ভারতীয় নেতৃত্ব কি চাণক্যশাস্ত্রমুক্ত হতে পেরেছে?
৯ এপ্রিল যখন এই কলাম লিখছি, তখনও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে রয়েছেন। তিনি ১০ এপ্রিল সম্ভবত বিকালের দিকে স্বদেশে ফিরে আসবেন। তার দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বিপুল গণসংবর্ধনা দেয়া হবে বলে একটি ঘোষণা এসেছিল। কিন্তু সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী, এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। কী বিবেচনায় এ অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হল, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। হয়তো আমরা আরও পরে এর কারণ জানতে পারব। বিষয়টি নিয়ে কোনোরকম জল্পনা-কল্পনায় যেতে চাই না। তিনি সুস্থ শরীরে স্বদেশে ফিরে আসবেন এ শুভ কামনাই করি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর রাজনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট উত্তাপ ছড়িয়েছে। উত্তাপের মূল কারণ তার ভারত সফরকে নিয়ে নয়। উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে এ সফরকালে যেসব সমঝোতা বা চুক্তি হতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ব্যতিক্রমধর্মী সংবর্ধনা পেয়েছেন। বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে গ্রহণ করেছেন। বিদেশি সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে সাম্প্রতিককালে ভারতে যে রাষ্ট্রাচার প্রচলিত হয়েছে, তার বাইরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সশরীরে বিমানবন্দরে হাজির হয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। এ থেকেই বোঝা যায় ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে। এ দেশের নাগরিক হিসেবে স্বভাবতই আমরা উৎফুল্ল হয়েছি। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আমাদের সুধীসমাজ ও কূটনীতিবিদদের অনেকেই একটি মন্তব্য করে থাকেন। মন্তব্যটি হল- আপনার জীবনসঙ্গী কে হবেন সেটি আপনি নির্বাচন করতে পারেন; কিন্তু আপনার প্রতিবেশী কে হবেন তা আপনার পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ভাব এবং সুসম্পর্কই কাম্য। ভারত আমাদের এমন এক প্রতিবেশী, যা আমাদের তিন দিক থেকে ঘিরে আছে।
যদি বলা হয়, চতুর্দিক থেকে ঘিরে আছে, তাহলেও বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না। শুধু কি তাই? ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আমাদের তিন দিকে ঘিরে রেখেছে। যদিও কাঁটাতারের এ বেড়া সীমান্তের সঠিক জায়গায় দেয়া হয়েছে, তবুও বলতে হবে এটি আস্থাহীনতার বেড়া। পৃথিবীর অনেক জাতীয় রাষ্ট্রের সীমান্ত অন্য জাতীয় রাষ্ট্রের সঙ্গে বিদ্যমান। কিন্তু এক মেক্সিকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দেয়াল তুলে রাখা হলেও অন্য কোথাও এমন বিভেদের প্রাচীর নেই। মেক্সিকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দেয়ালের বাধা সীমান্তজুড়ে নেই। এ কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় উগ্র মার্কিন জাত্যাভিমান চাঙ্গা করার জন্য মেক্সিকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে বড় প্রাচীর নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, প্রাচীর নির্মাণের খরচ মেক্সিকোকে বহন করতে হবে। ট্রাম্পের এ বক্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে। আজকের দুনিয়া মুক্তদ্বার দেশের দুনিয়া। কোনো দেশ অন্য কোনো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। কানেক্টিভিটির ব্যাপারটি আজ সর্বজনস্বীকৃত। বৈশ্বিক এ প্রবণতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ খুবই বেমানান। এটা আর যা হোক, ভারত ও বাংলাদেশকে কাছে নিয়ে আসে না। ভারত প্রাচীন সভ্যতার দেশ। মহাভারতের যুগ থেকে ভারতে একটি সমৃদ্ধ সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। দুটি প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ ভারতের রাজনীতিবিদদের এবং রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের ওপর দারুণ প্রভাব বিস্তার করে আছে। গ্রন্থ দুটি হল মনুসংহিতা ও অর্থশাস্ত্র। অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা ছিলেন চাণক্য। আরেকটি গ্রন্থ ভারতের রাজনীতিবিদদের মনোজগতের ওপর বিশালভাবে না হলেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। এ গ্রন্থটির নাম হল ‘কুরাল’।
