তিস্তা নদীর হাল খতিয়ে দেখতে ভারতের উদ্যোগ
তিস্তা
নদীর বর্তমান অবস্থা দেখতে পশ্চিমবঙ্গে গেছে কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রকের
একটি দল৷ তিস্তার জল বাটোয়ারা নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের যে টানাপোড়েন চলছে
তার অবসানে এ উদ্যোগকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল৷
তিস্তা নদীর জলবন্টন নিয়ে একটা সম্ভাব্য সমাধান নতুন করে খুঁজে দেখতে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের একটি বিশেষজ্ঞ দল বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে গেছে৷ তিস্তার জলের পরিস্থিতি সরেজমিনে নতুন করে খতিয়ে দেখে একটা নতুন সমাধানসূত্র বের করাই এর লক্ষ্য৷ ভারত-বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চলেছে একটা সন্তোষজনক সমাধানের৷ কিন্তু তিস্তা চুক্তি সই হয় হয় করেও শেষ পর্যন্ত হয়নি৷ অচলাবস্থা অব্যাহত৷ কিন্তু কেন ? কোথায় আটকাচ্ছে?
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আটকায়নি৷ আটকেছে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনড় অবস্থানে৷ তাঁর মতে, রাজ্যের কৃষকদের সেচের স্বার্থে তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেওয়া সম্ভব হবে না৷ গ্রীষ্মে তিস্তার জল থাকে মাত্র এক-ষষ্ঠাংশ৷ পশ্চিমবঙ্গের ধানচাষীদের একমাত্র ভরসা তখন ঐ জল৷ উত্তরবঙ্গের অন্য নদীগুলিতে জল দিতে অবশ্য মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তি নেই৷
গত বছর নতুনদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনের এক নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ও উপস্থিত ছিলেন৷ সেখানেই তিনি এই প্রস্তাব দেন৷ কিন্তু তা শেখ হাসিনার মনঃপুত হয়নি৷ তারপরেও বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতার বক্তব্য, ‘‘তিস্তার জলের ভাগ চাই৷'' এটা যেন একটা কূটনৈতিক, তথা রাজনৈতিক মর্যাদার ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বাংলাদেশের মিডিয়া এবং নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তার জল গজলডোবা বাঁধের দিকে ঘুরিয়ে সংযোগকারী খাল দিয়ে মহানন্দা নদীতে বইয়ে দেয়, যেটা শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ে গঙ্গায়৷ মহানন্দা নদী পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়৷ বর্ষাকালে অবশ্য তিস্তার জল উপচে পার ভাসিয়ে দেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে৷ তখন জলের সমস্যার চেয়ে বন্যা সমস্যা প্রধান হয়ে ওঠে৷
এই বছরের শেষাশেষি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হবার কথা৷ দিল্লির সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্কের নিরিখে দেশবাসীকে খুশি রাখতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সই-পর্ব শেষ করাটা শেখ হাসিনার পক্ষে ভোটের রাজনীতিতে জরুরি৷ অন্যদিকে আগামী বছর ভারতেও সাধারণ নির্বাচন৷ মোদী এবং শেখ হাসিনা উভয়েরই অগ্নিপরীক্ষা৷ তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সে ক্ষেত্রে শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
