সাক্ষাৎকার- আমি রাজনীতির বাইরের নই by কাফি কামাল
অনেকটা চমক দেখিয়েই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করেছিলেন তাবিথ আউয়াল।
পিতা ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর আলোচনায়
আসেন তিনি। সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়ে তিনি আদায় করে নেন বিরোধী জোটের সমর্থন।
হঠাৎ করেই যেন সব দৃশ্যপট পাল্টে গেল। প্রতীক পেলেন বাস। তারপর দুই সপ্তাহ
ধরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে চলছেন
বিরামহীন। তরুণ ও মার্জিত রুচির তাবিথ। সতীর্থদের হিসেবে ব্যবসায়ী ও সংগঠক
হিসেবে শতভাগ সফল। এবার দেখার পালা রাজনীতির মাঠে-অংকে তিনি কতটা সচেতন এবং
সফল। নানা প্রশ্ন নিয়ে তাবিথ আউয়ালের মুখোমুখি মানবজমিন।
প্রশ্ন: ক্লান্তিহীন গণসংযোগ চালাচ্ছেন। পায়ে হেঁটে হাসিমুখে দিনরাত ছুটছেন নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে তো, আপনার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। কেমন অনুভব করছেন?
তাবিথ: প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ। তারা আমাকে কাছে পেয়ে নানা অভিযোগ করছেন, দাবি তুলছেন, প্রত্যাশা করছেন- যা জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে জানানোর কথা। এতে পরিষ্কার যে, তারা কোন জনপ্রতিনিধিকে কাছে পান না। এটা দুঃখজনক। জনপ্রতিনিধি না পেয়ে তারা আমাকে এবং অন্য প্রার্থীদেরও নিশ্চয়ই এসব কথা জানাচ্ছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয় উপলব্ধি করছি। আরেকটি বিষয় বলি, বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়াটা আমার কাছে অনেক জটিল বলে মনে হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক করা উচিত। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে উদ্যোগ নিচ্ছেন না। আরেকটি উপলব্ধি হচ্ছে, বড় কোন সমর্থন ছাড়া নির্বাচন করা কঠিন। যে কোন সাধারণ একজন মানুষের পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন বিষয়।
প্রশ্ন: প্রতিদিন ঢাকার অলিতে-গলিতে ঘুরছেন। নিশ্চয়ই নতুন করে ঢাকাকে আবিষ্কার করছেন। এমন কোন বিষয় চোখে পড়েছে যা দেখে আপনি অবাক হয়েছেন, বিব্রত কিংবা কষ্ট পেয়েছেন?
তাবিথ: আমি মোটেই ঢাকাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করছি না। আমার হৃৎস্পন্দরের সঙ্গে ঢাকা জড়িয়ে আছে। ঢাকার প্রায় ৯৫ ভাগ এলাকা আমি চিনি। ঢাকার কোথাও আমার আত্মীয়ের বাসা, কোথাও বন্ধুদের বাসা, ফুটবল খেলেছি, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি। ফলে অলিগলি সব জায়গায় আমার যাতায়াত হয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেন না আমি ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করি। যখন বিদেশীরা আসে তখন তাদের নিয়ে চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, পুরান ঢাকা বা বনশ্রী ঘুরিয়ে দেখাই। দুঃখজনকভাবে ঢাকাকে দুইভাগ করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক বিষয় আছে। আমি পুরান ঢাকা বেশি চিনতাম। এখন গণসংযোগ করতে মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, মিরপুর, শ্যামলী, খিলগাঁও যেখানেই যাচ্ছি সবই তো আমার চেনাজানা। বলতে পারেন, উত্তরার দিকে আমি কিছুটা কম চিনি। সেখানে গেলে দেখি প্রতিদিনই একটি সেক্টর বেড়েছে। যদি বলেন, অবাক বা বিস্ময়ের কথা তবে আমি বলব, প্রতিকূলতার কথা। আমি অবাক হয়েছি যখন আমার পোস্টারগুলো রাতের আঁধারে চিড়ে যাচ্ছে। মাঠকর্মীরা আটক হচ্ছে। ভেবেছিলাম, হয়রানি যা ছিল তা ধীরে ধীরে কমবে। কিন্তু এখন দেখছি সেটা উল্টো বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে হামলা মেনে নেয়া যায় না।
প্রশ্ন: নির্বাচনে সফলতা নিয়ে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
তাবিথ: জয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। যদি নির্বাচন হয়, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে আমি নিশ্চিত বিজয়ী হবে। এই কদিনের গণসংযোগে আমার এ আত্মবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে।
প্রশ্ন: নির্বাচিত হলে সবার আগে কোন তিনটি কাজে অগ্রাধিকার দেবেন?
