‘জোরপূর্বক’ প্রার্থিতা প্রত্যাহার by উৎপল রায় ও সিরাজুস সালেকিন
প্রতিপক্ষের লোকজন জোরপূর্বক প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর নেয়ায় রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থিতা বহাল রাখতে আবেদন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আনোয়ারুল ইসলাম। রিটার্নিং অফিসারের কাছে লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের কতিপয় ব্যক্তি অপকৌশলে আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটি কাগজে আমার স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। যা আমাকে পড়তে দেয়া হয় নাই। আমার ধারণা উহা একটি প্রত্যাহারপত্র হইতে পারে। আমি আশঙ্কা করছি যে আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য তারা আমার নামে উক্ত প্রত্যাহারপত্র রিটার্নিং অফিসে জমা দিবে। সিটি নির্বাচনের মনোনয়পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে এভাবে জোরপূর্বক মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে আরও কয়েকটি। দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি কোহিনুর আক্তার বীথি। পল্লবী থানা যুব মহিলা লীগের সেক্রেটারি বিলকিস বেগম মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন একই কারণে। দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করলে তাদের দলীয় পদ কেড়ে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
স্বাক্ষর করা প্রত্যাহারকৃত আবেদন ফেরত নিতে এসেছিলেন ঢাকা দক্ষিণের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর কয়েকজন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন তারা। দুপুরে রাজধানীর শ্যামপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী উম্মে কুলসুম ফরিদুন্নেসা ঝর্না মহানগর নাট্য মঞ্চের দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কার্যালয় থেকে তার প্রত্যাহারকৃত আবেদনপত্র ফেরত নিতে আসেন। দক্ষিণের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দিনভর অপেক্ষার পরও দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার মিহির সারওয়ার মোর্শেদ আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তা দিতে অপারগতা জানান। একপর্যায়ে প্রার্থীকে মামলা করার পরামর্শ দেন তিনি। মিহির সারওয়ার জানান, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে আবার নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই। পরে উম্মে কুলসুম ঝর্না এ প্রতিবেদককে বলেন, দক্ষিণের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আমি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও তা দাখিল করেছিলাম। কিন্তু ৬ই এপ্রিল আওয়ামী লীগের দপ্তরের কথা বলে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়। এরপর আমার কাছ থেকে প্রত্যাহার পত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিই। আজ নির্বাচন কমিশন অফিসে এসে জানতে পারলাম আমার দেয়া স্বাক্ষর অনুযায়ী আমি নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তাই আমার নির্বাচন করার আর কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, শুধু আমি নই এ রকম আরও অনেকের কাছ থেকে দলের দপ্তরের কথা বলে স্বাক্ষর নিয়ে সবার স্বাক্ষর করা প্রত্যাহার পত্র গতকাল জমা দেয়া হয়েছে। গতকাল দক্ষিণে মহানগর নাট্যমঞ্চে এ রকম কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে এমন কারণ দেখিয়ে তারা কিছু বলতে অস্বীকার করেন। এদের কয়েকজন প্রায় অভিন্ন সূরে বলেন, খুব আশা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছিলাম। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা প্রত্যাহার পত্রে স্বাক্ষর করেছি। তবে আমরা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলেও আমাদের বদলে যাদেরকে সমর্থন দেয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগ নির্বাচনের অযোগ্য। দলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও দলীয় কার্যক্রমে তাদের তেমন একটা দেখা যায় না।
দক্ষিণের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা রুখসানা বেগম পারভিন বলেন, নির্বাচনের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরেতো যাওয়া যাবে না। তাই নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। একটু কষ্ট হলেও দলের সিদ্ধান্ততো মেনে নিতে হবে। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাবের হোসেন পাপন বলেন, নির্বাচন করে এলাকাবাসীর সেবা করার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দল ও নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) সম্মান জানিয়ে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
জোরপূর্বক মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়টি অবগত নন বলে জানান ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমার কাছে কোন চিঠি আসেনি। সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন ৭ প্রার্থী। ঢাকা উত্তরে মোট ২১৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক চাপে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। জোরপূর্বক মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘটনা নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তাদের এসব ক্ষেত্রে ইসির নীরবতা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ভবিষ্যতে মানুষ কমিশনের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
