জঙ্গিরা আস্তানা গাড়তে পারবে না -সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
অস্ট্রেলীয়
ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত এবং ইতালির নাগরিক হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে জঙ্গি
তৎপরতার বিষয়টি ফের জনগণকে উদ্বিগ্ন করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা গার্ডিয়ান-এ সাক্ষাৎকার দিয়ে ব্রিটিশ জিহাদিদের ব্যাপারেও সতর্ক
করেছিলেন। সম্প্রতি ব্যাংককে মন্দিরে হামলার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযুক্ত চীনা
নাগরিক আইজান বাংলাদেশেও এসেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হলো...
আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রথম আলো: ইতালির ত্রাণকর্মী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলুন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল: খাদ্যনিরাপত্তাবিষয়ক একটি সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে পরিচালিত এই সংস্থায় তিনি গত মে মাস থেকে কর্মরত ছিলেন। তিনি নিহত হওয়ার আগে আমেরিকান স্কুলের সুইমিং পুল ব্যবহার করে ফিরছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের ভেতরের কী কারণ, তা আমাদের গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে। চারটি গোয়েন্দা টিম সেখানে কাজ করছে। পুলিশ, ডিবি, র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা কাজ করছে। হত্যার পেছনে যে মোটিভ রয়েছে, সেটাকেই বের করতে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
আশা করি, এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ আমরা খুব শিগগির বের করতে পারব। এটা একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ইতালি আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরই একটি আমেরিকান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটা খবর পাঠিয়েছে যে আইএস নাকি এর দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত প্রমাণসহ কোনো তথ্য আসেনি। আমাদের দেশের মানুষ জঙ্গিদের পছন্দ করে না এবং জঙ্গিদের তারা কখনো সহযোগিতা করে না। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, আইএস নামের কোনো সংগঠন আমাদের দেশে নেই। তারপরও দাবি যখন করা হচ্ছে, তখন আমরা এটা খতিয়ে দেখব। আমরা এই এনজিওর কার্যক্রমও খতিয়ে দেখছি, তাদের কার্যক্রমে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কি না কিংবা নিহতের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো কারণ আছে কি না।
প্রথম আলো: ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) সাহায্য মিলবে কি?
আসাদুজ্জামান: সৌদি দূতাবাসের কাছে ক্যামেরা রয়েছে। আততায়ীরা গুলি করে মোটরসাইকেলযোগে ওই দূতাবাসের পাশ দিয়ে চলে গেছে। আমরা মনে করি দূতাবাসের সিসিটিভিতে ফুটেজ পেতে পারি। আমরা সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। গুলশান এলাকায় আমাদেরও সিসিটিভি রয়েছে। আমরা আগে নিশ্চিত হই, তারপর সবকিছু প্রকাশ করব।
প্রথম আলো: অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট টিমের ঢাকা সফর স্থগিত হলো, এরপর অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের জন্য অ্যালার্ট জারি করল। এর মধ্যে ইতালির নাগরিক নিহত হলেন। এর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি?
আসাদুজ্জামান: আমি তো বললাম, কোনো প্রমাণ না পেয়ে কোনো কিছু বলব না। দেখুন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি ভালো যোগসূত্র রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ আমাদের সব সময় তথ্য দিয়ে থাকে। এবার সেখানে অস্ট্রেলীয় ফেডারেল পুলিশ কিন্তু আমাদের কিছুই জানায়নি।
প্রথম আলো: মিয়ানমার সীমান্তে সম্প্রতি কী ধরনের অভিযান আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চালিয়েছে? এর ফলাফল কী?
আসাদুজ্জামান: আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহতভাবে জোরদার করে চলেছি। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করা হলে আমাদের অনেক সমস্যা, যেমন মাদক, আমরা সমাধান করতে পারব। মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান লিবারেশন আর্মি মাঝেমধ্যে আমাদের সীমান্তে ঢুকে পড়ে। কারণ, ওই এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম। আমাদের এক বিওপি থেকে আরেক বিওপিতে যেতে অনেক সময় দু-তিন দিন লেগে যায়। কখনো হেঁটে যেতে হয়। হেলিকপ্টার ছাড়া সেখানে যাওয়া যায় না। আমাদের বিওপির ওপর সম্প্রতি তারা যে একটি আক্রমণ চালিয়েছে, তার কারণ হচ্ছে, তাদের কিছু রসদ আমরা ধরে ফেলেছিলাম। পরে যৌথ অভিযান চালিয়ে দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করেছি।
প্রথম আলো: মিয়ানমার কি কোনো তালিকা দিয়েছে?
