সিটি নির্বাচনে উপস্থিতি কম, তবু ৪৫% ভোট!
ঢাকা উত্তর ৩৭.২৯%, ঢাকা দক্ষিণ ৪৮.৫৭%, চট্টগ্রাম ৪৭.৮৯%, তিন সিটিতে বাতিল ভোট ১,২১,০০৩
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হিসাবে ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষকসহ পরাজিত মেয়র প্রার্থীরা এত বেশি ভোট পড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকি ভোট বর্জনের পরও বিএনপি-সমর্থিত তিন মেয়র প্রার্থীর বিপুলসংখ্যক ভোট পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের অনেকেই বলছেন, ক্ষমতাসীন দল-সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা কেন্দ্র দখল করে দেদার সিল মারার কারণেই ভোটের পরিমাণ এত বেড়েছে। তাঁদের ধারণা, প্রকৃতভাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ভোটার কেন্দ্রে আসেননি।
কমিশন সচিবালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাতিল ভোটের পরিমাণ ১ লাখ ২১ হাজার ৩। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে ৪০ হাজার ১৩০, উত্তরে ৩৩ হাজার ৫৮১ এবং চট্টগ্রামে ৪৭ হাজার ২৯২ ভোট।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মনে করেন, কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার কারণে এবার তিন সিটিতে বাতিল ভোটের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেশি।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ঢাকা উত্তরে ৩৭ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৪৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। গড়ে ভোট পড়েছে ৪৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সরকার-সমর্থিত বিজয়ী তিন মেয়র প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশন এটিকে স্বাভাবিক বলছে।
গত মঙ্গলবার ভোটের দিন প্রথম আলোর ১৩ জন প্রতিবেদক সারা দিন দক্ষিণে এবং ১৪ জন প্রতিবেদক উত্তরে ঘুরেছেন। মোট ২৭৯টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে কোথাও কোথাও ভোটার থাকলেও দুপুরের পর ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে বেশির ভাগ কেন্দ্র। একই অবস্থা ছিল চট্টগ্রামেও।
তার পরও এত ভোট পড়ার কারণ জানতে চাইলে ভোট গ্রহণের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরাও ভোটের হার নিয়ে বিব্রত। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ব্যালট নিয়ে জোর করে সিল মারায় এসব ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনকে এই অনিয়মের বিষয়ে বারবার জানানো হলেও সাহায্য পাওয়া যায়নি। পরে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আইডিয়াল কলেজের একটি কেন্দ্রে সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। কিন্তু ইসির তথ্য অনুযায়ী, এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৬৮ শতাংশ। ওই কেন্দ্রের একজন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, এই কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ভোটার এসেছিলেন। বাকিটা ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সিল মেরে নিয়েছে।
একই ওয়ার্ডের আরেকটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের দিকে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সব ব্যালট নিয়ে যেতে থাকে। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে তিনি ব্যালটের সাতটা বান্ডিল (৭০০ ব্যালট) লুকিয়ে ফেলেন। কারণ, তাঁর ভয় হচ্ছিল তারা যেভাবে ভোট দিচ্ছে তাতে এক শ শতাংশ ভোট পড়ে যাবে। তখন তিনি বিপদে পড়বেন। এই কর্মকর্তার অভিযোগ, ভোট গণনার সময়ও সরকার-সমর্থক লোকজন তাঁদের ঘিরে রেখেছিল। এত সিল মেরে ৬০ শতাংশ ভোট পড়ার পরেও তারা বলছিল, এই কেন্দ্রে ৯০ ভাগ ভোট কেন পড়ল না? অথচ এখানে ২০ শতাংশের মতো ভোটার আসলে ভোট দিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কেন্দ্রে স্বাভাবিকভাবে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশ। কিন্তু জোর করে সিল মারায় এটি প্রায় ৭০ শতাংশ হয়ে যায়।উত্তরের একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, বাইরের লোকজন যখন জোর করে ব্যালট নিয়ে গেল, তখন পুলিশকে বাধা দিতে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু পুলিশ কিছুই করেনি। ওই ঘটনার পর থেকে এখনো তিনি স্বাভাবিক হতে পারছেন না।
ঢাকা দক্ষিণের মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৮ জন। ভোট পড়েছে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৩৫৪। এর মধ্যে সাঈদ খোকন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ পেয়ে বিজয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাস পান ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট।
মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোট গ্রহণ দেখানো হয়েছে। এটা অবিশ্বাস্য। আমি যেসব কেন্দ্রে গিয়েছি, সেখানে ১১টা পর্যন্ত ১৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। আর বিএনপি ভোট বর্জনের পর তো ভোটাররা কেন্দ্রেই যাননি। তাহলে ৪৯ শতাংশ ভোট কোত্থেকে আসে?’
