খালেদা জিয়াকে নিয়ে চিকিৎসকদের শঙ্কা: কারাগারে তিন নেতার সাক্ষাৎ, সমস্যা হলে দায়-দায়িত্ব সরকারের
দ্রুত
বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া না হলে কারাবন্দি খালেদা জিয়া
অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্বের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার
ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার কোমরের হাড়ে ক্ষয় হয়ে
স্পাইনাল কর্ডগুলো চাপা পড়ে গেছে। তার ‘স্পাইনাল কড’ নষ্ট হওয়ার মাধ্যমে
তিনি প্যারালাইজডের শিকার হতে পারেন। এছাড়া চোখের কর্নিয়া ড্রাই হয়ে
যাচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসা না হলে কর্নিয়া স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়ার
মাধ্যমে তিনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। গতকাল সকালে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আটকে থাকায় চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে। পরে বিকালে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দলের মহাসচিবসহ তিন সিনিয়র নেতা। সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা দেশনেত্রীকে যতদূর দেখেছি তাতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। তার শরীর-স্বাস্থ্য আসলেই অত্যন্ত খারাপ। খালেদা জিয়া বলেছেন- তার বাঁ-হাত আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে যাচ্ছে। বা হাতের ওজনও বেড়ে গেছে। বাম পা থেকে শুরু করে গোটা বাম দিক পেছনে পর্যন্ত ব্যথা বেড়ে গেছে। এখন সাধারণভাবে হাঁটাচলা করাও তার জন্য মুশকিল হয়ে গেছে। আমরাও মনে করি, ইউনাইটেড হাসপাতালে রেখে তার বিশেষভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এটা সরকারের দায়িত্ব। এর যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে, কোনো রকমের ক্ষতি হয় তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
প্যারালাইজডের আশঙ্কা চিকিৎসকদের: চিকিৎসায় গাফিলতি ও বিলম্ব হলে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে প্যারালাইজডের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার কয়েকজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। নিউরোসার্জন প্রফেসর ডা. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, হাতের আঙুলগুলোতে রিউমারাইটিস আর্থরাইটিস আছে, আঙুলগুলো ফোলা ফোলা ও ব্যথা রয়েছে। নার্ভ চাপা পড়ার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডান হাতের চেয়ে বাম হাত বেশি দুর্বল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কোমরের হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে স্পাইনাল কর্ডগুলো চাপা পড়ে গেছে। কোমরের হাড় ক্ষয় হয়ে সরু হয়ে গেছে। তাই তিনি হাঁটতে পারছেন না। তার ‘স্পাইনাল কড’ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তার শরীর আরো খারাপ হয়ে প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।
ডা. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার এখন বেশি সমস্যা ঘাড়ে। ঘাড়ের হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে নার্ভ চাপা পড়ে গেছে। ডান হাতে যত শক্তি পাচ্ছেন বাম হাতে ততটা শক্তি পাচ্ছেন না। তাই বাম হাতে কিছু ধরলে তা পড়ে যাচ্ছে। তবে খালেদা জিয়ার মানসিক জোর অনেক বেশি। তিনি বলেন, এসব সমস্যায় শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে, প্যারালাইসিস হতে পারে, হাত-পা অবশ হয়ে যেতে পারে। তার এখন সুচিকিৎসা দরকার, তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার ও ফিজিওথেরাপি দরকার। অর্থোপেডিক স্পেশালিস্ট প্রফেসর ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, যতটুকু শুনেছি, ওনার হাত বাঁকা হয়ে গেছে। বাম হাতে কিছুই ধরতে বা করতে পারছেন না। ওনার হাঁটুর যে অবস্থা, চলাফেরাও করতে পারছেন না। হাঁটুর অবস্থা করুণ।
খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি দরকার জানিয়ে ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসা করতে হলে ভালো পরিবেশ দরকার। নইলে ওনার জীবনী শক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ওয়েল ভেন্টিলেটেড এনভায়রনমেন্টের একটা কক্ষ ও পরিবেশ দরকার। পরিত্যক্ত ভবনের ওই স্যাঁতসেঁতে পুরনো কক্ষে থাকলে তার সমস্যাগুলো আরো বাড়তে থাকবে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবদুল কুদ্দুস বলেন, ম্যাডাম চোখের নানা সমস্যায় ভুগছেন। তার চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার অসুখগুলো আগে থেকেই ছিল। ২০১৫ ও ২০১৭ সালে খালেদা জিয়ার চোখে অপারেশন করা হয়েছে। তার চোখের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। চোখের কর্নিয়া ড্রাই হয়ে যাচ্ছে। একবার যদি কর্নিয়া ড্রাই হয়ে যায়, তাহলে উনার এই কর্নিয়াকে ১৫ বছরেও ভালো করা যাবে না।
জরুরিভিত্তিতে যদি সুচিকিৎসা করা না হয় তাহলে তার চোখের কর্নিয়া স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না হলে তিনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। ওয়ান স্টপ সার্ভিস যেখানে দেয়া যায়, সেখানে স্থানান্তরের মাধ্যমে তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আটকে আছে ফাইল: কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আটকে থাকায় চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সকালে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা যতদূর শুনেছি, কারা কর্তৃপক্ষ অন্যান্য চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে খালেদা জিয়াকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করার জন্য সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা শুনেছি- প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ফাইল পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এবং এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে প্রতিদিন দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যখন আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি, তখন তিনি এতটুকু অসুস্থবোধ করতেন না। তিনি নিচে নেমে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু এখন তিনি নিচেও নামতে পারছেন না। এর ফলে তার আত্মীয়-স্বজন ও দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, সবাই খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দিয়েছেন। তার দুটি হাঁটু প্রতিস্থাপন করা আছে। এসব যন্ত্রপাতি ইউনাইটেড ও এ্যাপোলোতে আছে। তাই আমরা বারবার ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা বলছি। মির্জা আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, সরকারকে জোরের সঙ্গে বলবো, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় সকল দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে বহন করতে হবে। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেলে থাকাকালে চোখের সমস্যার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তার পছন্দের স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল, পরে বিদেশেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে তার অবস্থার অবনতি ঘটানো হচ্ছে। আমরা বারবার বলছি, এর পেছনে একটি হীন উদ্দেশ্য ও নীলনকশা রয়েছে।
আমরা আশা করি, তার চিকিৎসাটা অন্তত হবে। কত ভয়ঙ্কর হলে তার চিকিৎসাও করানো হয় না। এই অনির্বাচিত সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে অসুস্থ রাখা- যাতে তাকে রাজনীতি ও নির্বাচনের বাইরে রাখা যায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন- ইতিমধ্যে দলের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একমত হয়েছেন যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে, বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রয়োজন। সে জন্য মন্ত্রী বিএনপির প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে আইজি প্রিজনকে ডেকে নিয়ে আনেন। তিনি বলেন, মন্ত্রী বাইরে চলে যাচ্ছিলেন তাই তিনি আইজি প্রিজনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন- তার (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসায় যা যা করা দরকার আপনারা করুন। তিনি বলেন, সাধারণভাবে একজন সাধারণ বন্দির অধিকার আছে সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার। এটা সরকারের দায়িত্ব, তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া। সেই বিষয়ে কোনো আপস করা যাবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কিছু হলে সব দায়দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে। দেশের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
২২শে এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যেখানে খালেদা জিয়ার ভালো চিকিৎসা হবে, সেখানে তার চিকিৎসা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ে আইজি প্রিজনও উপস্থিত ছিলেন। আজকে ২৮শে এপ্রিল (গতকাল) এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, সরকারের অবহেলা বা সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব কোনো মানবিক আচরণ হতে পারে না। এটা সম্ভবত অপরাজনৈতিক আচরণ। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর থেকেই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডে-কেয়ার সেন্টারে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আটকে থাকায় চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে। পরে বিকালে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দলের মহাসচিবসহ তিন সিনিয়র নেতা। সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা দেশনেত্রীকে যতদূর দেখেছি তাতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। তার শরীর-স্বাস্থ্য আসলেই অত্যন্ত খারাপ। খালেদা জিয়া বলেছেন- তার বাঁ-হাত আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে যাচ্ছে। বা হাতের ওজনও বেড়ে গেছে। বাম পা থেকে শুরু করে গোটা বাম দিক পেছনে পর্যন্ত ব্যথা বেড়ে গেছে। এখন সাধারণভাবে হাঁটাচলা করাও তার জন্য মুশকিল হয়ে গেছে। আমরাও মনে করি, ইউনাইটেড হাসপাতালে রেখে তার বিশেষভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এটা সরকারের দায়িত্ব। এর যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে, কোনো রকমের ক্ষতি হয় তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
প্যারালাইজডের আশঙ্কা চিকিৎসকদের: চিকিৎসায় গাফিলতি ও বিলম্ব হলে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে প্যারালাইজডের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার কয়েকজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। নিউরোসার্জন প্রফেসর ডা. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, হাতের আঙুলগুলোতে রিউমারাইটিস আর্থরাইটিস আছে, আঙুলগুলো ফোলা ফোলা ও ব্যথা রয়েছে। নার্ভ চাপা পড়ার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডান হাতের চেয়ে বাম হাত বেশি দুর্বল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কোমরের হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে স্পাইনাল কর্ডগুলো চাপা পড়ে গেছে। কোমরের হাড় ক্ষয় হয়ে সরু হয়ে গেছে। তাই তিনি হাঁটতে পারছেন না। তার ‘স্পাইনাল কড’ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তার শরীর আরো খারাপ হয়ে প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।
