নেপালের ওপর অঘোষিত অবরোধ, ভারতের অস্বীকার
নেপালের
নতুন সংবিধান নিয়ে ভারতের ক্ষুব্ধতা বিশ্বে জানাজানি হয়ে গেছে। তবে দেশটির
ওপর অবরোধ আরোপে নেপালি অভিযোগ ভারত গতকাল নাকচ করেছে। নেপাল বলেছিল, ভারত
এক অঘোষিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গতকাল নিউ ইয়র্কে ভারতের
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র তা নাকচ করে বলেছেন, নেপাল তার সংবিধান
করেছে। সেটা তার ব্যাপার। এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে যে দাবি
নেপাল করেছে তা বানোয়াট। ভারতের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘আমাদের
অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আমরা কোন প্রেসক্রিপশন দিতে চাই না। এটা নেপালের জনগণ
ও রাজনীতিকদের ব্যাপার যে তারা একটি পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধানে
পৌঁছাবেন, যেখানে সকল পক্ষই ওনারশিপ বা মালিকানাস্বত্ব অর্জন করাটা অনুভব
করতে পারেন।’
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নেপালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহেন্দ্র পাণ্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে সুষমা তার নেপালি প্রতিপক্ষকে বলেন, অবরোধের অভিযোগ ‘সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন।’
অবশ্য আনন্দবাজার পত্রিকাসহ অনেক ভারতীয় মিডিয়া এই ইস্যুতে ভারত সরকারের কঠোর মনোভাবকে সমর্থন করেছে। তারা মনে করে বহু গোষ্ঠী, জাতি ও সমাজকে উপেক্ষা করেই নেপালি গণতান্ত্রিক সংবিধান রচিত হইল! মাধেসি বা থারু সমপ্রদায়ের মতো সমতলবাসীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার পান নাই, একথা ইতিমধ্যে বিশ্বময় প্রচারিত।
উল্লেখ্য, মাধেসিরা ভারত সীমান্ত সন্নিহিত অঞ্চলে বাস করেন। ভারতে যারা ক্ষুব্ধ তাদের মত হলো ‘নতুন সংবিধানটিতে শুধু সমতলবাসীদের প্রতি বিমাতাসুলভ মনোভাবই প্রকাশিত হয় নাই। অত্যন্ত হতাশার কথা যে, একবিংশ শতকে প্রবর্তিত একটি স্বাধীন আধুনিক দেশের সংবিধানে পুরুষের তুলনায় নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক অধিকার দেয়া হয়েছে এবং মাতৃসূত্রে সন্তানের নাগরিকত্ব পাবার সম্ভাবনা খারিজ হয়েছে। সুতরাং এটা গণতন্ত্র নয়।’ বিবিসি প্রচারিত ভাষ্যেও অবশ্য নারীদের প্রতি বৈষম্যকে নেপাল সংবিধানের অন্যতম গলদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনকে বিদেশী বিশেষজ্ঞও নানা ত্রুটির দিকে নির্দেশ করেছেন। কিন্তু ভারতের তরফে পরোক্ষ অবরোধের বিষয়ে ভারতের মিডিয়াতেও খবর ছাপা হয়।
গতকাল পিটিআই রিপোর্টে বলা হয়, ‘৪৩১০টি পণ্য বোঝাই ট্রাক নেপালে প্রবেশের জন্য ভারত সীমান্তে গত কয়েকদিন ধরে আটকা পড়া অবস্থায় রয়েছে। কারণ তারা নিরাপত্তাগত কারণে নেপালের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারছে না।’
ভারতের সরকারি মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা কেবল পণ্যবাহী ট্রাক নেপালের সীমান্ত এবং তার ওপারে পৌঁছাতে পারি। কিন্তু নেপালের মাটিতে ট্রাক পৌঁছে দেয়ার জন্য যে পরিবেশ থাকা দরকার সেটা নিশ্চিত করার দায় নেপালের, ভারতের নয়। ভারতের পরিবহন মালিকরা বরং অভিযোগ করেছেন যে, তারা সীমান্তে আটকেপড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিক্ষোভ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা নেপালের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারছেন না।’ ওই সব ট্রাকে জ্বলানি তেলের মতো নিত্য দরকারি জিনিসপত্র রয়েছে।
গতকাল পিটিআই আরও জানায়, মাধেসি গ্রুপ যারা সংবিধানের বিরোধী, তাদের অবরোধের কারণে ৫ দিন আটকে থাকার পরে উত্তর প্রদেশের সুনাউলি সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১শ ট্রাক নেপালে প্রবেশ করেছে। এই মাধেসিরাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং নেপালের তেরাই অঞ্চলে তাদের বাস। তারা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ। নেপালে সংবিধান চালুর পরে পুলিশের সঙ্গে মাধেসি ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সংঘর্ষে অন্তত ৪০ ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে।