আসাদুজ্জামান: মাঝেমধ্যে তারা অনেক কিছুই বলে। যেমন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন এখানে-ওখানে ক্যাম্প করছে। তাদের সেই তালিকা অনুযায়ী মাঝেমধ্যেই আমরা যৌথ অভিযান পরিচালনা করে থাকি। কোনো সময় সত্যতা পাইনি।
প্রথম আলো: মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামানের থিংক ট্যাংকের এক রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে আইএস তাদের এলাকার বাইরেও নজর দিতে শুরু করেছে। চেচনিয়ায় তারা একজন গভর্নর নিযুক্ত করেছে। সুতরাং তাদের আশঙ্কা হলো, মিয়ানমার সীমান্তে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আইএস সেখানে অনুরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারে।
আসাদুজ্জামান: আমরা মনে করি না যে আমাদের দেশে এসে তারা আস্তানা গাড়তে পারবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সর্বদা সজাগ রয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী ও কোস্টগার্ড সতর্ক রয়েছে। সবাই সজাগ আছি। এ ধরনের জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশের মাটিতে মাথাচাড়া দেবে, তার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
প্রথম আলো: আইএসের বিষয়ে মিডিয়ায় মাঝেমধ্যে নানা খবর ছাপা হয়।
আসাদুজ্জামান: এটা মিডিয়ায় আসছে এবং আমাদের পুলিশও দু-একটি ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন সদস্য ধরেছে বলে উল্লেখ করেছে। এক ব্রিটিশ নাগরিক নাকি এসেছিলেন, তিনি নাকি আইএসের সদস্য সংগ্রহ করবেন। সেটা যখন জনতা জানতে পেরেছে, তখন তারা পুলিশকে ধরিয়ে দিয়েছে। তাই বলছিলাম, যাঁরাই এ ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করেন, আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী তাঁদের ধরে ফেলছে।
প্রথম আলো: কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা বাংলা ভাইয়ের উত্থান দেখেছি।
আসাদুজ্জামান: তাদের তো বাংলাদেশের মানুষ ধরিয়ে দিয়েছে। অন্য কাউকে এসে ধরিয়ে দিতে হয়নি। আমাদের এখানে যারা অত্যাচার করেছিল, সেখানে অবশ্যই সরকারের সহযোগিতা ছিল। সেটা আপনারা জানেন, আর সেটা তো এখন নেই।
প্রথম আলো: সেটা নেই, তা সত্ত্বেও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই উদ্বিগ্ন যে যদিও রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কমতি নেই, জনগণও এসব চায় না, কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৃণমূলে কিংবা মধ্যম পর্যায়ে দক্ষতা কমে যাওয়ার কারণে একটা আশঙ্কা থেকে যায় কি না?
আসাদুজ্জামান: আমাদের আগের সরকারগুলোর সময় এগুলো ঘটেছিল। আপনারা মিডিয়ায় যখন বলেছিলেন, তখন বলা হয়েছিল এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। এভাবে তাদের সহযোগিতা দেওয়া হতো। কিন্তু আমাদের সরকার তাদের সহযোগিতা করে না, আমরা কোনো পৃষ্ঠপোষকতা করি না। আমাদের দেশের ভূখণ্ড থেকে ভারতসহ কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদ চালানোর প্রতিও আমাদের কোনো সমর্থন নেই।
প্রথম আলো: সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পর ভারতের দিক থেকে কি কিছু বলা হয়েছে?
আসাদুজ্জামান: ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। তাদের সঙ্গে সর্বদাই আমাদের সংবাদ আদান-প্রদান হয়। কেবল দ্বিপক্ষীয় নয়, অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়েও মতবিনিময় চলে, তথ্যের যাচাই-বাছাই করেই আমরা কাজ করি। ভারত এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি। তারা কোনো আশঙ্কাও প্রকাশ করেনি।
প্রথম আলো: সম্প্রতি গার্ডিয়ান-এর রিপোর্টে ইরাক ও সিরিয়ায় বিদেশি যোদ্ধা হিসেবে ৩০ জন বাংলাদেশি যোগদান করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি কি যাচাই করা সম্ভব হয়েছে?