তাই দিল্লির ওপর নরমে গরমে ক্রমাগত চাপ বাড়িয়ে চলেছে ঢাকা৷ চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ানো তারই একটা ইঙ্গিত৷ প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে আর্থিক, বাণিজ্যিক সহযোগিতা মিলিয়ে সব ক্ষেত্রেই চীনের দিকে হাত বাড়াচ্ছে ঢাকা৷ তবে বিষয়টি খোলসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, এতে ভারতের উদ্বেগের কারণ নেই৷ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক৷ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ৷ কাজেই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব তার নিজের জায়গাতেই থাকবে৷ চীনের বন্ধুত্ব থাকবে তার নিজের জায়গায়৷ ভারতীয় কূটনৈতিক মহল অবশ্য মনে করছে, তিস্তা চুক্তি দুই দেশের সম্পর্কের একমাত্র মাপকাঠি নয়৷ অন্য সব ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পরিসর অনেক বিস্তৃত৷ তিস্তা নিয়ে জটিলতা স্রেফ একটা বাস্তবতা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ দ্বিতীয়ত, মৌলবাদ এবং জঙ্গিদমনে দু'দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অপরিহার্য৷ জঙ্গি দমনে ভারত সব সময় পাশে পেয়েছে বাংলাদেশকে৷
ভারত ও বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে তিস্তা নদীর জলবণ্টন চুক্তি কতটা ভূমিকা রাখতে পারে সে সম্পর্কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কনক সরকারের অভিমত জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘ভারতের সাধারণ নির্বাচনে তিস্তা চুক্তির তেমন ভূমিকা নেই৷ পশ্চিমবঙ্গেও এর কোনো ছাপ পড়বে না৷ তিস্তা চুক্তি ছাড়াও অন্য অনেক নির্বাচনি ইস্যু আছে৷ তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশের নির্বাচনে তিস্তা চুক্তির বেশ বড় প্রভাব আছে৷বর্তমানে বাংলাদেশে জনগণের ওপর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পূর্ণ আধিপত্যা আছে৷ তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অন্যতম অ্যাজেন্ডা৷ সব দলই তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে সেটাকে তুলে ধরে প্রচার চালাবে৷ সেটার ভিত্তিতে জনমতকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করবে৷ তবে এটা ছাড়াও বাংলাদেশের নির্বাচনে অন্যান্য আরও অনেক ফ্যাক্টর কাজ করবে৷''
ডয়চে ভেলের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি অগ্রাহ্য করে কেন্দ্র এই চুক্তি করতে পারে কিনা৷ উত্তরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক কনক সরকার বলেন, ‘‘সাংবিধানিক দিক থেকে বা আইনগত দিক থেকে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যি তা পারে৷ তবে গণতান্ত্রিক নৈতিকতায় কেন্দ্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না৷ পশ্চিমবঙ্গের জনমানসে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের যে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে, সেটাকে উপেক্ষা করা বাস্তবসম্মত নয়৷ পূর্বতন মনমোহন সিংয়ের কংগ্রেস জোট সরকারও সেটা মেনে চলেছিলেন৷ কাজেই আইনগত দিক থেকে করতে পারলেও সার্বিক দিক থেকে কোনো কেন্দ্রীয় সরকারই তা করবে না৷''
তিস্তা নদীর জলবন্টন নিয়ে একটা সম্ভাব্য সমাধান নতুন করে খুঁজে দেখতে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের একটি বিশেষজ্ঞ দল বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে গেছে৷ তিস্তার জলের পরিস্থিতি সরেজমিনে নতুন করে খতিয়ে দেখে একটা নতুন সমাধানসূত্র বের করাই এর লক্ষ্য৷ ভারত-বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চলেছে একটা সন্তোষজনক সমাধানের৷ কিন্তু তিস্তা চুক্তি সই হয় হয় করেও শেষ পর্যন্ত হয়নি৷ অচলাবস্থা অব্যাহত৷ কিন্তু কেন ? কোথায় আটকাচ্ছে?
