প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ঘর-বারান্দা by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
সুরেন্দ্র
কুমার সিনহা। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। তার আগে এ পদটি অলঙ্কৃত করে
গেছেন আরও ২০ কীর্তিপুরুষ। তবে সবার চেয়ে একটু আলাদাই সুরেন্দ্র কুমার
সিনহা- যার ছোট্ট নাম এস কে সিনহা, কাছের জনরা তাকে চেনেন আরও ছোট নামে-
সুরেন। অনেক ঐতিহাসিক রায় লিখেছেন তিনি। এবার নিজেকে দিয়েই লিখলেন নতুন
ইতিহাস। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির তালিকায় এবারই প্রথম কোন নাম
যুক্ত হলো যিনি মুসলিম নন। ইতিহাসের পাতাকে বর্ণিল করেছে তার জাতিগত পরিচয়।
তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরও। ইতিহাস গড়ে হয়ে উঠেছেন
পুরো মণিপুরি জাতির অহঙ্কারের প্রতীক। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নিভৃত
এক গ্রাম তিলকপুর। উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে অনেক দূরে থাকলেও গ্রামটিতে শিক্ষার
আলো জ্বলছিল অনেক আগে থেকেই। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ায় ‘বিদ্যাসাগর’
নামে অন্য পরিচয়ও রয়েছে গ্রামটির। শত ভাগ শিক্ষিতের সে ‘বিদ্যাসাগরে’ই
প্রথম সাঁতার কাটার শুরু সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। ১৯৫১ সালের পহেলা
ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। স্কুল শিক্ষক ললিত মোহন সিনহা ও ধনবতী সিনহার দ্বিতীয়
সন্তান এস কে সিনহা পড়ালেখার পাঠ শুরু করেন গ্রামের রানীবাজার সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন কমলগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ
বিদ্যালয়ে। ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এস কে সিনহা
গ্রাম ছেড়ে আসেন সিলেটে। শিক্ষার্থী হিসেবে নাম লেখান সিলেটের ঐতিহ্যবাহী
বিদ্যাপীঠ মদন মোহন কলেজে। সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে পাস করেন উচ্চ মাধ্যমিক,
স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৭০ সালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে
এলএলবি ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৭৪ সালের ১৯শে ডিসেম্বর আইন পেশায় নিজেকে
নিয়োজিত করেন তিনি। আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন সিলেট জেলা জজ কোর্টে। সিলেটের
প্রথিতযশা আইনজীবী সুলেমান রাজা চৌধুরীর জুনিয়র হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু
করেন। থাকতেন নগরীর তাঁতিপাড়ায়। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সিলেটেই ছিলেন। ’৭৮ সালে
হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে নাম লেখান তিনি। ১৯৯০ সালে এস কে সিনহার পরিচিতি
হয় আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে। স্বনামধন্য আইনজীবী এস আর পালের জুনিয়র
হিসেবে আইন পেশা চালিয়ে যান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগ
পর্যন্ত। ১৯৯৯ সালের ২৪শে অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে যোগ দেন এস কে
সিনহা। ১০ বছর পর ২০০৯ সালের ১৬ই জুলাই তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে
নিয়োগ পান। এস কে সিনহা স্বপ্নের শেষ সীমা ছুঁলেন গত ১৭ই জানুয়ারি,
বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। এমন স্বপ্নের বীজ
কিন্তু অনেক আগে থেকেই বোনা ছিল এস কে সিনহার মনে। যখন তিনি কর্মজীবনের
প্রবেশের দ্বারে তখন থেকেই তার মনে এমন স্বপ্নের আনাগোনা। বাবা ললিত মোহন
সিনহা চেয়েছিলেন সরকারি কোন চাকরি নিয়ে নিশ্চিত জীবনে থিতু হন ছেলে। তবে
সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহী ছিলেন না এস কে সিনহা। সুযোগ এসেছিল তবে চোখ
ফেরাননি সেদিকে। হৃদয়জুড়ে ছিল আইনের ঘর-বারান্দা। শপথ ছিল মনে এ ভুবনের
শীর্ষে পৌঁছুবেন একদিন। স্বপ্নের মতো সাজানো এস কে সিনহার ব্যক্তিজীবনও।
১৯৭৮ সালের ২রা জুলাই কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের জবলারপার গ্রামের
সমরেন্দ্র কুমার সিনহা ও হেমলতা সিনহার বড় মেয়ে সুষমা সিনহার সঙ্গে ঘর
বেঁধেছিলেন এস কে সিনহা। সুখী সংসারে তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে সূচনা সিনহা
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী, স্বামী বিদ্যুৎ প্রকৌশলী। ছোট মেয়ে আশা সিনহা স্বামীর
