২৭ বছর পর মায়ের কোলে BY মুক্তার হোসেন
কালো
বলে বাবা আদর করে শিশুকন্যাকে ডাকতেন ‘কালী মা’। কিন্তু সংসারের অভাব-অনটন
স্নেহ-ভালোবাসা মানে না। খাওয়ানো-পরানোর কষ্টে একপর্যায়ে বাবা-মা মেয়েটিকে
পরের বাড়িতে কাজ করতে দেন। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় ঢাকায়। তারপর সে
হারিয়েও যায়।
২৭ বছর পর সেই মেয়েটি ফিরে এসেছে মায়ের কোলে। ফিরে পেয়েছে আপনজনদের। শুধু সেই বাবা নেই, যিনি তাকে আদর করে ‘কালী মা’ বলে ডাকতেন।
নাটোর সদর উপজেলার রায় আমহাটি গ্রামের সেই মা তাঁর মেয়ে মনোয়ারা খাতুনকে গত বুধবার ফিরে পেয়েছেন। বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য সাত বছর বয়সে এই মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীর হাতে। সেখান থেকে হারিয়ে গিয়েছিল মেয়ে।
মনোয়ারার বয়স এখন ৩৫। তিনি রায় আমহাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের মেয়ে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে শুধু মনোয়ারার গায়ের রং ছিল কালো। তাই বাবা-মা আদর করে ডাকতেন ‘কালী মা’।
মনোয়ারা খাতুনের ভাষ্য, তখন তাঁর বয়স ছিল সাত বছরের মতো। অভাবের সংসারে স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য স্থানীয় এক বৃদ্ধার হাতে তাঁকে তুলে দেন মা-বাবা। পুরান ঢাকার আলুবাজারের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাজ জোটে। কিন্তু গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনে কিছুদিনের মধ্যে ওই বাড়ি থেকে পালান তিনি। আশ্রয় নেন অন্য এক ব্যবসায়ীর বাসায়। সেখানে কেটে যায় ১৬ বছর। এত দিন ‘নাটোর’ শব্দটি ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারেননি তিনি। এ অবস্থায় বাসার মালিকও তাঁকে ছাড়তে সাহস পাননি। সেখানকার এক বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীর নাম হারুন অর রশিদ। তাঁরা থাকেন মগবাজার এলাকায়। সুখের সংসারে রয়েছে দুই ছেলে আকাশ (১২) ও আয়ান (৬)।
সন্তানেরা নানা-নানিকে দেখার আবদার করেছে বহুবার। কিন্তু বাবার বাড়ি নাটোরে শুধু এটুকুই তাঁর মনে আছে। তাই স্বামীও সাহস করে তাঁকে নাটোরে নিয়ে যাননি। হঠাৎ নাটোরের এক তৈরি পোশাক-কর্মীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। গত তিন বছর ধরে ওই লোক নাটোরের বিভিন্ন স্থানে তাঁর মা-বাবার সন্ধান করে ব্যর্থ হন। অবশেষে তিনি ওই কর্মীর সঙ্গে বুধবার ভোরে নাটোর আসেন। নাটোরে এসে ঘোরাফেরা করার একপর্যায়ে ভাটোদারা কালী মন্দিরের কাছে এলে তাঁর মনে পড়ে, এখানে তাঁর মেজ বোন সাজেদার বাড়ি ছিল। এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় তিনি বোনকে খুঁজে পান। কিন্তু সাজেদা প্রথমে তাঁকে চিনতে পারেননি। আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি যখন বলেন, ছোট বেলায় বাবা আদর করে তাকে ‘কালী মা’ বলে ডাকতেন, তাঁর বড় বোনের নাম কুলসুম, তখন সাজেদা তাঁকে চিনতে পারেন। পরে মা আর অন্য ভাইবোনদের ডেকে পাঠান। তাঁরা এসে মনোয়ারাকে চিনতে পারেন। জড়িয়ে ধরেন।
বড় ভাই খলিল গাজি তাঁকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। মনোয়ারা গতকাল শুক্রবার দুপুরে মাকে আদর করতে করতে এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘স্বামী আর সন্তানদের মা-ভাইবোনদের খুঁজে পাওয়ার খবর দিছি। ওরা দু-একদিনের মধ্যে নাটোরে আসবে। এরপর মা আর ভাইবোনদের নিয়ে ঢাকায় যাব। এখন জীবনডা বদলায় গেছে!’
