গাজীপুরে শুরুতেই পাল্টাপাল্টি
গাজীপুর
সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। শুরু
হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। নানা অভিযোগ
রয়েছে কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও। কোনো কোনো প্রার্থী বলছেন, রিটার্নিং
কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায়
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েই শঙ্কা রয়েছে অনেকের মাঝে। এর মাঝেও সিটি
করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীরা
ভোটারদের মন পেতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারপত্র, পোস্টার ও দলীয়
প্রতীক নিয়ে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমে ভোট চাইছেন উভয় দলের
কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল সকাল থেকেত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা
প্রচারণা শুরু করেন। একই ভাবে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী
ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীগণও প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের
দ্বারে দ্বারে।
শনিবার সকালে দত্তপাড়া এলাকায় পথসভা করে দিনের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর কর্মীদের নিয়ে পথসভার মাধ্যমে এই প্রচারণা শুরু হয়। প্রচারণাকালে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষ থেকে আমার কর্মী-সমর্থকদের প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। আমি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চাই। শুক্রবার জামায়াতের নগর আমীরসহ ৪৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, এই গ্রেপ্তার সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র এবং ভোটাররা আতঙ্কিত হবে এবং নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলে আমি মনে করি। পরে ধানের শীষের এই প্রার্থী টঙ্গীর দত্তপাড়া, হাউজ বিল্ডিং, বনমালা, তিস্তা গেইট এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান। এসময় ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ না দিতে পারে। তবে এর খেসারত নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে। হাসান সরকার বলেন, নির্বাচনের এখনো ১৮ দিন বাকি। এখনই যদি সরকার তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ২০দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করে তবে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই তৈরি হবে না। বিএনপি প্রার্থীকে নেতাকর্মী ও সমর্থকশূন্য করার গভীর চক্রান্ত চলছে বলেও তিনি অভিযোগ করে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানান।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০দলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে এ সময় বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। শনিবার সকালে তিনি নগরের ৩ নং ওয়ার্ডের হাতিমারা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে নেমে সাংবাদিকদের বলেছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে হলুদ কার্ড দেখানোর পর আগামী সংসদ নির্বাচনে সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে ক্ষমতা থেকে হটানো হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সরকার কারাগারে আটকে রেখেছে। দেশের মানুষ নিরাপত্তার অভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গাজীপুর ও খুলনার জনগণ ধানের শীষের পক্ষে রায় দেবে। এই রায়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসবো। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা ও জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা বাবুল হোসেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শওকত হোসেন সরকারসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়াও এদিন আলাদাভাবে নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করেছেন ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়ার নেতৃত্বে দলের নেতারা নগরের দুটি ওয়ার্ডে প্রচার চালায়।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মো. শহীদুননবী ডাবলু, সাবেক ছাত্রনেতা এম এন শাওন সাদেকী, জেলা ন্যাপ নেতা আবদুল্লাহ আল কাউছারী, আবদুল হালিম, শামসুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
অপরদিকে সকালে ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসার সম্মেলন কক্ষে মহানগর প্রাইভেট মাদরাসা সমন্বয় পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে তিনি বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার প্রতিপক্ষের অভিযোগ ঠিক নয়, আমরা সহযোগিতামূলক পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন- বরং তারাই নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে। এলাকায় তাদের কর্মী-সমর্থক পর্যাপ্ত না থাকায় তারা বাইরে থেকে নেতাকর্মী এনে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে এবং নানা ভাবে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে।
এটা স্থানীয় নির্বাচন। আমরা স্থানীয়রা নানা ভাবে সমস্যার সমাধান করবো। স্থানীয়রা ভোট দিয়ে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবে। তাহলে বাইরে থেকে লোক এনে তাদের কার্যক্রম চালানো দরকার কি? পরে তিনি দুপুরের আগে মহানগরের পাশের মৌচাক এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় গিয়ে কিছুক্ষণ সময় দেন। নগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট থাকায় তিনি মোটরসাইকেলযোগে মৌচাক পর্যন্ত আসা-যাওয়া করেন। দুপুরের পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম তার ছয়দানার বাসা থেকে বের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামেন। কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করেন নৌকা মার্কার প্রার্থী। প্রচারকালে বিপুল সংখ্যক লোকজনের সমাগমে ও মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।
