নতুন অর্থনীতির স্বপ্ন ওবামার
নতুন
এক অর্থনীতির স্বপ্ন দেখালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
মঙ্গলবার কংগ্রেসে দেয়া স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে দেয়া বার্ষিক বক্তব্যে তিনি
অর্থনৈতিক সঙ্কটের ইতি ঘোষণা করে সব মার্কিনি উপকৃত হয় এমন একটি অর্থনীতির
আহ্বান জানান। এর মধ্য দিয়ে তিনি মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্য আয়ের অর্থনীতিতে
নিয়ে যাওয়ার জোর প্রত্যয় ঘোষণা করেন। কর্মজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান
সেভাবে কাজ করতে। কিন্তু তিনি যে কংগ্রেসে ভাষণ দিয়েছেন তার দু’কক্ষ
প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট দু’জায়গারই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বিরোধী দল
রিপাবলিকানদের হাতে। ফলে ওবামা যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা তিনি কতটা সামনে
এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ১৫ বছরের
মধ্যে আমরা কাকে চাই সে সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে। বারাক ওবামার
বার্ষিক এ বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি যে ভাষণ দিয়েছেন তার বেশির
ভাগই দেখা হচ্ছে উৎসাহমূলক। কিন্তু রিপাবলিকানদের রয়েছে তাতে বাধা। ওবামা
তার ভাষণে নীতির চেয়ে মূল্যবোধকে বড় করে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, মন্দাকাল
কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পেরেছে। তিনি বলেন, এটা
করা সম্ভব হয়েছে কর্মজীবী পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতায় ছুটি ও মাতৃত্বকালীন
ছুটি নিশ্চিত করে। শিশুযত্ন নিশ্চিত করে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামোর
উন্নয়ন ও কমিউনিটি কলেজে বিনা পয়সায় সুবিধা নেয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা
ঘোষণা করেন। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে কোন ঋণ ছাড়াই নতুন এক অর্থনীতিতে
গ্রাজুয়েট হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তার পরিকল্পনার মধ্যে আরও রয়েছে কতগুলো
পয়েন্ট। এগুলো হলো- সংবিধিবদ্ধ ছুটি ও সর্বনিম্ন মজুরির উন্নতি ঘটাতে হবে।
৯০ লাখ শিক্ষার্থীকে কমিউনিটি কলেজে তাদের দেনা পরিশোধে সহায়তা করা হবে।
গড়ে তোলা হবে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা। দেয়া হবে ক্রেতাদের নিরাপত্তা।
গুয়ান্তানামো বে বন্দিশিবির বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা অব্যাহত থাকবে।
নারী-পুরুষে কোন বেতন বৈষম্য থাকবে না। বারাক ওবামা বলেন, সন্ত্রাসীদের
বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে একতরফা অধিকার সংরক্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের অনুমোদন চেয়ে একটি
প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানান কংগ্রেসকে। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র
বিরতি চুক্তি করা নিয়ে তিনি অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বলেন, ইরানকে এ ধরনের অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে একটি চুক্তি করার
ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতায় যেতে পারে। এর বিরুদ্ধে নতুন করে যতগুলো
অবরোধের বিল আসবে তিনি তাতে ভেটো দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। উল্লেখ্য,
সম্প্রতি কিউবার কারাগারে ৫ বছর কাটানোর পর মুক্তি পেয়েছেন অ্যালান গ্রোস।
প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার
অতিথিদের কাতারে তিনিও ছিলেন। ওদিকে গতকাল ওবামার ওই ভাষণের নিন্দা
জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ। তিনি বলেন, এ
বক্তব্যের মধ্যে ফুটে উঠেছে যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র
প্রাধান্য বিস্তার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের একটি পথ বেছে
নিয়েছে। ওবামা যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে তার হৃদয়ের একটি দর্শনই উঠে এসেছে।
আর তা হলো- ‘যুক্তরাষ্ট্রই এক নম্বর। এতে দেখানো হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বকে শাসন করতে চায়’। বক্তব্যের শেষে ওবামা আশা ব্যক্ত করে বলেন, তিনি
বিশ্বাস করেন কংগ্রেসের সঙ্গে তিনি বাকি কাজ শেষ করতে পারবেন। বর্তমানে
ইরাক ও আফগানিস্তানে অবস্থান করছে ১৫০০০ মার্কিন সেনা। তবে সেখানে
যুক্তরাষ্ট্রের কোন ক্যাম্প নেই। আমার একটিই প্রতিজ্ঞা আমি যুক্তরাষ্ট্রের
জন্য সবচেয়ে ভাল কাজটি করতে চাই। ওবামা যখন এ বক্তব্য দেন তখন বিরোধী দল
রিপাবলিকানরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেক ইস্যুতেই তাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে।
রিপাবলিকান দলের সিনেটর ও উদীয়মান তারকা জোনি আর্নস্ট বলেন, ওবামার কাছ
থেকে কোন সমাধান পায় নি মার্কিনিরা। তিনি ওবামার স্বাস্থ্য ও অভিবাসন নীতির
সমালোচনা করেন। তিনি ওবামাকে আহ্বান করেন যেসব ক্ষেত্রে তাদের অভিন্ন
দৃষ্টিভঙ্গি আছে তা নিয়ে কাজ করতে। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য চুক্তি ও
ট্যাক্স কোড সংস্কার।
No comments