তুরস্কে বোমা হামলায় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে by টিম আরানগো ও সাইলান ইয়েগিনসু
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার প্রধান রেলস্টেশনের কাছে জোড়া বোমা বিস্ফোরণে প্রায় ১০০ নিহত |
আধুনিক
তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ১০০ মানুষ মারা
যাওয়ার এক দিন পর রোববার হাজার হাজার শোকসন্তপ্ত নারী-পুরুষ আঙ্কারায়
জড়ো হয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ঘটনাস্থলে ফুল দিয়েছেন, সরকারের নিন্দা
করেছেন। সেদিন যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন কুর্দি। আর
শনিবারের দুটি মারাত্মক বোমা বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিদেরও বেশির ভাগই
ছিলেন কুর্দি। তাঁরা সেখানে পতাকা নাড়িয়েছেন আর তুর্কি রাষ্ট্রের প্রতি
নিজেদের রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, এই হামলার জন্য তাঁরা তুর্কি রাষ্ট্রকেই
দোষী করেছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে উল্লেখ করে লোকে স্লোগান দিয়েছে, ‘খুনি এরদোয়ান’। তারা আরও স্লোগান দিয়েছে, ‘খুনি পুলিশ’, খুনি রাষ্ট্র’। ‘আমরা আজ শান্তির দাবিতে একত্র হয়েছি, বন্ধুদের জন্য শোক করার জন্য জড়ো হয়েছি। কিন্তু আমরা একই সঙ্গে সরকারের কাছে জবাবও চাইছি।’ কথাটি বলেছেন কুর্দি কর্মী একিম আরতাস। তিনি আরও বলেন, ‘কুর্দিদের বিরুদ্ধে গত চার মাসে এ রকম আরও তিনটি হামলা হয়েছে, আর তার জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি। আমরা উত্তর চাই। আমরা জানতে চাই, সরকার কেন কুর্দিদের ওপর এমন হামলা হতে দিচ্ছে।’
কোনো গোষ্ঠীই এখন পর্যন্ত এই জোড়া হামলার দায় স্বীকার করেনি। কর্মকর্তারা বলছেন, এই হামলা দুটি খুব সম্ভবত আত্মঘাতী হামলাকারীরা চালিয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তারা বললেন এক কথা, আর সরকার করল আরেক। সরকার দুই সম্ভাব্য অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে: ইসলামিক স্টেটের সুন্নি জঙ্গি ও কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) বিদ্রোহী।
তুরস্কের গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, দেশটির সরকার কেন্দ্রীয় আনাতোলিয়ান শহর কোনিয়া ও উপকূলীয় শহর আনতালিয়ায় আইএস বা আইসিস জঙ্গি সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তারা শনিবারের হামলার সঙ্গে জড়িত কি না, তা পরিষ্কার নয়। অনলাইনে প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, তুর্কি সামরিক বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক ও উত্তর ইরাকে পিকেকের ওপর বোমা বর্ষণ করেছে। এই যুদ্ধংদেহী গোষ্ঠীটি তুরস্কের সঙ্গে গত তিন দশক ধরে যুদ্ধ করছে, কিন্তু সম্প্রতি তারা সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসেছিল।
শনিবার আঙ্কারায় বোমা হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই পিকেকে একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, ১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারা আর কোনো আক্রমণ করবে না। কিন্তু তুরস্ক সরকার নিজের প্রচারণা চালু রাখায় বোঝা যায়, এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে এগোবে না।
সরকারি হিসাবে শনিবারের হামলায় ৯৫ জন মারা গিয়েছে, কিন্তু কুর্দি কর্মকর্তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে। সেদিন আঙ্কারার সেই সমাবেশে বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন কুর্দিদের সমর্থিত পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সেলাহাতিন দেমিরতাস। তিনি বলেছেন, সেদিনের হামলায় ১২৮ জন মারা গেছে। দেমিরতাস সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন, তারাই এ হামলা চালিয়েছে। আর রোববার তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেননি, নির্বাচনে জেতার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
