নতুন নেতৃত্বে জেএমবি, বেছে বেছে হত্যা by টিপু সুলতান
নতুন
নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে ‘টার্গেট কিলিং’ বা বেছে বেছে হত্যায় নেমেছে জামাআতুল
মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। গত পাঁচ সপ্তাহে ঢাকা, পাবনা ও চট্টগ্রামে
তিনটি ঘটনার পর এই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনটি আবার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছে।
জঙ্গি দমন-সংক্রান্ত কার্যক্রমে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার মতে, এই গোপন সংগঠনটি বছর দুয়েক আগে খুলনা থেকে হত্যাকাণ্ড শুরু করে। এরপর গত দুই বছরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ১২টি হত্যার ঘটনা ঘটায়। সব কটি ঘটনার নেপথ্যে ধর্মীয় মতাদর্শগত ভিন্নতা ও উগ্রপন্থীদের সন্দেহ করা হলেও এত দিন বিষয়টি পরিষ্কার ছিল না। কারণ, এর মধ্যে পরপর কয়েকজন ব্লগারকে হত্যার ঘটনায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম আলোচনায় আসে। ফলে ওই সব খুনের ঘটনা মনোযোগ হারায়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ জানায়, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবি সদস্যদের মধ্যে একজন সুজন ওরফে বাবু গত ৪ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদে চট্টগ্রাম নগরের আকবর টিলা এলাকায় ‘ল্যাংটা ফকিরের মাজারে’ রহমতউল্লাহ ওরফে ল্যাংটা ফকির ও তাঁর খাদেমকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। সুজনের ভাষ্য, ‘শরিয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকায়’ তাঁরা ল্যাংটা ফকির ও খাদেমকে খুন করেছেন।
ঢাকার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে এই পাঁচ জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর জেএমবি নতুন নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে মাঠে নামার বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর ৪ অক্টোবর পাবনার ঈশ্বরদীতে খ্রিষ্টান যাজক লুক সরকারকে হত্যার চেষ্টায় জেএমবির সদস্য ধরা পড়া এবং গত সোমবার তাঁর স্বীকারোক্তির পর এ সংগঠনটির ওপর আরও নিবিড় নজরদারির ওপর জোর দেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গোপন সংগঠনটি বছর দুয়েক আগে খুলনা থেকে হত্যাকাণ্ড শুরু করে। এরপর গত দুই বছরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ১২টি হত্যার ঘটনা ঘটায়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও ঈশ্বরদীর দুটি ঘটনা আমরা গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি। জেএমবি আরও তৎপরতা চালাতে পারে, এমন সম্ভাবনা সামনে রেখে সংগঠনটির ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি পুরোনো গোয়েন্দা তথ্য নিয়েও আমরা কাজ করছি।’
জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে নজরদারির দায়িত্বে থাকা একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁরা এখন আর কারাবন্দী জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে নেই। তাঁরা নতুন নেতৃত্বে কয়েক বছর ধরে সংগঠিত হয়েছেন। তাঁদের শীর্ষ নেতা ডাক্তার নজরুল। তাঁকে সংগঠনের সদস্যরা মূলত ‘ডাক্তার সাহেব’ বলে ডাকেন। তাঁর বাড়ি উত্তরাঞ্চলে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামে রিমান্ডে থাকা জেএমবির সদস্য সুজন বলেছেন, চট্টগ্রামের জেএমবিতে তাঁদের গ্রুপে ১৩-১৪ জন সদস্য ছিলেন। নেতৃত্বে আছেন ফারদিন, যিনি ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সদরঘাটে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে নিজেদের বোমায় আহত হয়েছিলেন। গত রমজান মাসে ঢাকার মিরপুর ১ নম্বরের একটি