কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের পরাজয়ের নেপথ্যে by কাফি কামাল ও জাহিদ হাসান
কুসিক
নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র
প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর
চেয়ে ১১ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নির্বাচন শেষ,
জয়-পরাজয় নিয়ে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনুকূল পরিবেশেও কেন ভরাডুবি
ঘটলো নৌকার। প্রতিকূল পরিবেশে কিভাবে জয়ী হলো ধানের শীষ। আওয়ামী লীগ ও
বিএনপি নেতাকর্মীসহ কুসিকের নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপে ওঠে
এসেছে জয়-পরাজয়ের নেপথ্যে মুখ্য হয়ে ওঠা বেশ কিছু কারণ। তারা বলছেন, দলীয়
কোন্দল ও পারিবারিক বদনামের বলি হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা
সীমা। এছাড়া নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আস্থার সংকট, নারী ভোটারদের
অনুকূলে আনতে না পারা, জোটের নিষ্ক্রিয়তাসহ একাধিক কারণ রয়েছে নৌকার
পরাজয়ে। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীক, মাঠপর্যায়ে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা,
নেতাকর্মীদের ঐক্য ভূমিকা রেখেছে সাক্কুর বিজয়ে।
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই রয়েছে কোন্দল। কুসিক নির্বাচনে বিএনপি সেই কোন্দল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। শহর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মুছেনি আফজাল খান-আ.ক.ম. বাহাউদ্দিন বাহার দ্বৈরথ। আফজাল খানের রাজনীতি এখন অস্তাচলে হলেও বেড়েছে বাহারের প্রভাব। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজের শক্তিশালী সাংগঠনিক বলয় প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। কিন্তু নগরের রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব দুটি থাকলেও দলীয় কোনো পদে নেই বাহার। পরপর দুবার দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত হওয়ার পরও দলের কোনো কমিটিতে পদ পাননি তিনি। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভারসাম্য আনতে আফজাল কন্যাকে সমর্থন দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সাধারণ সম্পাদক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। পরিকল্পনামন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকার ৭টি ওয়ার্ডে কৌশলে তৎপরতা চালালেও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর ব্যাপারে নির্বাচনী বিধির কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বাহার। নির্বাচনে পুরোপুরি সমন্বয়হীন ও বিভক্ত ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কুসিক নির্বাচনের কয়েকদিন আগে হওয়া নগরীর মর্ডান স্কুলের গভর্নিং বডির নির্বাচনও প্রভাব ফেলেছে ভোটের মাঠে। মর্ডান স্কুল হাতছাড়া হয়ে যায় খান পরিবারের। নির্বাচনের তিনদিন আগে মর্ডান স্কুলের নির্বাচন নগরবাসীর কাছে আফজাল-বাহার দ্বন্দ্বের নতুন বার্তা দেয়। অন্যদিকে নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন বাহারপন্থি নেতাকর্মীদের একাংশ। কিন্তু তাদের বিশ্বাস করতে পারেনি আফজালপন্থিরা। কয়েক জায়গায় দুই গ্রুপের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিবাদের ঘটনাও ঘটেছে। যদিও বাহারের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা বলছেন, ভুল প্রার্থী নির্বাচন ও খান পরিবারের প্রতি মানুষের অনাস্থার কারণে এ বিপর্যয়। অন্যদিকে কুমিল্লা বিএনপি ছিল অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ। কুমিল্লা শহরের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের দ্বৈরথ মুছে দুই বছর আগেই এক হয়েছেন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন। এবার সেই ঐক্যের বাস্তব রূপ দেখা গেছে কুসিক নির্বাচনে। ধর্মসাগর পাড়ে হাজী ইয়াছিনের কার্যালয়টিই ছিল সাক্কুর প্রধান নির্বাচনী কেন্দ্র। দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মিডিয়াসহ সার্বিক বিষয়ে সেখানেই ছিল মনিটরিং সেল। সাক্কু-ইয়াছিনের এ ঐক্য দলের কর্মী-সমর্থকসহ ভোটারদের দিয়েছে একটি ইতিবাচক বার্তা।
মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লার রাজনীতিতে একজন জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী চরিত্র। তার বিপরীতে আঞ্জুম সুলতানা সীমা জেলা আওয়ামী লীগের তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। তিনি ভালো ইমেজের হলেও পরিবারের নেতিবাচক ইমেজ কাটিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। পুরো নগরে পরিচিতিতেও পিছিয়ে ছিলেন তিনি। নৌকা প্রতীকই ছিল তার শক্তি। অন্যদিকে পারিবারিক কারণে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে কুমিল্লায়। পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে তিনি সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছেন। কুমিল্লার উন্নয়নে সরকার দলীয় স্থানীয় এমপি ও কুমিল্লার সন্তান দুই মন্ত্রীর সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন। নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। এ জন্য তিনি নিজ দল বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামেও সক্রিয় হননি। স্থানীয় বিএনপিতে এ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও কুমিল্লার সাধারণ মানুষের কাছে তার এমন অবস্থান ছিল প্রশংসিত।
কুসিকের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভোটারই হিন্দু সম্প্রদায়ের। নগরীর প্রাণকেন্দ্রের ওয়ার্ডগুলোতে তাদের ভোটের সংখ্যাই তুলনামুলক বেশি। কিন্তু শঙ্কর নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায় খান পরিবারের ওপর বিক্ষুব্ধ। তাদের এ ক্ষোভের কথা নগরীতে ওপেন সিক্রেট। নির্বাচনের আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মেয়র হিসেবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে প্রথম থেকেই সুসম্পর্ক তৈরি করেছেন সাক্কু। ফলে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলোতে বেশি ভোট পেয়েছে ধানের শীষ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবার সীমাকে প্রার্থী করায় নারীদের ভোটে এগিয়ে থাকার আশা করেছিল। কিন্তু নারী কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বেশিরভাগ নারী কেন্দ্রে বেশি ভোট পেয়েছে ধানের শীষ।
কুসিক নির্বাচন নিয়ে জোটের রাজনীতিতেও চলেছে নানা কৌশল। কুমিল্লা বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জামায়াতের রিজার্ভ ভোট। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও তারা নিজেদের চার কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিজয়ী করেছে। ধানের শীষের পক্ষেও তাদের ছিল পরোক্ষ অবস্থান। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিল ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টি। কিন্তু ভোটের মাঠে দৃশ্যমান ছিল না তাদের উপস্থিতি। জোটের রাজনীতিও প্রভাব ফেলেছে ভোটের ফলাফলে। এছাড়া নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাপুটে অবস্থানসহ নানা গুজব-গুঞ্জনের কারণে কুসিকবাসীর কাছে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রভাব বিস্তার ও কেন্দ্র দখল করে ভোট ছিনতাই করতে পারে আওয়ামী লীগের লোকজন। এমন শঙ্কা ও গুমোট পরিস্থিতির কারণে ভোটারদের মধ্যে নৌকাবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়। বিশেষ করে ফ্লোটিং ভোটারদের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে বেশি। অন্যদিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রথম নির্বাচন ছিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নিজেদের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কুসিক নির্বাচন ছিল তাদের সামনে এসিড টেস্ট। সারা দেশে মানুষের নজর ছিল কুসিকে। প্রথম থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে। কমিশন শেষ পর্যন্ত নিজেদের কথা রেখেছে। সরকারের তরফে প্রশাসনের ওপর চাপ থাকার কথা শোনা গেছে নানা সময়। কিন্তু প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল কমিশন। ১৭টি কেন্দ্র থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা বদলি, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনায় বাধা দেয়া, নির্বাচনের আগের দিন কুসিকে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা ঘেরাও করা হলেও তাতে অভিযান পরিচালনায় বিলম্বের মাধ্যমে ভোটারদের নির্ভয়ে রাখাসহ নানাভাবে সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। তবে ভোটের হিসাবে আওয়ামী লীগের জন্য রয়েছে কিছুটা স্বস্তি। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে সাক্কু ৬৫,৭৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী আফজল খান পেয়েছিলেন ৩৫,৪২৯ ভোট। এবার কাস্টিংয়ে সাক্কুর ভোট বাড়েনি। তিনি পেয়েছেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট। অন্যদিকে সীমা পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। যা বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ভোটের চেয়ে ২২ হাজার বেশি।
