‘ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ’ -নিউ ইয়র্ক টাইমস
বাংলাদেশে
কেউ নিখোঁজ হলে তার দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ। মানুষ ভীতিকর পরিস্থিতির
মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এমনটাই লিখেছে আমেরিকার বিখ্যাত পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক
টাইমস। গতকাল ৯ এপ্রিল অ্যালেন ব্যারি লিখিত ‘Amid Political
Confrontations in Bangladesh, a Search for a Missing Opposition
Official’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। প্রায় এক মাস
আগে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দৃশ্যত অপহরণ করার পর
সেই রাস্তায় এখন এক ভয়ার্ত নীরবতা নেমে এসেছে। সেই বাসভবনের কম্পাউন্ডের এক
কেয়ারটেকার একদল লোককে দরজা খুলে দিয়েছিলেন এবং অনেক সাংবাদিককেই বলেছিলেন
যে তারা নিজেদের পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। সেই
রাস্তায় তার বন্ধুরা জানাচ্ছেন, তাকে (কেয়ারটেকারকে) আর পাওয়া যাচ্ছে না।
সেই বাসভবনের দরজা খুলেছিলেন যে গৃহপরিচারিকা তারও হদিস নেই। ওই
অ্যাপার্টমেন্টের মালিক একটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপক, তারও নাগাল পাওয়া
যাচ্ছে না। পাশের ভবনের প্রহরী মোজাম্মেল বলেন, ‘অবশ্যই কিছু একটা ঘটেছে
কিন্তু সবাই মুখ বুঝে থাকাটাকেই শ্রেয় মনে করছে।’ এ সময় সেই ভবন থেকে একজন
এসে সালাহ উদ্দিন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ
করেন এবং বলে এ ঘটনায় প্রতিবেশীরাও বিপদে আছে। আধো ইংরেজিতে তিনি বলছিলেন,
“সবাই ভয়ে আছে।আপনি নিজেও এখন এটা দেখতে পাচ্ছেন।” তিনি তার নাম প্রকাশ
করতে অস্বীকৃতি জানান। গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সংঘাতময় অবস্থা থেকে
বাংলাদেশের প্রধান দুটি দলই গত সপ্তাহে সরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার কাছে নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া অবরোধ ও
হরতালের ডাক দেন। এরপর থেকে বোমা হামলায় শতাধিক লোক নিহত এবং বিএনপির বহু
নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে রোবার থেকে উত্তেজনা হ্রাস পেয়েছে।
এদিন দুটি দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে না পাঠিয়ে জামিন দেয়
আদালত। খালেদা জিয়া এপ্রিলের শেষে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য
তার দলীয় প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন। দৃশ্যত এর মাধ্যমে তিনি স্বীকার করে
নিয়েছেন যে আন্দোলন শেষ হয়েছে। তবে এ সংকট থেকে সোজাসুজি বের হওয়া সহজ হবে
না। এর একটি কারণ গত ১০ মার্চ সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ হওয়া। তার পরিবার
এবং দলের নেতারা বলছেন যে তারা নিশ্চিত যে নিরাপত্তা বাহিনীই এ কাজ করেছে।
কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অপহরণ এবং
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ উপস্থাপন করছে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সন্ত্রাসবিরোধী এলিট ফোর্স র্যাবের বিরুদ্ধেও এ
অভিযোগ রয়েছে যারা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার
প্রশিক্ষণ পেয়েছে। সালাহ উদ্দিন ছিলেন বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের দলীয়
মুখপাত্র। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, তার নিখোঁজের ঘটনায়
অনেকে শঙ্কিত। “অবস্থাটা হচ্ছে তিনি নিখোঁজ এবং কেউ তার দায় নিচ্ছে না।
আমার কাছে এটা অত্যন্ত ভীতিকর অবস্থা। যে কাউকে মধ্যরাত তুলে নেয়া যায় এবং
তারপর সরকার বলবে যে আমাদের কাছে কোনো ধারণা নেই,” বলছিলেন মাহফুজ আনাম।
অনেক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকেদের জানিয়েছেন যে সালাহ উদ্দিন যেখানে ছিলেন
সেই রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে এ ঘটনার
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষদর্শী কেয়ারটেকার আখতার আলির সাথে পরবর্তীতে
যোগাযোগ করা যাচ্ছে না অথবা তিনি স্ববিরোধী কথা বলছেন। সেই রাতে রাস্তায়
উপস্থিত দুজন নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন যে তারা সেই ভবনের সামনে র্যা
বের একটি গাড়িসহ তারা তিন-চারটি গাড়ি দেখেছেন। সালাহ উদ্দিনের গাড়ির
ড্রাইভারের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা জানান, সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজের দুদিন
