‘সরকারের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার ছাত্রদল নেতা নুরু’
কেন্দ্রীয়
ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম নুরু সরকারের টার্গেট কিলিংয়ের
শিকার হয়েছেন এবং পুলিশ গ্রেফতারের পর তার লাশ পাওয়া গেছে বলে মনে করেন
বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ২০০৮ সালের পর থেকে নিজ এলাকা রাউজানে
যেতে পারেননি নুরু। এমনকি তিন মাস আগে বাবার জানাজায়ও অংশ নিতে পারেননি
সন্ত্রাসীদের ভয়ে। ব্যবসায়িক কাজে বেশিরভাগ সময় ঢাকা ও সিলেট থাকতেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে
থাকেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তার সাংগঠনিক কার্যক্রম ও তৎপরতা
বাড়ছিল। মূলত এ কারণেই নুরুল আলম নুরু সরকারি দলের লোকজনের টার্গেটে ছিলেন।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহত্তর চট্টগ্রামে অর্ধদিবস
হরতাল আহ্বান করেছে ছাত্রদল ও জেলা বিএনপি। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়
রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের খেলারঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর পাড়ে নুরুর (৪০)
লাশ পাওয়া যায়। লাশের দুই হাত ও পা নাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা ও মুখে কাপড়
ঢোকানো ছিল। মাথায় গুলি ও সারা শরীরে ছিল জখমের চিহ্ন। এর আগে বুধবার রাত
১২টার দিকে নগরীর চকবাজার থানাধীন চন্দনপুরা মিন্নি মহলের বাসা থেকে ১০-১২
জন পুলিশ পরিচয়ে তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যায়। শুক্রবার দুপুরে
চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ মাঠে বাদ জুমা নুরুর প্রথম ও রাউজানে
দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার পাশে তার লাশ দাফন করা
হয়। জানাজায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও
জেলা নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মর্গে যান
নুুরুর লাশ দেখতে।
তারা এটিকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড এবং এজন্য সরকারদলীয়
সন্ত্রাসী ও প্রশাসনকে দায়ী করেন। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত দাবি
করেন। মর্গে লাশ দেখতে গিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নুরুকে বুধবার
রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে নিয়ে গেছে। পরের দিন দুপুরে লাশ পাওয়া গেছে। বর্তমান
সরকারের যে রাজনীতি, তার শিকার হয়েছে ছাত্রদল নেতা নুরু। মর্গে কথোপকথনের
একপর্যায়ে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদকে
উদ্দেশ করে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মী নিধনে বর্তমান সরকারের চলমান
হত্যাকাণ্ডের প্রক্রিয়ার অংশ এটি। এরপর ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ ধরনের
ঘটনা ঘটছে, ঘটবে। এ সময় বিএনপি নেতারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় আমীর খসরু
মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে ওসির বাকবিতণ্ডা হয়। নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত
হোসেন বলেন, সরকারের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন ছাত্রদল নেতা নুরু।
এজন্য তিনি প্রশাসন ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীদেরও দায়ী করেন। তিনি
যুগান্তরকে বলেন, সিএমপির আওতাভুক্ত এলাকার বাসা থেকে নুরুকে তুলে নেয়া
হয়েছে। পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশ লেখা সাদা
পোশাকধারী লোকজন ছাত্রদল নেতা নুরুকে তুলে নিয়েছে চকবাজারের বাসা থেকে।
জেলা বা রেঞ্জ পুলিশ বলছে, তাদের কোনো লোক সিএমপিতে যায়নি। যদি তাই হয়, তবে
সিএমপি এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। সিএমপিকেই বের করতে হবে, কারা
ছাত্রদলের একজন উচ্চপর্যায়ের গ্রহণযোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতাকে তুলে নিল।
যেভাবে তাকে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তা একাত্তরের গণহত্যাকেই
স্মরণ করিয়ে দেয়। নুরু কোনো ক্যাডার না, সন্ত্রাসী না। তাকে এভাবে তুলে
নিয়ে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এদিকে বুধবার রাতে নুরুকে
তুলে নেয়ার পর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ফোন করে তাকে আদালতে সোপর্দ
করতে পুলিশের কাছে অনুরোধ করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে খালেদা জিয়ার সাবেক
উপদেষ্টা জাহিদ এফ সরদার সাদী রাউজান ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাবেদকে ফোন করে
নুরুকে আদালতে সোপর্দ করার অনুরোধ করেন। জাবেদ উত্তরে বলেন, তারা জঙ্গি
অভিযানে ব্যস্ত আছেন। সরদার সাদীর মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ড ছড়িয়ে
পড়েছে ফেসবুকে।
এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছে অস্ট্রেলিয়া ছাত্রদল।
মর্গে নেতাকর্মীদের ভিড় : শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নুরুর লাশ চট্টগ্রাম
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক
নেতাকর্মী লাশ দেখতে ভিড় জমান। লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। উপস্থিত
ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ
চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী,
খায়রুল কবীর খোকন, শামীমুর রহমান শামীম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ডা.
ফাওয়াজ হোসেন শুভ, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সিনিয়র
সহসভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, ডা. খুরশিদ জামিল
চৌধুরী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মণি, ভিপি নাজিম প্রমুখ। ময়নাতদন্ত
শেষে বেলা ১২টার দিকে স্বজনদের লাশ বুঝিয়ে দেয়ার পর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের
নেতাকর্মীরা লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। প্রথম জানাজা শেষে নুরুর লাশ
নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নিতে চাইলে অনুমতি দেয়নি আইনশৃংখলা
বাহিনী। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা
পর্যন্ত রাউজান থানায় কোনো মামলা হয়নি। এ প্রসঙ্গে রাউজান থানার ওসি
কেফায়েত উল্লাহ বলেন, নিহতের স্বজনরা হয়তো লাশের দাফন নিয়ে ব্যস্ত আছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে।
জানাজায়
যেতে বাধা : রাউজানে দ্বিতীয় দফায় জানাজায় অংশ নিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা
জড়ো হলেও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বাধায় তাদের ফিরে যেতে হয়েছে বলে পরিবারের
অভিযোগ। নুরুর বন্ধু শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, জানাজায় যাতে
নেতাকর্মীরা অংশ নিতে না পারে, সেজন্য সকাল থেকে এলাকায় সশস্ত্র মহড়ায় ছিল
আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোকজন। এদিকে শুক্রবার বাদ আসর রাজধানীর নয়াপল্টনে
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নুরুল আলম নুরুর গায়েবানা জানাজা
অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান,
মোহাম্মদ শাহজাহান, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের
সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন। জানাজায় অংশ নেন বিএনপির
কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়াসহ কয়েকশ’ নেতাকর্মী।
আগামীকাল অর্ধদিবস হরতাল : এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহত্তর চট্টগ্রামে (চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা এবং রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলা) অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে মহানগর বিএনপি ও মহানগর ছাত্রদল। এতে সমর্থন দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান পৃথক বিবৃতিতে এ সমর্থন জানান।
আগামীকাল অর্ধদিবস হরতাল : এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহত্তর চট্টগ্রামে (চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা এবং রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলা) অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে মহানগর বিএনপি ও মহানগর ছাত্রদল। এতে সমর্থন দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান পৃথক বিবৃতিতে এ সমর্থন জানান।
No comments