আতঙ্কে দিন কাটছে ব্লগারদের
আতঙ্কে
আছেন ব্লগাররা। যাঁরা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন। যাঁরা
যেতে পারেননি, প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুভয় তাড়া করে ফিরছে তাঁদের। ব্লগারদের
নিরাপত্তায় সরকারের দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আত্মগোপনে থেকে
প্রতিনিয়ত নিজেদের রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। গত শুক্রবার
দিনদুপুরে রাজধানীর গোড়ানে ভাড়া বাসায় খুন হন ব্লগার নীলাদ্রি
চট্টোপাধ্যায়। দেখা যাচ্ছে, সরকারের কাছে দেওয়া কথিত ‘নাস্তিক তালিকা’
অনুযায়ী ব্লগারদের খুন করা হচ্ছে। এই তালিকায় নীলাদ্রির নামও ছিল। তিনি যে
হুমকির মুখে আছেন, সেটা দুই মাস আগে নিজের ফেসবুক পেজে জানিয়ে দিয়েছিলেন।
এরপর আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তারপরও প্রাণে বাঁচতে পারেননি।
নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, এমন একজন গত শুক্রবার মুক্তমনা ব্লগে লিখেছেন, অনন্ত বিজয়কে হত্যার সময় তাঁর মুঠোফোন নিয়ে নেয় খুনিরা। সেখানে ফেসবুক চ্যাটের মাধ্যমে সব ছদ্মনামী ব্লগারের পরিচিতি বের হয়ে আসে। নীলাদ্রি অনন্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। এটা জানতে পেরে নীলাদ্রিসহ আরও দুজন কয়েক দিনের জন্য গ্রামে আত্মগোপন করেন।
ওই ব্লগার লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে ব্লগারদের রক্ষায় কয়েকটি বিদেশি সংস্থা এগিয়ে আসে।...অনেকেই বাংলাদেশ ছাড়তে পেরেছেন। নীলাদ্রি কেন যেতে পারলেন না, তা স্পষ্ট নয়।’ ওই ব্লগার আরও লিখেছেন, ‘...আমার সাথে ওর যোগাযোগ ছিল। গ্রামে যখন আত্মগোপন করে ছিল, মাঝে মাঝে মেসেজ পাঠাত। এমন একটা এডিটেড মেসেজ দিলাম।’
ব্লগের লেখাটি এ রকম: ‘দাদা, অনেক অনেক ধন্যবাদ। ইতিমধ্যে একবার আমাকে ফলো করেছে, এটা টের পেয়ে আমি ঢাকা ত্যাগ করেছি। জব শিফট করে ঢাকার বাইরে এক অজপাড়াগাঁয়ে চলে এসেছি। এখানে এসে আমি অনেকের সাথেই অনলাইনে যোগাযোগ করেছি বাইরে যাওয়ার জন্য, সত্য কথা বলতে আমি অনেক বেশি আতঙ্কে আছি। আমি দেশ ছাড়তে চাচ্ছি, যদি কোনো দিক দিয়ে কিছু করা সম্ভব না হয়, তাহলে ঈদের পরই ভারতে চলে যাব। প্লিজ একটু দেখুন।’
সামহোয়ারইনব্লগে একজন লিখেছেন, ব্লগারদের বিরুদ্ধে যেন ‘বেসরকারি মৃত্যু পরোয়ানা’ জারি হয়েছে। এই প্রতিবেদক গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করে একাধিক ব্লগারের মুঠোফোন বন্ধ পান।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন যখন উত্তাল, সেই সময় ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন আহমেদ রাজীব হায়দার। সেই থেকে শুরু। এরপর চলতি বছরেই পরপর চারজন খুন হলেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় খুন হন অভিজিৎ রায়, ৩০ মার্চ রাজধানীর বেগুনবাড়ীতে ওয়াশিকুর রহমান, ১২ মে সিলেটে অনন্ত বিজয় দাশ। সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের শিকার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, যিনি নিলয় নীল নামে ব্লগ ও ফেসবুকে লেখালেখি করতেন।