ভারত কেন সংবিধান মানতে পারেনি তা বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এমনকি ভারতের মিডিয়াতেও এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দি হিন্দু পত্রিকায় মর্যাদাসম্পন্ন হিমেল সাউথ এশিয়া পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পদক মি. দীক্ষিত লিখেছেন, যত বিচ্যুতিই থাকুক ভারতের উচিত হবে নেপালকে তার নতুন সংবিধান নিয়ে অগ্রসর হতে দেয়া।
১০ বছরের চেষ্টার পরে গত ২০শে সেপ্টম্বরে নোপালের সংবিধান পাসের দু’সপ্তাহ না যেতেই ভারতে কথা উঠেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যতটা কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা কূটনৈতিকভাবে কতটা সমীচীন হয়েছে। কারণ যদিও এটা বড় সত্য যে, নেপাল যে শান্তি প্রক্রিয়ার কারণে আজ সংবিধান তৈরি করতে পেরেছে, সেখানে ভারতের বিরাট গঠনমূলক ভূমিকা ছিল। দি হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের লোকসভা সদস্য ডি পি ত্রিপাঠি বলেছেন, মাধেসি সম্প্রদায়ের ব্যাপারে ভারতের যে উদ্বেগ, সে বিষয়ে আর কিছুদিনের মধ্যে একটি সংশোধনী এনে তার প্রতিকার করা সম্ভব ছিল। তাঁর কথায়, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নেপালও সংবিধান তৈরি করেছে এবং ক্রমান্বয়ে তা পরিপক্ব ও বিকশিত হবে।’ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত যখন কার্যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তখন চীন তাকে স্বাগত জানিয়েছে।
রাইজিং নেপাল পত্রিকায় নন্দলাল তিওয়ারি লিখেছেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত তার প্রতিবেশী নেপালের নতুন সংবিধানকে ‘অবরোধ’ দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। নেপালি গণপরিষদের ৯০ ভাগের বেশি নির্বাচিত সদস্যরা যে সংবিধানকে অনুমোদন দিয়েছে সেই সংবিধানকে ভারত দ্বিধাহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। অবশ্য তিনি লিখেছেন ভারতের এই ব্লকেড অপ্রত্যাশিত ছিল না।
এর আগে নয়া সংবিধানের প্রশ্নে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছে ভারত। এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি নিয়ে গত সোমবার বিক্ষোভ শুরু হয় নেপালে। সংবিধান অনুমোদন নিয়ে গত মাস থেকেই অশান্ত নেপাল।
ভারতের সংবাদ সংস্থা ও টিভি বলেছে, দেশের দক্ষিণে মাধেসীয়দের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনের জেরে সীমন্ত পেরিয়ে নেপালে ট্রাক ঢোকা বন্ধ করেছে ভারত। ভারত থেকে জ্বালানি তেল ঢুকতে না পারায় রাস্তায় গাড়ি চলাচল কমাতে নির্দেশ দিয়েচিল নেপাল সরকার। এই নিয়েই ক্ষুব্ধ কাঠমাণ্ডু। গত সোমবার মোদি এবং ভারত-বিরোধী স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই ঘটনা নিয়ে এর আগে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়। তবে সংবিধান নিয়ে অসন্তোষের জেরে নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ রাখার কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করেছে ভারত। নয়া দিল্লির দাবি, প্রথমে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নেপালে ট্রাক ঢোকা বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। সোমবার দু’একটি ট্রাক ভিতরে ঢুকলেও সব্জি এবং জ্বালানি বোঝাই কয়েকশো ট্রাক সীমান্তের এ ধারে আটকে পড়ে। গত সোমবার থেকে নেপালে ভারতীয় চ্যানেলগুলির সমপ্রচারও বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারত মনে করে সামপ্রতিক সংবিধানটিকে এক কথায় বিবৃত করতে হলে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে একে ‘নন-ইনক্লুসিভ’ বা অ-সার্বজনিক শব্দটির আশ্রয় নেয়া ব্যতীত উপায় নেই। নেপালি সংবিধান তৈরির আগে জাতীয় ঐকমত্যে আসবার যে দীর্ঘ শান্তি প্রক্রিয়া, তাতে ভারতের অবদানই সর্বাপেক্ষা বেশি মনে করা হয়। ২০০৭-এর আগে মাওবাদী পার্টিকে মূলস্রোতে আনা ও ২০০৮-এ তরাই শক্তিগুলির সঙ্গে নেপালের পার্বত্য এলিট দলগুলির সহযোগিতা স্থাপন, দুই ক্ষেত্রেই ভারতই ছিল প্রধান মধ্যস্থতাকারী।