় না।’ নারী বিলাপ করতে করতে আবারো বলেন, আমাকে বাঁচান ভাই। না হলি, আমি বাংলাদেশে যাতি পারবো নানে। আমাকে নিয়ে যান। আমি বাংলাদেশে কাজ করে খাবানে। একেনে কাজ করতি পারবো নানে। আমার ঠ্যাং বেয়ে বেয়ে রক্ত পড়ছে। এ সময় নারী অঝোরে কান্না করতে থাকেন। একইসঙ্গে ভীতসন্ত্রস্ত মনে হয় তাকে।
জানা গেছে, খুলনার ওই নারী গত ৩রা এপ্রিল আল মিনার ওভারসিজ (আরএল নং- ১২৩৫) নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যান। এ ব্যাপারে এজেন্সির মালিক মো. আকতার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, এসব নারীদের সৌদি পাঠাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি। তারাই তাদের বিদেশ পাঠিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু যখন তারা বিপদে তখন এসব এজেন্সি কোন দায় নিতে চায় না। উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে তারা খারাপ আচরণ করে। তিনি বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলেই কেবল তারা এসব অসহায় ভুক্তভোগী এসব নারীদের দায়ভার নিতে বাধ্য হবে। এ ছাড়া সৌদিতে আমাদের নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, সেদেশ নারীকর্মী পাঠানোর ব্যাপারে নতুন করে ভাববার সময় হয়েছে।
No comments