সুন্দরবনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ছয়জনকে আগের রাতেই আটক করে পুলিশ!
সুন্দরবনে
গত রোববার পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই সহোদরসহ নিহত ছয়জনকে আগের
দিন শনিবার রাতেই তাঁদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ আটক করে বলে এলাকার
লোকজন জানিয়েছে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকেই তিনটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা
হয়।
তবে পুলিশের দাবি, খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী এলাকা থেকে শনিবার রাতে শুধু মজিদ গাজীকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে নিয়ে পরদিন সকালে পুলিশ সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া খাল এলাকায় অভিযান চালাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মজিদসহ ছয়জন নিহত হন। নিহতরা বনদস্যু ইলিয়াস-জাহাঙ্গীর বাহিনীর সদস্য।
নিহতরা হলেন আপন দুই ভাই শফিকুল ইসলাম (৩৮) ও মামুন গাজী (২৮); মামুনের শ্বশুর মজিদ গাজী (৩৫); আনসার সানা (৫৫) ও তাঁর চাচাতো ভাই সিদ্দিক সানা (৪২) এবং বাপ্পী হোসেন (২২)। গত সোমবার সবার লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্বজনেরা লাশ দাফন করেন।
সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরমুখা ও জোড়সিং গ্রামে ঘুরে এলাকার মানুষের সঙ্গে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় বাঘের চামড়া কেনার কথা বলে জোড়সিং গ্রামের মজিদকে কে বা কারা বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। রাতে পুলিশ তাঁকে আটক করে। পুলিশ তাঁকে চাপ দিলে আরও চামড়া আছে বলে তিনি পুলিশকে জানান। পুলিশ এ সময় মজিদকে দিয়ে তাঁর মেয়ে শফিকুলের স্ত্রী নাজমা খাতুনকে চামড়া আনতে বলে। এ সময় রাস্তাতেই নাজমাকে বাঘের চামড়াসহ আটক করা হয়। এরপর তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চরমুখা গ্রামের আনসার সানা ও সিদ্দিক সানার বাড়ি থেকে দুটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে পুলিশ। এই অভিযানেরই একে একে নিহত অন্যদেরও আটক করে পুলিশ। তাঁদের কয়রা থানায় নেওয়া হয়।
সিদ্দিক সানার বাবা সৈয়দ আলী সানা দাবি করেন, রাত তিনটার দিকে সাদাপোশাকে কয়েকজন লোক এসে সিদ্দিককে ডাকতে থাকে। এ সময় তাঁরা বেরিয়ে আসার আগেই দরজা ভেঙে সিদ্দিককে আটক করে বেদম প্রহার করা হয়। বাঘের চামড়া আছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। পরে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি তাঁর বাড়ি থেকে কোনো চামড়া উদ্ধার হয়নি বলে দাবি করেন।
মজিদ গাজীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, তাঁর স্বামীকে কে বা কারা রাত আটটার দিকে মুঠোফোনে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারেন, তাঁর স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। শফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমি বেগম জানান, রাত তিনটার দিকে কয়েকজন লোক বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর কিছু জানেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই গ্রামের ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতিবেশীরা জানান, রাত আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যেই মূলত সবাইকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকেই তিনটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।
কয়রা সদরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানদার জানান, ওই ছয়জনকে ভোরের দিকে থানায় নেওয়া হয়। পরদিন রোববার সকাল ১০টার দিকে ছয়জনকে চোখ বেঁধে গাড়িতে করে নিয়ে যেতে দেখেছেন। পরে বিকেল চারটার দিকে শুনতে পান, সবাই বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন শুধু মজিদকেই আটক করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সুন্দরবনে অভিযান চালানো হলে অন্যরা বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর তথ্য দিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী ক্ষোভ থেকেই এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন।
মামলা ও গ্রেপ্তার: বন্দুকযুদ্ধ ও বাঘের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার রাতে কয়রা থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা তিনটি করেছেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় নিহত শফিকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম, সিদ্দিক সানার বড় ভাই নজরুল সানা ও একই গ্রামের সাহেব আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে নাজমাকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকার প্রথম আলোকে জানান, গ্রেপ্তার সবাইকে আজ বুধবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
তদন্ত কমিটি: বাঘের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার বন বিভাগ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সুন্দরবন সাতক্ষীরা অঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক শোয়েব খানকে। দুই দিনের মধ্যে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শোয়েব খান প্রথম আলোকে জানান, আজ বুধবার বিভাগীয় প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তদন্তের স্বার্থে তিনি আর কিছু জানাতে চাননি।