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নেপালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহেন্দ্র পাণ্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে সুষমা তার নেপালি প্রতিপক্ষকে বলেন, অবরোধের অভিযোগ ‘সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন।’
অবশ্য আনন্দবাজার পত্রিকাসহ অনেক ভারতীয় মিডিয়া এই ইস্যুতে ভারত সরকারের কঠোর মনোভাবকে সমর্থন করেছে। তারা মনে করে বহু গোষ্ঠী, জাতি ও সমাজকে উপেক্ষা করেই নেপালি গণতান্ত্রিক সংবিধান রচিত হইল! মাধেসি বা থারু সমপ্রদায়ের মতো সমতলবাসীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার পান নাই, একথা ইতিমধ্যে বিশ্বময় প্রচারিত।
উল্লেখ্য, মাধেসিরা ভারত সীমান্ত সন্নিহিত অঞ্চলে বাস করেন। ভারতে যারা ক্ষুব্ধ তাদের মত হলো ‘নতুন সংবিধানটিতে শুধু সমতলবাসীদের প্রতি বিমাতাসুলভ মনোভাবই প্রকাশিত হয় নাই। অত্যন্ত হতাশার কথা যে, একবিংশ শতকে প্রবর্তিত একটি স্বাধীন আধুনিক দেশের সংবিধানে পুরুষের তুলনায় নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক অধিকার দেয়া হয়েছে এবং মাতৃসূত্রে সন্তানের নাগরিকত্ব পাবার সম্ভাবনা খারিজ হয়েছে। সুতরাং এটা গণতন্ত্র নয়।’ বিবিসি প্রচারিত ভাষ্যেও অবশ্য নারীদের প্রতি বৈষম্যকে নেপাল সংবিধানের অন্যতম গলদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনকে বিদেশী বিশেষজ্ঞও নানা ত্রুটির দিকে নির্দেশ করেছেন। কিন্তু ভারতের তরফে পরোক্ষ অবরোধের বিষয়ে ভারতের মিডিয়াতেও খবর ছাপা হয়।
গতকাল পিটিআই রিপোর্টে বলা হয়, ‘৪৩১০টি পণ্য বোঝাই ট্রাক নেপালে প্রবেশের জন্য ভারত সীমান্তে গত কয়েকদিন ধরে আটকা পড়া অবস্থায় রয়েছে। কারণ তারা নিরাপত্তাগত কারণে নেপালের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারছে না।’
ভারতের সরকারি মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা কেবল পণ্যবাহী ট্রাক নেপালের সীমান্ত এবং তার ওপারে পৌঁছাতে পারি। কিন্তু নেপালের মাটিতে ট্রাক পৌঁছে দেয়ার জন্য যে পরিবেশ থাকা দরকার সেটা নিশ্চিত করার দায় নেপালের, ভারতের নয়। ভারতের পরিবহন মালিকরা বরং অভিযোগ করেছেন যে, তারা সীমান্তে আটকেপড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিক্ষোভ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা নেপালের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারছেন না।’ ওই সব ট্রাকে জ্বলানি তেলের মতো নিত্য দরকারি জিনিসপত্র রয়েছে।
গতকাল পিটিআই আরও জানায়, মাধেসি গ্রুপ যারা সংবিধানের বিরোধী, তাদের অবরোধের কারণে ৫ দিন আটকে থাকার পরে উত্তর প্রদেশের সুনাউলি সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১শ ট্রাক নেপালে প্রবেশ করেছে। এই মাধেসিরাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং নেপালের তেরাই অঞ্চলে তাদের বাস। তারা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ। নেপালে সংবিধান চালুর পরে পুলিশের সঙ্গে মাধেসি ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সংঘর্ষে অন্তত ৪০ ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে।