সঙ্গে কানাডায়।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা মার্কেন্টাইল মেরিন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী, থাকেন চট্টগ্রামে। একমাত্র বোনটি তার ছোট, সত্যবামা দেবী ২০০৯ সালে মারা গেছেন। ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা নীলমণি সিনহা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। সব চেয়ে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহা পেশায় দন্ত চিকিৎসক, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। ব্যস্ত জীবনে খুব কমই অবসর মেলে এস কে সিনহার। সেটারও মাপা মাপা ব্যয় করেন তিনি। তার স্ত্রী সুষমা সিনহা মানবজমিনকে বললেন, অবসর পেলে গান শুনেন বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি। রবীন্দ্র সংগীতই তার পছন্দের তালিকায়। খাবারে তেমন বাছবিচার না থাকলেও দুর্বলতা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভর্তার প্রতি। কোষ্ঠী বিচারে তিনি তুলা রাশির জাতক। পোশাক হিসেবে প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবি-পায়জামা। কাছে টানে হালকা ধরনের রঙগুলো।
কেমন মানুষ এস কে সিনহা। তার সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে বুঝা যায় ‘সুরেন’ সবার প্রিয়ই। স্কুল জীবনের সহপাঠী ও ভগ্নিপতি রায়মোহন সিংহ মানবজমিনের কাছে এস কে সিনহার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরলেন এভাবে, তিনি যে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান- একথাটি সব সময়ই স্মরণে রাখেন এস কে সিনহা। সব সময়ই সততার প্রতি খেয়াল রেখেই এগিয়ে গেছেন। রায়মোহন সিংহ বলেন, পড়াশোনায় কোন বিরতি নেই তার। শত ব্যস্ততার মাঝে ফাঁক পেলেই বইয়ের পাতা চোখের সামনে মেলে ধরেন এস কে সিনহা। মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় এস কে সিনহার বাল্যবন্ধু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ’র। বন্ধুকে নিয়ে বেশ গর্বই তার। বললেন, এতো উঁচু মাপের মানুষ তবে এতটুকু বদলে যায়নি সুরেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও ও আমার সঙ্গে নিয়মিতই ফোনে আলাপ করে। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরও ওর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। ও বললো, ‘আমাকে নিয়ে কি কেউ কিছু বলে?’ আমি বেশ গর্বের সঙ্গেই বলেছি, হ্যাঁ তোকে নিয়ে লোকে অনেক কিছুই বলে। আরও অনেক কিছু জানতে চেয়েছিল সুরেন, আমি বলিনি। জমা রেখেছি অন্য আরেক দিনের জন্য।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা মার্কেন্টাইল মেরিন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী, থাকেন চট্টগ্রামে। একমাত্র বোনটি তার ছোট, সত্যবামা দেবী ২০০৯ সালে মারা গেছেন। ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা নীলমণি সিনহা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। সব চেয়ে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহা পেশায় দন্ত চিকিৎসক, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। ব্যস্ত জীবনে খুব কমই অবসর মেলে এস কে সিনহার। সেটারও মাপা মাপা ব্যয় করেন তিনি। তার স্ত্রী সুষমা সিনহা মানবজমিনকে বললেন, অবসর পেলে গান শুনেন বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি। রবীন্দ্র সংগীতই তার পছন্দের তালিকায়। খাবারে তেমন বাছবিচার না থাকলেও দুর্বলতা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভর্তার প্রতি। কোষ্ঠী বিচারে তিনি তুলা রাশির জাতক। পোশাক হিসেবে প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবি-পায়জামা। কাছে টানে হালকা ধরনের রঙগুলো।
কেমন মানুষ এস কে সিনহা। তার সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে বুঝা যায় ‘সুরেন’ সবার প্রিয়ই। স্কুল জীবনের সহপাঠী ও ভগ্নিপতি রায়মোহন সিংহ মানবজমিনের কাছে এস কে সিনহার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরলেন এভাবে, তিনি যে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান- একথাটি সব সময়ই স্মরণে রাখেন এস কে সিনহা। সব সময়ই সততার প্রতি খেয়াল রেখেই এগিয়ে গেছেন। রায়মোহন সিংহ বলেন, পড়াশোনায় কোন বিরতি নেই তার। শত ব্যস্ততার মাঝে ফাঁক পেলেই বইয়ের পাতা চোখের সামনে মেলে ধরেন এস কে সিনহা। মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় এস কে সিনহার বাল্যবন্ধু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ’র। বন্ধুকে নিয়ে বেশ গর্বই তার। বললেন, এতো উঁচু মাপের মানুষ তবে এতটুকু বদলে যায়নি সুরেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও ও আমার সঙ্গে নিয়মিতই ফোনে আলাপ করে। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরও ওর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। ও বললো, ‘আমাকে নিয়ে কি কেউ কিছু বলে?’ আমি বেশ গর্বের সঙ্গেই বলেছি, হ্যাঁ তোকে নিয়ে লোকে অনেক কিছুই বলে। আরও অনেক কিছু জানতে চেয়েছিল সুরেন, আমি বলিনি। জমা রেখেছি অন্য আরেক দিনের জন্য।
No comments