আসাদুজ্জামান: এ বিষয়ে এই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমরা যেটা শুনেছি, সেটা যাচাই না করে কিছু বলতে পারব না। সিরিয়ায় কখন কারা কীভাবে গেছে, সেটাও জানা নেই। আমাদের দেশ থেকে, নাকি আমাদের বংশোদ্ভূত কেউ অন্য দেশ থেকে গেছে, এটা আমাদের জানা নেই।
প্রথম আলো: বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কি কোনো নতুন নির্দেশনা পেয়েছেন?
আসাদুজ্জামান: মঙ্গলবার রাতেও তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি সবকিছুই জানেন এবং তদারক করছেন। তিনি যা যা নির্দেশনা দিচ্ছেন, সে অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবকিছুর ব্যাপারে খবর রাখছেন।
প্রথম আলো: একজন জার্মান বিশেষজ্ঞ আমাদের এক সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের একটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। থাইল্যান্ডে বিস্ফোরণের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ঢাকায় এসেছিলেন। আবার গার্ডিয়ানও লিখেছে, এখন যে একটা আপাত শান্ত অবস্থা যাচ্ছে, এটা দ্রুত উল্টে যেতে পারে।
আসাদুজ্জামান: আমাদের কাছে তো দেশের এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থারও প্রতিবেদন রয়েছে। আপনি যে চীনা জঙ্গির কথা বলছেন, তিনি ঢাকায় এসে অনেক আগেই চলে গেছেন। আমি বারবার আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গির স্থান নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। শেখ হাসিনার সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, তত দিন ভয়ের কিছু নেই।
প্রথম আলো: কিন্তু অনেকের মতে, দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে যদি তারা মাথাচাড়া দেয়!
আসাদুজ্জামান: আমরা এটাকে কখনোই রাজনৈতিক অচলাবস্থা বলব না। একটি নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচিত সরকার এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো দেশে কত শতাংশ মানুষ ভোট দেন? আমরা যেটা বলেছি, তারা ট্রেন মিস করেছে। আবার ট্রেন যখন আসবে, তখন তারা ট্রেনে উঠবে।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
আসাদুজ্জামান: ধন্যবাদ।
আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রথম আলো: ইতালির ত্রাণকর্মী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলুন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল: খাদ্যনিরাপত্তাবিষয়ক একটি সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে পরিচালিত এই সংস্থায় তিনি গত মে মাস থেকে কর্মরত ছিলেন। তিনি নিহত হওয়ার আগে আমেরিকান স্কুলের সুইমিং পুল ব্যবহার করে ফিরছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের ভেতরের কী কারণ, তা আমাদের গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে। চারটি গোয়েন্দা টিম সেখানে কাজ করছে। পুলিশ, ডিবি, র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা কাজ করছে। হত্যার পেছনে যে মোটিভ রয়েছে, সেটাকেই বের করতে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
আশা করি, এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ আমরা খুব শিগগির বের করতে পারব। এটা একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ইতালি আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরই একটি আমেরিকান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটা খবর পাঠিয়েছে যে আইএস নাকি এর দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত প্রমাণসহ কোনো তথ্য আসেনি। আমাদের দেশের মানুষ জঙ্গিদের পছন্দ করে না এবং জঙ্গিদের তারা কখনো সহযোগিতা করে না। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, আইএস নামের কোনো সংগঠন আমাদের দেশে নেই। তারপরও দাবি যখন করা হচ্ছে, তখন আমরা এটা খতিয়ে দেখব। আমরা এই এনজিওর কার্যক্রমও খতিয়ে দেখছি, তাদের কার্যক্রমে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কি না কিংবা নিহতের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো কারণ আছে কি না।
প্রথম আলো: ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) সাহায্য মিলবে কি?