তাবিথ: আমি প্রতিদিন সবার কাছে কিছু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। নির্বাচিত হলে প্রথমত, চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া ও হয়ে থাকা রাস্তাগুলোর সংস্কারে হাত দেব। দ্বিতীয়ত, সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নেব। এ কাজটি প্রথমেই করতে না পারলে পরে কঠিন হতে থাকবে। তৃতীয়ত, যানজট নিরসন ও গণপরিবহনের সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেব।
প্রশ্ন: একজন সিটি মেয়রের যে ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা- এসব উতরে নিজের পরিকল্পনামাফিক কাজ করা কি সম্ভব? আপনি কি মনে করেন মেয়রের আরও বেশি ক্ষমতায়ন প্রয়োজন?
তাবিথ: আমি মনে করি, অবশ্যই সিটি মেয়রদের আরও বেশি ক্ষমতায়নের প্রয়োজন আছে। এটা সময়ের দাবি। সেটা একটি রূপরেখার মাধ্যমে হতে পারে। যেমন: নগর সরকার, মেট্রোপলিটন গভর্মেন্ট যে নামেই হোক। নগরবাসীর অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে মেয়রের ক্ষমতাগত যেসব সীমাবদ্ধতা আছে তা দূর করতে এটার কোন বিকল্প নেই। তবে আমার বিশ্বাস, এখন যে সীমিত ক্ষমতা আছে তার মধ্যে থেকেও আমার প্রতিশ্রুত কাজের বেশিরভাগই করতে পারবো। মানুষ একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদে থাকতে চায়, সেবার মানোন্নয়ন চায়। এসব যাতে মানুষ চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়। এটা পূরণ করা অসম্ভব নয়।
প্রশ্ন: কাগজে-কলমে এটি অরাজনৈতিক নির্বাচন। বাস্তবে আপাদমস্তক রাজনৈতিক। এর একটা স্পষ্ট সুরাহা দরকার। আপনি কোনটা চান? রাজনৈতিক নাকি অরাজনৈতিক?
তাবিথ: এ ব্যাপারে আমি উন্মুক্ত মানসিকতা পোষণ করি। বাস্তবতা বিবেচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কখনই এমন করা উচিত নয় যে, একবার হয়ে গেছে বলে আর নিয়মের পরিবর্তন করা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ জেনে গেছে দেশে দুইটা প্রধান দল আছে। তাদের প্রতীক হল ধানের শীষ ও নৌকা। কথা হচ্ছে, যখন মানুষে এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসবে তখন এসব অরাজনৈতিক নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হবে। যতদিন ওই মনমানসিকতা থাকবে ততদিন দলীয় সমর্থনও থাকবে।
প্রশ্ন: আপনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের শীর্ষ তিন ব্যবসায়ী সংগঠনের সমর্থন পেয়েছেন। এটা কি জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবে যা আপনার ঘাটতি মনে করেন?
তাবিথ: জনগণের সমর্থন পাওয়ার জন্যই আমি নির্বাচন করছি। আমি জনগণের সমর্থন চাই। সেটা পাওয়ার জন্যই কাজ করছি। জনগণের সমর্থন পাওয়াটাই আসল কথা।
প্রশ্ন: আপনি বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মুখ। নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন। আসল চিত্র কি?