ঢাকা উত্তরে মোট ভোটার ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯০০ জন। ভোট পড়েছে ৮ লাখ ৪১ হাজার। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিজয়ী মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত তাবিথ আউয়াল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট পেয়েছেন।
তাবিথ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার পর ভোট দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এর আগ পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। দুপুরের পর সরকার-সমর্থিত প্রার্থীরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, যা দেখে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আর যাননি। এর পরও কীভাবে ৩৭ শতাংশ ভোট গ্রহণ হলো, সেটা বিস্ময়ের বিষয়। আসলে সরকার-সমর্থিতরা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মতো বুথে ঢুকে ভোট দিয়েছে। তাতেই হয়তো এত ভোট।’
চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৬০০। এর মধ্যে বৈধ ভোট পড়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৩। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিজয়ী মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। আর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম পেয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। মনজুর আলমও নিজে এত ভোট পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি ঢাকায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাতে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোটারের উপস্থিতি ২৫ শতাংশ মনে হয়েছে।
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ও পেশিশক্তির প্রয়োগে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় সিটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করে টিআইবি। বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) বলেছে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে লক্ষণীয়ভাবে কম।
দুপুর ১২টায় বিএনপি ভোট বর্জনের পর সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে আগ্রহ ছিল না। কিন্তু এর পরও এত বেশি ভোট কীভাবে পড়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি না ফ্রি-স্টাইলে ভোট হয়েছে। সেটি হলে ভোট গ্রহণের হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হতো। কাজেই তিন সিটিতে গড়ে ৪৪ শতাংশ ভোট অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হিসাবে ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষকসহ পরাজিত মেয়র প্রার্থীরা এত বেশি ভোট পড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকি ভোট বর্জনের পরও বিএনপি-সমর্থিত তিন মেয়র প্রার্থীর বিপুলসংখ্যক ভোট পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের অনেকেই বলছেন, ক্ষমতাসীন দল-সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা কেন্দ্র দখল করে দেদার সিল মারার কারণেই ভোটের পরিমাণ এত বেড়েছে। তাঁদের ধারণা, প্রকৃতভাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ভোটার কেন্দ্রে আসেননি।
কমিশন সচিবালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাতিল ভোটের পরিমাণ ১ লাখ ২১ হাজার ৩। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে ৪০ হাজার ১৩০, উত্তরে ৩৩ হাজার ৫৮১ এবং চট্টগ্রামে ৪৭ হাজার ২৯২ ভোট।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মনে করেন, কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার কারণে এবার তিন সিটিতে বাতিল ভোটের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেশি।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ঢাকা উত্তরে ৩৭ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৪৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। গড়ে ভোট পড়েছে ৪৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সরকার-সমর্থিত বিজয়ী তিন মেয়র প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশন এটিকে স্বাভাবিক বলছে।
গত মঙ্গলবার ভোটের দিন প্রথম আলোর ১৩ জন প্রতিবেদক সারা দিন দক্ষিণে এবং ১৪ জন প্রতিবেদক উত্তরে ঘুরেছেন। মোট ২৭৯টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে কোথাও কোথাও ভোটার থাকলেও দুপুরের পর ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে বেশির ভাগ কেন্দ্র। একই অবস্থা ছিল চট্টগ্রামেও।
তার পরও এত ভোট পড়ার কারণ জানতে চাইলে ভোট গ্রহণের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরাও ভোটের হার নিয়ে বিব্রত। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ব্যালট নিয়ে জোর করে সিল মারায় এসব ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনকে এই অনিয়মের বিষয়ে বারবার জানানো হলেও সাহায্য পাওয়া যায়নি। পরে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আইডিয়াল কলেজের একটি কেন্দ্রে সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। কিন্তু ইসির তথ্য অনুযায়ী, এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৬৮ শতাংশ। ওই কেন্দ্রের একজন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, এই কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ভোটার এসেছিলেন। বাকিটা ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সিল মেরে নিয়েছে।
