দেশে সন্ত্রাসবাদ নতুন মাত্রা পেতে চলেছে :সাক্ষাৎকারে -এম মুনিরুজ্জামান by মিজানুর রহমান খান
মেজর জেনারেল এম মুনিরুজ্জামান |
হোসেনি
দালানে হামলার প্রায় পাঁচ সপ্তাহ পর বগুড়ায় একটি শিয়া মসজিদেও হামলা
হয়েছে। এ পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক
স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এম মুনিরুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো: এই হামলাকে কীভাবে দেখছেন?
মুনিরুজ্জামান: প্রতিনিয়ত আমরা হুমকি ও সহিংসতাকবলিত হচ্ছি। এটা একটা নতুন সমস্যা। একই সঙ্গে আমার কাছে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে হামলাগুলো হচ্ছে, তার মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে। এর আগে হোসেনি দালানে যে হামলা হলো এবং এবারে বগুড়ায় যে শিয়া মসজিদে হামলা হলো, দুটোই আমাদের ইতিহাসের প্রথম ঘটনা। এসবই আমাদের জাতীয় জীবনে নতুন ধরনের ব্যাপার, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এসব ঘটনা বড় ধরনের একটা গোষ্ঠীগত সহিংসতায় রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে, যেটা বাংলাদেশে কোনো সময়ে ছিল না। বাংলাদেশে সব ধর্ম ও গোষ্ঠীর একটা সহাবস্থান ছিল। পাবনায় একজন পাদরি হামলার শিকার হন। তিনি বেঁচে গেছেন। এরপর ইতালীয় ধর্মযাজকের ওপর আক্রমণ চলে। সব শেষ আরও ১০ জন ধর্মযাজককে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এখানেও আমরা একটি গোষ্ঠীগত হিংসাশ্রয়ী রূপ দেখতে পাচ্ছি। এসব আলামত একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব যদি আরও বিস্তার লাভ করে, তাহলে আমাদের জন্য তা একটি বড় হুমকি হিসেবে আসবে।
প্রথম আলো: সবশেষ হামলার কোনো বিশেষ তাৎপর্য?
মুনিরুজ্জামান: বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ যে এভাবে একটা গোষ্ঠীগত নতুন মাত্রা পেতে চলেছে, তার একটা আভাস আমরা সম্প্রতি সিরীয় পত্রিকা দাবিক-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দেখতে পেয়েছিলাম। ওই নিবন্ধ আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছি, সেখানে শিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে একধরনের বিদ্বেষের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এই হামলা চালানো হলো কি না, সেই প্রশ্নের মুখে আমরা দাঁড়িয়ে গেছি। ওই নিবন্ধে কিন্তু আভাস ছিল, এভাবে তাদের হামলা করতে হবে। তাই অনেকে বলতে পারেন, বগুড়ার ঘটনাকে খুব আকস্মিক বলা যায় না।
প্রথম আলো: জঙ্গিবাদের সমস্যা আগেও ছিল, তার সঙ্গে আমরা অনেক সময় আফগানিস্তান ও আল-কায়েদাকেন্দ্রিক চিন্তাচেতনার একটা যোগসাজশ দেখে আসছিলাম, এখনো কি তারই ধারাবাহিকতা, নাকি কোনো নতুন ধারার সূচনা ঘটছে?
মুনিরুজ্জামান: প্রবণতাগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা দেখি, আল-কায়েদা এত দিন ধরে যে ধরনের হামলা চালিয়েছে, তার সঙ্গে এবারের ধারার কোনো মিল নেই। এটা একটা নতুন ধারা, সিরীয় যুদ্ধের ভেতর থেকে যে নতুন গোষ্ঠী বিস্তার লাভ করেছে, তাদের দ্বারা সংঘটিত কর্মকাণ্ড ও প্রবণতাগুলোর সঙ্গে এর মিল পাওয়া যাচ্ছে। দাবিক নিবন্ধ তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। শিয়া মসজিদে হামলার পরেই আইএস কথিতমতে এটা তাদের হামলা বলে দাবি করেছে।
প্রথম আলো: সিরিয়ার বাইরে বিশ্বের অন্যত্র আইএসের নামে যা ঘটছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, সেখানে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে সহিংসতা ঘটছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না, এখানে কেন ঘটছে? যারা করছে তারা কি দ্রুত কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে চায়?
মুনিরুজ্জামান: এটা বলা হচ্ছে যে, তাদের তরফে আমরা ধীরে ধীরে বড় কোনো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার প্রস্তুতিপর্ব দেখছি কি না। অজানা বৃহত্তর কোনো লক্ষ্য সামনে রেখে হয়তো এখানে এত ঘন ঘন হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, যা আমরা এখনো হলফ করে বলতে পারি না। আল-কায়েদার ভারতীয় চ্যাপ্টারের সঙ্গে সিরিয়াভিত্তিক ওই সংগঠনের একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতার লক্ষণ দেখি।
প্রথম আলো: কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার এত জায়গা থাকতে বাংলাদেশ কেন অগ্রাধিকার পাচ্ছে?
মুনিরুজ্জামান: এই প্রশ্নের উত্তরে ওই দাবিক নিবন্ধের বরাতেই এটা উল্লেখ করতে চাই, তারা হয়তো ভবিষ্যতে মিয়ানমারকে লক্ষ্য করে এখানে আগে তাদের সক্রিয় উপস্থিতির কথা জানান দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। যেহেতু তারা লক্ষ করছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর একটা চাপ বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলছে। বাংলাদেশ থেকে তারা সেখানে কোনোভাবে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাতে পারে। সেটা বাস্তবে ঘটবে কি না জানি না, তবে আমাদেরকে এটা নিরাপত্তা হুমকির জায়গা থেকে মনে রাখাই সমীচীন হবে। তাদের লক্ষ্যবস্তুটা কোনদিকে, সেটা আরও কিছুটা সময় গেলে হয়তো সম্পূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করা যাবে।
প্রথম আলো: এই হামলাকে কীভাবে দেখছেন?
