আইপিইউ সম্মেলন শুরু আজ- জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধের কৌশল খোঁজা হবে
বিচারহীনতার
সংস্কৃতি থেকে সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদের উত্থান। এর বিস্তার রোধে সরকারের
পাশাপাশি সব দেশের পার্লামেন্ট কিভাবে কাজ করতে পারে তা খুঁজতে কৌশল প্রণয়ন
করতে বসছে আইপিইউভুক্ত দেশগুলো। আজ থেকে ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া আইপিউ’র ১৩৬
সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ওই সংবাদ
সম্মেলন আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং বলেন, অসমতা ও
বিচারহীনতা-ই বিশ্বব্যাপী সহিংস উগ্রবাদ বাড়ার অন্যতম কারণ। আইপিইউ এই
বিষয়গুলো নিয়ে ঢাকার সম্মেলনে আলোচনা করবে। আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন
চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আজ বৈশ্বিক সমস্যা। শুধু সামরিক কৌশল
দিয়ে এর মোকাবিলা করা যাবে না। এর মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। সরকারের
গৃহীত কৌশলের পাশাপাশি পার্লামেন্ট মেম্বাররা কিভাবে এ নিয়ে কাজ করতে পারে
সেই কৌশল ঠিক করতে আইপিইউ নির্বাহী কমিটিতে আলোচনা হবে। সংসদ সরকারের কোন
সমপ্রসারণ নয়। সরকারের বাইরে সংসদের কাজ আছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আইপিইউ কাজ
করবে। সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউ সম্মেলনের আয়োজক জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী বলেন, এবারের আইপিইউ সম্মেলন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক
অভিযাত্রায় একটি বড় অর্জন। গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ, সংসদীয় গণতন্ত্রের
রীতিনীতি চর্চার ক্ষেত্রে আইপিইউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্পিকার এই
আয়োজনে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি জানান, জাতীয়
সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৭ সদস্যের
প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেবে। এই প্রতিনিধি দলের সরকারি-বিরোধী দল,
স্বতন্ত্র ও নারী সংসদ সদস্যরা রয়েছে। আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন
চৌধুরী জানান, এবারই প্রথম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংসদীয় এই সংসদীয় ফোরামটি
‘গ্রিন অ্যাসেম্বলি’ আয়োজন করেছে। তিনি বলেন, আইপিইউ সম্মেলনে যত প্রতিনিধি
আসছেন, তারা প্লেনে করে আসছেন, এখানে অবস্থান করবেন। এসবের কারণে কার্বন
নিঃসরণ হচ্ছে। এটার একটা ক্যালকুলেশন করে তা নিউট্রালাইজ করার পদক্ষেপ নেয়া
হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, সম্মেলন
চলাকালীন ৩রা অথবা ৪ঠা এপ্রিল কার্বন ফুটপ্রিন্ট হিসাব করা হবে। এরপর সে
অনুযায়ী ‘কার্বন নিইউট্রাল’ করতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইপিইউ প্রেসিডেন্ট
জানান, সম্মেলনে কাগজের ব্যবহার কমাতে ‘আইপিউ ১৩৬’ নামে একটি অ্যাপও তৈরী
করা হয়েছে। এদিকে আগামী ৩রা ও ৪ঠা এপ্রিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে
আইপিইউ সম্মেলনে আগত ‘ভিআইপি’দের যাতায়াতের সময় পরিবর্তন করা হবে বলেও
জানান। তিনি বলেন, ওই দুইদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কোনো ভিআইপি
মুভমেন্ট হবে না। পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য
রাখতে এই ব্যবস্থা। এতবড় একটা আয়োজন অনেক ভিআইপি যাতায়াত করবেন। সে কারণে
কিছু সমস্যা হবে। দেশের স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তিনি।
ঢাকায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই সম্মেলনে ১৩২টি সংসদীয় প্রতিনিধি দল অংশ
নিচ্ছে বলে জানান তিনি। এতে অংশ নিতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৩৪৮ জন ঢাকায়
পৌঁছেছে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ৪৫ জন স্পিকার ও ৩৭ জন ডেপুটি স্পিকার অংশ
নেবেন। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে
কিছু ‘লিগ্যাসি’ রেখে যেতে চাই। এবারই প্রথম আইপিইউ টেলিভিশন চালু করা হবে।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধনের পর সবাই ইন্টারনেটে তা
দেখতে পারবে। ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস নিয়ে বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরীতে
আইপিইউ সম্মেলনে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে সাবের হোসেন
চৌধুরী বলেন, এটা নির্ভর করবে বাংলাদেশের এমপিদের ওপর। তারা বিভিন্ন
আলোচনায় এবং বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার সময় এ
ব্যাপারে জনমত তৈরি করতে পারে। দেশে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান এবং সন্ত্রাসী
হামলার কারণে আইপিইউ সম্মেলনের আয়োজনে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে
কি না জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এতবড় একটি সম্মেলন
আয়োজন করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সমগ্র বিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখা
যাচ্ছে। সেখানে আমরা সুষ্ঠুভাবে এটা করতে পারছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ
করছে। তাদের ধন্যবাদ। এখন পর্যন্ত কোথাও কোন সমস্যা হয়নি। এই সম্মেলন
আয়োজনের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হলো বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে। আজ সন্ধ্যায়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে সংসদের
দক্ষিণ প্লাজায় একটি বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
No comments