তাবিথ: বৃহত্তর অর্থে আমি রাজনীতির মাঠে নতুন মুখ। কিন্তু আমি রাজনীতির বাইরের নই। বিএনপি আমাকে সমর্থন দিয়েছে। ফলে বিএনপি নেতারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। যারা মামলার কারণে পলাতক অথবা আটক তারা ছাড়া সবাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। মামলার কারণে সিনিয়র নেতাদের হয়তো কম পাচ্ছি কিন্তু থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। তাদের কাছে প্রচুর সহযোগিতা পাচ্ছি। আমাকে দেশে অনেক তৃণমূল নেতা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা চান আমি তাদের এলাকায় আরও বেশি সময় থাকি। সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজেই আমার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।
প্রশ্ন: মেয়র নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আপনি বিস্তৃত ও জটিল রাজনৈতিক মাঠে ঢুকে পড়েছেন। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপনি এখন বিরোধীদের চোখে একজন ‘বিএনপি’। কি বলবেন?
তাবিথ: রাজনীতি তো খারাপ জিনিস না। রাজনীতি আমরা করি মানুষের কল্যাণে। মানুষকে সেবা দেয়ার লক্ষ্যে। নীতিনির্ধারক হওয়ার উদ্দেশ্যে। এসব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণে রাজনীতি করলে তো খারাপ কিছু হয় না। রাজনীতি করা বা রাজনৈতিক পরিচয় আমার কাছে কোনভাবেই অস্বস্তির বিষয় নয়। বরং, এটা আমার জন্য স্বস্তির।
প্রশ্ন: ফেনী সকার ক্লাবের মাধ্যমে তরুণ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আপনি একটি অবস্থান তৈরি করেছেন। এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি। মেয়র নির্বাচিত হলে খেলাধুলার উন্নতিতে আপনার বিশেষ কি ভূমিকা থাকবে।
তাবিথ: আমার আজকের এ অবস্থানের পেছনে আমার ফুটবলার সত্তা, ক্রীড়া সংগঠক সত্তার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আমার নেশা এবং পেশা ফুটবল বলতে পারেন। মেয়র নির্বাচিত হলেও আমি ক্রীড়াঙ্গন থেকে সরব না। একটি কথা বলতে চাই, একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ঢাকা শহরে আমার গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। ঢাকা শহরের জন্য শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ ও টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করা। যে কমিটমেন্ট নিয়ে বড় হয়েছি, সেটা যে কোন মূল্যেই পূরণ করবো।
প্রশ্ন: আপনি নিরাপদ ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কিভাবে সেটা বাস্তবে রূপ দেবেন?
তাবিথ: নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আমার কিছু স্টাডি আছে। ক্রাইম ম্যাপিংয়ের আওতায় আমি বেআইনি কাজগুলোর ব্যাপারে তথ্য দিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবো। জনমত গড়ার মাধ্যমে পরিস্থিতির উত্তরণের দিকে বেশি গুরুত্ব দেবো। মেয়র হয়তো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারেন না। কিন্তু মেয়র জনগণকে নিয়ে থানায়, মন্ত্রীর বাসায়, পুলিশ কমিশনারের অফিসে যান নিশ্চয় তারা নিরাপত্তার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বাধ্য হবে।
প্রশ্ন: আপনি বিরোধী রাজনৈতিক জোটের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন, নির্বাচিত হলে তাদের পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে কিভাবে সমন্বয় করবেন?
তাবিথ: যখন একজন জনপ্রতিনিধি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেবে। তখন তার ওপর অনেক দায়িত্ব ও কর্মভার চলে যাবে। তখন সরকার কিন্তু ভাববে একজন জনপ্রতিনিধিকে ছাড়া আমরা কিভাবে জনসেবা করব।
প্রশ্ন: তরুণ মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলে তরুণদের জন্য বিশেষ কি পরিকল্পনা আছে?