একাধিক ব্লগারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, অনেকে দেশ ছেড়েছেন, কারও কারও দেশ ছাড়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। কেউবা আত্মগোপনে গেছেন, মুঠোফোন নম্বর অথবা ঠিকানা কেউ কেউ পরিবর্তন করেছেন। অনেকে নিয়মিত লেখালেখি থেকে সরে গেছেন। যে যার মতো করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির আগে ব্লগারদের ওই তালিকা করা হয়েছিল। হেফাজতের সঙ্গে দর-কষাকষির অংশ হিসেবে ওই বছরের ১৩ মার্চ সরকার নয় সদস্যের কমিটি গঠন করে। এরপর ৩১ মার্চ কমিটির তৃতীয় বৈঠকে আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত নামের একটি সংগঠন ‘নাস্তিকদের লিস্ট’ শিরোনামে ৫৬ জনের একটি তালিকা দেয়। একই সময়ে ৮৪ ব্লগারের একটি তালিকা প্রকাশ করে জামায়াত-শিবির পরিচালিত ফেসবুক গ্রুপ ‘বাঁশের কেল্লা’। এই তালিকায়ও আল বাইয়্যিনাতের ৫৬ জনের নাম ছিল।
ব্লগার বাকী বিল্লাহর মতে, ‘জেএমবির মতো জঙ্গিদের রাষ্ট্র দমন করতে পেরেছে। আমি মনে করি না, এই গোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক খুব বড়। গুরুত্ব দিলে রাষ্ট্র এটাকেও দমন করতে পারবে।’
জানতে চাইলে আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের মুখপাত্র ও দৈনিক আল ইহসান-এর সম্পাদক মুহম্মদ মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কেউ চাইলে নাস্তিক হতে পারে। কিন্তু ইসলামবিরোধী বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ব্লগে লিখেছেন, তাঁদের তালিকা আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়েছিলাম।’
ওই তালিকায় অনেকে আছেন, যাঁরা কোনো দিন ধর্ম অবমাননা করে লেখালেখি করেননি—এ বিষয়ে মাহবুব আলম বলেন, ‘এটা আমাদের নিজস্ব করা কোনো তালিকা নয়। ওই সময়ে ইন্টারনেটে, ফেসবুকে এ তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। ইসলামবিদ্বেষী লেখালেখি কারা করে, তা সবাই জানত।’
তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলেও ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে একমত নন মাহবুব আলম। তিনি বলেন, লেখালেখির জবাব লেখালেখিতে হবে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে তার বিচার হবে। কিন্তু হত্যাকাণ্ড চলতে পারে না।
ব্লগ ও ফেসবুকে লেখালেখি করেন, এমন একজন প্রথম আলোর কাছে আক্ষেপ করে বললেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কথিত ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ তালিকা আছে। অথচ একে একে পাঁচজন ব্লগারকে একই কায়দায় নৃশংসভাবে হত্যা করার পরও সরকার তাঁদের নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, এমন একজন গত শুক্রবার মুক্তমনা ব্লগে লিখেছেন, অনন্ত বিজয়কে হত্যার সময় তাঁর মুঠোফোন নিয়ে নেয় খুনিরা। সেখানে ফেসবুক চ্যাটের মাধ্যমে সব ছদ্মনামী ব্লগারের পরিচিতি বের হয়ে আসে। নীলাদ্রি অনন্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। এটা জানতে পেরে নীলাদ্রিসহ আরও দুজন কয়েক দিনের জন্য গ্রামে আত্মগোপন করেন।
ওই ব্লগার লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে ব্লগারদের রক্ষায় কয়েকটি বিদেশি সংস্থা এগিয়ে আসে।...অনেকেই বাংলাদেশ ছাড়তে পেরেছেন। নীলাদ্রি কেন যেতে পারলেন না, তা স্পষ্ট নয়।’ ওই ব্লগার আরও লিখেছেন, ‘...আমার সাথে ওর যোগাযোগ ছিল। গ্রামে যখন আত্মগোপন করে ছিল, মাঝে মাঝে মেসেজ পাঠাত। এমন একটা এডিটেড মেসেজ দিলাম।’
ব্লগের লেখাটি এ রকম: ‘দাদা, অনেক অনেক ধন্যবাদ। ইতিমধ্যে একবার আমাকে ফলো করেছে, এটা টের পেয়ে আমি ঢাকা ত্যাগ করেছি। জব শিফট করে ঢাকার বাইরে এক অজপাড়াগাঁয়ে চলে এসেছি। এখানে এসে আমি অনেকের সাথেই অনলাইনে যোগাযোগ করেছি বাইরে যাওয়ার জন্য, সত্য কথা বলতে আমি অনেক বেশি আতঙ্কে আছি। আমি দেশ ছাড়তে চাচ্ছি, যদি কোনো দিক দিয়ে কিছু করা সম্ভব না হয়, তাহলে ঈদের পরই ভারতে চলে যাব। প্লিজ একটু দেখুন।’