আসাদুজ্জামান: সৌদি দূতাবাসের কাছে ক্যামেরা রয়েছে। আততায়ীরা গুলি করে মোটরসাইকেলযোগে ওই দূতাবাসের পাশ দিয়ে চলে গেছে। আমরা মনে করি দূতাবাসের সিসিটিভিতে ফুটেজ পেতে পারি। আমরা সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। গুলশান এলাকায় আমাদেরও সিসিটিভি রয়েছে। আমরা আগে নিশ্চিত হই, তারপর সবকিছু প্রকাশ করব।
প্রথম আলো: অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট টিমের ঢাকা সফর স্থগিত হলো, এরপর অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের জন্য অ্যালার্ট জারি করল। এর মধ্যে ইতালির নাগরিক নিহত হলেন। এর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি?
আসাদুজ্জামান: আমি তো বললাম, কোনো প্রমাণ না পেয়ে কোনো কিছু বলব না। দেখুন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি ভালো যোগসূত্র রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ আমাদের সব সময় তথ্য দিয়ে থাকে। এবার সেখানে অস্ট্রেলীয় ফেডারেল পুলিশ কিন্তু আমাদের কিছুই জানায়নি।
প্রথম আলো: মিয়ানমার সীমান্তে সম্প্রতি কী ধরনের অভিযান আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চালিয়েছে? এর ফলাফল কী?
আসাদুজ্জামান: আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহতভাবে জোরদার করে চলেছি। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করা হলে আমাদের অনেক সমস্যা, যেমন মাদক, আমরা সমাধান করতে পারব। মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান লিবারেশন আর্মি মাঝেমধ্যে আমাদের সীমান্তে ঢুকে পড়ে। কারণ, ওই এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম। আমাদের এক বিওপি থেকে আরেক বিওপিতে যেতে অনেক সময় দু-তিন দিন লেগে যায়। কখনো হেঁটে যেতে হয়। হেলিকপ্টার ছাড়া সেখানে যাওয়া যায় না। আমাদের বিওপির ওপর সম্প্রতি তারা যে একটি আক্রমণ চালিয়েছে, তার কারণ হচ্ছে, তাদের কিছু রসদ আমরা ধরে ফেলেছিলাম। পরে যৌথ অভিযান চালিয়ে দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করেছি।
প্রথম আলো: মিয়ানমার কি কোনো তালিকা দিয়েছে?
আসাদুজ্জামান: মাঝেমধ্যে তারা অনেক কিছুই বলে। যেমন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন এখানে-ওখানে ক্যাম্প করছে। তাদের সেই তালিকা অনুযায়ী মাঝেমধ্যেই আমরা যৌথ অভিযান পরিচালনা করে থাকি। কোনো সময় সত্যতা পাইনি।
প্রথম আলো: মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামানের থিংক ট্যাংকের এক রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে আইএস তাদের এলাকার বাইরেও নজর দিতে শুরু করেছে। চেচনিয়ায় তারা একজন গভর্নর নিযুক্ত করেছে। সুতরাং তাদের আশঙ্কা হলো, মিয়ানমার সীমান্তে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আইএস সেখানে অনুরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারে।
আসাদুজ্জামান: আমরা মনে করি না যে আমাদের দেশে এসে তারা আস্তানা গাড়তে পারবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সর্বদা সজাগ রয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী ও কোস্টগার্ড সতর্ক রয়েছে। সবাই সজাগ আছি। এ ধরনের জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশের মাটিতে মাথাচাড়া দেবে, তার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
প্রথম আলো: আইএসের বিষয়ে মিডিয়ায় মাঝেমধ্যে নানা খবর ছাপা হয়।
আসাদুজ্জামান: এটা মিডিয়ায় আসছে এবং আমাদের পুলিশও দু-একটি ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন সদস্য ধরেছে বলে উল্লেখ করেছে। এক ব্রিটিশ নাগরিক নাকি এসেছিলেন, তিনি নাকি আইএসের সদস্য সংগ্রহ করবেন। সেটা যখন জনতা জানতে পেরেছে, তখন তারা পুলিশকে ধরিয়ে দিয়েছে। তাই বলছিলাম, যাঁরাই এ ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করেন, আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী তাঁদের ধরে ফেলছে।
প্রথম আলো: কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা বাংলা ভাইয়ের উত্থান দেখেছি।
আসাদুজ্জামান: তাদের তো বাংলাদেশের মানুষ ধরিয়ে দিয়েছে। অন্য কাউকে এসে ধরিয়ে দিতে হয়নি। আমাদের এখানে যারা অত্যাচার করেছিল, সেখানে অবশ্যই সরকারের সহযোগিতা ছিল। সেটা আপনারা জানেন, আর সেটা তো এখন নেই।
প্রথম আলো: সেটা নেই, তা সত্ত্বেও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই উদ্বিগ্ন যে যদিও রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কমতি নেই, জনগণও এসব চায় না, কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৃণমূলে কিংবা মধ্যম পর্যায়ে দক্ষতা কমে যাওয়ার কারণে একটা আশঙ্কা থেকে যায় কি না?