মুনিরুজ্জামান: প্রতিনিয়ত আমরা হুমকি ও সহিংসতাকবলিত হচ্ছি। এটা একটা নতুন সমস্যা। একই সঙ্গে আমার কাছে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে হামলাগুলো হচ্ছে, তার মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে। এর আগে হোসেনি দালানে যে হামলা হলো এবং এবারে বগুড়ায় যে শিয়া মসজিদে হামলা হলো, দুটোই আমাদের ইতিহাসের প্রথম ঘটনা। এসবই আমাদের জাতীয় জীবনে নতুন ধরনের ব্যাপার, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এসব ঘটনা বড় ধরনের একটা গোষ্ঠীগত সহিংসতায় রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে, যেটা বাংলাদেশে কোনো সময়ে ছিল না। বাংলাদেশে সব ধর্ম ও গোষ্ঠীর একটা সহাবস্থান ছিল। পাবনায় একজন পাদরি হামলার শিকার হন। তিনি বেঁচে গেছেন। এরপর ইতালীয় ধর্মযাজকের ওপর আক্রমণ চলে। সব শেষ আরও ১০ জন ধর্মযাজককে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এখানেও আমরা একটি গোষ্ঠীগত হিংসাশ্রয়ী রূপ দেখতে পাচ্ছি। এসব আলামত একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব যদি আরও বিস্তার লাভ করে, তাহলে আমাদের জন্য তা একটি বড় হুমকি হিসেবে আসবে।
প্রথম আলো: সবশেষ হামলার কোনো বিশেষ তাৎপর্য?
মুনিরুজ্জামান: বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ যে এভাবে একটা গোষ্ঠীগত নতুন মাত্রা পেতে চলেছে, তার একটা আভাস আমরা সম্প্রতি সিরীয় পত্রিকা দাবিক-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দেখতে পেয়েছিলাম। ওই নিবন্ধ আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছি, সেখানে শিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে একধরনের বিদ্বেষের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এই হামলা চালানো হলো কি না, সেই প্রশ্নের মুখে আমরা দাঁড়িয়ে গেছি। ওই নিবন্ধে কিন্তু আভাস ছিল, এভাবে তাদের হামলা করতে হবে। তাই অনেকে বলতে পারেন, বগুড়ার ঘটনাকে খুব আকস্মিক বলা যায় না।
প্রথম আলো: জঙ্গিবাদের সমস্যা আগেও ছিল, তার সঙ্গে আমরা অনেক সময় আফগানিস্তান ও আল-কায়েদাকেন্দ্রিক চিন্তাচেতনার একটা যোগসাজশ দেখে আসছিলাম, এখনো কি তারই ধারাবাহিকতা, নাকি কোনো নতুন ধারার সূচনা ঘটছে?
মুনিরুজ্জামান: প্রবণতাগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা দেখি, আল-কায়েদা এত দিন ধরে যে ধরনের হামলা চালিয়েছে, তার সঙ্গে এবারের ধারার কোনো মিল নেই। এটা একটা নতুন ধারা, সিরীয় যুদ্ধের ভেতর থেকে যে নতুন গোষ্ঠী বিস্তার লাভ করেছে, তাদের দ্বারা সংঘটিত কর্মকাণ্ড ও প্রবণতাগুলোর সঙ্গে এর মিল পাওয়া যাচ্ছে। দাবিক নিবন্ধ তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। শিয়া মসজিদে হামলার পরেই আইএস কথিতমতে এটা তাদের হামলা বলে দাবি করেছে।
প্রথম আলো: সিরিয়ার বাইরে বিশ্বের অন্যত্র আইএসের নামে যা ঘটছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, সেখানে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে সহিংসতা ঘটছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না, এখানে কেন ঘটছে? যারা করছে তারা কি দ্রুত কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে চায়?
মুনিরুজ্জামান: এটা বলা হচ্ছে যে, তাদের তরফে আমরা ধীরে ধীরে বড় কোনো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার প্রস্তুতিপর্ব দেখছি কি না। অজানা বৃহত্তর কোনো লক্ষ্য সামনে রেখে হয়তো এখানে এত ঘন ঘন হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, যা আমরা এখনো হলফ করে বলতে পারি না। আল-কায়েদার ভারতীয় চ্যাপ্টারের সঙ্গে সিরিয়াভিত্তিক ওই সংগঠনের একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতার লক্ষণ দেখি।
প্রথম আলো: কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার এত জায়গা থাকতে বাংলাদেশ কেন অগ্রাধিকার পাচ্ছে?
মুনিরুজ্জামান: এই প্রশ্নের উত্তরে ওই দাবিক নিবন্ধের বরাতেই এটা উল্লেখ করতে চাই, তারা হয়তো ভবিষ্যতে মিয়ানমারকে লক্ষ্য করে এখানে আগে তাদের সক্রিয় উপস্থিতির কথা জানান দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। যেহেতু তারা লক্ষ করছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর একটা চাপ বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলছে। বাংলাদেশ থেকে তারা সেখানে কোনোভাবে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাতে পারে। সেটা বাস্তবে ঘটবে কি না জানি না, তবে আমাদেরকে এটা নিরাপত্তা হুমকির জায়গা থেকে মনে রাখাই সমীচীন হবে। তাদের লক্ষ্যবস্তুটা কোনদিকে, সেটা আরও কিছুটা সময় গেলে হয়তো সম্পূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করা যাবে।
No comments