আগে তার স্বামীকে প্রত্যুষে সশস্ত্র ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার করেন। তারপর তাকে
পাশের থানায় সোপর্দ করা হয়। তিনি এখনো জেলেই আছেন। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে এ
সংক্রান্ত শুনানিতে সরকারি আইনজীবী বলেছন, রাষ্ট্রীয় কোনো নিরাপত্তা
বাহিনী সালাহ উদ্দিনকে গ্রেফতার করেনি। পুলিশ বলছে, ২০টি মামলায় গ্রেফতারের
ভয়ে অথবা দলকে সংগঠিত করার জন্য তিনি তিনি আত্মগোপনে থাকতে পারেন। ডিবির
যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ তাকে নিয়েছে কিনা তা আমরা নিশ্চিত
নই। তাকে যখন নিয়ে যাওয়া হয় অথবা তিনি যখন সেই জায়গা ছেড়ে যান তখন কেউ কোনো
শব্দ শোনেনি। কেউ জানে না যে সালাহ উদ্দিন সেখানে ছিলেন।’ তিনি বলেন, যখন
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে পুলিশ কর্মকর্তারা জানতে চান তখন তারা অস্বীকার করে
বসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিরোধী দল ভীতি প্রদর্শন করতে পারে ইঙ্গিত করে
মনিরুল বলেন, ‘তারা হয়তো পেট্রলবোমার ভয়ে শঙ্কিত।’ সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী
সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ বলেন, তিনি প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা
বলেছেন এবং তার কোনো সন্দেহ নেই যে তাকে নিরাপত্তা বাহিনীই গ্রেফতার করেছে।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা বলতে চাই যে
তিনি জীবিত আছেন, তিনি অবশ্যই জীবিত আছেন।’ ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতার
মধ্যেই সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ হন। বহু সাধারণ মানুষ বোমা হামলায় মারা গেছেন
যা বিরোধী নেতাদের নির্দেশে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপির অনেক সিনিয়র
এবং মাঝারি পর্যায়ের নেতার বিরুদ্ধে বোমা হামলা এবং গাড়ি ভাঙচুরের জন
ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দলটির দুজন যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব, একজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যসহ বহু
নেতাকর্মী এখন কারাবন্দি। সালাহ উদ্দিন আহমেদ যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
তিনি জানুয়ারিতে হরতাল ও অবরোধ ঘোষণার মত স্পর্শকাতর দায়িত্বের মুখপাত্র
হিসেবে কাজ করছিলেন। তার আগে তার একই দায়িত্বে থাকা দুজনকে গ্রেফতার করা
হয়েছিল। হাসিনা আহমেদ জানান, সালাহ উদ্দিন পালিয়ে ছিলেন এবং এক বাসা থেকে
অন্য বাসায় থাকতেন। পরিবারের সাথে তার মাঝে মাঝে সাক্ষাত হতো। তাদের ১৭ বছর
বয়সী মেয়ে ফারিবা জানায়, কয়েক মাস যাবৎ সে তার বাবাকে দেখেনি। এর আগে ২০১৩
সালের এপ্রিলে বিএনপির আরেক নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন। হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ গত বছর জানায় যে তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ১১টি ঘটনার
অনুসন্ধান করে দেখেছেন এসব ঘটনায় র্যা বসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী দলের
নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পর সন্দেহজনকভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৪ সালের
এপ্রিলে নারায়ণঞ্জে দৃশ্যত চুক্তিভিত্তিক খুনের ঘটনায় (সাত খুন) গত
সপ্তাহেই তিন র্যা ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে সরকারি
কৌঁসুলিরা। মূল প্রতিবেদনটি এখানে তুলে ধরা হলো: Amid Political
Confrontations in Bangladesh, a Search for a Missing Opposition Official
By ELLEN BARRY APRIL 9, 2015 DHAKA, Bangladesh -A jittery silence has
fallen over the street where Salahuddin Ahmed, a top official of the
opposition Bangladesh Nationalist Party, is believed to have been
abducted a month ago. The caretaker who opened the compound gate to a
group of men, and told several journalists they identified themselves as
police detectives, can no longer be found, friends on the street say.
Neither can the maid who opened the door to the apartment. The owner of
the apartment, the deputy managing director of a bank, is also
unreachable. “Of course something happened, but each and every one
prefers to be silent,” said Mozammel, a guard at the building next door.
