অবহেলায় তিন নবজাতকের মৃত্যু by শহিদুল ইসলাম রাজী
চিকিৎসা অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে গা ঢাকা দিয়েছে মোহাম্মদপুরের এশিয়ান কার্ডিয়াক অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্তৃপক্ষ। তাই রোগীদেরঅন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন স্বজনেরা : নয়া দিগন্ত |
অবৈধ এশিয়ান হাসপাতাল বন্ধ; রোগী ফেলে পালিয়েছে মালিক-কর্মচারী
মাত্র
দুই ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর লালমাটিয়ার এশিয়ান কার্ডিয়াক অ্যান্ড
জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে তিন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে
অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত এক ছেলেশিশুর বয়স দুই মাস, এক মেয়েশিশুর বয়স এক
মাস ও অপর মেয়ে নবজাতকের বয়স এক দিন। স্বজনদের অভিযোগÑ হাসপাতালের
অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, ঢাকা মেডিক্যালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে দালালদের মাধ্যমে রোগী বাগিয়ে ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এনআইসিইউতে ভর্তি করা হতো। বর্তমানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সব ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারী গা-ঢাকা দিয়েছেন। এরই মধ্যে হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ ঘটনায় গত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি জালাল উদ্দিন মীর। তিনি বলেন, এখনো তদন্ত চলছে। যেসব নবজাতক মারা গেছে, তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের লোকজন এসে হাসপাতালটিকে বন্ধ করে দিয়ে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ, স্থানীয় ও হাসপাতালের দু’টি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছেÑ গত চার দিনে হাসপাতালটির নিউনেটাল কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ) তে ছয় নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাত ১০টা থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় তিনজনের। মারা যাওয়া নবজাতকদের জš§ হয়েছে অপরিণত অবস্থায়। হাসপাতালটিতে এখানে এনআইসিইউ দূরের কথা, সাধারণ চিকিৎসা সঠিকভাবে চালানোর মতো কোনো দক্ষ চিকিৎসক-নার্স নেই।
তাহলে রোগী আসে কীভাবে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু নবজাতকই নয়, এ হাসপাতালের বেশির ভাগ রোগী আসেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। এক সময় এ হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ডা: শিশির রঞ্জন দাস ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চাকরি করতেন। সেই সূত্রে তিনি ঢাকা মেডিক্যালের ভাড়াটে দালালের মাধ্যমে এখানে রোগী আনতেন। রোগী শিকারে হাসপাতালের আরো দুই অংশীদার লিয়াকত ও শিহাব নিয়মিত ঘোরাঘুরি করেন ঢাকা মেডিক্যালে। দেশের সরকারি হাসপাতালে এনআইসিইউর তীব্র সঙ্কট থাকায় তারা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রোগী বাগিয়ে আনেন। বর্তমানে তাদের সবাই পলাতক। আর আইনগত ঝামেলা এড়াতে শুক্রবার রাতে তিন নবজাতকের মৃত্যুর পরই তাদের অভিভাবককে লাশগুলো তড়িঘড়ি করে দিয়ে বিদায় করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) অধ্যাপক ডা: সামিউল ইসলাম সাদি নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০১৩-১৪ সালের পর ওই হাসপাতালটি তাদের লাইসেন্স নবায়ন করেনি। অর্থাৎ তাদের বর্তমান কার্যক্রম অবৈধ। এখানে আইসিইউ, এনআইসিইউ চালানোর কোনো অনুমতিও নেই। তাই আমরা অবৈধ এ হাসপাতালকে পুলিশের সহযোগিতায় বন্ধ করে দিয়েছি। হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে আমরা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। এ ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এ পরিচালক।
