বাংলাদেশে কি আইএস সক্রিয়?
বাংলাদেশে
সাম্প্রতিক দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার পর প্রশ্ন উঠেছে দেশটিতে ‘ইসলামিক
স্টেট’ সক্রিয় আছে কিনা। তথ্যপ্রমাণের ইঙ্গিত একদিকে; আর সরকারের কথা
ভিন্ন। ডয়েচে ভেলের বিশ্লেষণধর্মী এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। এতে আরও বলা
হয়, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) উভয় বিদেশী
হত্যার দায় স্বীকার করে বলে খবর আসে। এদিকে, মার্কিনভিত্তিক সাইট
(এসআইটিই) ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ ও মিডল-ইস্ট মিডিয়া রিসার্স ইনস্টিটিউট ওই
দাবি নিশ্চিত করে। উভয় সংগঠন উগ্রপন্থি সংগঠনগুলোর ইন্টারনেট তৎপরতা
নজরদারি করে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলো এটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ সফরে সতর্কতা এবং দেশটিতে বসবাসরত বিদেশীদের নিরাপত্তা
অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট তার দেশের পক্ষ
থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঢাকার যুদ্ধে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। গত
সপ্তাহে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইসিসের উত্থানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে
প্রয়োজনীয় সবকিছুই আমাদের আছে। এদিকে বাংলাদেশের বৃটিশ দূতাবাস টুইটারে
বার্তা দেয়, ‘দেশটিতে সন্ত্রাসবাদের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। বিদেশীদের টার্গেট
করে আরও হামলা হতে পারে।’ তবে বাংলাদেশের পুলিশ বা সরকার এসব হত্যাকাণ্ডের
জন্য আইএসের দায় নিশ্চিত করতে চায় নি। এর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এটা তার
সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র। হাসিনার ছেলে ও
উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদও একই দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন। এ অবস্থা বিস্মিত
হওয়ার মতো নয়। তিনি দাবি করেছেন, এসব হামলার পেছনে বিএনপি-জামায়াত রয়েছে।
৭ই অক্টোবর তার ফেসবুক পাতায় তিনি লিখেছেন, ‘তারা দেশের বিরুদ্ধে বিদেশী
সরকারগুলোর অবস্থান পাল্টানোর প্রচেষ্টায় এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে
এগুলো করেছে।’ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি এসব অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে
প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, সরকার অন্যদের দোষারোপ করে ‘নিজেদের ব্যর্থতা
লুকানোর চেষ্টা করছে’। ৮ই অক্টোবর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জঙ্গিবাদের
বিরুদ্ধে লড়াই করতে’ সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্য’
সৃষ্টির আহ্বান জানায় সরকারের প্রতি। একদিকে শেখ হাসিনাকে যখন মনে হচ্ছে
তিনি বাংলাদেশে আইএস কর্মীদের কোন প্রমাণ না দেখতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ তখন
স্থানীয় মিডিয়ায় এমন তথ্যপ্রমাণের কমতি নেই। ঢাকাভিত্তিক একজন সন্ত্রাসবাদ
বিশেষজ্ঞ ও গবেষক নুর খান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন,
‘বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতি ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। গত ১৮ মাসে পুলিশ ও
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সন্দেহভাজন
সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ,
তথ্য ও ছবি প্রকাশ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এও জানি যে, কিছু
বাংলাদেশী আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় গিয়েছে। অতীতে পুলিশ অনেকবার তা নিশ্চিত
করেছে।’ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং সন্ত্রাসবাদ
বিশেষজ্ঞ শহিদুল আলম খান যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, ‘সাম্প্রতিক দুই বিদেশী
হত্যা নিয়ে কোন উপসংহার টানার সময় এখনও আসেনি। সুষ্ঠু এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ
পুলিশি তদন্ত এখন সব থেকে বেশি অগ্রাধিকার।’ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন,
‘হত্যাকাণ্ডগুলো যে সুপরিকল্পিত তা স্পষ্ট। আইএস যদি এতে সম্পৃক্ত নাও
থাকে, তাদের সমর্থকরা বাংলাদেশে সক্রিয় আছে। আর সাধারণ জঙ্গিও আছে।’ এদিকে
সাইট গ্রুপের পরিচালক রিটা ক্যাট্জ আইএসের করা দাবি উপেক্ষা না করতে
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে ওই
সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয় থাকার জোরালো তথ্য-প্রমাণ তার কাছে আছে। এ ইস্যুতে
তার অবস্থান তুলে ধরে ৯ই অক্টোবর কয়েকটি টুইট করেন তিনি। একটি টুইটে তিনি
বলেছেন, ‘এসব দাবি উড়িয়ে না দিতে এবং বাংলাদেশে আইসিস সমর্থকদের উপস্থিতি
অস্বীকার না করতে আমি বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর প্রতি পরামর্শ
জানাই।’ আরেক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘এর পরিবর্তে আইসিস হুমকি আরও অবনতির
দিকে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর উচিত তা নিয়ে গবেষণা করা এবং বুঝতে
পারা।’ বাংলাদেশে এ বছর চার জন ব্লগার ও দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার শিকার
হয়েছেন। এসব হত্যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। বাংলাদেশে
জঙ্গিবাদবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিভিত্তিক আলি রিয়াজ তার
নিজ দেশে সাম্প্রতিক সিরিজ হত্যার ঘটনাপ্রবাহে উদ্বিগ্ন। বার্তা সংস্থা
এএফপিকে তিনি বলেন, ‘এসব হত্যাকাণ্ডগুলো অত্যন্ত অশুভ সংকেত। একটি ধারা
(প্যাটার্ন) অবলম্বন করে জঙ্গিরা হামলাগুলো চালিয়েছে যা সবাইকে উদ্বিগ্ন
করে তুলছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে। কেননা, এসব হত্যাকাণ্ড চলতে
থাকলে তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির ওপর বিরাট প্রভাব ফেলবে।’
বাংলাদেশে অনেকেই আলি রিয়াজের মতো একইভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা দেশের
জঙ্গিদের মধ্যে অবস্থান গড়ে তোলার প্রচেষ্টা জোরদার করছে তথাকথিত ইসলামিক
স্টেট।
No comments