আসাদুজ্জামান: আমাদের আগের সরকারগুলোর সময় এগুলো ঘটেছিল। আপনারা মিডিয়ায় যখন বলেছিলেন, তখন বলা হয়েছিল এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। এভাবে তাদের সহযোগিতা দেওয়া হতো। কিন্তু আমাদের সরকার তাদের সহযোগিতা করে না, আমরা কোনো পৃষ্ঠপোষকতা করি না। আমাদের দেশের ভূখণ্ড থেকে ভারতসহ কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদ চালানোর প্রতিও আমাদের কোনো সমর্থন নেই।
প্রথম আলো: সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পর ভারতের দিক থেকে কি কিছু বলা হয়েছে?
আসাদুজ্জামান: ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। তাদের সঙ্গে সর্বদাই আমাদের সংবাদ আদান-প্রদান হয়। কেবল দ্বিপক্ষীয় নয়, অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়েও মতবিনিময় চলে, তথ্যের যাচাই-বাছাই করেই আমরা কাজ করি। ভারত এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি। তারা কোনো আশঙ্কাও প্রকাশ করেনি।
প্রথম আলো: সম্প্রতি গার্ডিয়ান-এর রিপোর্টে ইরাক ও সিরিয়ায় বিদেশি যোদ্ধা হিসেবে ৩০ জন বাংলাদেশি যোগদান করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি কি যাচাই করা সম্ভব হয়েছে?
আসাদুজ্জামান: এ বিষয়ে এই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমরা যেটা শুনেছি, সেটা যাচাই না করে কিছু বলতে পারব না। সিরিয়ায় কখন কারা কীভাবে গেছে, সেটাও জানা নেই। আমাদের দেশ থেকে, নাকি আমাদের বংশোদ্ভূত কেউ অন্য দেশ থেকে গেছে, এটা আমাদের জানা নেই।
প্রথম আলো: বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কি কোনো নতুন নির্দেশনা পেয়েছেন?
আসাদুজ্জামান: মঙ্গলবার রাতেও তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি সবকিছুই জানেন এবং তদারক করছেন। তিনি যা যা নির্দেশনা দিচ্ছেন, সে অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবকিছুর ব্যাপারে খবর রাখছেন।
প্রথম আলো: একজন জার্মান বিশেষজ্ঞ আমাদের এক সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের একটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। থাইল্যান্ডে বিস্ফোরণের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ঢাকায় এসেছিলেন। আবার গার্ডিয়ানও লিখেছে, এখন যে একটা আপাত শান্ত অবস্থা যাচ্ছে, এটা দ্রুত উল্টে যেতে পারে।
আসাদুজ্জামান: আমাদের কাছে তো দেশের এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থারও প্রতিবেদন রয়েছে। আপনি যে চীনা জঙ্গির কথা বলছেন, তিনি ঢাকায় এসে অনেক আগেই চলে গেছেন। আমি বারবার আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গির স্থান নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। শেখ হাসিনার সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, তত দিন ভয়ের কিছু নেই।
প্রথম আলো: কিন্তু অনেকের মতে, দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে যদি তারা মাথাচাড়া দেয়!
আসাদুজ্জামান: আমরা এটাকে কখনোই রাজনৈতিক অচলাবস্থা বলব না। একটি নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচিত সরকার এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো দেশে কত শতাংশ মানুষ ভোট দেন? আমরা যেটা বলেছি, তারা ট্রেন মিস করেছে। আবার ট্রেন যখন আসবে, তখন তারা ট্রেনে উঠবে।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
আসাদুজ্জামান: ধন্যবাদ।
No comments