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই রয়েছে কোন্দল। কুসিক নির্বাচনে বিএনপি সেই কোন্দল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। শহর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মুছেনি আফজাল খান-আ.ক.ম. বাহাউদ্দিন বাহার দ্বৈরথ। আফজাল খানের রাজনীতি এখন অস্তাচলে হলেও বেড়েছে বাহারের প্রভাব। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজের শক্তিশালী সাংগঠনিক বলয় প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। কিন্তু নগরের রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব দুটি থাকলেও দলীয় কোনো পদে নেই বাহার। পরপর দুবার দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত হওয়ার পরও দলের কোনো কমিটিতে পদ পাননি তিনি। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভারসাম্য আনতে আফজাল কন্যাকে সমর্থন দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সাধারণ সম্পাদক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। পরিকল্পনামন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকার ৭টি ওয়ার্ডে কৌশলে তৎপরতা চালালেও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর ব্যাপারে নির্বাচনী বিধির কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বাহার। নির্বাচনে পুরোপুরি সমন্বয়হীন ও বিভক্ত ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কুসিক নির্বাচনের কয়েকদিন আগে হওয়া নগরীর মর্ডান স্কুলের গভর্নিং বডির নির্বাচনও প্রভাব ফেলেছে ভোটের মাঠে। মর্ডান স্কুল হাতছাড়া হয়ে যায় খান পরিবারের। নির্বাচনের তিনদিন আগে মর্ডান স্কুলের নির্বাচন নগরবাসীর কাছে আফজাল-বাহার দ্বন্দ্বের নতুন বার্তা দেয়। অন্যদিকে নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন বাহারপন্থি নেতাকর্মীদের একাংশ। কিন্তু তাদের বিশ্বাস করতে পারেনি আফজালপন্থিরা। কয়েক জায়গায় দুই গ্রুপের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিবাদের ঘটনাও ঘটেছে। যদিও বাহারের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা বলছেন, ভুল প্রার্থী নির্বাচন ও খান পরিবারের প্রতি মানুষের অনাস্থার কারণে এ বিপর্যয়। অন্যদিকে কুমিল্লা বিএনপি ছিল অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ। কুমিল্লা শহরের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের দ্বৈরথ মুছে দুই বছর আগেই এক হয়েছেন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন। এবার সেই ঐক্যের বাস্তব রূপ দেখা গেছে কুসিক নির্বাচনে। ধর্মসাগর পাড়ে হাজী ইয়াছিনের কার্যালয়টিই ছিল সাক্কুর প্রধান নির্বাচনী কেন্দ্র। দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মিডিয়াসহ সার্বিক বিষয়ে সেখানেই ছিল মনিটরিং সেল। সাক্কু-ইয়াছিনের এ ঐক্য দলের কর্মী-সমর্থকসহ ভোটারদের দিয়েছে একটি ইতিবাচক বার্তা।
মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লার রাজনীতিতে একজন জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী চরিত্র। তার বিপরীতে আঞ্জুম সুলতানা সীমা জেলা আওয়ামী লীগের তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। তিনি ভালো ইমেজের হলেও পরিবারের নেতিবাচক ইমেজ কাটিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। পুরো নগরে পরিচিতিতেও পিছিয়ে ছিলেন তিনি। নৌকা প্রতীকই ছিল তার শক্তি। অন্যদিকে পারিবারিক কারণে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে কুমিল্লায়। পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে তিনি সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছেন। কুমিল্লার উন্নয়নে সরকার দলীয় স্থানীয় এমপি ও কুমিল্লার সন্তান দুই মন্ত্রীর সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন। নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। এ জন্য তিনি নিজ দল বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামেও সক্রিয় হননি। স্থানীয় বিএনপিতে এ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও কুমিল্লার সাধারণ মানুষের কাছে তার এমন অবস্থান ছিল প্রশংসিত।