এর রচয়িতা ছিলেন কিরুভল্লবর। এ গ্রন্থটিতেও রাজার করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনাবলী রয়েছে। কিরুভল্লবর ছিলেন দক্ষিণ ভারতের মানুষ। ভারতের রাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণ করতে গেলে এ গ্রন্থ তিনটির নির্দেশনা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে, একটি রাষ্ট্রের প্রতিবেশী রাষ্ট্র তার শত্র“। এটাই যদি অন্তরের বিশ্বাস হয় তাহলে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? বাংলাদেশ ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। আমরা ভারতের সঙ্গে যতই সুসম্পর্ক চাই না কেন, ভারত রাষ্ট্রের কর্ণধাররা যদি মনুসংহিতার প্রভাবে আচ্ছন্ন থাকেন তাহলে এ রাষ্ট্রটির কাছ থেকে আমরা সব ব্যাপারে সুবিবেচনা আশা করতে পারি না। অর্থশাস্ত্রে চাণক্য বা কৌটিল্য পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন। পুরো বিষয় সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ এখানে নেই। তবে এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের চুক্তি কেমন হবে সে সম্পর্কে আলোচনা আছে। চাণক্যের মতে, চুক্তি দু’রকম হতে পারে। এক ধরনের চুক্তি হল শর্তযুক্ত চুক্তি এবং অন্য ধরনের চুক্তি হল শর্তহীন চুক্তি। চুক্তির উদ্দেশ্য হল, শর্তহীন হোক বা শর্তযুক্ত হোক, প্রতিপক্ষকে বোকা বানানো, অথবা তাকে প্রতারণা করা। এসব চুক্তির চূড়ান্ত লক্ষ্য হল প্রতিপক্ষের স্বার্থের বিনিময়ে আরও শক্তিশালী হওয়া। চাণক্যের মতে, যদি চুক্তিকারীর পক্ষদ্বয় অভিন্ন উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলেও চুক্তির উদ্দেশ্য হল প্রতিপক্ষের ওপর সুবিধা অর্জন করা। অন্য এক জায়গায় চাণক্য বলেছেন, এক রাজা যদি কোনো যুদ্ধাভিযানে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে তাহলে অভিযানে সাফল্য অর্জনের পর মিত্রকে তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও প্রতারণার কথা বলা হয়েছে।
(সূত্র : The Kautiliza Arthasastra, Part-3, By R. P. KANGLE) বাংলাদেশের সব সরকার ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এসব চুক্তির কোনো কোনোটি বাংলাদেশের স্বার্থেই করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রীয় কর্ণধাররা যদি চাণক্যের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন, তাহলে বাংলাদেশের প্রতারিত হওয়ার আশংকা বাতিল করা যায় না। অনেকেই এ চিন্তার বিরোধিতা করতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের বঞ্চনাবোধ কম নয়। সেটি পানি চুক্তির ক্ষেত্রেই হোক কিংবা অন্য কোনো ক্ষেত্রেই হোক। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে কয়টি চুক্তি বা কয়টি সমঝোতা হয়েছে সেটি বড় কথা নয়। আখেরে এগুলো থেকে বাংলাদেশ কতটুকু উপকৃত হয় সেটিই দেখার বিষয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ দু-একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। ভারত ছয় সপ্তাহের জন্য ফারাক্কা বাঁধের লিংক ক্যানেলটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করতে চেয়েছিল। সেই থেকে যে ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের সম্মতিতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হল, আজও সে পরীক্ষা শেষ হয়নি। এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের আত্মদানকারী সৈনিকদের সম্মাননা দেয়া হয়েছে। এ দৃষ্টান্তটি অনেক আগেই স্থাপিত হতে পারত। তারপরও বলব, এটি ভালো কাজ হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য সব সময়ই কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছে। এ ক্ষেত্রে ভারতেরও কিছু দায় ছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধে বিজয় লাভের পর ভিয়েতনামের নেতা হো চি মিন সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চীনের নেতা মাও জে ডংয়ের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এর জবাবে মাও জে ডং বলেছিলেন, ভিয়েতনাম নয়, বরং চীনেরই ভিয়েতনামের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কারণ ভিয়েতনামের জনগণ রক্তাক্ত যুদ্ধ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনকে প্রতিহত করেছে বলেই চীন মার্কিন আগ্রাসন থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা ভূখণ্ডে ভিয়েতনামিদের প্রতিরোধের ফলে যুদ্ধ বিস্তার করতে পারেনি।
একইভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতিরোধ করেছিল বলেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানিদের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছিল। এর ফলে ভারত তার পূর্ব সীমান্তে জাতশত্র“কে বিদায় করতে পেরেছিল। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ইস্টার্ন কমান্ডে ভারত শত্র“র অবস্থানকে বিতাড়ন করে নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছিল। এর জন্য ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকারও একটি দায় রয়ে গেছে। ভারত কবে বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দিয়ে সেই কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে? অবশ্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর যে যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদানের ঘোষণা এসেছে। আমরা অপেক্ষায় থাকব সেই দিনটির জন্য, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফরে এসে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় প্রতিরক্ষা বিষয়ে চুক্তি হবে বলে বেশ জল্পনা-কল্পনা চলছিল। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চুক্তি না হলেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে- প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ফ্রেম ওয়ার্ক, ভারতের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের সঙ্গে মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের সমঝোতা স্মারক, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সমঝোতা স্মারক এবং ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ৫০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তি হয়নি বটে; কিন্তু সামরিক বিষয়গুলো নিয়ে সমঝোতা স্মারক হয়েছে। সব সামরিক সমঝোতা স্মারক নিয়ে খুব বড় ধরনের বিতর্ক না থাকলেও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়সংক্রান্ত ঋণের সমঝোতা স্মারক নিয়ে এখনও দেশের মধ্যে বিতর্ক চলছে। এ নিয়ে অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও লক্ষ করা যায়। অনেকে এটার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে ভারতীয় ঋণের টাকায় ভারতীয় অস্ত্র কিনতে হবে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছ থেকেই সমরাস্ত্র ক্রয় করে।
তবে এর সিংহভাগ আসে গণচীন থেকে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যখন চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন ক্রয় করল এবং এগুলোকে কমিশন করল, তখন থেকে আমরা লক্ষ করেছি ভারতে শোরগোল পড়েছে। প্রশ্ন তোলা হল, বাংলাদেশের সাবমেরিন কেনার কী প্রয়োজন ছিল? কার বিরুদ্ধে এসব সাবমেরিন ব্যবহার করা হবে? এরপর আমরা লক্ষ করলাম ভারতের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনহর পারিকর, পররাষ্ট্র সচিব জয় শংকর এবং ভারতের সেনাপ্রধান পর পর ঢাকায় এলেন। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জনগণের মনে প্রশ্ন উঠল এসব সফরের উদ্দেশ্য কী? এসব সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা। সবকিছু নিয়ে জনমনে সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে। এরপর যখন সামরিক চুক্তির প্রসঙ্গটি ভারতের মিডিয়াসহ বাংলাদেশের মিডিয়ায় আলোচনা শুরু হল, তখন জনমনে কিছু শঙ্কারও উদ্রেক হল। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ কি তার নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীনভাবে সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করতে পারবে না? এ প্রশ্নগুলো একেবারে ভিত্তিহীন নয়। বাংলাদেশ তার আত্মরক্ষার জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা কাম্য হতে পারে না। সামরিক ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারকগুলো নিয়ে বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি। খুঁটিনাটি বিষয়সহ এগুলোর আদ্যোপান্ত আমরা যখন জানতে পারব তখনই যথার্থ মন্তব্য করা সম্ভব হবে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, মনু কিংবা চাণক্য যাই বলে থাকুন না কেন, সেগুলো ভারতীয় নেতৃত্ব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলবে। তবে এ কথাও সত্য, প্রাচীন সভ্যতার গর্বে গর্বিত একটি রাষ্ট্র তার অতীত দর্শনকে সম্পূর্ণরূপে ভুলে যাবে, এটাও দুরাশামাত্র। মনুর সূত্রানুযায়ী প্রতিবেশীরা যে বন্ধু হতে পারে না তার উদাহরণ তো আমরা পাই ভারত-শ্রীলংকা, ভারত-নেপাল এবং ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে বিদ্যমান অস্বস্তি ও বৈরিতার মধ্যে। বাংলাদেশও এই অস্বস্তি থেকে মুক্ত নয়। কারণ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান হয়নি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা বিলুপ্ত হয়নি। এসব সমস্যার সমাধানে ভারতের তরফ থেকে বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা গত ৪৬ বছর অপেক্ষা করেছি। দু-একটি ক্ষেত্রে ৪০ বছরেরও অধিক সময় পর সমাধান এলেও অন্য সমস্যাগুলো সমাধানের কোনো সম্ভাবনা আশা করা যাচ্ছে না। এমন নিরাশা কিংবা দুরাশা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কতকাল চলবে বলা কঠিন। তবে নিরাশার অবসান হয়, এমন কিছু দ্রুত ঘটলে বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ খুবই খুশি হবে। আমাদের এ সুখের প্রত্যাশা ভারত কবে পূরণ করবে, সেই অপেক্ষায় থাকব।
ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
No comments