সিটি নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলের উনবিংশ অনুচ্ছেদে ‘নির্বাচনী অপরাধ ও দণ্ড প্রয়োগবিধির অবৈধ প্রভাব বিস্তার এক ধরনের নির্বাচনী অপরাধ। এই অংশে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবেন, যদি তিনি- কোন ব্যক্তিকে কোন নির্বাচনে ভোট প্রদান করিতে বা উহা হইতে বিরত থাকিতে অথবা নির্বাচনের প্রার্থী হইতে বা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিতে প্ররোচিত বা বাধ্য করিবার উদ্দেশ্যে, পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে , তিনি নিজে বা তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে (ক) কোন প্রকার শক্তি, ত্রাস বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বা ভীতি প্রদর্শন করেন। (আ) কোন আঘাত, ক্ষতি বা সম্মানহানি বা লোকসান ঘটান বা ঘটাইবার উদ্দেশ্যে ভীতি প্রদর্শন করেন। (ই) কোন সাধু বা পীরের দৈব অভিশাপ কামনা করেন বা করিবার ভীতি প্রদর্শন করেন। (ঈ) কোন ধর্মীয় দণ্ড প্রদর্শন করেন বা করিবার ভীতি প্রদর্শন করেন; বা (উ) কোন সরকারি প্রভাব বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ব্যবহার করেন। উল্লিখিত কার্যকলাপের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হইলে তিনি অন্যূন ৬ মাস ও অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ডে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিষয়টা এমন হয়ে গেছে যে দল প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন করছে। জোরপূর্বক প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর ঘটনা নির্বাচন কমিশনকে অকার্যকর প্রমাণ করছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা থেকে দেশের মানুষের আগ্রহ চলে যাবে। তখন নির্বাচন কমিশন তাদের সুবিধামত সাজানো নির্বাচন করতে থাকবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছে তা নির্বাচনী অপরাধ। নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলে এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধ অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, বড় দলগুলো নির্বাচনে জড়িয়ে পড়েছে। যদিও আমাদের কাছে তারা আসেন না। তবে বাইরে থেকে বিভিন্ন প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। আমার মতে এটা দলীয়ভাবে হলে খারাপ হয় না বরং ভালই হয়।
তিনি আরও বলেন, পাশের দেশেই এই ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে। আমাদের আইনে নেই দলীয়ভাবে নির্বাচন করার। তবে প্রার্থীদের পেছন থেকে বিভিন্ন দল সমর্থন করছে। এর চেয়ে ভাল হয় যদি সরাসরি সমর্থন করার জন্য যদি আইন হয়। প্রধানমন্ত্রী সংসদে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার পরামর্শ দিয়েছেন-এ বিষয়ে কমিশন কোন উদ্যোগ নেবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংসদে কমিশনের কোন প্রতিনিধি নেই। আইনগত নির্দেশনা আসলে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো।
স্বাক্ষর করা প্রত্যাহারকৃত আবেদন ফেরত নিতে এসেছিলেন ঢাকা দক্ষিণের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর কয়েকজন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন তারা। দুপুরে রাজধানীর শ্যামপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী উম্মে কুলসুম ফরিদুন্নেসা ঝর্না মহানগর নাট্য মঞ্চের দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কার্যালয় থেকে তার প্রত্যাহারকৃত আবেদনপত্র ফেরত নিতে আসেন। দক্ষিণের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দিনভর অপেক্ষার পরও দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার মিহির সারওয়ার মোর্শেদ আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তা দিতে অপারগতা জানান। একপর্যায়ে প্রার্থীকে মামলা করার পরামর্শ দেন তিনি। মিহির সারওয়ার জানান, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে আবার নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই। পরে উম্মে কুলসুম ঝর্না এ প্রতিবেদককে বলেন, দক্ষিণের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আমি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও তা দাখিল করেছিলাম। কিন্তু ৬ই এপ্রিল আওয়ামী লীগের দপ্তরের কথা বলে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়। এরপর আমার কাছ থেকে প্রত্যাহার পত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিই। আজ নির্বাচন কমিশন অফিসে এসে জানতে পারলাম আমার দেয়া স্বাক্ষর অনুযায়ী আমি নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তাই আমার নির্বাচন করার আর কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, শুধু আমি নই এ রকম আরও অনেকের কাছ থেকে দলের দপ্তরের কথা বলে স্বাক্ষর নিয়ে সবার স্বাক্ষর করা প্রত্যাহার পত্র গতকাল জমা দেয়া হয়েছে। গতকাল দক্ষিণে মহানগর নাট্যমঞ্চে এ রকম কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে এমন কারণ দেখিয়ে তারা কিছু বলতে অস্বীকার করেন। এদের কয়েকজন প্রায় অভিন্ন সূরে বলেন, খুব আশা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছিলাম। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা প্রত্যাহার পত্রে স্বাক্ষর করেছি। তবে আমরা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলেও আমাদের বদলে যাদেরকে সমর্থন দেয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগ নির্বাচনের অযোগ্য। দলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও দলীয় কার্যক্রমে তাদের তেমন একটা দেখা যায় না।