ডা. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার এখন বেশি সমস্যা ঘাড়ে। ঘাড়ের হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে নার্ভ চাপা পড়ে গেছে। ডান হাতে যত শক্তি পাচ্ছেন বাম হাতে ততটা শক্তি পাচ্ছেন না। তাই বাম হাতে কিছু ধরলে তা পড়ে যাচ্ছে। তবে খালেদা জিয়ার মানসিক জোর অনেক বেশি। তিনি বলেন, এসব সমস্যায় শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে, প্যারালাইসিস হতে পারে, হাত-পা অবশ হয়ে যেতে পারে। তার এখন সুচিকিৎসা দরকার, তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার ও ফিজিওথেরাপি দরকার। অর্থোপেডিক স্পেশালিস্ট প্রফেসর ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, যতটুকু শুনেছি, ওনার হাত বাঁকা হয়ে গেছে। বাম হাতে কিছুই ধরতে বা করতে পারছেন না। ওনার হাঁটুর যে অবস্থা, চলাফেরাও করতে পারছেন না। হাঁটুর অবস্থা করুণ।
খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি দরকার জানিয়ে ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসা করতে হলে ভালো পরিবেশ দরকার। নইলে ওনার জীবনী শক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ওয়েল ভেন্টিলেটেড এনভায়রনমেন্টের একটা কক্ষ ও পরিবেশ দরকার। পরিত্যক্ত ভবনের ওই স্যাঁতসেঁতে পুরনো কক্ষে থাকলে তার সমস্যাগুলো আরো বাড়তে থাকবে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবদুল কুদ্দুস বলেন, ম্যাডাম চোখের নানা সমস্যায় ভুগছেন। তার চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার অসুখগুলো আগে থেকেই ছিল। ২০১৫ ও ২০১৭ সালে খালেদা জিয়ার চোখে অপারেশন করা হয়েছে। তার চোখের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। চোখের কর্নিয়া ড্রাই হয়ে যাচ্ছে। একবার যদি কর্নিয়া ড্রাই হয়ে যায়, তাহলে উনার এই কর্নিয়াকে ১৫ বছরেও ভালো করা যাবে না।
জরুরিভিত্তিতে যদি সুচিকিৎসা করা না হয় তাহলে তার চোখের কর্নিয়া স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না হলে তিনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। ওয়ান স্টপ সার্ভিস যেখানে দেয়া যায়, সেখানে স্থানান্তরের মাধ্যমে তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আটকে আছে ফাইল: কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আটকে থাকায় চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সকালে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা যতদূর শুনেছি, কারা কর্তৃপক্ষ অন্যান্য চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে খালেদা জিয়াকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করার জন্য সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা শুনেছি- প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ফাইল পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এবং এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে প্রতিদিন দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যখন আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি, তখন তিনি এতটুকু অসুস্থবোধ করতেন না। তিনি নিচে নেমে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু এখন তিনি নিচেও নামতে পারছেন না। এর ফলে তার আত্মীয়-স্বজন ও দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, সবাই খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দিয়েছেন। তার দুটি হাঁটু প্রতিস্থাপন করা আছে। এসব যন্ত্রপাতি ইউনাইটেড ও এ্যাপোলোতে আছে। তাই আমরা বারবার ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা বলছি। মির্জা আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, সরকারকে জোরের সঙ্গে বলবো, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় সকল দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে বহন করতে হবে। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেলে থাকাকালে চোখের সমস্যার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তার পছন্দের স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল, পরে বিদেশেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে তার অবস্থার অবনতি ঘটানো হচ্ছে। আমরা বারবার বলছি, এর পেছনে একটি হীন উদ্দেশ্য ও নীলনকশা রয়েছে।
আমরা আশা করি, তার চিকিৎসাটা অন্তত হবে। কত ভয়ঙ্কর হলে তার চিকিৎসাও করানো হয় না। এই অনির্বাচিত সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে অসুস্থ রাখা- যাতে তাকে রাজনীতি ও নির্বাচনের বাইরে রাখা যায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন- ইতিমধ্যে দলের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একমত হয়েছেন যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে, বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রয়োজন। সে জন্য মন্ত্রী বিএনপির প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে আইজি প্রিজনকে ডেকে নিয়ে আনেন। তিনি বলেন, মন্ত্রী বাইরে চলে যাচ্ছিলেন তাই তিনি আইজি প্রিজনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন- তার (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসায় যা যা করা দরকার আপনারা করুন। তিনি বলেন, সাধারণভাবে একজন সাধারণ বন্দির অধিকার আছে সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার। এটা সরকারের দায়িত্ব, তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া। সেই বিষয়ে কোনো আপস করা যাবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কিছু হলে সব দায়দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে। দেশের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
২২শে এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যেখানে খালেদা জিয়ার ভালো চিকিৎসা হবে, সেখানে তার চিকিৎসা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ে আইজি প্রিজনও উপস্থিত ছিলেন। আজকে ২৮শে এপ্রিল (গতকাল) এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, সরকারের অবহেলা বা সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব কোনো মানবিক আচরণ হতে পারে না। এটা সম্ভবত অপরাজনৈতিক আচরণ। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর থেকেই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডে-কেয়ার সেন্টারে আছেন।
No comments