সাততলা বাড়ির ষষ্ঠ তলায় টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে জেএমবি বোমা তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়। চট্টগ্রামে গ্রেপ্তারের পর ‘বিস্ফোরণে’ নিহত সুজন ও জাবেদ এতে অংশ নেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সুজন জানিয়েছিলেন, তাঁদের অনেক পথ ঘুরিয়ে মিরপুরের ওই বাসায় নেওয়া হয়, তাই বাসার সঠিক অবস্থান তিনি বলতে পারছেন না। তাঁদের প্রশিক্ষক ছিলেন দুজন। একজন নিজেকে রানা ও আরেকজন আবদুল্লাহ নামে পরিচয় দেন। দুটি নামই ছদ্মনাম বলে ধারণা জিজ্ঞাসাবাদ-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের।
সর্বশেষ ঈশ্বরদীতে যাজক হত্যাচেষ্টায় গত সোমবার পাবনার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জেএমবির সদস্য রাকিবুল হাসান ওরফে রাব্বী বলেছেন, রকিবুল ইসলাম ওরফে রাকিবের নেতৃত্বে তাঁরা যাজককে হত্যার চেষ্টা চালান। তাঁদের মূল নেতা কে বা কে এই খুনের নির্দেশ দিয়েছেন, তা পলাতক রাকিব বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেএমবি যে নতুন করে নাশকতা শুরু করেছে, তা দেখতে পাচ্ছি। তবে তাঁদের মূল নেতা কে, সেটা জানা যায়নি। কারণ, যাজক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রাকিবুল ইসলামকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।’ তিনি জানান, এই রাকিবুল ঢাকায় চাকরি করতেন। বছর দেড়েক ধরে পাবনায় জেএমবিকে সংগঠিত করছিলেন।
এ ছাড়া ঢাকার বাড্ডায় ৫ অক্টোবর পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খানকে তাঁর খানকায় জবাই করে হত্যার ঘটনায়ও এখন জেএমবি মূল সন্দেহভাজন। জঙ্গি তৎপরতা নজরদারিতে থাকা গোয়েন্দা সূত্রগুলোর মতে, খিজির খান ও গত ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে ল্যাংটা ফকির রহমতউল্লাসহ দুজনকে হত্যার সঙ্গে ২০১৩ সালের ৮ আগস্ট খুলনার খালিশপুরে উম্মুল মোমেনিন দাবিদার কথিত ধর্মীয় নেতা তৈয়বুর রহমান ও তাঁর কিশোর ছেলে নাজমুম মনিরকে জবাই করে হত্যা, একই বছর ২১ ডিসেম্বরে ঢাকায় ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি দাবিদার লুৎফর রহমানসহ ছয়জনকে হত্যা এবং গত বছরের আগস্টে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যার ঘটনায়ও এখন জেএমবির দিকেই মূল সন্দেহ।
জেএমবির কার্যক্রমের বিষয়ে শুরু থেকেই নজর রাখছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক (তদন্ত) মো. নুর খান। তাঁর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জেএমবির শুরুর দিকে বিভিন্ন স্থানে অনেক পীর, খানকা ও মাজার, মেলা-যাত্রা প্যান্ডেলে জেএমবি হামলা করেছিল। তখন জয়পুরহাটের একটি খানকায় জবাই করার ঘটনা ছাড়া বাকি সব হামলায় তারা বোমা ব্যবহার করেছিল। কিন্তু এখন তারা কৌশল পাল্টে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিশানা করে হত্যা করছে। খুব দ্রুততার সঙ্গে তারা এসব ঘটনা ঘটিয়ে একধরনের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে।
জঙ্গিবাদ-বিষয়ক বিশ্লেষক মো. নুর খান বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জেএমবি আবার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। তারা আরও বড় কোনো ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তিনি বলেন, ২০০৫ সালের পর জেএমবি এত সুবিধা করতে পারেনি; বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও তৎপরতার মুখে অনেকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে, এই জঙ্গিরা আবার সংগঠিত ও প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে।
