আপন রূপ ফিরে পাচ্ছে মেলা BY মাসুম আলী

অমর একুশে বইমেলার স্টলে পছন্দের বই খুঁজছে শিশুরা।
গতকাল ছুটির দিনের সকালটা ছিল বিশেষ করে তাদের জন্য
l ছবি: প্রথম আলো
 
মেলায় মানুষের ঢল নেমেছিল গতকাল শুক্রবার। বইমেলা যেন ছুটির দিনে তার আপন রূপ ফিরে পেল। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলায় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেককেই জোট বেঁধে আড্ডা দিতে দেখা যায়। বিক্রিবাট্টাও ছিল ভালো।
তবে হ্যাপাও ছিল। মানুষের পায়ে পায়ে ধুলা উড়ে বাতাস করে তুলেছিল ভারী। মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটানো হয়নি—এমন অভিযোগ দর্শনার্থীদের। তবে ধুলা মাড়িয়ে সবাই ছুটে গেছেন পছন্দের বইটি কিনতে
মেলার এই ভিড় হাসি ফুটিয়েছে প্রকাশকদের মুখেও। অনিন্দ্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী আফজাল হোসাইন বললেন, বইমেলা এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার বিপুল পাঠকের সমাগম ঘটেছে।
কথাপ্রকাশের সম্পাদক ও প্রকাশক জসিম উদদীন বলেন, আজকেই মূলত মেলা শুরু হলো। কারণ, এ কয়েক দিন কমবেশি মানুষ হলেও বিক্রি তেমন একটা হয়নি। আজ ভিড়ের সঙ্গে বিক্রিও হয়েছে ভালো।
সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এবার বৃহৎ পরিসরে মেলা হওয়ায় এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে পাঠকেরা আসছেন। আমি আশাবাদী এবারের মেলা নিয়ে।’ ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের উদ্যোক্তা জহিরুল আবেদিন হতাশা প্রকাশ করেন ধুলাবালি নিয়ে। বলেন, এই ধুলাতে স্টলে বসে থেকে বিক্রি করা কঠিন।
প্রথমা প্রকাশনের সামনে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়কারী জাফর আহমদ বলেন, নতুন বইয়ের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো বইগুলোও পাঠকেরা খুঁজছেন।
গতকাল নিরাপত্তার বিষয়টি আবারও নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সন্ধ্যার কিছুটা আগে বইমেলা পরিদর্শনে আসেন তিনি। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই জানিয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, মেলা প্রাঙ্গণের নানা দিকে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। দুরবিন দিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরায় সব ভিডিও ফুটেজে প্রত্যেক দর্শনার্থীর আগমন-নির্গমন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বিকেল পাঁচটার দিকে বইমেলা পরিদর্শনে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত বছর সেতুমন্ত্রীর একটি উপন্যাস বেরিয়েছিল বইমেলায়। এবার বেরিয়েছে তাঁর সাংবাদিকতা জীবন নিয়ে বই যখন সাংবাদিক ছিলাম। চারুলিপি প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে বইটি।
বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে গুলতেকিন খানের আজো, কেউ হাঁটে অবিরাম বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে কবি গুলতেকিন খান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তাম্রলিপির প্রকাশক এ কে এম তরিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে গুলতেকিন বলেন, ‘আমি কবিতাগুলো নিজের মতো করে লিখেছি। এ কবিতাগুলোর কোনো একটি কিংবা কোনোটির দুই লাইন যদি আপনাদের কারও ভালো লাগে, সেটাই আমার সার্থকতা।’
সকালে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা: এর আগে সকাল সাড়ে আটটায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বসেছিল শিশু-কিশোর মেলা। তাদের জন্য সেখানে আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার। রংপেনসিল শহীদ মিনার, ফুল-ফল-প্রকৃতির ছবি মনের মাধুরী মিশিয়ে আঁকে তারা। আর তাদের জন্য বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সিসিমপুরের হালুম-ইকরি-টুকটুকি।
মূল মঞ্চের আয়োজন: বিকেল চারটায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী: অভিধান ও ব্যাকরণ কর্মসূচি, অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার। আলোচনা করেন অধ্যাপক হাকিম আরিফ ও অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আহমদ কবির। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বেগম রাহিজা খানম ঝুনুর পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’-এর শিল্পীবৃন্দ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আবদুল লতিফ শাহ্, শফি মণ্ডল, রণজিৎ দাস বাউল, মমতা দাসী বাউল, ভজন কুমার ব্যাধ ও কোহিনুর আকতার গোলাপী।
নতুন বই: বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী গতকাল মেলায় নতুন ২৫৬টি বই এসেছে। নতুন বইয়ের তালিকায় প্রথমা প্রকাশন এনেছে গোলাম মুরশিদের আধুনিকতার অভিঘাতে বঙ্গরমণী, গেইল তুরিনের লেখা অসিত রায় অনূদিত আতঙ্কের দেয়াল: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত, কাইয়ুম চৌধুরীর জীবনে আমার যত আনন্দ ইত্যাদি।
এ ছাড়া মেলায় কথা প্রকাশন এনেছে সেলিনা হোসেনের নিঃসঙ্গতার মুখর সময়, মুনতাসীর মামুনের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি: দুই রাষ্ট্রপতি হত্যা, কবি প্রকাশন এনেছে নির্মলেন্দু গুণের না প্রেমিক না বিপ্লবী, রাতুল গ্রন্থপ্রকাশ এনেছে শামসুজ্জামান খানের নিষ্ঠুর রাজা ও দশ ভাই ইত্যাদি।
আজও মেলার দ্বার খুলবে ১১টায়: আজ শনিবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত অভিভাবকসহ শিশুদের স্বাচ্ছন্দ্যে বই কেনার সুবিধার্থে শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে

No comments

Powered by Blogger.