স্ত্রী যখন ভয়ঙ্করী -স্ত্রীর হাতে নৃশংসভাবে স্বামী খুন
পৃথক দু’টি ঘটনা ঢাকা ও চট্টগ্রামের। দুই
ঘটনায় স্ত্রীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন স্বামী। খুনের পর একই কায়দায় লাশ
গুম করা হয়। দু’টি ঘটনাই স্বামীর পরকীয়াকে কেন্দ্র করে ঘটেছে বলে খুন হওয়া
দুই ব্যক্তির স্ত্রীরা অভিযোগ করেছেন। বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুরে স্বামী
সালাহউদ্দিনকে হত্যা করে ওয়্যারড্রোবে লুকিয়ে রেখেছিলেন লাবণী। পরে পুলিশ
লাশ উদ্ধারের পর ওই গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করে। চট্টগ্রামের রাউজানে সিএনজি
চালক দুদু মিয়াকে খুন করে স্ত্রী শাহনাজ বেগম। ঈদুল আজহার রাতে তাকে হত্যা
করে ঘরেই গর্ত করে লাশ পুঁতে রাখে সে। গতকাল সকালে পুলিশ সেখান থেকে লাশ
উদ্ধার ও শাহনাজকে গ্রেপ্তার করে।
প্রেম করে দু’টি বিয়ে করেছিলেন সালাহ উদ্দিন। তবে প্রথম স্ত্রীর অজান্তে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন তিনি। এই বিয়ের কারণেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তার প্রথম স্ত্রী লাবণীসহ কয়েকজন। হত্যার আগে নিহতের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন লাবণী। হত্যার পর তার লাশটি লেপ ও চাদর দিয়ে মুড়ে ওয়্যারড্রোবের ভেতরে রেখে দেয়া হয়। লাশটি গুম করার পরিকল্পনা ছিল তার। তার আগেই নিজের করা জিডির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ফাঁস হয় এই ভয়ঙ্কার খুনের ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে লাবণীকে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে মিরপুরের কল্যাণপুরে। এ ঘটনায় লাবণী ও তার স্বজনদের আসামি করে গতকাল মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেছেন নিহতের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন।
সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন সালাহ উদ্দিন। দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি প্রায় এক সপ্তাহ আগে জেনে যান তার প্রথম স্ত্রী লাবণী। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হলে বাসা ছেড়ে দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদা আক্তারের বাসায় চলে যান সালাহ উদ্দিন। পরে তাদের গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরের নড়িয়ার আটপাড়ায় যান তিনি। নিহতের চাচাতো বোন ফারজানা আক্তার জানান, প্রথম সংসারটি ভেঙে যাক এটি চাননি সালাহ উদ্দিনের মা পারভিন আক্তার। তিনি ছেলেকে নিয়ে গত মঙ্গলবার কল্যাণপুরের ওই বাসায় যান। সেখানে একটি ঘরোয়া বৈঠক হয়। বৈঠকে লাবণীর স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই সালাহ উদ্দিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন তার স্ত্রী লাবণী। এ সময় তিনি সালাহ উদ্দিনকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘দুই দিনের মধ্যে মাহমুদাকে (দ্বিতীয় স্ত্রী) ছাড়তে হবে। নতুবা তোকে আমি খুন করে ফেলবো।’ প্রতি উত্তরে সালাহ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, তিনি কখনও দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদাকে তালাক দেবেন না। উত্তেজনার এক পর্যায়ে দু’জনকে শান্ত করেন উপস্থিত দুই পক্ষ। বিষয়টি ওই দিন সমাধান না হওয়ায় এ বিষয়ে ১৭ই অক্টোবর (আজ) পরবর্তী বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে সালাহ উদ্দিনের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে রাত ৮টার পর সালাহ উদ্দিনের মা, ভগ্নিপতি ওই বাসা থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় সালাহ উদ্দিন তার মাকে বলেছিলেন, তোমার সামনে আমাকে অপদস্থ করলো। তুমি চলে গেলে ও আমাকে মেরে ফেলবে। রাত ১০টার দিকে সালাহ উদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পান নাজমুল। পরে রাত ১২টার পর লাবণীর মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, সালাহ উদ্দিন ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। রাত আড়াইটায় নাজমুলের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে লাবণী হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনারা আমার স্বামীকে গোপন করে রেখেছেন। তাকে বের করে না দিলে আমি আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।’ নিহতের ভগ্নিপতি নাজমুল অভিযোগ করেন, ঘরোয়া বৈঠকের পরদিন বুধবার পিন্টু নামে কল্যাণপুরের এক ডিম ব্যবসায়ীও তার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে হুমকি দিয়েছে। ওই ব্যক্তি তাকে বলেছেন, ‘বাঁচতে চাইলে লাবণীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি সমাধান করেন।’