তাবিথ: আমি তো তরুণদের বাইরে নই। আমি যে স্বপ্ন দেখি তা নিশ্চয়ই তরুণ সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তরুণরা চায় একটি মুক্ত সমাজ, নিরাপত্তাপূর্ণ সমাজ ও বাসযোগ্য ঢাকা। আমি তরুণদের আলাদাভাবে দেখতে চাই না। কারণ তরুণরা অত্যন্ত সচেতন। তারাও ওই রকম একজন জনপ্রতিনিধি চাইছে। যিনি তাদের নয়-ছয় বুঝাতে পারবে না। এখন প্রযুক্তির যুগ, তরুণরা প্রযুক্তিগত সহায়তা চায়। এ প্রত্যাশাগুলো অযৌক্তিক নয়। তরুণ সমাজ আমার পরিকল্পিত উদ্যোগের অংশীদার হবে।
প্রশ্ন: আপনি নেতাকর্মীদের গুমের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচনের আগে কি সেটা আরও প্রকট হতে পারে মনে করেন?
তাবিথ: এখানে আমার মনে করার কিছু নেই। প্রতিদিন কি ঘটছে তা সবাই দেখছে। পহেলা বৈশাখে যে দুঃখজনক ঘটনা দেখেছি, শুনেছি আর ওপর প্রশাসন থেকে যে ধরনের অস্বীকার এসেছে, শব্দটি খুঁজে পাচ্ছি না। এটা সবাইকে বুঝিয়ে দেয়, আইনশৃঙ্খলা এখন কোথায় আছে।
প্রশ্ন: আপনি গণপরিবহনের মানোন্নয়ন ও যানজট নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিন্তু সেটা কিভাবে আপনি বাস্তবায়ন করবেন?
তাবিথ: ঢাকায় গণপরিবহন মাত্র ২০ ভাগ। তবে সব যানবাহন মিলিয়ে আমাদের সড়কের ৭০ ভাগ ব্যবহার করছে। বাকি ৩০ ভাগ কই। সেগুলো- ভাঙাচোরা, বর্জ্যের সআস্তূপ এবং ব্যবহার অনুপযোগী। যা মানুষ তা ব্যবহার করতে পারছে না। এগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে পারলে যানজট নিরসনের জন্য ৩০ শতাংশ সড়ক বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বাসের সংখ্যা ও মান বাড়াতে হবে। এছাড়া সময় এসেছে বাসের রুট পুনর্নিধারণ করার।
প্রশ্ন: নগরের বেশির ভাগ উন্নয়ন ও মেরামতের কাজ হয় সাধারণত বর্ষা মওসুমে। এতে নাগরিক ভোগান্তি বেড়ে যায়। আপনি নির্বাচিত হলে কি করবেন?
তাবিথ: গ্যাস-পানির লাইন মেরামত ও উন্নয়নের জন্য রোড কাটতে হয়। রোড কাটার অনুমতি দেয় ঢাকা সিটি করপোরেশন। বর্ষাকালে এসব কাটাকাটির জন্য অনুমতি দেব না। সহজ কথা। আর দেয়ার সময় সমন্বয় করেই দেব, কার কার কি কাজ অমুক তারিখে শুরু করবেন, অমুক তারিখে শেষ করবেন। প্রয়োজনে ওই সময় পুরো সড়কই বন্ধ থাকবে। সমন্বয় করার ক্ষমতা সিটি করপোরশনের থাকলেও সেটা করা হয়নি এতদিন। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে অনেক কিছু করা যায়।
প্রশ্ন: সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলরদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, সেটা কিভাবে করবেন?
তাবিথ: নগরবাসী এখানেই আমার নেতৃত্বের পরিচয় পাবে। কিভাবে আমি অন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সুশাসন নিশ্চিত করতে সমন্বিতভাবে কাজ করি। সেটাই তো আমার সাফল্য হবে।
প্রশ্ন: নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন, কেন এটাকে আপনি এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন?