সরেজমিন গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালটিতে দেখা গেছে, নবজাতকদের মৃত্যুর পর হাসপাতালের সবাই গা-ঢাকা দেয়ায় চিকিৎসা না পেয়ে এবং ভয়ে জীবিত নবজাতকদের নিয়ে যাচ্ছিলেন অভিভাবকেরা। এ সময় তারা বেশ আতঙ্কিত ও কান্নারত ছিলেন। হাসপাতালের অন্য বিভাগে চিকিৎসাধীন প্রাপ্ত বয়স্কদেরও সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল।
এ সময় হাসপাতালে গিয়ে দুইজন নবজাতক এনআইসিইউতে আছে বলে জানা যায়। ধামরাইয়ের বাসিন্দা রহিম, তিন দিন বয়সী তার ছেলে শিশুকে এখানে এনেছিলেন জšে§র কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা মেডিক্যাল থেকে।
তিনি জানান, সিজারিয়ানের মাধ্যমে অসময়ে (প্রি-ম্যাচিউরড) জন্মগ্রহণ করায় ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা বলেছিলেন এনআইসিইউতে ভর্তি করতে। কিন্তু সেখানে সিট না থাকায় মোবাইলে ডা: শিশিরের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন নবজাতক বিভাগের একজন মধ্য বয়সী কর্মচারী। তিনি এ কর্মচারীর নাম জানাতে পারেননি। কথা বলার পরই তিনি তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্স এনে সিলিন্ডার অক্সিজেন ব্যবহার করে তার শিশুকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।
দুই দিন বয়সী এক কন্যাশিশুর মামা সোহেল। তিনি জানান, সিজারের মাধ্যমে পুরান ঢাকার সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে জন্ম হয় তার ভাগ্নির। অপরিণত (সাত মাস) হওয়ায় চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, এনআইসিইউতে নিতে। এরপর যোগাযোগ করা হয় ঢাকা মেডিক্যালে। কিন্তু সিট না পেলেও ঢাকা মেডিক্যালের এনআইসিইউর একজন কর্মচারীর মাধ্যমে ভাগ্নিকে নিয়ে আসেন এশিয়ান হাসপাতালে। শিশুটির মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক জানিয়ে তিনি জানান, তার বোন আছেন সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ শিশুকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয় বলে মোহাম্মদপুর থানার এসআই কামরুজ্জামান জানিয়েছেন।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জালাল উদ্দিন মীর জানান, পুলিশ হাসপাতালে কাউকে খুঁজে পায়নি। চেষ্টা চলছে। হাসপাতালের মালিক সম্পর্কে পুলিশ কিছু জানতে পারেনি। তবে তারা জেনেছে, হাসপাতালের মালিকানা সম্প্রতি পরিবর্তন হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা মেডিক্যালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে দালালদের মাধ্যমে রোগী বাগিয়ে ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এনআইসিইউতে ভর্তি করা হতো। বর্তমানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সব ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারী গা-ঢাকা দিয়েছেন। এরই মধ্যে হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ ঘটনায় গত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি জালাল উদ্দিন মীর। তিনি বলেন, এখনো তদন্ত চলছে। যেসব নবজাতক মারা গেছে, তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের লোকজন এসে হাসপাতালটিকে বন্ধ করে দিয়ে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ, স্থানীয় ও হাসপাতালের দু’টি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছেÑ গত চার দিনে হাসপাতালটির নিউনেটাল কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ) তে ছয় নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাত ১০টা থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় তিনজনের। মারা যাওয়া নবজাতকদের জš§ হয়েছে অপরিণত অবস্থায়। হাসপাতালটিতে এখানে এনআইসিইউ দূরের কথা, সাধারণ চিকিৎসা সঠিকভাবে চালানোর মতো কোনো দক্ষ চিকিৎসক-নার্স নেই।