‘আমরা প্রতিশোধ চাইব না, সহিংসতা আরও সহিংসতার জন্ম দেয়, আমরা ১ নভেম্বরের নির্বাচনে ন্যায়বিচার চাইব,’ দেমিরতাস বলেছেন। তিনি আরও কিছু কথা বলেছেন, সেটাও উদ্ধৃত করা জরুরি: ‘নিপীড়িত ও অপমানিত মানুষেরা অভিন্ন জীবন যাপন করতে পারে, আমরা একদল দুরাচারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারি না।’
এই নভেম্বরেই তুরস্কে হঠাৎ করেই আগাম নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেখানে তো এমনিই অস্থিতিশীলতা ছিল, হামলার কারণে তার মধ্যেই আবার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ বছরের জুনেই যে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল, তাতে এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ২০০২ সালের পর এই প্রথম সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে জোটবিষয়ক আলোচনা ব্যর্থ হলে এরদোয়ান আরেকটি নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
অস্ট্রিয়ার ইউনিভার্সিটি অব গ্রাজের অধ্যাপক কেরেম ওকতেম বলেছেন, ‘১ নভেম্বরের নির্বাচন হবে কি না, সেটা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর নির্বাচন হলেও সেটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কি না, সে প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে।’ কেরেম ওকতেম অ্যাংগ্রি নেশন: টারকি সিন্স ১৯৮৯ গ্রন্থের লেখক।
জুনের নির্বাচনের পর তুরস্কের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা গভীরতর হয়েছে, আর সহিংসতাও বেড়েছে। তুরস্ক রাষ্ট্র ও পিকেকের মধ্যকার দুই বছরের শান্তি প্রক্রিয়া ভেঙে পড়েছে, ওদিকে জঙ্গিরা হামলার পরিমাণ বাড়িয়েছে আর এরদোয়ান সেনাবাহিনীকে হুকুম দিয়েছেন, এদের ওপর আবার বোমাবর্ষণ শুরু করো।
তুরস্ক পিকেকের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, এই ব্যাপারটা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক চুক্তির পর। সেই চুক্তি অনুসারে, মার্কিন নেতৃত্বধীন যে জোট ইসলামিক স্টেটের ওপর বোমা বর্ষণ করছে, তারা তুরস্কের বিমানঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে। ফলে অনেকের কাছে মনে হচ্ছে, তুরস্কের অগ্রাধিকার হচ্ছে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসনের উচ্চাভিলাষের রাশ টেনে ধরা, ইসলামিক স্টেটকে মোকাবিলা করা নয়।
জুনের নির্বাচনে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এইচডিপি প্রথমবারের মতো সংসদে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ ভোট পায়, এর মাধ্যমে তারা এরদোয়ানকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বঞ্চিত করে। এরপর দেখা গেল, কুর্দিদের আন্দোলনে বেসামরিক অংশের ওপর হামলা শুরু হলো, নেতাদের গ্রেপ্তার করা হলো। আর সরকারি কর্মকর্তারা বলতে শুরু করলেন, পিকেকের সহিংসতার সঙ্গে দেমিরতাস ও অন্য কুর্দি নেতাদের সম্পর্ক আছে।
ওকতেম বলেছেন, কুর্দিদের বিরুদ্ধে যে সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে, তাতে তিনি মোটেও বিস্মিত নন। জুলাই মাসে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর সুরুকে বোমা বর্ষণ করা হয়, যে হামলায় ৩০ জনেরও বেশি কুর্দি কর্মী নিহত হন। আবার দিয়ারবাকিরে কুর্দিদের একটি রাজনৈতিক মিছিলেও হামলা হয়। তুর্কি নেতাদের বিভেদ সৃষ্টিকারী বাগাড়ম্বরের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ‘কে এইচডিপির ওপর হামলা চালিয়েছে, আর তার নেতাদের মানবিক গুণাবলি পিষে পিষে মরেছে।’