সামহোয়ারইনব্লগে একজন লিখেছেন, ব্লগারদের বিরুদ্ধে যেন ‘বেসরকারি মৃত্যু পরোয়ানা’ জারি হয়েছে। এই প্রতিবেদক গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করে একাধিক ব্লগারের মুঠোফোন বন্ধ পান।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন যখন উত্তাল, সেই সময় ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন আহমেদ রাজীব হায়দার। সেই থেকে শুরু। এরপর চলতি বছরেই পরপর চারজন খুন হলেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় খুন হন অভিজিৎ রায়, ৩০ মার্চ রাজধানীর বেগুনবাড়ীতে ওয়াশিকুর রহমান, ১২ মে সিলেটে অনন্ত বিজয় দাশ। সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের শিকার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, যিনি নিলয় নীল নামে ব্লগ ও ফেসবুকে লেখালেখি করতেন।
একাধিক ব্লগারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, অনেকে দেশ ছেড়েছেন, কারও কারও দেশ ছাড়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। কেউবা আত্মগোপনে গেছেন, মুঠোফোন নম্বর অথবা ঠিকানা কেউ কেউ পরিবর্তন করেছেন। অনেকে নিয়মিত লেখালেখি থেকে সরে গেছেন। যে যার মতো করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির আগে ব্লগারদের ওই তালিকা করা হয়েছিল। হেফাজতের সঙ্গে দর-কষাকষির অংশ হিসেবে ওই বছরের ১৩ মার্চ সরকার নয় সদস্যের কমিটি গঠন করে। এরপর ৩১ মার্চ কমিটির তৃতীয় বৈঠকে আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত নামের একটি সংগঠন ‘নাস্তিকদের লিস্ট’ শিরোনামে ৫৬ জনের একটি তালিকা দেয়। একই সময়ে ৮৪ ব্লগারের একটি তালিকা প্রকাশ করে জামায়াত-শিবির পরিচালিত ফেসবুক গ্রুপ ‘বাঁশের কেল্লা’। এই তালিকায়ও আল বাইয়্যিনাতের ৫৬ জনের নাম ছিল।
ব্লগার বাকী বিল্লাহর মতে, ‘জেএমবির মতো জঙ্গিদের রাষ্ট্র দমন করতে পেরেছে। আমি মনে করি না, এই গোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক খুব বড়। গুরুত্ব দিলে রাষ্ট্র এটাকেও দমন করতে পারবে।’
জানতে চাইলে আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের মুখপাত্র ও দৈনিক আল ইহসান-এর সম্পাদক মুহম্মদ মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কেউ চাইলে নাস্তিক হতে পারে। কিন্তু ইসলামবিরোধী বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ব্লগে লিখেছেন, তাঁদের তালিকা আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়েছিলাম।’
ওই তালিকায় অনেকে আছেন, যাঁরা কোনো দিন ধর্ম অবমাননা করে লেখালেখি করেননি—এ বিষয়ে মাহবুব আলম বলেন, ‘এটা আমাদের নিজস্ব করা কোনো তালিকা নয়। ওই সময়ে ইন্টারনেটে, ফেসবুকে এ তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। ইসলামবিদ্বেষী লেখালেখি কারা করে, তা সবাই জানত।’
তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলেও ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে একমত নন মাহবুব আলম। তিনি বলেন, লেখালেখির জবাব লেখালেখিতে হবে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে তার বিচার হবে। কিন্তু হত্যাকাণ্ড চলতে পারে না।
ব্লগ ও ফেসবুকে লেখালেখি করেন, এমন একজন প্রথম আলোর কাছে আক্ষেপ করে বললেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কথিত ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ তালিকা আছে। অথচ একে একে পাঁচজন ব্লগারকে একই কায়দায় নৃশংসভাবে হত্যা করার পরও সরকার তাঁদের নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
No comments