কাতার এখন ‘আক্রমণাত্মক’
ক্ষুদ্র দেশ কাতার তার চার প্রতিবেশী দেশের বয়কটকে দৃঢ়তার সঙ্গেই মোকাবেলা করে চলেছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর এ সংকট ক্রমেই পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। জুনের শুরুতে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ দেয় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর। কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। কাতার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ‘আক্রমণাত্মক’ অবস্থান নিয়েছে। কাতারকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রচারণায় দু’মাস পার হল। জ্বালানিসমৃদ্ধ দেশটি তার হাজার হাজার কোটি ডলারকে তার অর্থনীতি ও নিরাপত্তা শক্তিশালী করার কাজে ব্যয় করছে। দোহা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করেছে যার প্রভাব সম্ভবত ওই অঞ্চলকে এবং তাদের জোটকে নতুন আকার দেবে। মিত্র দেশগুলোর এ সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার চেষ্টা কোনো কাজে আসেনি। বরং এ সংকট নেতিবাচকভাবে কূটনৈতিক ও আইনি অঙ্গনেও বিস্তৃত হয়েছে। কার্নেগি এনডাউনমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক পেরি ক্যামাক বলেন, ‘এটা এখন ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে গিয়েছে, ফলে উভয়পক্ষেরই পিছু হটা কঠিন হয়ে পড়েছে। এটা আরও কিছুদিন হয়তো দুর্গন্ধ ছড়াবে।’ কাতারের ইসলামপন্থীদের সমর্থন এবং সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠিত আলজাজিরায় ইসলামপন্থীদের বক্তব্য প্রচারের সুযোগ দেয়াটা সৌদি জোটের বড় মাথাব্যথার কারণ। এ জন্য আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করার দাবি সৌদি জোটের। তবে কাতার বলেছে, এ দাবি ‘যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবায়নযোগ্য নয়।’ বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী কাতার এখন তার অর্থনীতিকে বহুমুখী ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের জন্য নির্ভরশীলতা কমাতে উঠেপড়ে লেগেছে। এক সময় সৌদি আরব ও আমিরাতের খাদ্যসামগ্রীতে ভরা থাকত কাতারের সুপার মার্কেটগুলো। সেই জায়গা এখন দখল করেছে তুরস্ক ও ইরান। একজন কাতারি ব্যবসায়ী দুধ উৎপাদনের জন্য বিমানে করে ৪ হাজার গাভী আমদানি করছেন। গত সপ্তাহে কাতার খ্যাতনামা ফুটবল তারকা নেইমারকে রেকর্ড ২৬ কোটি ২০ লাখ ডলারে কাতারের মালিকানাধীন সেইন্ট জার্মেইন টিমের জন্য কিনে নেয়। ২০২০ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের আগে এটা কাতারের জন্য ভালো বিনিয়োগ। এটা তার জনসংযোগ বাড়াতে কাজে লাগবে।
গত সপ্তাহেই কাতার নতুন খসড়া আইন প্রকাশ করেছে যাতে বিদেশিদের জন্য কাতারে স্থায়ী বসবাসের পথ সুগম হবে। এছাড়া প্রথমবারের মতো কাতারে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনার সুযোগ থাকছে। কাতারে জমি কেনা যাবে এবং কোনো কাতারি পার্টনার ছাড়াই ব্যবসা করা যাবে। এটা আইনে পরিণত হলে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য তা হবে নজিরবিহীন। উপসাগরীয় দেশগুলো বিদেশি শ্রমিকদের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল হলেও তাদের নাগরিকত্ব দিতে নারাজ। কাতারের ২৭ লাখ জনসংখ্যার ৯০ ভাগই বিদেশি। সৌদি জোটের অবরোধের মুখে কাতার এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদেশিদের তার দেশে আকৃষ্ট করতে এবং কাতারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সচেষ্ট। দোহাকে আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত করতে চায় কাতার। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সংস্কারের অর্থ কাতার দেখাতে চাইছে যে তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে আধুনিক ও সংস্কারমুখী। কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে লড়াই করে যাচ্ছে দোহা। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে দোহা। গত সপ্তাহে ইতালি থেকে ৬০০ কোটি ডলারে সাতটি রণতরী কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতার। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে এফ-ফিফটিন জঙ্গিবিমান কেনার চুক্তি করেছে দোহা। এরই মধ্যে তুরস্কের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়াও চালিয়েছে কাতার। সৌদি জোট কাতার থেকে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি গুটিয়ে নেয়ার দাবি করলেও আংকারা কাতারি ঘাঁটিতে আরও হাজার হাজার সেনা পাঠানোর সবুজ সংকেত দিয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর ইলিয়াস হোসেন
No comments