কুসিকের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভোটারই হিন্দু সম্প্রদায়ের। নগরীর প্রাণকেন্দ্রের ওয়ার্ডগুলোতে তাদের ভোটের সংখ্যাই তুলনামুলক বেশি। কিন্তু শঙ্কর নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায় খান পরিবারের ওপর বিক্ষুব্ধ। তাদের এ ক্ষোভের কথা নগরীতে ওপেন সিক্রেট। নির্বাচনের আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মেয়র হিসেবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে প্রথম থেকেই সুসম্পর্ক তৈরি করেছেন সাক্কু। ফলে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলোতে বেশি ভোট পেয়েছে ধানের শীষ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবার সীমাকে প্রার্থী করায় নারীদের ভোটে এগিয়ে থাকার আশা করেছিল। কিন্তু নারী কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বেশিরভাগ নারী কেন্দ্রে বেশি ভোট পেয়েছে ধানের শীষ।
কুসিক নির্বাচন নিয়ে জোটের রাজনীতিতেও চলেছে নানা কৌশল। কুমিল্লা বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জামায়াতের রিজার্ভ ভোট। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও তারা নিজেদের চার কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিজয়ী করেছে। ধানের শীষের পক্ষেও তাদের ছিল পরোক্ষ অবস্থান। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিল ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টি। কিন্তু ভোটের মাঠে দৃশ্যমান ছিল না তাদের উপস্থিতি। জোটের রাজনীতিও প্রভাব ফেলেছে ভোটের ফলাফলে। এছাড়া নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাপুটে অবস্থানসহ নানা গুজব-গুঞ্জনের কারণে কুসিকবাসীর কাছে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রভাব বিস্তার ও কেন্দ্র দখল করে ভোট ছিনতাই করতে পারে আওয়ামী লীগের লোকজন। এমন শঙ্কা ও গুমোট পরিস্থিতির কারণে ভোটারদের মধ্যে নৌকাবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়। বিশেষ করে ফ্লোটিং ভোটারদের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে বেশি। অন্যদিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রথম নির্বাচন ছিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নিজেদের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কুসিক নির্বাচন ছিল তাদের সামনে এসিড টেস্ট। সারা দেশে মানুষের নজর ছিল কুসিকে। প্রথম থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে। কমিশন শেষ পর্যন্ত নিজেদের কথা রেখেছে। সরকারের তরফে প্রশাসনের ওপর চাপ থাকার কথা শোনা গেছে নানা সময়। কিন্তু প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল কমিশন। ১৭টি কেন্দ্র থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা বদলি, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনায় বাধা দেয়া, নির্বাচনের আগের দিন কুসিকে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা ঘেরাও করা হলেও তাতে অভিযান পরিচালনায় বিলম্বের মাধ্যমে ভোটারদের নির্ভয়ে রাখাসহ নানাভাবে সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। তবে ভোটের হিসাবে আওয়ামী লীগের জন্য রয়েছে কিছুটা স্বস্তি। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে সাক্কু ৬৫,৭৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী আফজল খান পেয়েছিলেন ৩৫,৪২৯ ভোট। এবার কাস্টিংয়ে সাক্কুর ভোট বাড়েনি। তিনি পেয়েছেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট। অন্যদিকে সীমা পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। যা বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ভোটের চেয়ে ২২ হাজার বেশি।
No comments