৭ বছরের শিশুকে আমগাছে লটকে নির্যাতন
সাত বছরের জুয়েলের কচি হাত দুটো দড়ি দিয়ে বেঁধে তাকে লটকানো হয়েছে আমগাছের ডালে। তার সামনে গাছের ডাল হাতে এক যুবক। শিশুটি কেঁদেই যাচ্ছে। আর বলছে, ‘ও কাকা, আমি জানি না। কিচ্ছু জানি না। ও আল্লাহ, আমারে বাঁচাও।’ জুয়েলকে ঘিরে নারী-পুরুষ-শিশুসহ আরও বেশ কিছু মানুষের জটলা। সবার সামনে জুয়েলের শরীরে সপাসপ ডালের আঘাত পড়ে। তার আর্তচিৎকার চারদিকে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু তাকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে আসে না। শিশুটিকে মারধর করতে করতে যুবক বলতে থাকেন, ‘সত্যি করি ক, মোবাইল কনে?’ শিশুটি যতবার ‘জানি না’ বলে, ততবার তার শরীরে জোরে জোরে ডালের বাড়ি পড়ে। মোবাইল চুরির অভিযোগে গতকাল বুধবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় মণ্ডলপাড়া এলাকায় শিশু জুয়েলের ওপর এভাবেই নির্যাতন চলে। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। জুয়েলকে মারধরের ঘটনায় গতকাল রাতেই কুমারখালী থানায় মামলা হয়। এই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। তাঁরা হলেন ছেঁউড়িয়া এলাকার তানজেল (৩৫) ও তাঁর শাশুড়ি রোকেয়া খাতুন (৪৮)। স্থানীয় লোকজন জানায়, বছর তিনেক আগে জুয়েলের বাবা মারা যান। মা অন্যত্র চলে যান। জুয়েলরা তিন ভাই মিলে ছেঁউড়িয়া এলাকায় থাকে। বড় ভাই রব্বেল (২১) স্থানীয় একটি দোকানে কাজ করেন। জুয়েল আরেকটি দোকানে কাজ করে। গত বৃহস্পতিবার ছেঁউড়িয়া এলাকার বাসিন্দা তানজেলের এক নিকটাত্মীয়ের মোবাইল ফোন সেট চুরি যায়। জুয়েলসহ আরেক শিশুর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনেন তিনি। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে জুয়েল প্রথম আলোকে বলে, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে তাকে এক যুবক দোকান থেকে ধরে তানজেলের বাড়ির সামনে নিয়ে যান। তার দুই হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে আমগাছের সঙ্গে টানানো হয়। মোবাইল ফোন সেট চুরির অভিযোগ তুলে তানজেল আমগাছের ডাল ভেঙে তাকে মারতে থাকেন। জুয়েল জানায়, মারধরের সময় আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে ছিল। কেউ কিছু বলেনি। মারধরে তানজেলের সঙ্গে মিরু ও এক নারী যোগ দেন। জুয়েল বলে, ‘আমাকে অনেকক্ষণ ধরি মারিছে। আমি কিছু জানি না বললেও তারা থামেনি।’ প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল মান্নান বলেন, তিনি ঠেকাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বাধা দেন তানজেল। চোরের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে ধাক্কা মারেন। খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে যান জুয়েলের ভাই রব্বেল। তিনি জুয়েলকে উদ্ধার করে সন্ধ্যার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হোসাইন মো. শিহাব জানান, শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের চিহ্ন দেখা গেছে। শরীরের অনেক জায়গা ফোলা। দেখে মনে হয়েছে, শক্ত কিছু দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছে। আঘাতের স্থানগুলোতে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। তাকে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে। জুয়েলকে মারধরের ভিডিও সন্ধ্যার পর সাংবাদিকদের হাতে আসে। বিষয়টি জানতে পেরে রাতে কুমারখালী থানার পুলিশ তানজেল ও তাঁর শাশুড়িকে আটক করে থানায় নেয়। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল খালেক বলেন, জুয়েলকে মারধরের অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলায় তানজেল ও তাঁর শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মারধরের ভিডিওচিত্রে তানজেল ও তাঁর শাশুড়ি রোকেয়াকে দেখা গেছে। পুলিশি হেফাজতে থাকায় ঘটনার বিষয়ে তানজেলের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
No comments