তাবিথ: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে যতই ভাল দাবি করা হোক, মানুষ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। কমিশন বলছে সেনা লাগবে না, পুলিশকে দিয়েই তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাখতে পারবেন। আমি বলতে চাই না, পারবেন না। উনার যদি পারেনও তবু তো লাভ হচ্ছে না। মানুষের মাইন্ডসেট হয়ে আছে অন্যরকম। যখন একজন সেনা সদস্য একটি পুলিং বুথের সামনে দাঁড়ায়, বা রাস্তায় অবস্থান নেয়, মানুষের তখন আত্মবিশ্বাস জন্মে। আমি ভোটকেন্দ্রে যেতে পারব, আমার ভোটটি গণনা হবে এবং ভোট দেয়ার পর আমি আবার আমার বাসায় ফিরতে পারব। এই আত্মবিশ্বাসের দরকার আছে। সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের ফিল্ডে না দেখলে মানুষের মধ্যে সে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে না। অন্য যত পদক্ষেপই নেন।
প্রশ্ন: ক্লান্তিহীন গণসংযোগ চালাচ্ছেন। পায়ে হেঁটে হাসিমুখে দিনরাত ছুটছেন নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে তো, আপনার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। কেমন অনুভব করছেন?
তাবিথ: প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ। তারা আমাকে কাছে পেয়ে নানা অভিযোগ করছেন, দাবি তুলছেন, প্রত্যাশা করছেন- যা জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে জানানোর কথা। এতে পরিষ্কার যে, তারা কোন জনপ্রতিনিধিকে কাছে পান না। এটা দুঃখজনক। জনপ্রতিনিধি না পেয়ে তারা আমাকে এবং অন্য প্রার্থীদেরও নিশ্চয়ই এসব কথা জানাচ্ছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয় উপলব্ধি করছি। আরেকটি বিষয় বলি, বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়াটা আমার কাছে অনেক জটিল বলে মনে হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক করা উচিত। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে উদ্যোগ নিচ্ছেন না। আরেকটি উপলব্ধি হচ্ছে, বড় কোন সমর্থন ছাড়া নির্বাচন করা কঠিন। যে কোন সাধারণ একজন মানুষের পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন বিষয়।
প্রশ্ন: প্রতিদিন ঢাকার অলিতে-গলিতে ঘুরছেন। নিশ্চয়ই নতুন করে ঢাকাকে আবিষ্কার করছেন। এমন কোন বিষয় চোখে পড়েছে যা দেখে আপনি অবাক হয়েছেন, বিব্রত কিংবা কষ্ট পেয়েছেন?
তাবিথ: আমি মোটেই ঢাকাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করছি না। আমার হৃৎস্পন্দরের সঙ্গে ঢাকা জড়িয়ে আছে। ঢাকার প্রায় ৯৫ ভাগ এলাকা আমি চিনি। ঢাকার কোথাও আমার আত্মীয়ের বাসা, কোথাও বন্ধুদের বাসা, ফুটবল খেলেছি, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি। ফলে অলিগলি সব জায়গায় আমার যাতায়াত হয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেন না আমি ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করি। যখন বিদেশীরা আসে তখন তাদের নিয়ে চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, পুরান ঢাকা বা বনশ্রী ঘুরিয়ে দেখাই। দুঃখজনকভাবে ঢাকাকে দুইভাগ করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক বিষয় আছে। আমি পুরান ঢাকা বেশি চিনতাম। এখন গণসংযোগ করতে মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, মিরপুর, শ্যামলী, খিলগাঁও যেখানেই যাচ্ছি সবই তো আমার চেনাজানা। বলতে পারেন, উত্তরার দিকে আমি কিছুটা কম চিনি। সেখানে গেলে দেখি প্রতিদিনই একটি সেক্টর বেড়েছে। যদি বলেন, অবাক বা বিস্ময়ের কথা তবে আমি বলব, প্রতিকূলতার কথা। আমি অবাক হয়েছি যখন আমার পোস্টারগুলো রাতের আঁধারে চিড়ে যাচ্ছে। মাঠকর্মীরা আটক হচ্ছে। ভেবেছিলাম, হয়রানি যা ছিল তা ধীরে ধীরে কমবে। কিন্তু এখন দেখছি সেটা উল্টো বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে হামলা মেনে নেয়া যায় না।
প্রশ্ন: নির্বাচনে সফলতা নিয়ে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
তাবিথ: জয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। যদি নির্বাচন হয়, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে আমি নিশ্চিত বিজয়ী হবে। এই কদিনের গণসংযোগে আমার এ আত্মবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে।
প্রশ্ন: নির্বাচিত হলে সবার আগে কোন তিনটি কাজে অগ্রাধিকার দেবেন?