সূত্রমতে, মঙ্গলবার ওই বৈঠক শেষে স্বজনরা চলে গেলে সালাহ উদ্দিন ও লাবণীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সালাহ উদ্দিন বাসা থেকে বের হয়ে যান। কিছু সময় পর আবার বাসায় ফেরেন। বাসায় ফেরার পরই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ মনে করে। সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী লাবণী পুলিশকে জানিয়েছেন, ঝগড়ার আগে সালাহ উদ্দিন বাসায় বসে ইয়াবা সেবন করেন। এ সময় দু’জনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে সালাহ উদ্দিন তাকে বঁটি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করলে তিনি তা প্রতিহত করেন। ওই বঁটি দিয়েই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে হত্যা করেন লাবণী। এ ঘটনাটিকে সাজানো বলে দাবি করেছে পুলিশ। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন জানান, নিহতের শরীরে বঁটির আঘাত নেই। বাসা থেকে পুলিশ যে বঁটি জব্দ করেছে তাতে রক্তের কোন দাগ নেই। রক্তের দাগ রয়েছে বঁটির ধারালো অংশের মধ্যখানে। বরং সালাহ উদ্দিনের ঘাড়ে যে আঘাত করা হয়েছে এটি ধারালো কোন চাকুর আঘাত। এ রকম কয়েকটি আঘাত রয়েছে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে। পুলিশের ধারণা পরিকল্পতিভাবে কয়েকজন মিলে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সালাহ উদ্দিন ছিল সুঠাম দেহের অধিকারী। তাকে একা কারও পক্ষে এভাবে হত্যা করা সম্ভব না বলে পুলিশের ধারণা। এ ছাড়া নিহত সালাহ উদ্দিন মাদকাসক্ত ছিলেন না বলে পুলিশ জানিয়েছে। হত্যার পরিকল্পনা অনুসারেই ওই দিন মিরপুর থানায় সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন লাবণী। এতে তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন, দ্বিতীয় বিয়ে ও যৌতুকের জন্য মারধরের অভিযোগ করেন তিনি। ওই জিডির তদন্ত করতেই বুধবার রাতে কল্যাণপুরের এই বাসায় যান মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এ সময় সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান লাবণী। এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, সালাহ উদ্দিনকে তিনি হত্যা করেছেন। পরে বাসার ওয়্যারড্রোবে রাখা লাশ দেখিয়ে দেন। লাশের মাথা নিচে ও পা উপরের দিকে করে ভাঁজ করা ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে লাবণীকে আটক করা হয়। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। এ সময় আদালত তার দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
গতকাল কল্যাণপুরের তিন নম্বর সড়কের ৪৪/১ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, সালাহ উদ্দিন যে বাসায় থাকতেন তা তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ছয় তলা ওই বাসার তৃতীয় তলার তিনটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন সালাহ উদ্দিন-লাবণী দম্পতি। তাদের পাঁচ বছর বয়সী সাদিয়া ও তিন বছর বয়সী ছোঁয়া নামে দু’টি কন্যা সন্তান রয়েছে। ওই বাসার তত্ত্বাবধায়ক আবদুল বারেক জানান, তিন মাস আগে সালাহ উদ্দিন এই বাসাটি ভাড়া নেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন সমস্যা ছিল বলে তারা কেউ জানতেন না বলে আবদুল বারেক জানান। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের আগ থেকেই ঢাকায় থাকতেন সালাহ উদ্দিন। মুরগির ব্যবসা করতেন মিরপুরের কল্যাণপুরে। ওই এলাকায় থাকার সুবাদেই ১৩ বছর আগে লাবণীর সঙ্গে পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম ও বিয়ে। লাবণীর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার কাঁচেরফুল গ্রামে। তার পিতা মুহাম্মদ সেলিম। বিয়ের পর বেশ সুখেই ছিল তাদের সংসার। কিন্তু গত ছয় বছর আগে মাহমুদা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সালাহ উদ্দিনের। মাহমুদা ছিলেন অন্য একজনের স্ত্রী। সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে প্রেমের পর ওই স্বামীকে ডিভোর্স দেন তিনি। ২০১০ সালে গোপনে মাহমুদাকে বিয়ে করেন