বাবার কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মনোয়ারা। তিনি বলেন, ‘সবই পাইছি। কিন্তু আব্বার “কালী মা” ডাকটা পালাম না। এই ডাকটার অভাব আর মিটবে না।’
মা চন্দ্র বানু মেয়ে মনোয়ারাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘২৭ বছর পর আমার “কালী মা” ফিরা আইছে। এত দিন ভাবিছিনু আমার মাইয়াডা মরি গিছে। ওরে পায়া জানডা অনেক ঠান্ডা হয়ছে! এখন মরেও শান্তি পাব!’ তিনি বলেন, ‘এই দিনে তার আব্বা বাঁচি থাকলে সব চাইতে বেশি খুশি হতেন।’
ছয় ভাইবোনের মধ্যে তাঁকেই বাবা বেশি ভালোবাসতেন। বহুবার তিনি ঢাকায় গিয়ে তার খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু কোনো হদিস পাননি। প্রায় দেড় বছর আগে তিনি মারা গেছেন।
খলিল গাজি জানান, যার মাধ্যমে মনোয়ারা ঢাকায় গিয়েছিলেন, সেই মহিলাও আর বেঁচে নেই। তাই তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন যে তিনি আর ফিরে আসবেন না।
বড় বোন কুলসুম বেগম জানান, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনি মনোয়ারাকে দেখতে এসেছেন। প্রথম দেখাতেই তিনি তাকে চিনতে পেরেছেন। তাঁর মতো আত্মীয়স্বজন ও আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ কয়েক দিন ধরে মনোয়ারাকে দেখতে এসেছেন। তাদের পরিবারে যেন উৎসবের আমেজ বইছে।
প্রতিবেশী চিকিৎসক খায়রুল ইসলাম জানান, মনোয়ারার আগমনে সারা গ্রামে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ওদের সংসারে আগের মতো আর অভাব-অনটন নেই। তাঁকে দেখার জন্য শত শত মানুষ আসছে প্রতিদিন। সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হচ্ছে
২৭ বছর পর সেই মেয়েটি ফিরে এসেছে মায়ের কোলে। ফিরে পেয়েছে আপনজনদের। শুধু সেই বাবা নেই, যিনি তাকে আদর করে ‘কালী মা’ বলে ডাকতেন।
নাটোর সদর উপজেলার রায় আমহাটি গ্রামের সেই মা তাঁর মেয়ে মনোয়ারা খাতুনকে গত বুধবার ফিরে পেয়েছেন। বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য সাত বছর বয়সে এই মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীর হাতে। সেখান থেকে হারিয়ে গিয়েছিল মেয়ে।
মনোয়ারার বয়স এখন ৩৫। তিনি রায় আমহাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের মেয়ে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে শুধু মনোয়ারার গায়ের রং ছিল কালো। তাই বাবা-মা আদর করে ডাকতেন ‘কালী মা’।
মনোয়ারা খাতুনের ভাষ্য, তখন তাঁর বয়স ছিল সাত বছরের মতো। অভাবের সংসারে স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য স্থানীয় এক বৃদ্ধার হাতে তাঁকে তুলে দেন মা-বাবা। পুরান ঢাকার আলুবাজারের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাজ জোটে। কিন্তু গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনে কিছুদিনের মধ্যে ওই বাড়ি থেকে পালান তিনি। আশ্রয় নেন অন্য এক ব্যবসায়ীর বাসায়। সেখানে কেটে যায় ১৬ বছর। এত দিন ‘নাটোর’ শব্দটি ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারেননি তিনি। এ অবস্থায় বাসার মালিকও তাঁকে ছাড়তে সাহস পাননি। সেখানকার এক বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীর নাম হারুন অর রশিদ। তাঁরা থাকেন মগবাজার এলাকায়। সুখের সংসারে রয়েছে দুই ছেলে আকাশ (১২) ও আয়ান (৬)।