তবে পুলিশের দাবি, খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী এলাকা থেকে শনিবার রাতে শুধু মজিদ গাজীকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে নিয়ে পরদিন সকালে পুলিশ সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া খাল এলাকায় অভিযান চালাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মজিদসহ ছয়জন নিহত হন। নিহতরা বনদস্যু ইলিয়াস-জাহাঙ্গীর বাহিনীর সদস্য।
নিহতরা হলেন আপন দুই ভাই শফিকুল ইসলাম (৩৮) ও মামুন গাজী (২৮); মামুনের শ্বশুর মজিদ গাজী (৩৫); আনসার সানা (৫৫) ও তাঁর চাচাতো ভাই সিদ্দিক সানা (৪২) এবং বাপ্পী হোসেন (২২)। গত সোমবার সবার লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্বজনেরা লাশ দাফন করেন।
সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরমুখা ও জোড়সিং গ্রামে ঘুরে এলাকার মানুষের সঙ্গে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় বাঘের চামড়া কেনার কথা বলে জোড়সিং গ্রামের মজিদকে কে বা কারা বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। রাতে পুলিশ তাঁকে আটক করে। পুলিশ তাঁকে চাপ দিলে আরও চামড়া আছে বলে তিনি পুলিশকে জানান। পুলিশ এ সময় মজিদকে দিয়ে তাঁর মেয়ে শফিকুলের স্ত্রী নাজমা খাতুনকে চামড়া আনতে বলে। এ সময় রাস্তাতেই নাজমাকে বাঘের চামড়াসহ আটক করা হয়। এরপর তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চরমুখা গ্রামের আনসার সানা ও সিদ্দিক সানার বাড়ি থেকে দুটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে পুলিশ। এই অভিযানেরই একে একে নিহত অন্যদেরও আটক করে পুলিশ। তাঁদের কয়রা থানায় নেওয়া হয়।
সিদ্দিক সানার বাবা সৈয়দ আলী সানা দাবি করেন, রাত তিনটার দিকে সাদাপোশাকে কয়েকজন লোক এসে সিদ্দিককে ডাকতে থাকে। এ সময় তাঁরা বেরিয়ে আসার আগেই দরজা ভেঙে সিদ্দিককে আটক করে বেদম প্রহার করা হয়। বাঘের চামড়া আছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। পরে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি তাঁর বাড়ি থেকে কোনো চামড়া উদ্ধার হয়নি বলে দাবি করেন।
মজিদ গাজীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, তাঁর স্বামীকে কে বা কারা রাত আটটার দিকে মুঠোফোনে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারেন, তাঁর স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। শফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমি বেগম জানান, রাত তিনটার দিকে কয়েকজন লোক বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর কিছু জানেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই গ্রামের ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতিবেশীরা জানান, রাত আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যেই মূলত সবাইকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকেই তিনটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।
কয়রা সদরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানদার জানান, ওই ছয়জনকে ভোরের দিকে থানায় নেওয়া হয়। পরদিন রোববার সকাল ১০টার দিকে ছয়জনকে চোখ বেঁধে গাড়িতে করে নিয়ে যেতে দেখেছেন। পরে বিকেল চারটার দিকে শুনতে পান, সবাই বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন শুধু মজিদকেই আটক করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সুন্দরবনে অভিযান চালানো হলে অন্যরা বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর তথ্য দিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী ক্ষোভ থেকেই এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন।
মামলা ও গ্রেপ্তার: বন্দুকযুদ্ধ ও বাঘের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার রাতে কয়রা থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা তিনটি করেছেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় নিহত শফিকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম, সিদ্দিক সানার বড় ভাই নজরুল সানা ও একই গ্রামের সাহেব আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে নাজমাকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকার প্রথম আলোকে জানান, গ্রেপ্তার সবাইকে আজ বুধবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
তদন্ত কমিটি: বাঘের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার বন বিভাগ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সুন্দরবন সাতক্ষীরা অঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক শোয়েব খানকে। দুই দিনের মধ্যে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শোয়েব খান প্রথম আলোকে জানান, আজ বুধবার বিভাগীয় প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তদন্তের স্বার্থে তিনি আর কিছু জানাতে চাননি।
No comments