একই ওয়ার্ডের আরেকটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের দিকে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সব ব্যালট নিয়ে যেতে থাকে। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে তিনি ব্যালটের সাতটা বান্ডিল (৭০০ ব্যালট) লুকিয়ে ফেলেন। কারণ, তাঁর ভয় হচ্ছিল তারা যেভাবে ভোট দিচ্ছে তাতে এক শ শতাংশ ভোট পড়ে যাবে। তখন তিনি বিপদে পড়বেন। এই কর্মকর্তার অভিযোগ, ভোট গণনার সময়ও সরকার-সমর্থক লোকজন তাঁদের ঘিরে রেখেছিল। এত সিল মেরে ৬০ শতাংশ ভোট পড়ার পরেও তারা বলছিল, এই কেন্দ্রে ৯০ ভাগ ভোট কেন পড়ল না? অথচ এখানে ২০ শতাংশের মতো ভোটার আসলে ভোট দিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কেন্দ্রে স্বাভাবিকভাবে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশ। কিন্তু জোর করে সিল মারায় এটি প্রায় ৭০ শতাংশ হয়ে যায়।উত্তরের একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, বাইরের লোকজন যখন জোর করে ব্যালট নিয়ে গেল, তখন পুলিশকে বাধা দিতে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু পুলিশ কিছুই করেনি। ওই ঘটনার পর থেকে এখনো তিনি স্বাভাবিক হতে পারছেন না।
ঢাকা দক্ষিণের মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৮ জন। ভোট পড়েছে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৩৫৪। এর মধ্যে সাঈদ খোকন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ পেয়ে বিজয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাস পান ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট।
মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোট গ্রহণ দেখানো হয়েছে। এটা অবিশ্বাস্য। আমি যেসব কেন্দ্রে গিয়েছি, সেখানে ১১টা পর্যন্ত ১৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। আর বিএনপি ভোট বর্জনের পর তো ভোটাররা কেন্দ্রেই যাননি। তাহলে ৪৯ শতাংশ ভোট কোত্থেকে আসে?’
ঢাকা উত্তরে মোট ভোটার ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯০০ জন। ভোট পড়েছে ৮ লাখ ৪১ হাজার। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিজয়ী মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত তাবিথ আউয়াল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট পেয়েছেন।
তাবিথ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার পর ভোট দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এর আগ পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। দুপুরের পর সরকার-সমর্থিত প্রার্থীরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, যা দেখে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আর যাননি। এর পরও কীভাবে ৩৭ শতাংশ ভোট গ্রহণ হলো, সেটা বিস্ময়ের বিষয়। আসলে সরকার-সমর্থিতরা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মতো বুথে ঢুকে ভোট দিয়েছে। তাতেই হয়তো এত ভোট।’
চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৬০০। এর মধ্যে বৈধ ভোট পড়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৩। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিজয়ী মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। আর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম পেয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। মনজুর আলমও নিজে এত ভোট পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি ঢাকায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাতে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোটারের উপস্থিতি ২৫ শতাংশ মনে হয়েছে।
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ও পেশিশক্তির প্রয়োগে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় সিটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করে টিআইবি। বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) বলেছে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে লক্ষণীয়ভাবে কম।
দুপুর ১২টায় বিএনপি ভোট বর্জনের পর সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে আগ্রহ ছিল না। কিন্তু এর পরও এত বেশি ভোট কীভাবে পড়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি না ফ্রি-স্টাইলে ভোট হয়েছে। সেটি হলে ভোট গ্রহণের হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হতো। কাজেই তিন সিটিতে গড়ে ৪৪ শতাংশ ভোট অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
No comments