জেএমবি নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, ঘটনা ঘটিয়ে কেউ পার পাবে না। জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক তৎপরতা অব্যাহত আছে। বিভিন্ন সময়ে এসব গোষ্ঠীর অনেকে ধরাও পড়েছে। অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’
জঙ্গি দমন-সংক্রান্ত কার্যক্রমে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার মতে, এই গোপন সংগঠনটি বছর দুয়েক আগে খুলনা থেকে হত্যাকাণ্ড শুরু করে। এরপর গত দুই বছরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ১২টি হত্যার ঘটনা ঘটায়। সব কটি ঘটনার নেপথ্যে ধর্মীয় মতাদর্শগত ভিন্নতা ও উগ্রপন্থীদের সন্দেহ করা হলেও এত দিন বিষয়টি পরিষ্কার ছিল না। কারণ, এর মধ্যে পরপর কয়েকজন ব্লগারকে হত্যার ঘটনায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম আলোচনায় আসে। ফলে ওই সব খুনের ঘটনা মনোযোগ হারায়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ জানায়, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবি সদস্যদের মধ্যে একজন সুজন ওরফে বাবু গত ৪ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদে চট্টগ্রাম নগরের আকবর টিলা এলাকায় ‘ল্যাংটা ফকিরের মাজারে’ রহমতউল্লাহ ওরফে ল্যাংটা ফকির ও তাঁর খাদেমকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। সুজনের ভাষ্য, ‘শরিয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকায়’ তাঁরা ল্যাংটা ফকির ও খাদেমকে খুন করেছেন।
ঢাকার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে এই পাঁচ জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর জেএমবি নতুন নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে মাঠে নামার বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর ৪ অক্টোবর পাবনার ঈশ্বরদীতে খ্রিষ্টান যাজক লুক সরকারকে হত্যার চেষ্টায় জেএমবির সদস্য ধরা পড়া এবং গত সোমবার তাঁর স্বীকারোক্তির পর এ সংগঠনটির ওপর আরও নিবিড় নজরদারির ওপর জোর দেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গোপন সংগঠনটি বছর দুয়েক আগে খুলনা থেকে হত্যাকাণ্ড শুরু করে। এরপর গত দুই বছরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ১২টি হত্যার ঘটনা ঘটায়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও ঈশ্বরদীর দুটি ঘটনা আমরা গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি। জেএমবি আরও তৎপরতা চালাতে পারে, এমন সম্ভাবনা সামনে রেখে সংগঠনটির ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি পুরোনো গোয়েন্দা তথ্য নিয়েও আমরা কাজ করছি।’
জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে নজরদারির দায়িত্বে থাকা একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁরা এখন আর কারাবন্দী জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে নেই। তাঁরা নতুন নেতৃত্বে কয়েক বছর ধরে সংগঠিত হয়েছেন। তাঁদের শীর্ষ নেতা ডাক্তার নজরুল। তাঁকে সংগঠনের সদস্যরা মূলত ‘ডাক্তার সাহেব’ বলে ডাকেন। তাঁর বাড়ি উত্তরাঞ্চলে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামে রিমান্ডে থাকা জেএমবির সদস্য সুজন বলেছেন, চট্টগ্রামের জেএমবিতে তাঁদের গ্রুপে ১৩-১৪ জন সদস্য ছিলেন। নেতৃত্বে আছেন ফারদিন, যিনি ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সদরঘাটে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে নিজেদের বোমায় আহত হয়েছিলেন। গত রমজান মাসে ঢাকার মিরপুর ১ নম্বরের একটি সাততলা বাড়ির ষষ্ঠ তলায় টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে জেএমবি বোমা তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়। চট্টগ্রামে গ্রেপ্তারের পর ‘বিস্ফোরণে’ নিহত সুজন ও জাবেদ এতে অংশ নেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সুজন জানিয়েছিলেন, তাঁদের অনেক পথ ঘুরিয়ে মিরপুরের ওই বাসায় নেওয়া হয়, তাই বাসার সঠিক অবস্থান তিনি বলতে পারছেন না। তাঁদের প্রশিক্ষক ছিলেন দুজন। একজন নিজেকে রানা ও আরেকজন আবদুল্লাহ নামে পরিচয় দেন। দুটি নামই ছদ্মনাম বলে ধারণা জিজ্ঞাসাবাদ-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের।
