সেশনজট নিরসনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম
জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সকল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে এখন থেকে সকল ক্লাস হবে
সকালে আর বিকালে হবে পরীক্ষা। শুধু তাই নয়, সরকারি ছুটি ব্যতীত সাপ্তাহিক
ছুটির দিনেও ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া হবে। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের ভর্তির
কার্যক্রম শেষ করবে ১৫ দিনের মধ্যে। সকল মাস্টার্স প্রোগ্রামকে একই সময়
শুরু শেষের পাশাপাশি সকল পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে সর্বোচ্চ ৩ মাসের
মধ্যে। এগিয়ে আনা হবে স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষা। শীর্ষ ৪টি
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পরীক্ষার পর পরই নেয়া হবে এর ভর্তি পরীক্ষা। জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসনের আজ এই রকম কয়েকটি জরুরি কর্মসূচি বা ক্রাশ
প্রোগ্রাম ঘোষণা করবেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।
এই জরুরি অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট শূন্যতে নেমে না আসা পর্যন্ত চলবে। এ
বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হারুন-অর-রশিদ মানবজমিনকে বলেন, এর আগেও
আমি বলেছি চলতি শিক্ষাবর্ষ এবং ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের কোন সেশনজটে পড়বে না।
বিদ্যমান সেশনজট নিরসনে আমরা আজ ক্রাশ প্রোগ্রাম ঘোষণা করতে যাচ্ছি। ২০১৮
সালের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হবে সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত। তিনি জানান,
এই প্রোগ্রামটি অর্থবহ করতে দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা এবং বিভিন্ন দেশের
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশনজট নিরসনের উদাহরণ সামনে রেখে কাজ করেছি। আশা করি
এটি বাস্তবায়ন হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট নিরসনে একটি বিপ্লবিক
পরিবর্তন আসবে। তিনি আরও বলেন, এই প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হলে চলতি
শিক্ষাবর্ষ ২০১৪-১৫ এবং ২০১৩-১৪ ছাড়া বাকি শিক্ষাবর্ষগুলো থেকে পর্যায়ক্রমে
১১ মাস, ৭ মাস এবং সর্বনিম্ন ৩ মাস সেশনজট কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সেশনজট
নিরসনসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়কে
বিকেন্দ্রীকরণ ও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করে সম্পূর্ণ আইটিনির্ভর
প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। গতকাল বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮১তম
একাডেমিক কাউন্সিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের সেশনজট
নিরসনে ক্রাশ প্রোগ্রামের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই প্রোগ্রামের সঙ্গে
যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, এই মুহূর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা
সেশনজট। এটি নিরসন করার দাবি প্রধানমন্ত্রীসহ শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের। এই
বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা দেড় ডজন প্রস্তাবসহ একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে
নিয়েছি। এটি বাস্তবায়িত হলে সুফল পাবে শিক্ষার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা
গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে দেড় থেকে দুই বছরের সেশনজট রয়েছে। তবে
২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষ
থেকে নতুন করে কোন সেশনজট তৈরি হবে না। এরপরও বিগত বছরের সেশনজট নিরসন করতে
ক্রাশ প্রোগ্রামের কোন বিকল্প ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।
ডিসেম্বর মাসে সারা দেশের কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেন
ভিসি। বেশির ভাগ অধ্যক্ষ এই প্রোগ্রামের পক্ষে মত দিয়েছেন। কর্মকর্তারা
বলছেন, এই প্রোগ্রামের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো-সকল পরীক্ষা
এখন থেকে হবে বিকালে। এর ফলে বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই সিলেবাসের পাঠদান শেষ
করা সম্ভব। এছাড়া, ক্লাসের সময় ৪৫ মিনিট থেকে বাড়িয়ে ১ ঘণ্টা করা হবে। এর
ফলে ৯ মাসের সিলেবাসের পাঠদান সম্পূর্ণ করা সম্ভব। এছাড়াও সরকারি ছুটি
ব্যতীত শুক্র ও শনিবার নিয়মিত ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি সকল পরীক্ষার ফল
সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে প্রকাশ হবে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে চলতি মাসে
অনার্স শেষ বর্ষের ফল ২০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তির সকল
কার্যক্রম ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ, প্রিলিমিনারি ও রেগুলার মাস্টার্সের
মধ্যে সমন্বয় করা, কারণ বর্তমানে এই দুটি মাস্টার্সের মধ্যে দেড় মাসের বেশি
ব্যবধান বিদ্যমান, শিক্ষার্থীরা যে কলেজে অনার্স করবে সে কলেজেই মাস্টার্স
করতে হবে, দ্রুত ফল প্রকাশ, কলেজ থেকে টিউটোরিয়াল, ব্যবহারিক, মৌখিক
পরীক্ষাসহ সকল পরীক্ষার নম্বর অনলাইনে গ্রহণ করা, প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি
অনলাইনে গ্রহণ, একাডেমিক ক্যালেন্ডার ও একাডেমিক ম্যাপ তৈরি এবং
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যথাসময়ে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ, পরীক্ষকদের বেঁধে দেয়া
সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র দেয়ার জন্য মনিটরিং সেল গঠনসহ আরও বেশ কয়েকটি
উদ্ভাবনী ফর্মুলা হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই ফর্মুলাগুলো
প্রণয়ন করার পাশাপাশি সবগুলো বাস্তবায়ন করতে আলাদা আলাদা মনিটরিং সেল গঠন
করা হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সার্বিকভাবে সহযোগিতা করলে ২০১৮ সালের মধ্যে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট শূন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে আশা তাদের।
No comments