প্রচারকালে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর নগরবাসী দলমতনির্বিশেষে সবাই নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। এই নির্বাচনে আধুনিক নগর গড়ার জন্য আওয়ামী লীগের ও মহাজোটের সকল দলের একক প্রার্থী হয়ে, নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসেবে পাসের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে শনিবার দুপুরে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ নগরের পাশের মৌচাক এলাকায় যৌথসভার আয়োজন করে। আয়োজিত ওই যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম বাহাউদ্দিন নাছিম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আহমেদ হোসেন, গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। জেলার মৌচাক এলাকায় ঐ সভায় সিটি মেয়র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্যে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে সবার কাছে সহযোগিতা চান।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের
নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ শুধু মেয়র প্রার্থীদের নয়। কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের কর্মীদেরও ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। একটি ওয়ার্ডের দুই দলের দুইজন প্রার্থী জানিয়েছেন সরকারি দলের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী তফসিল ঘোষণার পর এলাকার রাস্তায় ইট-বালু ফেলে কাজ করে দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করেছে। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। আবার রফিকুল ইসলাম রাতা নামে একজন কাউন্সিলর অভিযোগে জানান, তার কর্মীদের প্রতিপক্ষের লোকজন তার নির্বাচনী কাজ না করতে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। রাতা জানান, তার কর্মীদের বলা হচ্ছে তার পক্ষে কাজ করলে জেলের ভাত খেতে হবে, নির্বাচনের আগেই দেখে নেয়া হবে। কাথোরায় একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীর বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠেছে। এ ধরনের অভিযোগ ওঠছে প্রতিদিনই।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম মণ্ডল জানান, যেকোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহায়তায় তদন্ত করে সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন মেয়রকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে চার কাউন্সিলর প্রার্থীকে শুক্রবার ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রিটার্নিং অফিস সূত্র জানায়, পোস্টারের সাইজ নির্ধারিত আকারের চেয়ে বড় হওয়ায় এবং আঠা দিয়ে পোস্টার দেয়ালে সাঁটানোর অভিযোগে ২৬ নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আব্দুল করিম (ঠেলাগাড়ি) ও মো. হান্নান মিয়া হান্নু এবং ৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী খন্দকার নুরুন্নাহার ও সাবিহা বেগমকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। আদালতটি পরিচালনা করেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জোবায়ের আলম।
নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর এখন ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৫৫ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছেন। এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে ১৫ই মে।
শনিবার সকালে দত্তপাড়া এলাকায় পথসভা করে দিনের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর কর্মীদের নিয়ে পথসভার মাধ্যমে এই প্রচারণা শুরু হয়। প্রচারণাকালে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষ থেকে আমার কর্মী-সমর্থকদের প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। আমি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চাই। শুক্রবার জামায়াতের নগর আমীরসহ ৪৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, এই গ্রেপ্তার সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র এবং ভোটাররা আতঙ্কিত হবে এবং নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলে আমি মনে করি। পরে ধানের শীষের এই প্রার্থী টঙ্গীর দত্তপাড়া, হাউজ বিল্ডিং, বনমালা, তিস্তা গেইট এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান। এসময় ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ না দিতে পারে। তবে এর খেসারত নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে। হাসান সরকার বলেন, নির্বাচনের এখনো ১৮ দিন বাকি। এখনই যদি সরকার তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ২০দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করে তবে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই তৈরি হবে না। বিএনপি প্রার্থীকে নেতাকর্মী ও সমর্থকশূন্য করার গভীর চক্রান্ত চলছে বলেও তিনি অভিযোগ করে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানান।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০দলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে এ সময় বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। শনিবার সকালে তিনি নগরের ৩ নং ওয়ার্ডের হাতিমারা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে নেমে সাংবাদিকদের বলেছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে হলুদ কার্ড দেখানোর পর আগামী সংসদ নির্বাচনে সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে ক্ষমতা থেকে হটানো হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সরকার কারাগারে আটকে রেখেছে। দেশের মানুষ নিরাপত্তার অভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গাজীপুর ও খুলনার জনগণ ধানের শীষের পক্ষে রায় দেবে। এই রায়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসবো। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা ও জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা বাবুল হোসেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শওকত হোসেন সরকারসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়াও এদিন আলাদাভাবে নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করেছেন ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়ার নেতৃত্বে দলের নেতারা নগরের দুটি ওয়ার্ডে প্রচার চালায়।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মো. শহীদুননবী ডাবলু, সাবেক ছাত্রনেতা এম এন শাওন সাদেকী, জেলা ন্যাপ নেতা আবদুল্লাহ আল কাউছারী, আবদুল হালিম, শামসুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