সর্বশেষ ঈশ্বরদীতে যাজক হত্যাচেষ্টায় গত সোমবার পাবনার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জেএমবির সদস্য রাকিবুল হাসান ওরফে রাব্বী বলেছেন, রকিবুল ইসলাম ওরফে রাকিবের নেতৃত্বে তাঁরা যাজককে হত্যার চেষ্টা চালান। তাঁদের মূল নেতা কে বা কে এই খুনের নির্দেশ দিয়েছেন, তা পলাতক রাকিব বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেএমবি যে নতুন করে নাশকতা শুরু করেছে, তা দেখতে পাচ্ছি। তবে তাঁদের মূল নেতা কে, সেটা জানা যায়নি। কারণ, যাজক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রাকিবুল ইসলামকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।’ তিনি জানান, এই রাকিবুল ঢাকায় চাকরি করতেন। বছর দেড়েক ধরে পাবনায় জেএমবিকে সংগঠিত করছিলেন।
এ ছাড়া ঢাকার বাড্ডায় ৫ অক্টোবর পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খানকে তাঁর খানকায় জবাই করে হত্যার ঘটনায়ও এখন জেএমবি মূল সন্দেহভাজন। জঙ্গি তৎপরতা নজরদারিতে থাকা গোয়েন্দা সূত্রগুলোর মতে, খিজির খান ও গত ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে ল্যাংটা ফকির রহমতউল্লাসহ দুজনকে হত্যার সঙ্গে ২০১৩ সালের ৮ আগস্ট খুলনার খালিশপুরে উম্মুল মোমেনিন দাবিদার কথিত ধর্মীয় নেতা তৈয়বুর রহমান ও তাঁর কিশোর ছেলে নাজমুম মনিরকে জবাই করে হত্যা, একই বছর ২১ ডিসেম্বরে ঢাকায় ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি দাবিদার লুৎফর রহমানসহ ছয়জনকে হত্যা এবং গত বছরের আগস্টে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যার ঘটনায়ও এখন জেএমবির দিকেই মূল সন্দেহ।
জেএমবির কার্যক্রমের বিষয়ে শুরু থেকেই নজর রাখছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক (তদন্ত) মো. নুর খান। তাঁর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জেএমবির শুরুর দিকে বিভিন্ন স্থানে অনেক পীর, খানকা ও মাজার, মেলা-যাত্রা প্যান্ডেলে জেএমবি হামলা করেছিল। তখন জয়পুরহাটের একটি খানকায় জবাই করার ঘটনা ছাড়া বাকি সব হামলায় তারা বোমা ব্যবহার করেছিল। কিন্তু এখন তারা কৌশল পাল্টে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিশানা করে হত্যা করছে। খুব দ্রুততার সঙ্গে তারা এসব ঘটনা ঘটিয়ে একধরনের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে।
জঙ্গিবাদ-বিষয়ক বিশ্লেষক মো. নুর খান বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জেএমবি আবার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। তারা আরও বড় কোনো ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তিনি বলেন, ২০০৫ সালের পর জেএমবি এত সুবিধা করতে পারেনি; বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও তৎপরতার মুখে অনেকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে, এই জঙ্গিরা আবার সংগঠিত ও প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে।
জেএমবি নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, ঘটনা ঘটিয়ে কেউ পার পাবে না। জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক তৎপরতা অব্যাহত আছে। বিভিন্ন সময়ে এসব গোষ্ঠীর অনেকে ধরাও পড়েছে। অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’
No comments