ভারত কেন সংবিধান মানতে পারেনি তা বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এমনকি ভারতের মিডিয়াতেও এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দি হিন্দু পত্রিকায় মর্যাদাসম্পন্ন হিমেল সাউথ এশিয়া পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পদক মি. দীক্ষিত লিখেছেন, যত বিচ্যুতিই থাকুক ভারতের উচিত হবে নেপালকে তার নতুন সংবিধান নিয়ে অগ্রসর হতে দেয়া।
১০ বছরের চেষ্টার পরে গত ২০শে সেপ্টম্বরে নোপালের সংবিধান পাসের দু’সপ্তাহ না যেতেই ভারতে কথা উঠেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যতটা কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা কূটনৈতিকভাবে কতটা সমীচীন হয়েছে। কারণ যদিও এটা বড় সত্য যে, নেপাল যে শান্তি প্রক্রিয়ার কারণে আজ সংবিধান তৈরি করতে পেরেছে, সেখানে ভারতের বিরাট গঠনমূলক ভূমিকা ছিল। দি হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের লোকসভা সদস্য ডি পি ত্রিপাঠি বলেছেন, মাধেসি সম্প্রদায়ের ব্যাপারে ভারতের যে উদ্বেগ, সে বিষয়ে আর কিছুদিনের মধ্যে একটি সংশোধনী এনে তার প্রতিকার করা সম্ভব ছিল। তাঁর কথায়, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নেপালও সংবিধান তৈরি করেছে এবং ক্রমান্বয়ে তা পরিপক্ব ও বিকশিত হবে।’ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত যখন কার্যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তখন চীন তাকে স্বাগত জানিয়েছে।
রাইজিং নেপাল পত্রিকায় নন্দলাল তিওয়ারি লিখেছেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত তার প্রতিবেশী নেপালের নতুন সংবিধানকে ‘অবরোধ’ দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। নেপালি গণপরিষদের ৯০ ভাগের বেশি নির্বাচিত সদস্যরা যে সংবিধানকে অনুমোদন দিয়েছে সেই সংবিধানকে ভারত দ্বিধাহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। অবশ্য তিনি লিখেছেন ভারতের এই ব্লকেড অপ্রত্যাশিত ছিল না।
এর আগে নয়া সংবিধানের প্রশ্নে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছে ভারত। এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি নিয়ে গত সোমবার বিক্ষোভ শুরু হয় নেপালে। সংবিধান অনুমোদন নিয়ে গত মাস থেকেই অশান্ত নেপাল।
ভারতের সংবাদ সংস্থা ও টিভি বলেছে, দেশের দক্ষিণে মাধেসীয়দের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনের জেরে সীমন্ত পেরিয়ে নেপালে ট্রাক ঢোকা বন্ধ করেছে ভারত। ভারত থেকে জ্বালানি তেল ঢুকতে না পারায় রাস্তায় গাড়ি চলাচল কমাতে নির্দেশ দিয়েচিল নেপাল সরকার। এই নিয়েই ক্ষুব্ধ কাঠমাণ্ডু। গত সোমবার মোদি এবং ভারত-বিরোধী স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই ঘটনা নিয়ে এর আগে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়। তবে সংবিধান নিয়ে অসন্তোষের জেরে নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ রাখার কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করেছে ভারত। নয়া দিল্লির দাবি, প্রথমে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নেপালে ট্রাক ঢোকা বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। সোমবার দু’একটি ট্রাক ভিতরে ঢুকলেও সব্জি এবং জ্বালানি বোঝাই কয়েকশো ট্রাক সীমান্তের এ ধারে আটকে পড়ে। গত সোমবার থেকে নেপালে ভারতীয় চ্যানেলগুলির সমপ্রচারও বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারত মনে করে সামপ্রতিক সংবিধানটিকে এক কথায় বিবৃত করতে হলে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে একে ‘নন-ইনক্লুসিভ’ বা অ-সার্বজনিক শব্দটির আশ্রয় নেয়া ব্যতীত উপায় নেই। নেপালি সংবিধান তৈরির আগে জাতীয় ঐকমত্যে আসবার যে দীর্ঘ শান্তি প্রক্রিয়া, তাতে ভারতের অবদানই সর্বাপেক্ষা বেশি মনে করা হয়। ২০০৭-এর আগে মাওবাদী পার্টিকে মূলস্রোতে আনা ও ২০০৮-এ তরাই শক্তিগুলির সঙ্গে নেপালের পার্বত্য এলিট দলগুলির সহযোগিতা স্থাপন, দুই ক্ষেত্রেই ভারতই ছিল প্রধান মধ্যস্থতাকারী।
No comments