দক্ষিণের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা রুখসানা বেগম পারভিন বলেন, নির্বাচনের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরেতো যাওয়া যাবে না। তাই নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। একটু কষ্ট হলেও দলের সিদ্ধান্ততো মেনে নিতে হবে। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাবের হোসেন পাপন বলেন, নির্বাচন করে এলাকাবাসীর সেবা করার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দল ও নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) সম্মান জানিয়ে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
জোরপূর্বক মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়টি অবগত নন বলে জানান ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমার কাছে কোন চিঠি আসেনি। সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন ৭ প্রার্থী। ঢাকা উত্তরে মোট ২১৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক চাপে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। জোরপূর্বক মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘটনা নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তাদের এসব ক্ষেত্রে ইসির নীরবতা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ভবিষ্যতে মানুষ কমিশনের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
সিটি নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলের উনবিংশ অনুচ্ছেদে ‘নির্বাচনী অপরাধ ও দণ্ড প্রয়োগবিধির অবৈধ প্রভাব বিস্তার এক ধরনের নির্বাচনী অপরাধ। এই অংশে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবেন, যদি তিনি- কোন ব্যক্তিকে কোন নির্বাচনে ভোট প্রদান করিতে বা উহা হইতে বিরত থাকিতে অথবা নির্বাচনের প্রার্থী হইতে বা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিতে প্ররোচিত বা বাধ্য করিবার উদ্দেশ্যে, পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে , তিনি নিজে বা তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে (ক) কোন প্রকার শক্তি, ত্রাস বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বা ভীতি প্রদর্শন করেন। (আ) কোন আঘাত, ক্ষতি বা সম্মানহানি বা লোকসান ঘটান বা ঘটাইবার উদ্দেশ্যে ভীতি প্রদর্শন করেন। (ই) কোন সাধু বা পীরের দৈব অভিশাপ কামনা করেন বা করিবার ভীতি প্রদর্শন করেন। (ঈ) কোন ধর্মীয় দণ্ড প্রদর্শন করেন বা করিবার ভীতি প্রদর্শন করেন; বা (উ) কোন সরকারি প্রভাব বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ব্যবহার করেন। উল্লিখিত কার্যকলাপের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হইলে তিনি অন্যূন ৬ মাস ও অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ডে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিষয়টা এমন হয়ে গেছে যে দল প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন করছে। জোরপূর্বক প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর ঘটনা নির্বাচন কমিশনকে অকার্যকর প্রমাণ করছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা থেকে দেশের মানুষের আগ্রহ চলে যাবে। তখন নির্বাচন কমিশন তাদের সুবিধামত সাজানো নির্বাচন করতে থাকবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছে তা নির্বাচনী অপরাধ। নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলে এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধ অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, বড় দলগুলো নির্বাচনে জড়িয়ে পড়েছে। যদিও আমাদের কাছে তারা আসেন না। তবে বাইরে থেকে বিভিন্ন প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। আমার মতে এটা দলীয়ভাবে হলে খারাপ হয় না বরং ভালই হয়।
তিনি আরও বলেন, পাশের দেশেই এই ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে। আমাদের আইনে নেই দলীয়ভাবে নির্বাচন করার। তবে প্রার্থীদের পেছন থেকে বিভিন্ন দল সমর্থন করছে। এর চেয়ে ভাল হয় যদি সরাসরি সমর্থন করার জন্য যদি আইন হয়। প্রধানমন্ত্রী সংসদে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার পরামর্শ দিয়েছেন-এ বিষয়ে কমিশন কোন উদ্যোগ নেবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংসদে কমিশনের কোন প্রতিনিধি নেই। আইনগত নির্দেশনা আসলে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো।
No comments