মোদীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা
ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা তৈরি
হয়েছে। অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত মুখপাত্র বিকাশ
স্বরূপ জানিয়েছেন, মোদীর ঢাকা সফরের সূচী কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত মোটামুটি ঠিক ছিল, মে মাসের শেষে কিম্বা জুন মাসের
প্রথমে মোদী ঢাকা সফরে যেতে পারেন। বিশেষ করে পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করের
মোদীর নির্দেশে ঢাকা সফর এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢাকা সফরে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে সবুজ সংকেত ও তিস্তা নিয়ে
পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেবার পর দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎপরতা
শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন সব থমকে রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি
নিশ্চিত ধরে নিয়েও তা এখনও ভারতের সংসদে নতুন করে পেশ করার সুযোগ হয়ে
ওঠেনি। তবে গতকাল সোমবার থেকে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে সীমান্ত সংক্রান্ত
বিল পেশ করা হবে বলে এখন পর্যন্ত ঠিক রয়েছে। কিন্তু আসামের আগামী বিধানসভা
নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আপাতত আসামকে বাদ দিয়ে কিভাবে সেই বিল পেশ করা হবে
তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কেবিনেট কমিটিতে আলোচনার
পরই স্পষ্ট হবে বিলটি কিভাবে সংসদে পেশ করা হবে। তবে মোদী বাংলাদেশ সফরে
গিয়ে তিস্তা নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করুন এমন একটি মত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে
দুত মারফত জানানো হয়েছে। তিস্তার পাণি বণ্টন নিয়ে ২০১১ সালের খসড়া নিয়ে
নতুন করে এখন পর্যন্ত কোনও আলোচনা শুরু হয়নি বলে দিল্লির বিভিন্ন সূত্র
থেকে জানা গেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছেও আলোচনার কোনও প্রস্তাব আসেনি বলে
নবান্ন সূত্রে বলা হয়েছে। এর আগে দুই দেশের ৪০ : ৪০ ভিত্তিতে পাণি বণ্টনের
একটি সূত্র রাখা হয়েছিল। ২০ শতাংশ পাণি নদীর প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য
নির্দ্দিষ্ট ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বার্থে
অতিরিক্ত পাণি দাবি করে আসছেন। তার সেই মনোভাব কতটা বদলেছে বা মুখ্যমন্ত্রী
কি ধরণের সহযোগিতা করবেন বলে ভেবেছেন তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনার
পরই ষ্পষ্ট হবে। কিন্তু তিস্তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত আলোচনা শুরু না হওয়ায়
মোদীর বাংলাদেশ সফর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
একটি সূত্রের মতে, এ বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে সমানে রেখে
মোদী সম্ভবত বাংলাদেশে যাবেন। আর তার আগে তিস্তা নিয়ে চুক্তির খসড়া পাকা
করেই তিনি ঢাকা যাবেন। বাংলাদেশ সরকারও বারে বারে দূত মারফত জানানোর চেষ্টা
করে আসছে যে, তিস্তা চুক্তিই তাদের কাছে অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে।
ভারতও মোদীর সফরে এই চুক্তি উপহার দিতে আগ্রহী। কিন্তু তিস্তা নিয়ে আলোচনা
শুরু না হওয়ায় এর গতিপথ নিয়ে নিশ্চিতভাবে কোনও পক্ষই কিছু বলতে পারছেন না।
কূটনৈতিক মহলের মতে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত না করে
মোদী সম্ভবত ঢাকায় পা দেবেন না। বরং বাংলাদেশের মানুষের মনে আস্থা বৃদ্ধির
জন্যই মোদীকে ঢাকা সফরে গিয়ে তিস্তা চুক্তির পাশাপাশি আরও বেশ কিছু
গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করতে হবে।
No comments