তাবিথ: আমি প্রতিদিন সবার কাছে কিছু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। নির্বাচিত হলে প্রথমত, চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া ও হয়ে থাকা রাস্তাগুলোর সংস্কারে হাত দেব। দ্বিতীয়ত, সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নেব। এ কাজটি প্রথমেই করতে না পারলে পরে কঠিন হতে থাকবে। তৃতীয়ত, যানজট নিরসন ও গণপরিবহনের সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেব।
প্রশ্ন: একজন সিটি মেয়রের যে ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা- এসব উতরে নিজের পরিকল্পনামাফিক কাজ করা কি সম্ভব? আপনি কি মনে করেন মেয়রের আরও বেশি ক্ষমতায়ন প্রয়োজন?
তাবিথ: আমি মনে করি, অবশ্যই সিটি মেয়রদের আরও বেশি ক্ষমতায়নের প্রয়োজন আছে। এটা সময়ের দাবি। সেটা একটি রূপরেখার মাধ্যমে হতে পারে। যেমন: নগর সরকার, মেট্রোপলিটন গভর্মেন্ট যে নামেই হোক। নগরবাসীর অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে মেয়রের ক্ষমতাগত যেসব সীমাবদ্ধতা আছে তা দূর করতে এটার কোন বিকল্প নেই। তবে আমার বিশ্বাস, এখন যে সীমিত ক্ষমতা আছে তার মধ্যে থেকেও আমার প্রতিশ্রুত কাজের বেশিরভাগই করতে পারবো। মানুষ একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদে থাকতে চায়, সেবার মানোন্নয়ন চায়। এসব যাতে মানুষ চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়। এটা পূরণ করা অসম্ভব নয়।
প্রশ্ন: কাগজে-কলমে এটি অরাজনৈতিক নির্বাচন। বাস্তবে আপাদমস্তক রাজনৈতিক। এর একটা স্পষ্ট সুরাহা দরকার। আপনি কোনটা চান? রাজনৈতিক নাকি অরাজনৈতিক?
তাবিথ: এ ব্যাপারে আমি উন্মুক্ত মানসিকতা পোষণ করি। বাস্তবতা বিবেচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কখনই এমন করা উচিত নয় যে, একবার হয়ে গেছে বলে আর নিয়মের পরিবর্তন করা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ জেনে গেছে দেশে দুইটা প্রধান দল আছে। তাদের প্রতীক হল ধানের শীষ ও নৌকা। কথা হচ্ছে, যখন মানুষে এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসবে তখন এসব অরাজনৈতিক নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হবে। যতদিন ওই মনমানসিকতা থাকবে ততদিন দলীয় সমর্থনও থাকবে।
প্রশ্ন: আপনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের শীর্ষ তিন ব্যবসায়ী সংগঠনের সমর্থন পেয়েছেন। এটা কি জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবে যা আপনার ঘাটতি মনে করেন?
তাবিথ: জনগণের সমর্থন পাওয়ার জন্যই আমি নির্বাচন করছি। আমি জনগণের সমর্থন চাই। সেটা পাওয়ার জন্যই কাজ করছি। জনগণের সমর্থন পাওয়াটাই আসল কথা।
প্রশ্ন: আপনি বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মুখ। নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন। আসল চিত্র কি?
তাবিথ: বৃহত্তর অর্থে আমি রাজনীতির মাঠে নতুন মুখ। কিন্তু আমি রাজনীতির বাইরের নই। বিএনপি আমাকে সমর্থন দিয়েছে। ফলে বিএনপি নেতারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। যারা মামলার কারণে পলাতক অথবা আটক তারা ছাড়া সবাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। মামলার কারণে সিনিয়র নেতাদের হয়তো কম পাচ্ছি কিন্তু থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। তাদের কাছে প্রচুর সহযোগিতা পাচ্ছি। আমাকে দেশে অনেক তৃণমূল নেতা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা চান আমি তাদের এলাকায় আরও বেশি সময় থাকি। সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজেই আমার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।
প্রশ্ন: মেয়র নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আপনি বিস্তৃত ও জটিল রাজনৈতিক মাঠে ঢুকে পড়েছেন। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপনি এখন বিরোধীদের চোখে একজন ‘বিএনপি’। কি বলবেন?
