গ্রেপ্তার বাণিজ্য- কারাফটকে স্বজনদের ভিড় by নুরুজ্জামান লাবু
রাজনৈতিক
অস্থিরতার আড়ালে দেশজুড়ে চলছে পুলিশের গ্রেপ্তার বাণিজ্য। বিরোধী জোটের
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের নামে হয়রানি করা হচ্ছে সাধারণ
মানুষকেও । কোন যাচাই বাছাই বা তদন্ত ছাড়াই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে কারাগারে।
যাদের পরিবার সম্পদশালী তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ডিবি কার্যালয়ের সামনে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় থাকে
স্বজনদের। ভিড় লেগে থাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সারা দেশের কারাগার
ফটকেও। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান
বলেন, গ্রেপ্তার বাণিজ্য একটি কমন অভিযোগ। সাধারণত সুনির্দিষ্ট অভিযোগের
ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হয়। কোন পুলিশ সদস্য অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে
বা গ্রেপ্তারের নামে অর্থ আদায় করছে এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে তার
বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত
৫ই জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হয়ে ওঠে।
বিরোধী জোটের আন্দোলন দমাতে ডিসেম্বর থেকেই অভিযান শুরু করে পুলিশ। বিরোধী
জোট নেতাদের আটক করে বিভিন্ন পেন্ডিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই
সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু পুলিশ সদস্য রীতিমতো বাণিজ্যে মেতে উঠে। বিরোধী
জোট নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নামে সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার ও পুরানো
মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিপুল অর্থ আদায় করছে তারা। মঙ্গলবার ঢাকা
মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে আমজাদ নামে এক কুয়েত প্রবাসী জানান, তিনি
স্ত্রী-সন্তানসহ দীর্ঘ দিন থেকে কুয়েতে থাকেন। তার বড় মেয়ে ও জামাই খান
রবিউল ইসলাম থাকেন রামপুরা বনশ্রীর ৩ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাসার তৃতীয়
তলায়। জামাতা রবিউল বিএনপি সমর্থক। একারণে সোমবার সকাল ১০টায় মহানগর
গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা ডিবি
কার্যালয়ের সামনে এলেও বিকাল পর্যন্ত তাকে ডিবিতে আনা হয়নি। আমজাদ জানান,
ডিবির যে সদস্যরা তার জামাইকে ধরেছে তারা মোটা অঙ্কের টাকা চাচ্ছে। টাকা
দিলে ছেড়ে দিবে বলে জানিয়েছে। তার অন্য স্বজনরা টাকা সংগ্রহ করছেন। পুলিশের
গ্রেপ্তার বাণিজ্যের শিকার বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে,
তাদের বেশির ভাগই নাম প্রকাশ করতে রাজি নন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন,
মিডিয়ায় বিষয়টি প্রকাশ হলেই পুলিশ ক্ষুব্ধ হয়ে আবারো গ্রেপ্তার করবে। এ
জন্য টাকার বিনিময়ে স্বজনদের ছাড়িয়ে নিলেও কেউ মুখ খুলতে চান না। গতকাল
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য মানুষের ভিড়। চলমান
রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছে বেশির ভাগই। খোকন নামে এক
ব্যক্তি জানান, সোমবার রাতে ডিবি পুলিশের একটি দল তার শ্যালক
আসাদুজ্জামানকে ধরে নিয়ে যায়। সে কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। বরং তার
শ্বশুর শামসুল হক একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ সমর্থক। তাদের ঘরে
বঙ্গবন্ধুর ছবিও টানানো রয়েছে। কিন্তু পুলিশ কোন কারণ ছাড়াই উত্তর
যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগের খোকার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান কেবি এন্টারপ্রাইজ
থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। খোকাকে ২০১৩ সালের যাত্রাবাড়ী থানার একটি ভাঙচুর
মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাফটকের সামনে দাঁড়িয়ে
জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বলেন, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ তার মামা কাইয়ুম খানকে
বাসাবো বৌদ্ধমন্দির এলাকার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তার মামা এক যুগেরও
বেশি সময় আগে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। এখন তিনি রাজনীতি ছেড়ে ঠিকাদারি ব্যবসা
করেন। কিন্তু পুলিশ কোন কারণ ছাড়াই তাকে ধরে আনে। জুয়েল বলেন, এখন তিনি
কোথায় যাবেন, কী করবেন কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছেন না। পরিবারের সব সদস্যরাও
দিশাহারা। ক্ষুব্ধ জুয়েল বলেন, যদি রাজনীতি করার কারণে পুলিশ ধরতো তবে মনে
সান্ত্বনা দিতে পারতাম যে রাজনীতি করলে দু-একবার জেলে যেতে হয়। গতকাল
বিকালে রুবেল নামে এক তরুণ জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। তার মা রহিমা
বেগম বলেন, মঙ্গলবার মালিবাগ এলাকা থেকে পুলিশ তার ছেলে রুবেলকে ধরে নিয়ে
যায়। তিনি অনেক কষ্টে পুলিশকে টাকা-পয়সা দিয়ে পাঁচানি মামলায় গ্রেপ্তার
দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। পরে উকিল ধরে জামিন করালেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে অনেক পুলিশ সদস্য নিজেদের ভাগ্য বদলের সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন। রাজনৈতিক সহিংসতা দমনের নামে তারা সাধারণ মানুষকে আটক করে অর্থ আদায় করছেন। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে বিএনপি ও বিরোধী জোটের বিভিন্ন শরিক দল সমর্থন করেন তাদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে বেশি। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকারও করছেন। ডিএমপি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস অবস্থা হয়েছে। ভাইয়ের জন্য ভাই আটক, দোকানও বন্ধ: ভাই বিএনপি করে তাই আরেক ভাইকে আটক করেছে পুলিশ। পুরানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখানেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। ভাই বিএনপি করার অপরাধে তার দোকানও বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে একটি পরিবারের। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর বংশাল থানা এলাকায়।
গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে বিলকিস বানু মায়া নামে এক নারী জানান, তার স্বামীর নাম সিরাজুল ইসলাম। তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। ব্যবসায়ী। বংশালের নয়াবাজার মিল্লাত স্কুলের পাশে ১৪ নম্বর ফ্রেঞ্চ রোডে তার একটি দোকান রয়েছে। নাম তানজীলা এন্টারপ্রাইজ। কাঠের দরজার দোকান। কিন্তু তার দেবর জহিরুল ইসলাম তুষার ওরফে কালা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা আলাদা থাকেন। আলাদা সংসার, যার যার মতো করে চলেন। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ বংশাল থানা পুলিশ তার স্বামী সিরাজুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। একে একে তার বিরুদ্ধে ছয়টি পেন্ডিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। বিলকিস বানু বলেন, তিনি স্বামীকে জামিন করাতে আইনি লড়াই করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ গত ১৮ই জানুয়ারি রোববার বংশাল থানার এসআই জাহিদ দোকানে গিয়ে দোকান বন্ধ করতে বলে। এসময় কর্মচারী বিষয়টি তাকে জানায়। তিনি নিজেও এসআই জাহিদের সঙ্গে কথা বলেন। এসআই জাহিদ তাকে বলেন, তার দেবর কালাকে যতদিন ধরতে বা ধরিয়ে দিতে না পারবেন ততদিন দোকান বন্ধ থাকবে। পুলিশ জোর করে শাটার নামিয়ে দেয়। তালা মারার পর চাবিও নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু চাবিটি কর্মচারী দেয়নি। বিলকিস বানু বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি। দোকানটি আমার নিজের নামে ভাড়া নেয়া। ব্যবসায়ীক কাগজপত্রও আমার নামে। একজনের অপরাধে আরেকজনকে ধরে কারাগারে পুরেছে। এখন পরিবারের সদস্যদের পথে বসাতে চাচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পরিবারটি তাহলে চলবে কিভাবে?
