জটিল অঙ্কের জট খুলতে পারে কূটনৈতিক তৎপরতায়! by সাজেদুল হক
(চলমান
রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান বের করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ 'দ্রুত'
শুরু করার ওপর জোর দিয়েছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ
তারানকো। তিনি বলেন, দুই নেত্রী অতি দ্রুত সংলাপে না বসলে দেশ বিরাট
ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ সফরের চতুর্থ ও শেষ দিন গত ১৩ মে ২০১৩ বিকেলে
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহবান জানান। এ
সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের যে আহবান জানিয়েছেন তাতে সাড়া দেওয়া
উচিত বলেও মন্তব্য করেন জাতিসংঘের এই কূটনীতিক। তারানকো বলেন, সময় চলে
যাচ্ছে। এখনই সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপের মাধ্যমে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য,
নিরপেক্ষ ও অসহিংসু নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ প্রক্রিয়ায়
মিডিয়া, সুশীল সমাজ ও এনজিওসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্পৃক্ত করারও পরামর্শ দেন
তারানকো। তিনি বলেন, নির্বাচন না হওয়ার ফলাফল বাংলাদেশ দেখেছে।) সবাই
জানতেন এমন দিন আসবে। অনিশ্চয়তা ছিল কেবল সময় আর মাত্রা নিয়েই। হঠাৎ করেই
জটিল হয়ে গেছে রাজনীতির অঙ্ক। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার
অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক পাল্টে দেয় সব হিসাব-নিকাশ। টানা অবরোধে এরই
মধ্যে অচল হয়ে পড়েছে দেশ। সংঘাত-সহিংসতায় আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ। এ পর্যন্ত
মারা গেছেন কমপক্ষে ২৯ জন। বার্ন ইউনিটে শোনা যাচ্ছে আর্তনাদ। ক্রসফায়ারের
নামে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তিন বিরোধী নেতাকে। র্যাব-পুলিশ-বিজিবি
দিয়ে মহাসড়ক সচলের চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। এ অবস্থায় পর্দার অন্তরালে
সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কূটনীতিকরা। উভয়পক্ষের সঙ্গেই কথা বলছেন
তারা। চলছে এক ধরনের ছায়া সংলাপ। একটি সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত একটি দেশের
কূটনৈতিক উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত অচলাবস্থা অবসানের পথ খুলতে পারে।
সভা-সমাবেশের অধিকার ফিরে পেতে পারে বিরোধী জোট। বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের
মামলা এবং আরও কিছু বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে। বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে
উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন
এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কার্যকর সংলাপের জন্য বাংলাদেশের বিবদমান
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান সঙ্কটের সমাধানে সরকারের সামনে দু’টি পথ খোলা রয়েছে। প্রথমত, বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। এ ব্যাপারে তারা ১৯শে ডিসেম্বর ২০১৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া একটি বক্তব্য স্মরণ করছেন। প্রধানমন্ত্রী ওইদিন বলেছিলেন, সমঝোতায় এলে দশম সংসদ ভেঙে দিয়ে সংবিধান অনুযায়ী একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। আলোচনা চলবে বলেও আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় কর্মীদের দিয়ে বিরোধীদের দমন করা। আপাত সরকার দ্বিতীয় পথেই হাঁটছে। তিন/চার দিন থেকেই সরকারি দলের নেতারা বলছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। মন্ত্রীরা অবশ্য কোন রাখডাকও করছেন না। প্রকাশ্যই অস্ত্র প্রয়োগের কথা বলছেন তারা। কয়েকটি আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানও অত্যন্ত কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সরকারের অন্তত দুইজন মন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধাবস্থা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চাঁপাই নবাবগঞ্জে এরই মধ্যে যৌথবাহিনীর অভিযানে গণহারে মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত সাত হাজারের বেশি বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে দমন অভিযানে বর্তমান সঙ্কটের সমাধান হবে কি- না তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি. মাইলাম যেমনটা লিখেছেন, আমার ধারণা সুশীল সমাজের গণতান্ত্রিক ব্যক্তিবর্গ এবং বিরোধীদল লড়াই ব্যতিরেকে নতি স্বীকার করবে না। শিগগিরই কিংবা পরে শান্তিপূর্ণভাবে একটি সরকারের পালাবদলের অনুপস্থিতিতে সহিংসতা হবে এবং তা যথেষ্ট মারাত্মক হতে পারে। আমরা আমাদের ভাবলেশহীনতার জন্য অনুশোচনা করতে পারি। সহিংসতার পরিণতিতে যেসব অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে তার মধ্যে সাধারণত সামরিক শাসন অন্যতম।