ওকতেম তুরস্কের ইতিহাসের টালমাটাল পর্যায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। ১৯৭০-এর দশকের রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দেশটি প্রায় টুকরো টুকরো হয়ে যেতে বসেছিল, আর ১৯৯০-এর দশক ছিল কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উত্তুঙ্গ কাল। তিনি বলেছেন, প্রতিটি ঘটনার পরই বোঝা গেছে, সহিংসতা তথাকথিত গভীর রাষ্ট্রের কাজ, অন্তত কিছুটা হলেও। এটা আসলে কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে গঠিত এক ছায়াচ্ছন্ন নেটওয়ার্ক, যাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া।
টিম আরানগো: নিউইয়র্ক টাইমসের বাগদাদ ব্যুরোর প্রধান
সাইলান ইয়েগিনসু: নিউইয়র্ক টাইমসের ইস্তাম্বুল সংবাদদাতা।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে উল্লেখ করে লোকে স্লোগান দিয়েছে, ‘খুনি এরদোয়ান’। তারা আরও স্লোগান দিয়েছে, ‘খুনি পুলিশ’, খুনি রাষ্ট্র’। ‘আমরা আজ শান্তির দাবিতে একত্র হয়েছি, বন্ধুদের জন্য শোক করার জন্য জড়ো হয়েছি। কিন্তু আমরা একই সঙ্গে সরকারের কাছে জবাবও চাইছি।’ কথাটি বলেছেন কুর্দি কর্মী একিম আরতাস। তিনি আরও বলেন, ‘কুর্দিদের বিরুদ্ধে গত চার মাসে এ রকম আরও তিনটি হামলা হয়েছে, আর তার জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি। আমরা উত্তর চাই। আমরা জানতে চাই, সরকার কেন কুর্দিদের ওপর এমন হামলা হতে দিচ্ছে।’
কোনো গোষ্ঠীই এখন পর্যন্ত এই জোড়া হামলার দায় স্বীকার করেনি। কর্মকর্তারা বলছেন, এই হামলা দুটি খুব সম্ভবত আত্মঘাতী হামলাকারীরা চালিয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তারা বললেন এক কথা, আর সরকার করল আরেক। সরকার দুই সম্ভাব্য অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে: ইসলামিক স্টেটের সুন্নি জঙ্গি ও কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) বিদ্রোহী।
তুরস্কের গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, দেশটির সরকার কেন্দ্রীয় আনাতোলিয়ান শহর কোনিয়া ও উপকূলীয় শহর আনতালিয়ায় আইএস বা আইসিস জঙ্গি সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তারা শনিবারের হামলার সঙ্গে জড়িত কি না, তা পরিষ্কার নয়। অনলাইনে প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, তুর্কি সামরিক বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক ও উত্তর ইরাকে পিকেকের ওপর বোমা বর্ষণ করেছে। এই যুদ্ধংদেহী গোষ্ঠীটি তুরস্কের সঙ্গে গত তিন দশক ধরে যুদ্ধ করছে, কিন্তু সম্প্রতি তারা সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসেছিল।
শনিবার আঙ্কারায় বোমা হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই পিকেকে একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, ১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারা আর কোনো আক্রমণ করবে না। কিন্তু তুরস্ক সরকার নিজের প্রচারণা চালু রাখায় বোঝা যায়, এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে এগোবে না।
সরকারি হিসাবে শনিবারের হামলায় ৯৫ জন মারা গিয়েছে, কিন্তু কুর্দি কর্মকর্তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে। সেদিন আঙ্কারার সেই সমাবেশে বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন কুর্দিদের সমর্থিত পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সেলাহাতিন দেমিরতাস। তিনি বলেছেন, সেদিনের হামলায় ১২৮ জন মারা গেছে। দেমিরতাস সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন, তারাই এ হামলা চালিয়েছে। আর রোববার তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেননি, নির্বাচনে জেতার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
‘আমরা প্রতিশোধ চাইব না, সহিংসতা আরও সহিংসতার জন্ম দেয়, আমরা ১ নভেম্বরের নির্বাচনে ন্যায়বিচার চাইব,’ দেমিরতাস বলেছেন। তিনি আরও কিছু কথা বলেছেন, সেটাও উদ্ধৃত করা জরুরি: ‘নিপীড়িত ও অপমানিত মানুষেরা অভিন্ন জীবন যাপন করতে পারে, আমরা একদল দুরাচারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারি না।’