তাবিথ: রাজনীতি তো খারাপ জিনিস না। রাজনীতি আমরা করি মানুষের কল্যাণে। মানুষকে সেবা দেয়ার লক্ষ্যে। নীতিনির্ধারক হওয়ার উদ্দেশ্যে। এসব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণে রাজনীতি করলে তো খারাপ কিছু হয় না। রাজনীতি করা বা রাজনৈতিক পরিচয় আমার কাছে কোনভাবেই অস্বস্তির বিষয় নয়। বরং, এটা আমার জন্য স্বস্তির।
প্রশ্ন: ফেনী সকার ক্লাবের মাধ্যমে তরুণ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আপনি একটি অবস্থান তৈরি করেছেন। এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি। মেয়র নির্বাচিত হলে খেলাধুলার উন্নতিতে আপনার বিশেষ কি ভূমিকা থাকবে।
তাবিথ: আমার আজকের এ অবস্থানের পেছনে আমার ফুটবলার সত্তা, ক্রীড়া সংগঠক সত্তার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আমার নেশা এবং পেশা ফুটবল বলতে পারেন। মেয়র নির্বাচিত হলেও আমি ক্রীড়াঙ্গন থেকে সরব না। একটি কথা বলতে চাই, একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ঢাকা শহরে আমার গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। ঢাকা শহরের জন্য শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ ও টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করা। যে কমিটমেন্ট নিয়ে বড় হয়েছি, সেটা যে কোন মূল্যেই পূরণ করবো।
প্রশ্ন: আপনি নিরাপদ ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কিভাবে সেটা বাস্তবে রূপ দেবেন?
তাবিথ: নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আমার কিছু স্টাডি আছে। ক্রাইম ম্যাপিংয়ের আওতায় আমি বেআইনি কাজগুলোর ব্যাপারে তথ্য দিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবো। জনমত গড়ার মাধ্যমে পরিস্থিতির উত্তরণের দিকে বেশি গুরুত্ব দেবো। মেয়র হয়তো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারেন না। কিন্তু মেয়র জনগণকে নিয়ে থানায়, মন্ত্রীর বাসায়, পুলিশ কমিশনারের অফিসে যান নিশ্চয় তারা নিরাপত্তার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বাধ্য হবে।
প্রশ্ন: আপনি বিরোধী রাজনৈতিক জোটের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন, নির্বাচিত হলে তাদের পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে কিভাবে সমন্বয় করবেন?
তাবিথ: যখন একজন জনপ্রতিনিধি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেবে। তখন তার ওপর অনেক দায়িত্ব ও কর্মভার চলে যাবে। তখন সরকার কিন্তু ভাববে একজন জনপ্রতিনিধিকে ছাড়া আমরা কিভাবে জনসেবা করব।
প্রশ্ন: তরুণ মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলে তরুণদের জন্য বিশেষ কি পরিকল্পনা আছে?
তাবিথ: আমি তো তরুণদের বাইরে নই। আমি যে স্বপ্ন দেখি তা নিশ্চয়ই তরুণ সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তরুণরা চায় একটি মুক্ত সমাজ, নিরাপত্তাপূর্ণ সমাজ ও বাসযোগ্য ঢাকা। আমি তরুণদের আলাদাভাবে দেখতে চাই না। কারণ তরুণরা অত্যন্ত সচেতন। তারাও ওই রকম একজন জনপ্রতিনিধি চাইছে। যিনি তাদের নয়-ছয় বুঝাতে পারবে না। এখন প্রযুক্তির যুগ, তরুণরা প্রযুক্তিগত সহায়তা চায়। এ প্রত্যাশাগুলো অযৌক্তিক নয়। তরুণ সমাজ আমার পরিকল্পিত উদ্যোগের অংশীদার হবে।
প্রশ্ন: আপনি নেতাকর্মীদের গুমের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচনের আগে কি সেটা আরও প্রকট হতে পারে মনে করেন?