বাংলাদেশেও বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক মনে করেন, বর্তমান সঙ্কট রাজনৈতিক। এ সঙ্কটের মূলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুপস্থিতি। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া এ সঙ্কটের অন্য কোন সমাধানই টেকসই হবে না। অন্যদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও অনমনীয় অবস্থান ব্যক্ত করছে। সর্বশেষ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া তার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন। যদিও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে তিনি খুব বেশি নেতার সঙ্গে কথা বলছেন না। চলমান আন্দোলনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা শক্ত ভূমিকা পালন করায় বিএনপি’র হাইকমান্ড সন্তুষ্ট। তবে আগের মতোই ঢাকায় এখনও বিরোধী দল নিষ্ক্রিয়। সহিংসতার কারণে মৃত্যুর ঘটনায়ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিএনপি নেতারা। তবে সবকিছুর পরও এবার শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বেগম খালেদা জিয়া। টানা অবরোধের পর অনির্দিষ্টকাল হরতালের দিকে যেতে পারে বিরোধী জোট। সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে আসতে পারে অসহযোগ আন্দোলন। চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার মনে করেন বিরোধী জোটের আন্দোলন সফল হবে। তিনি লিখেছেন, ‘সরকার ক্রমে সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছে এই প্রপাগান্ডায় অনেকের মনে একটি দ্বিধান্বিত প্রশ্ন আছে যে, এই সরকারের পতন ঘটবে কি? উত্তর অবশ্যই। সেটা আসন্নই বলা যায়। পতনের প্রশ্ন বিতর্কিত নয়, বিতর্কের জায়গা হলো, পতনের চরিত্র কিরূপ নেবে? সেটা কি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের নাকি শুধু হস্তান্তর।’ সহিংস বিরোধী দল। দমননীতিতে সরকার। এ অবস্থায় সরকার ও বিরোধী শক্তি শেষ পর্যন্ত সংলাপে আগ্রহী না হলে কি হবে? সাংবাদিক আমান উল্লাহ কবির মনে করেন, সহিংসতা দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিস্থিতি সরকার এবং আন্দোলনকারী, দু’পক্ষেরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সেটা আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান সঙ্কটের সমাধানে সরকারের সামনে দু’টি পথ খোলা রয়েছে। প্রথমত, বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। এ ব্যাপারে তারা ১৯শে ডিসেম্বর ২০১৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া একটি বক্তব্য স্মরণ করছেন। প্রধানমন্ত্রী ওইদিন বলেছিলেন, সমঝোতায় এলে দশম সংসদ ভেঙে দিয়ে সংবিধান অনুযায়ী একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। আলোচনা চলবে বলেও আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় কর্মীদের দিয়ে বিরোধীদের দমন করা। আপাত সরকার দ্বিতীয় পথেই হাঁটছে। তিন/চার দিন থেকেই সরকারি দলের নেতারা বলছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। মন্ত্রীরা অবশ্য কোন রাখডাকও করছেন না। প্রকাশ্যই অস্ত্র প্রয়োগের কথা বলছেন তারা। কয়েকটি আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানও অত্যন্ত কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সরকারের অন্তত দুইজন মন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধাবস্থা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চাঁপাই নবাবগঞ্জে এরই মধ্যে যৌথবাহিনীর অভিযানে গণহারে মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত সাত হাজারের বেশি বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে দমন অভিযানে বর্তমান সঙ্কটের সমাধান হবে কি- না তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি. মাইলাম যেমনটা লিখেছেন, আমার ধারণা সুশীল সমাজের গণতান্ত্রিক ব্যক্তিবর্গ এবং বিরোধীদল লড়াই ব্যতিরেকে নতি স্বীকার করবে না। শিগগিরই কিংবা পরে শান্তিপূর্ণভাবে একটি সরকারের পালাবদলের অনুপস্থিতিতে সহিংসতা হবে এবং তা যথেষ্ট মারাত্মক হতে পারে। আমরা আমাদের ভাবলেশহীনতার জন্য অনুশোচনা করতে পারি। সহিংসতার পরিণতিতে যেসব অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে তার মধ্যে সাধারণত সামরিক শাসন অন্যতম।
বাংলাদেশেও বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক মনে করেন, বর্তমান সঙ্কট রাজনৈতিক। এ সঙ্কটের মূলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুপস্থিতি। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া এ সঙ্কটের অন্য কোন সমাধানই টেকসই হবে না। অন্যদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও অনমনীয় অবস্থান ব্যক্ত করছে। সর্বশেষ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া তার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন। যদিও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে তিনি খুব বেশি নেতার সঙ্গে কথা বলছেন না। চলমান আন্দোলনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা শক্ত ভূমিকা পালন করায় বিএনপি’র হাইকমান্ড সন্তুষ্ট। তবে আগের মতোই ঢাকায় এখনও বিরোধী দল নিষ্ক্রিয়। সহিংসতার কারণে মৃত্যুর ঘটনায়ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিএনপি নেতারা। তবে সবকিছুর পরও এবার শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বেগম খালেদা জিয়া। টানা অবরোধের পর অনির্দিষ্টকাল হরতালের দিকে যেতে পারে বিরোধী জোট। সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে আসতে পারে অসহযোগ আন্দোলন। চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার মনে করেন বিরোধী জোটের আন্দোলন সফল হবে। তিনি লিখেছেন, ‘সরকার ক্রমে সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছে এই প্রপাগান্ডায় অনেকের মনে একটি দ্বিধান্বিত প্রশ্ন আছে যে, এই সরকারের পতন ঘটবে কি? উত্তর অবশ্যই। সেটা আসন্নই বলা যায়। পতনের প্রশ্ন বিতর্কিত নয়, বিতর্কের জায়গা হলো, পতনের চরিত্র কিরূপ নেবে? সেটা কি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের নাকি শুধু হস্তান্তর।’ সহিংস বিরোধী দল। দমননীতিতে সরকার। এ অবস্থায় সরকার ও বিরোধী শক্তি শেষ পর্যন্ত সংলাপে আগ্রহী না হলে কি হবে? সাংবাদিক আমান উল্লাহ কবির মনে করেন, সহিংসতা দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিস্থিতি সরকার এবং আন্দোলনকারী, দু’পক্ষেরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সেটা আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।
No comments