এই নভেম্বরেই তুরস্কে হঠাৎ করেই আগাম নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেখানে তো এমনিই অস্থিতিশীলতা ছিল, হামলার কারণে তার মধ্যেই আবার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ বছরের জুনেই যে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল, তাতে এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ২০০২ সালের পর এই প্রথম সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে জোটবিষয়ক আলোচনা ব্যর্থ হলে এরদোয়ান আরেকটি নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
অস্ট্রিয়ার ইউনিভার্সিটি অব গ্রাজের অধ্যাপক কেরেম ওকতেম বলেছেন, ‘১ নভেম্বরের নির্বাচন হবে কি না, সেটা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর নির্বাচন হলেও সেটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কি না, সে প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে।’ কেরেম ওকতেম অ্যাংগ্রি নেশন: টারকি সিন্স ১৯৮৯ গ্রন্থের লেখক।
জুনের নির্বাচনের পর তুরস্কের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা গভীরতর হয়েছে, আর সহিংসতাও বেড়েছে। তুরস্ক রাষ্ট্র ও পিকেকের মধ্যকার দুই বছরের শান্তি প্রক্রিয়া ভেঙে পড়েছে, ওদিকে জঙ্গিরা হামলার পরিমাণ বাড়িয়েছে আর এরদোয়ান সেনাবাহিনীকে হুকুম দিয়েছেন, এদের ওপর আবার বোমাবর্ষণ শুরু করো।
তুরস্ক পিকেকের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, এই ব্যাপারটা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক চুক্তির পর। সেই চুক্তি অনুসারে, মার্কিন নেতৃত্বধীন যে জোট ইসলামিক স্টেটের ওপর বোমা বর্ষণ করছে, তারা তুরস্কের বিমানঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে। ফলে অনেকের কাছে মনে হচ্ছে, তুরস্কের অগ্রাধিকার হচ্ছে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসনের উচ্চাভিলাষের রাশ টেনে ধরা, ইসলামিক স্টেটকে মোকাবিলা করা নয়।
জুনের নির্বাচনে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এইচডিপি প্রথমবারের মতো সংসদে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ ভোট পায়, এর মাধ্যমে তারা এরদোয়ানকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বঞ্চিত করে। এরপর দেখা গেল, কুর্দিদের আন্দোলনে বেসামরিক অংশের ওপর হামলা শুরু হলো, নেতাদের গ্রেপ্তার করা হলো। আর সরকারি কর্মকর্তারা বলতে শুরু করলেন, পিকেকের সহিংসতার সঙ্গে দেমিরতাস ও অন্য কুর্দি নেতাদের সম্পর্ক আছে।
ওকতেম বলেছেন, কুর্দিদের বিরুদ্ধে যে সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে, তাতে তিনি মোটেও বিস্মিত নন। জুলাই মাসে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর সুরুকে বোমা বর্ষণ করা হয়, যে হামলায় ৩০ জনেরও বেশি কুর্দি কর্মী নিহত হন। আবার দিয়ারবাকিরে কুর্দিদের একটি রাজনৈতিক মিছিলেও হামলা হয়। তুর্কি নেতাদের বিভেদ সৃষ্টিকারী বাগাড়ম্বরের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ‘কে এইচডিপির ওপর হামলা চালিয়েছে, আর তার নেতাদের মানবিক গুণাবলি পিষে পিষে মরেছে।’
ওকতেম তুরস্কের ইতিহাসের টালমাটাল পর্যায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। ১৯৭০-এর দশকের রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দেশটি প্রায় টুকরো টুকরো হয়ে যেতে বসেছিল, আর ১৯৯০-এর দশক ছিল কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উত্তুঙ্গ কাল। তিনি বলেছেন, প্রতিটি ঘটনার পরই বোঝা গেছে, সহিংসতা তথাকথিত গভীর রাষ্ট্রের কাজ, অন্তত কিছুটা হলেও। এটা আসলে কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে গঠিত এক ছায়াচ্ছন্ন নেটওয়ার্ক, যাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া।
টিম আরানগো: নিউইয়র্ক টাইমসের বাগদাদ ব্যুরোর প্রধান
সাইলান ইয়েগিনসু: নিউইয়র্ক টাইমসের ইস্তাম্বুল সংবাদদাতা।
No comments