A man who emerged from the building urged reporters to stop asking
about Mr. Ahmed, which he said put the neighbors in danger. “Everyone is
fear,” he said in broken English, refusing to give his name. “You,
also, are being observed at this moment.” Over the last week,
Bangladesh’s two main political leaders have edged back from the
confrontation that paralyzed the country starting in January, when the
opposition leader Khaleda Zia began a campaign of political strikes and
transport blockades, hoping to force her rival, Prime Minister Sheikh
Hasina, to call new national elections. Since then, more than 100 people
have been killed in firebombings, and dozens of B.N.P. officials and
activists arrested. The tension seemed to abate Sunday, when Mrs. Zia,
the head of the B.N.P., surrendered to a court in two graft cases,
something she had refused to do. The court then granted Mrs. Zia bail
rather than ordering her arrest. Mrs. Zia has instructed candidates from
her party to compete in city elections in late April, evidently
acknowledging that the protest has run its course. But it will not be
easy or straightforward to exit the crisis. One reason is Mr. Ahmed’s
disappearance on March 10, which his family members, and party leaders,
say they are certain was carried out by security forces. For years,
domestic and international rights organizations have documented
abductions and extrajudicial killings and torture by Bangladeshi
security forces, including the Rapid Action Battalion, an elite
counterterrorism squad that receives training in internal disciplinary
protocol from the United States. The disappearance of Mr. Ahmed, who had
a high-profile role as party spokesman, has been unsettling for many,
said Mahfuz Anam, the editor of The Daily Star, a newspaper based here.
“The state of the matter is that he has disappeared, and nobody is
taking responsibility,” he said. “To me, this is a very fearful
situation. Anybody can be picked up in the dead of night, and then the
government can say, ‘We have no idea.’ ” Several witnesses told
journalists that law enforcement officers were present on the street
where Mr. Ahmed was staying, but the most important witnesses -
including the caretaker, Akhter Ali - subsequently fell out of contact
or gave contradictory evidence. Two people present on the street that
night, speaking on the condition of anonymity, said that they had seen
three or four vehicles, including one from the Rapid Action Battalion,
parked in front of the house. Rebeka Sultana, whose husband was Mr.
Ahmed’s driver, said her husband was detained in the predawn hours by
armed men in civilian clothes two days before Mr. Ahmed disappeared,
then jailed in a nearby police station. The driver remains in custody.
At a court hearing that ended Thursday, a government lawyer testified
that Mr. Ahmed had not been detained by any state security forces and
that efforts to find him had failed. The police have suggested he may
have voluntarily gone into hiding to avoid arrest in 20 pending criminal
cases, or possibly to mobilize support for the party. “We are not sure
he was taken by anybody,” said Monirul Islam, joint commissioner in
Dhaka’s detective and criminal intelligence division. “Nobody heard any
noise when he was taken, or left that place. Nobody knows that
Salahuddin was there.” When police officers have approached witnesses
for information about Mr. Ahmed, he said, “they just decline.” “Maybe
they are afraid of petrol bombs,” he added, suggesting that opposition
forces had intimidated witnesses. Mr. Ahmed’s wife, Hasina Ahmed, a
former member of Parliament, said she had questioned the witnesses and
was left with no doubt that he had been detained by security forces. “We
want to say he is alive, he is very much alive,” said Moudud Ahmed,
another lawyer for the family, at the hearing on Thursday. Mr. Ahmed’s
disappearance took place amid mounting political violence, as dozens of
ordinary Bangladeshis were being killed in firebombings, presumably
ordered by opposition leaders. Most of the B.N.P.’s senior and midlevel
leaders face criminal charges for violations like throwing bombs or
vandalizing vehicles. Many — two joint secretaries general, an acting
secretary general, a vice chairman and a member of the party’s standing
committee, among others — are in jail, according to The Daily Star. Mr.
Ahmed, who served as the deputy communications minister when his party
was in power, was a party joint general secretary and took on a
sensitive role in January, as spokesman responsible for announcing
strikes and blockades. His two immediate predecessors had been arrested,
and he went into hiding, moving from house to house and arranging
occasional meetings with family, his wife said. His
17-year-old-daughter, Fariba, said she had not seen him for “a few
months.” In April 2013, Elias Ali, a regional secretary of the B.N.P.,
was reported missing. Hasina Ahmed called for an inquiry, but also
suggested that he might have been hiding on party orders. He has never
been located. Last year, Human Rights Watch documented 11 cases that
took place around the 2014 election in which opposition leaders or
activists were killed under suspicious circumstances after being
detained by law enforcement, in many cases by the Rapid Action
Battalion. This week, state prosecutors charged three former battalion
officials and more than two dozen other former battalion personnel in
connection with the April 2014 deaths of seven men in what were
apparently contract killings.
No comments