দুই সন্তান তানজীনা ইসলাম ও আলামীন ইসলামকে দেখিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলকিস বানু বলেন, সন্তানদের মুখে খাবার দেব কোত্থেকে তা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। স্বামীকে কারাগার থেকে বের করবো কিভাবে? জানতে চাইলে বংশাল থানার এসআই জাহিদ বলেন, সিরাজের ভাই কালা পুলিশের ওপর ককটেল মারে, গাড়ি ভাঙচুর করে। এ জন্য তাদের বলেছি যে কালাকে ধরিয়ে দাও। যা করা হয়েছে ওসি স্যারের নির্দেশেই করা হয়েছে। আপনি একটু ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। যোগাযোগ করা হলে বংশাল থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস ফকির বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে অনেক পুলিশ সদস্য নিজেদের ভাগ্য বদলের সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন। রাজনৈতিক সহিংসতা দমনের নামে তারা সাধারণ মানুষকে আটক করে অর্থ আদায় করছেন। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে বিএনপি ও বিরোধী জোটের বিভিন্ন শরিক দল সমর্থন করেন তাদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে বেশি। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকারও করছেন। ডিএমপি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস অবস্থা হয়েছে। ভাইয়ের জন্য ভাই আটক, দোকানও বন্ধ: ভাই বিএনপি করে তাই আরেক ভাইকে আটক করেছে পুলিশ। পুরানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখানেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। ভাই বিএনপি করার অপরাধে তার দোকানও বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে একটি পরিবারের। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর বংশাল থানা এলাকায়।
গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে বিলকিস বানু মায়া নামে এক নারী জানান, তার স্বামীর নাম সিরাজুল ইসলাম। তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। ব্যবসায়ী। বংশালের নয়াবাজার মিল্লাত স্কুলের পাশে ১৪ নম্বর ফ্রেঞ্চ রোডে তার একটি দোকান রয়েছে। নাম তানজীলা এন্টারপ্রাইজ। কাঠের দরজার দোকান। কিন্তু তার দেবর জহিরুল ইসলাম তুষার ওরফে কালা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা আলাদা থাকেন। আলাদা সংসার, যার যার মতো করে চলেন। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ বংশাল থানা পুলিশ তার স্বামী সিরাজুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। একে একে তার বিরুদ্ধে ছয়টি পেন্ডিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। বিলকিস বানু বলেন, তিনি স্বামীকে জামিন করাতে আইনি লড়াই করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ গত ১৮ই জানুয়ারি রোববার বংশাল থানার এসআই জাহিদ দোকানে গিয়ে দোকান বন্ধ করতে বলে। এসময় কর্মচারী বিষয়টি তাকে জানায়। তিনি নিজেও এসআই জাহিদের সঙ্গে কথা বলেন। এসআই জাহিদ তাকে বলেন, তার দেবর কালাকে যতদিন ধরতে বা ধরিয়ে দিতে না পারবেন ততদিন দোকান বন্ধ থাকবে। পুলিশ জোর করে শাটার নামিয়ে দেয়। তালা মারার পর চাবিও নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু চাবিটি কর্মচারী দেয়নি। বিলকিস বানু বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি। দোকানটি আমার নিজের নামে ভাড়া নেয়া। ব্যবসায়ীক কাগজপত্রও আমার নামে। একজনের অপরাধে আরেকজনকে ধরে কারাগারে পুরেছে। এখন পরিবারের সদস্যদের পথে বসাতে চাচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পরিবারটি তাহলে চলবে কিভাবে?
দুই সন্তান তানজীনা ইসলাম ও আলামীন ইসলামকে দেখিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলকিস বানু বলেন, সন্তানদের মুখে খাবার দেব কোত্থেকে তা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। স্বামীকে কারাগার থেকে বের করবো কিভাবে? জানতে চাইলে বংশাল থানার এসআই জাহিদ বলেন, সিরাজের ভাই কালা পুলিশের ওপর ককটেল মারে, গাড়ি ভাঙচুর করে। এ জন্য তাদের বলেছি যে কালাকে ধরিয়ে দাও। যা করা হয়েছে ওসি স্যারের নির্দেশেই করা হয়েছে। আপনি একটু ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। যোগাযোগ করা হলে বংশাল থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস ফকির বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।
No comments