নির্বাচন রিয়েলিটি শো নয়
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় গত শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠানে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের সময় হাততালি দেন তাঁর সমর্থকেরা। ছবি: এএফপি |
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার ধরনের তীব্র সমালোচনা করেছেন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। তিনি ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ না করে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হওয়াটা টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো নয়। নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার আগে রিয়েল এস্টেট ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ধনকুবের ট্রাম্প টিভির জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো তারকা ছিলেন। ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফেয়ারফ্যাক্সে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সমর্থনে এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় এই প্রথম কোনো একক সভায় অংশ নিলেন তিনি। সভায় মিশেল ওবামা প্রায় আধা ঘণ্টা বক্তব্য দেন। হিলারির পক্ষ সমর্থনের পাশাপাশি তাঁর স্বামীর আট বছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনার বিষয়েও মুখ খোলেন মিশেল। তিনি বলেন, ‘অনেকেই আছেন, যাঁরা গত আট বছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করছেন এবং করেই যাচ্ছেন। আবার আমার স্বামী এ দেশে জন্ম নিয়েছেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
...আমি বলব, বারাক ক্ষমতায় থাকার সময়ে এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিয়েছেন। তিনি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।’ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আদৌ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মেছেন কি না ট্রাম্প তা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার একেবারে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছিলেন। এ নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ উঠেছিল। তবে মাত্র গেল বৃহস্পতিবার দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রেই জন্মেছেন বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়। পরে এক সভায় ট্রাম্প নিজেও বিষয়টি স্বীকার করে নেন। এর পরপরই গত শুক্রবারের সভায় মিশেল ওবামা কথাগুলো বলেন। সভায় মিশেল বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়াটা টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো নয়। প্রেসিডেন্ট হওয়া মানে টুইটারে অপমানসূচক কথা বলা বা অপমান করে ভাষণ দেওয়া নয়। একজন মানুষ একটি দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার অসামান্য দায়িত্ব পালন করতে পারবে কি পারবে না—এখানে বিচার্য বিষয় এটাই।
মিশেল বলেন, ‘একজন প্রার্থী যদি কথাবার্তায় অসাবধানী হন বা হুমকি দেন, তিনি যদি ভীতি সৃষ্টি করেন বা মিথ্যা কথা বলেন, তাঁর যদি লক্ষ্য পূরণে কোনো স্বচ্ছ পরিকল্পনা না থাকে, যাঁরা দেশের জন্য অসামান্য অবদান রাখেন এমন ব্যক্তিদের অসম্মান করেন; আমি বলে দিচ্ছি—তাঁরা এ ধরনের প্রেসিডেন্টই হবেন। বিশ্বাস করুন, এঁরা এমন ধরনেরই প্রেসিডেন্ট হবেন।’ হিলারির ভূয়সী প্রশংসা করে মিশেল ওবামা সভায় বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী বাছাইপর্বে জিততে না পারলেও তিনি সবকিছু ছেড়ে যাননি। দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। মিশেল বলেন, ‘আমি বলছি, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যে গুণাবলির দরকার তা হিলারির আছে। ...আমি সত্যি সত্যি সত্যিই চাই হিলারি প্রেসিডেন্ট হোন।’ এ বছর মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণা বেশ তিক্ততা ও উত্তেজনায় পূর্ণ। এই প্রচারণা থেকে এত দিন বেশ দূরেই ছিলেন মিশেল ওবামা। শুক্রবারের সভার মধ্যে দিয়ে এই তপ্ত নির্বাচনী প্রচারণায় পদার্পণ ঘটল মিশেলের। এর আগে স্বামীর দুবারের নির্বাচনী প্রচারণায় কাছে কাছেই ছিলেন তিনি। তবে সেই লড়াইগুলোতে এবারের মতো এত তিক্ততার সৃষ্টি হয়নি।
No comments