তাবিথ: এখানে আমার মনে করার কিছু নেই। প্রতিদিন কি ঘটছে তা সবাই দেখছে। পহেলা বৈশাখে যে দুঃখজনক ঘটনা দেখেছি, শুনেছি আর ওপর প্রশাসন থেকে যে ধরনের অস্বীকার এসেছে, শব্দটি খুঁজে পাচ্ছি না। এটা সবাইকে বুঝিয়ে দেয়, আইনশৃঙ্খলা এখন কোথায় আছে।
প্রশ্ন: আপনি গণপরিবহনের মানোন্নয়ন ও যানজট নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিন্তু সেটা কিভাবে আপনি বাস্তবায়ন করবেন?
তাবিথ: ঢাকায় গণপরিবহন মাত্র ২০ ভাগ। তবে সব যানবাহন মিলিয়ে আমাদের সড়কের ৭০ ভাগ ব্যবহার করছে। বাকি ৩০ ভাগ কই। সেগুলো- ভাঙাচোরা, বর্জ্যের সআস্তূপ এবং ব্যবহার অনুপযোগী। যা মানুষ তা ব্যবহার করতে পারছে না। এগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে পারলে যানজট নিরসনের জন্য ৩০ শতাংশ সড়ক বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বাসের সংখ্যা ও মান বাড়াতে হবে। এছাড়া সময় এসেছে বাসের রুট পুনর্নিধারণ করার।
প্রশ্ন: নগরের বেশির ভাগ উন্নয়ন ও মেরামতের কাজ হয় সাধারণত বর্ষা মওসুমে। এতে নাগরিক ভোগান্তি বেড়ে যায়। আপনি নির্বাচিত হলে কি করবেন?
তাবিথ: গ্যাস-পানির লাইন মেরামত ও উন্নয়নের জন্য রোড কাটতে হয়। রোড কাটার অনুমতি দেয় ঢাকা সিটি করপোরেশন। বর্ষাকালে এসব কাটাকাটির জন্য অনুমতি দেব না। সহজ কথা। আর দেয়ার সময় সমন্বয় করেই দেব, কার কার কি কাজ অমুক তারিখে শুরু করবেন, অমুক তারিখে শেষ করবেন। প্রয়োজনে ওই সময় পুরো সড়কই বন্ধ থাকবে। সমন্বয় করার ক্ষমতা সিটি করপোরশনের থাকলেও সেটা করা হয়নি এতদিন। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে অনেক কিছু করা যায়।
প্রশ্ন: সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলরদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, সেটা কিভাবে করবেন?
তাবিথ: নগরবাসী এখানেই আমার নেতৃত্বের পরিচয় পাবে। কিভাবে আমি অন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সুশাসন নিশ্চিত করতে সমন্বিতভাবে কাজ করি। সেটাই তো আমার সাফল্য হবে।
প্রশ্ন: নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন, কেন এটাকে আপনি এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন?
তাবিথ: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে যতই ভাল দাবি করা হোক, মানুষ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। কমিশন বলছে সেনা লাগবে না, পুলিশকে দিয়েই তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাখতে পারবেন। আমি বলতে চাই না, পারবেন না। উনার যদি পারেনও তবু তো লাভ হচ্ছে না। মানুষের মাইন্ডসেট হয়ে আছে অন্যরকম। যখন একজন সেনা সদস্য একটি পুলিং বুথের সামনে দাঁড়ায়, বা রাস্তায় অবস্থান নেয়, মানুষের তখন আত্মবিশ্বাস জন্মে। আমি ভোটকেন্দ্রে যেতে পারব, আমার ভোটটি গণনা হবে এবং ভোট দেয়ার পর আমি আবার আমার বাসায় ফিরতে পারব। এই আত্মবিশ্বাসের দরকার আছে। সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের ফিল্ডে না দেখলে মানুষের মধ্যে সে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে না। অন্য যত পদক্ষেপই নেন।
No comments