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আটকায়নি৷ আটকেছে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনড় অবস্থানে৷ তাঁর মতে, রাজ্যের কৃষকদের সেচের স্বার্থে তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেওয়া সম্ভব হবে না৷ গ্রীষ্মে তিস্তার জল থাকে মাত্র এক-ষষ্ঠাংশ৷ পশ্চিমবঙ্গের ধানচাষীদের একমাত্র ভরসা তখন ঐ জল৷ উত্তরবঙ্গের অন্য নদীগুলিতে জল দিতে অবশ্য মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তি নেই৷
গত বছর নতুনদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনের এক নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ও উপস্থিত ছিলেন৷ সেখানেই তিনি এই প্রস্তাব দেন৷ কিন্তু তা শেখ হাসিনার মনঃপুত হয়নি৷ তারপরেও বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতার বক্তব্য, ‘‘তিস্তার জলের ভাগ চাই৷'' এটা যেন একটা কূটনৈতিক, তথা রাজনৈতিক মর্যাদার ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বাংলাদেশের মিডিয়া এবং নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তার জল গজলডোবা বাঁধের দিকে ঘুরিয়ে সংযোগকারী খাল দিয়ে মহানন্দা নদীতে বইয়ে দেয়, যেটা শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ে গঙ্গায়৷ মহানন্দা নদী পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়৷ বর্ষাকালে অবশ্য তিস্তার জল উপচে পার ভাসিয়ে দেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে৷ তখন জলের সমস্যার চেয়ে বন্যা সমস্যা প্রধান হয়ে ওঠে৷
এই বছরের শেষাশেষি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হবার কথা৷ দিল্লির সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্কের নিরিখে দেশবাসীকে খুশি রাখতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সই-পর্ব শেষ করাটা শেখ হাসিনার পক্ষে ভোটের রাজনীতিতে জরুরি৷ অন্যদিকে আগামী বছর ভারতেও সাধারণ নির্বাচন৷ মোদী এবং শেখ হাসিনা উভয়েরই অগ্নিপরীক্ষা৷ তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সে ক্ষেত্রে শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
তাই দিল্লির ওপর নরমে গরমে ক্রমাগত চাপ বাড়িয়ে চলেছে ঢাকা৷ চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ানো তারই একটা ইঙ্গিত৷ প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে আর্থিক, বাণিজ্যিক সহযোগিতা মিলিয়ে সব ক্ষেত্রেই চীনের দিকে হাত বাড়াচ্ছে ঢাকা৷ তবে বিষয়টি খোলসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, এতে ভারতের উদ্বেগের কারণ নেই৷ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক৷ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ৷ কাজেই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব তার নিজের জায়গাতেই থাকবে৷ চীনের বন্ধুত্ব থাকবে তার নিজের জায়গায়৷ ভারতীয় কূটনৈতিক মহল অবশ্য মনে করছে, তিস্তা চুক্তি দুই দেশের সম্পর্কের একমাত্র মাপকাঠি নয়৷ অন্য সব ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পরিসর অনেক বিস্তৃত৷ তিস্তা নিয়ে জটিলতা স্রেফ একটা বাস্তবতা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ দ্বিতীয়ত, মৌলবাদ এবং জঙ্গিদমনে দু'দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অপরিহার্য৷ জঙ্গি দমনে ভারত সব সময় পাশে পেয়েছে বাংলাদেশকে৷
ভারত ও বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে তিস্তা নদীর জলবণ্টন চুক্তি কতটা ভূমিকা রাখতে পারে সে সম্পর্কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কনক সরকারের অভিমত জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘ভারতের সাধারণ নির্বাচনে তিস্তা চুক্তির তেমন ভূমিকা নেই৷ পশ্চিমবঙ্গেও এর কোনো ছাপ পড়বে না৷ তিস্তা চুক্তি ছাড়াও অন্য অনেক নির্বাচনি ইস্যু আছে৷ তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশের নির্বাচনে তিস্তা চুক্তির বেশ বড় প্রভাব আছে৷বর্তমানে বাংলাদেশে জনগণের ওপর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পূর্ণ আধিপত্যা আছে৷ তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অন্যতম অ্যাজেন্ডা৷ সব দলই তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে সেটাকে তুলে ধরে প্রচার চালাবে৷ সেটার ভিত্তিতে জনমতকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করবে৷ তবে এটা ছাড়াও বাংলাদেশের নির্বাচনে অন্যান্য আরও অনেক ফ্যাক্টর কাজ করবে৷''
ডয়চে ভেলের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি অগ্রাহ্য করে কেন্দ্র এই চুক্তি করতে পারে কিনা৷ উত্তরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক কনক সরকার বলেন, ‘‘সাংবিধানিক দিক থেকে বা আইনগত দিক থেকে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যি তা পারে৷ তবে গণতান্ত্রিক নৈতিকতায় কেন্দ্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না৷ পশ্চিমবঙ্গের জনমানসে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের যে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে, সেটাকে উপেক্ষা করা বাস্তবসম্মত নয়৷ পূর্বতন মনমোহন সিংয়ের কংগ্রেস জোট সরকারও সেটা মেনে চলেছিলেন৷ কাজেই আইনগত দিক থেকে করতে পারলেও সার্বিক দিক থেকে কোনো কেন্দ্রীয় সরকারই তা করবে না৷''
No comments