নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের যুদ্ধ ঘোষণা
এবার
নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দলের কয়েক ডজন কংগ্রেসম্যানের বিরোধিতায়
নিজের প্রণীত স্বাস্থ্য বিল পাস করাতে না পেরে পাল্টা প্রতিরোধের ঘোষণা
দিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ওই সব রিপাবলিকান নেতাদের ভোট না দিতে
সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। খবর বিবিসির। সাবেক প্রেসিডেন্ট
বারাক ওবামার স্বাস্থ্যনীতি (ওবামাকেয়ার) বাতিল করে নতুন নীতি দ্য আমেরিকান
হেলথ কেয়ার অ্যাক্ট চালু করতে চেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে
চূড়ান্ত করা ওই নীতি কংগ্রেসে বিরোধিতার মুখে পড়বে, তা আগেই আন্দাজ
করেছিলেন তিনি। হাউস ফ্রিডম ককাসের প্রধান মার্ক মিডোসকে হুমকি দিয়ে
বলেছিলেন, দ্য আমেরিকান হেলথ কেয়ার অ্যাক্ট পাস করাতে সহযোগিতা না করলে
তাকে ‘দেখে নিবেন’। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার অবশ্য ওই
কথার ব্যাখায় বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট কৌতুক করেছেন। কিন্তু সত্যি সত্যিই
স্বাস্থ্য বিল পাস করাতে না পেরে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের রিপাবলিকান সদস্যদের নিয়ে ফ্রিডম
ককাস গঠিত। এই সদস্যরাই গত সপ্তাহে ট্রাম্পের স্বাস্থ্য বিল পাসের বিরোধিতা
করেন। প্রয়োজনীয় সমর্থনের অভাবে শেষ মুহূর্তে বিলটি প্রত্যাহার করে নেয়া
হয়। তারপর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক দলের মতো ফ্রিডম
ককাসকেও রাজনৈতিক শত্রু বলে অভিহিত করেন। বৃহস্পতিবার এক টুইটার পোস্টে
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ফ্রিডম ককাস রিপাবলিকান দলের সব এজেন্ডাকেই বাধাগ্রস্ত
করবে। তারা টিম স্পিরিট নিয়ে দ্রুত সাড়া দিচ্ছে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে
ডেমোক্রেটদের পাশাপাশি এদের (ককাস) বিরুদ্ধেও লড়তে হবে।’ অবশ্য স্বাস্থ্য
বিল প্রত্যাহারের পরপরই ডেমোক্রেটদের দোষারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি
বলেছিলেন, ‘আমরা এ প্রস্তাবের পক্ষে একজন ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতারও সমর্থন
পাইনি। এ জন্য আমরা সামান্য হলেও লজ্জিত। তাই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে
নেয়া হয়েছে। আমরা এ থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আনুগত্যের শিক্ষা পেয়েছি।’ তিনি
আরও বলেন, ‘আমাদের আরও কিছু দিন ওবামাকেয়ার চালিয়ে যেতে হবে।
ডেমোক্রেটরা
যদি সভ্য হতে পারে, তারা যদি আমাদের সঙ্গে আসে, তাহলে দুই দল মিলে অসাধারণ
একটা স্বাস্থ্যসেবা বিল আমরা দিতে পারব।’ কিন্তু কয়েক দিন পরেই তার অবস্থান
বদলে রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে নামলেন। এদিকে, বুধবার দুপুরে হাউস
স্পিকার পল রায়ানের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, ডেমোক্রেটদের সঙ্গে সমঝোতার
ব্যাপারে তিনি কী ভাবছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি চাই না তা ঘটুক। আমি চাই
সরকার যে, স্বাস্থ্যনীতি নিয়েছে তা চালু হোক। আপনার জীবন ও স্বাস্থ্যনীতি
কেমন হবে তা সরকারের বলে দেয়া উচিত নয়। এটা জনগণের পছন্দের ওপর ছেড়ে দেয়া
দরকার।’ পল রায়ানের এ বক্তব্য ট্রাম্পকে উসকানি দেয়া বলে মনে করছেন
বিশ্লেষকরা। বিরোধী দলের আপত্তি বা মতামতকে আমলে নেয়ার প্রয়োজন নেই- এমন
ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়েছে রায়ানের কণ্ঠে। এ বিষয়ে সমালোচনা করে বৃহস্পতিবার
সকালে রিপাবলিকানের আরেক সিনেটর বব কোরকার টুইটারে লিখেছেন, অনেক দিন পর
আমাদের দেশ এমন একজন স্পিকার পেয়েছে, যিনি প্রেসিডেন্টকে বুদ্ধি দিচ্ছেন,
সমস্যা সমাধানের জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজন নেই!
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির দ্বিদলীয় চরিত্রের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের
পাশাপাশি এখন সরকারের নিজ দলেই বিভক্তি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। ফলে
স্বাস্থ্যনীতিসহ বাজেট, কর ও অন্যান্য ইস্যুতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আরও
বাড়বে। আগামী সপ্তাহেই নিল গর্সাচের সুপ্রিমকোর্টে বিচারপতি হওয়া নিয়ে
ডেমোক্রেটদের কঠোর বিরোধিতা দেখা যাবে।
No comments