তাহলে রোগী আসে কীভাবে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু নবজাতকই নয়, এ হাসপাতালের বেশির ভাগ রোগী আসেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। এক সময় এ হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ডা: শিশির রঞ্জন দাস ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চাকরি করতেন। সেই সূত্রে তিনি ঢাকা মেডিক্যালের ভাড়াটে দালালের মাধ্যমে এখানে রোগী আনতেন। রোগী শিকারে হাসপাতালের আরো দুই অংশীদার লিয়াকত ও শিহাব নিয়মিত ঘোরাঘুরি করেন ঢাকা মেডিক্যালে। দেশের সরকারি হাসপাতালে এনআইসিইউর তীব্র সঙ্কট থাকায় তারা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রোগী বাগিয়ে আনেন। বর্তমানে তাদের সবাই পলাতক। আর আইনগত ঝামেলা এড়াতে শুক্রবার রাতে তিন নবজাতকের মৃত্যুর পরই তাদের অভিভাবককে লাশগুলো তড়িঘড়ি করে দিয়ে বিদায় করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) অধ্যাপক ডা: সামিউল ইসলাম সাদি নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০১৩-১৪ সালের পর ওই হাসপাতালটি তাদের লাইসেন্স নবায়ন করেনি। অর্থাৎ তাদের বর্তমান কার্যক্রম অবৈধ। এখানে আইসিইউ, এনআইসিইউ চালানোর কোনো অনুমতিও নেই। তাই আমরা অবৈধ এ হাসপাতালকে পুলিশের সহযোগিতায় বন্ধ করে দিয়েছি। হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে আমরা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। এ ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এ পরিচালক।
সরেজমিন গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালটিতে দেখা গেছে, নবজাতকদের মৃত্যুর পর হাসপাতালের সবাই গা-ঢাকা দেয়ায় চিকিৎসা না পেয়ে এবং ভয়ে জীবিত নবজাতকদের নিয়ে যাচ্ছিলেন অভিভাবকেরা। এ সময় তারা বেশ আতঙ্কিত ও কান্নারত ছিলেন। হাসপাতালের অন্য বিভাগে চিকিৎসাধীন প্রাপ্ত বয়স্কদেরও সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল।
এ সময় হাসপাতালে গিয়ে দুইজন নবজাতক এনআইসিইউতে আছে বলে জানা যায়। ধামরাইয়ের বাসিন্দা রহিম, তিন দিন বয়সী তার ছেলে শিশুকে এখানে এনেছিলেন জšে§র কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা মেডিক্যাল থেকে।
তিনি জানান, সিজারিয়ানের মাধ্যমে অসময়ে (প্রি-ম্যাচিউরড) জন্মগ্রহণ করায় ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা বলেছিলেন এনআইসিইউতে ভর্তি করতে। কিন্তু সেখানে সিট না থাকায় মোবাইলে ডা: শিশিরের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন নবজাতক বিভাগের একজন মধ্য বয়সী কর্মচারী। তিনি এ কর্মচারীর নাম জানাতে পারেননি। কথা বলার পরই তিনি তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্স এনে সিলিন্ডার অক্সিজেন ব্যবহার করে তার শিশুকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।
দুই দিন বয়সী এক কন্যাশিশুর মামা সোহেল। তিনি জানান, সিজারের মাধ্যমে পুরান ঢাকার সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে জন্ম হয় তার ভাগ্নির। অপরিণত (সাত মাস) হওয়ায় চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, এনআইসিইউতে নিতে। এরপর যোগাযোগ করা হয় ঢাকা মেডিক্যালে। কিন্তু সিট না পেলেও ঢাকা মেডিক্যালের এনআইসিইউর একজন কর্মচারীর মাধ্যমে ভাগ্নিকে নিয়ে আসেন এশিয়ান হাসপাতালে। শিশুটির মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক জানিয়ে তিনি জানান, তার বোন আছেন সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ শিশুকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয় বলে মোহাম্মদপুর থানার এসআই কামরুজ্জামান জানিয়েছেন।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জালাল উদ্দিন মীর জানান, পুলিশ হাসপাতালে কাউকে খুঁজে পায়নি। চেষ্টা চলছে। হাসপাতালের মালিক সম্পর্কে পুলিশ কিছু জানতে পারেনি। তবে তারা জেনেছে, হাসপাতালের মালিকানা সম্প্রতি পরিবর্তন হয়েছে।
No comments