সন্তানেরা নানা-নানিকে দেখার আবদার করেছে বহুবার। কিন্তু বাবার বাড়ি নাটোরে শুধু এটুকুই তাঁর মনে আছে। তাই স্বামীও সাহস করে তাঁকে নাটোরে নিয়ে যাননি। হঠাৎ নাটোরের এক তৈরি পোশাক-কর্মীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। গত তিন বছর ধরে ওই লোক নাটোরের বিভিন্ন স্থানে তাঁর মা-বাবার সন্ধান করে ব্যর্থ হন। অবশেষে তিনি ওই কর্মীর সঙ্গে বুধবার ভোরে নাটোর আসেন। নাটোরে এসে ঘোরাফেরা করার একপর্যায়ে ভাটোদারা কালী মন্দিরের কাছে এলে তাঁর মনে পড়ে, এখানে তাঁর মেজ বোন সাজেদার বাড়ি ছিল। এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় তিনি বোনকে খুঁজে পান। কিন্তু সাজেদা প্রথমে তাঁকে চিনতে পারেননি। আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি যখন বলেন, ছোট বেলায় বাবা আদর করে তাকে ‘কালী মা’ বলে ডাকতেন, তাঁর বড় বোনের নাম কুলসুম, তখন সাজেদা তাঁকে চিনতে পারেন। পরে মা আর অন্য ভাইবোনদের ডেকে পাঠান। তাঁরা এসে মনোয়ারাকে চিনতে পারেন। জড়িয়ে ধরেন।
বড় ভাই খলিল গাজি তাঁকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। মনোয়ারা গতকাল শুক্রবার দুপুরে মাকে আদর করতে করতে এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘স্বামী আর সন্তানদের মা-ভাইবোনদের খুঁজে পাওয়ার খবর দিছি। ওরা দু-একদিনের মধ্যে নাটোরে আসবে। এরপর মা আর ভাইবোনদের নিয়ে ঢাকায় যাব। এখন জীবনডা বদলায় গেছে!’
বাবার কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মনোয়ারা। তিনি বলেন, ‘সবই পাইছি। কিন্তু আব্বার “কালী মা” ডাকটা পালাম না। এই ডাকটার অভাব আর মিটবে না।’
মা চন্দ্র বানু মেয়ে মনোয়ারাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘২৭ বছর পর আমার “কালী মা” ফিরা আইছে। এত দিন ভাবিছিনু আমার মাইয়াডা মরি গিছে। ওরে পায়া জানডা অনেক ঠান্ডা হয়ছে! এখন মরেও শান্তি পাব!’ তিনি বলেন, ‘এই দিনে তার আব্বা বাঁচি থাকলে সব চাইতে বেশি খুশি হতেন।’
ছয় ভাইবোনের মধ্যে তাঁকেই বাবা বেশি ভালোবাসতেন। বহুবার তিনি ঢাকায় গিয়ে তার খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু কোনো হদিস পাননি। প্রায় দেড় বছর আগে তিনি মারা গেছেন।
খলিল গাজি জানান, যার মাধ্যমে মনোয়ারা ঢাকায় গিয়েছিলেন, সেই মহিলাও আর বেঁচে নেই। তাই তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন যে তিনি আর ফিরে আসবেন না।
বড় বোন কুলসুম বেগম জানান, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনি মনোয়ারাকে দেখতে এসেছেন। প্রথম দেখাতেই তিনি তাকে চিনতে পেরেছেন। তাঁর মতো আত্মীয়স্বজন ও আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ কয়েক দিন ধরে মনোয়ারাকে দেখতে এসেছেন। তাদের পরিবারে যেন উৎসবের আমেজ বইছে।
প্রতিবেশী চিকিৎসক খায়রুল ইসলাম জানান, মনোয়ারার আগমনে সারা গ্রামে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ওদের সংসারে আগের মতো আর অভাব-অনটন নেই। তাঁকে দেখার জন্য শত শত মানুষ আসছে প্রতিদিন। সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হচ্ছে
No comments