অপরদিকে সকালে ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসার সম্মেলন কক্ষে মহানগর প্রাইভেট মাদরাসা সমন্বয় পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে তিনি বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার প্রতিপক্ষের অভিযোগ ঠিক নয়, আমরা সহযোগিতামূলক পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন- বরং তারাই নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে। এলাকায় তাদের কর্মী-সমর্থক পর্যাপ্ত না থাকায় তারা বাইরে থেকে নেতাকর্মী এনে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে এবং নানা ভাবে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে।
এটা স্থানীয় নির্বাচন। আমরা স্থানীয়রা নানা ভাবে সমস্যার সমাধান করবো। স্থানীয়রা ভোট দিয়ে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবে। তাহলে বাইরে থেকে লোক এনে তাদের কার্যক্রম চালানো দরকার কি? পরে তিনি দুপুরের আগে মহানগরের পাশের মৌচাক এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় গিয়ে কিছুক্ষণ সময় দেন। নগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট থাকায় তিনি মোটরসাইকেলযোগে মৌচাক পর্যন্ত আসা-যাওয়া করেন। দুপুরের পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম তার ছয়দানার বাসা থেকে বের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামেন। কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করেন নৌকা মার্কার প্রার্থী। প্রচারকালে বিপুল সংখ্যক লোকজনের সমাগমে ও মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।
প্রচারকালে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর নগরবাসী দলমতনির্বিশেষে সবাই নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। এই নির্বাচনে আধুনিক নগর গড়ার জন্য আওয়ামী লীগের ও মহাজোটের সকল দলের একক প্রার্থী হয়ে, নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসেবে পাসের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে শনিবার দুপুরে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ নগরের পাশের মৌচাক এলাকায় যৌথসভার আয়োজন করে। আয়োজিত ওই যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম বাহাউদ্দিন নাছিম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আহমেদ হোসেন, গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। জেলার মৌচাক এলাকায় ঐ সভায় সিটি মেয়র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্যে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে সবার কাছে সহযোগিতা চান।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের
নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ শুধু মেয়র প্রার্থীদের নয়। কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের কর্মীদেরও ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। একটি ওয়ার্ডের দুই দলের দুইজন প্রার্থী জানিয়েছেন সরকারি দলের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী তফসিল ঘোষণার পর এলাকার রাস্তায় ইট-বালু ফেলে কাজ করে দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করেছে। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। আবার রফিকুল ইসলাম রাতা নামে একজন কাউন্সিলর অভিযোগে জানান, তার কর্মীদের প্রতিপক্ষের লোকজন তার নির্বাচনী কাজ না করতে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। রাতা জানান, তার কর্মীদের বলা হচ্ছে তার পক্ষে কাজ করলে জেলের ভাত খেতে হবে, নির্বাচনের আগেই দেখে নেয়া হবে। কাথোরায় একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীর বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠেছে। এ ধরনের অভিযোগ ওঠছে প্রতিদিনই।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম মণ্ডল জানান, যেকোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহায়তায় তদন্ত করে সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন মেয়রকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে চার কাউন্সিলর প্রার্থীকে শুক্রবার ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রিটার্নিং অফিস সূত্র জানায়, পোস্টারের সাইজ নির্ধারিত আকারের চেয়ে বড় হওয়ায় এবং আঠা দিয়ে পোস্টার দেয়ালে সাঁটানোর অভিযোগে ২৬ নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আব্দুল করিম (ঠেলাগাড়ি) ও মো. হান্নান মিয়া হান্নু এবং ৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী খন্দকার নুরুন্নাহার ও সাবিহা বেগমকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। আদালতটি পরিচালনা করেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জোবায়ের আলম।
নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর এখন ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৫৫ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছেন। এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে ১৫ই মে।
No comments