সালাহ উদ্দিন। দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদার গর্ভে সালাহ উদ্দিনের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মাহমুদা ওই কন্যা সন্তান নিয়ে দক্ষিণ পীরেরবাগের আমতলার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। সেখানে প্রায়ই রাত কাটাতেন সালাহ উদ্দিন। বিষয়টি প্রথম স্ত্রী লাবণী জানার পর সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে কলহ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়। নিহত সালাহ উদ্দিন শরিয়তপুরের নড়িয়া থানার আটপাড়া মাল বাড়ির নূর উদ্দিন মালের পুত্র। এ ঘটনায় লাবণী ও লাবণীর মা মায়া বেগম, বোন তিনা বেগম, ভাই জাহাঙ্গীর আলম, চাচা বাছন মিয়া ও নুরে আলম নূরেকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন। এ ব্যাপারে মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকেই অন্য আসামিরা পলাতক। লাবণীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই দম্পতির সন্তানদের পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রেম করে দু’টি বিয়ে করেছিলেন সালাহ উদ্দিন। তবে প্রথম স্ত্রীর অজান্তে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন তিনি। এই বিয়ের কারণেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তার প্রথম স্ত্রী লাবণীসহ কয়েকজন। হত্যার আগে নিহতের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন লাবণী। হত্যার পর তার লাশটি লেপ ও চাদর দিয়ে মুড়ে ওয়্যারড্রোবের ভেতরে রেখে দেয়া হয়। লাশটি গুম করার পরিকল্পনা ছিল তার। তার আগেই নিজের করা জিডির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ফাঁস হয় এই ভয়ঙ্কার খুনের ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে লাবণীকে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে মিরপুরের কল্যাণপুরে। এ ঘটনায় লাবণী ও তার স্বজনদের আসামি করে গতকাল মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেছেন নিহতের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন।
সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন সালাহ উদ্দিন। দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি প্রায় এক সপ্তাহ আগে জেনে যান তার প্রথম স্ত্রী লাবণী। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হলে বাসা ছেড়ে দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদা আক্তারের বাসায় চলে যান সালাহ উদ্দিন। পরে তাদের গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরের নড়িয়ার আটপাড়ায় যান তিনি। নিহতের চাচাতো বোন ফারজানা আক্তার জানান, প্রথম সংসারটি ভেঙে যাক এটি চাননি সালাহ উদ্দিনের মা পারভিন আক্তার। তিনি ছেলেকে নিয়ে গত মঙ্গলবার কল্যাণপুরের ওই বাসায় যান। সেখানে একটি ঘরোয়া বৈঠক হয়। বৈঠকে লাবণীর স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই সালাহ উদ্দিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন তার স্ত্রী লাবণী। এ সময় তিনি সালাহ উদ্দিনকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘দুই দিনের মধ্যে মাহমুদাকে (দ্বিতীয় স্ত্রী) ছাড়তে হবে। নতুবা তোকে আমি খুন করে ফেলবো।’ প্রতি উত্তরে সালাহ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, তিনি কখনও দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদাকে তালাক দেবেন না। উত্তেজনার এক পর্যায়ে দু’জনকে শান্ত করেন উপস্থিত দুই পক্ষ। বিষয়টি ওই দিন সমাধান না হওয়ায় এ বিষয়ে ১৭ই অক্টোবর (আজ) পরবর্তী বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে সালাহ উদ্দিনের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে রাত ৮টার পর সালাহ উদ্দিনের মা, ভগ্নিপতি ওই বাসা থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় সালাহ উদ্দিন তার মাকে বলেছিলেন, তোমার সামনে আমাকে অপদস্থ করলো। তুমি চলে গেলে ও আমাকে মেরে ফেলবে। রাত ১০টার দিকে সালাহ উদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পান নাজমুল। পরে রাত ১২টার পর লাবণীর মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, সালাহ উদ্দিন ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। রাত আড়াইটায় নাজমুলের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে লাবণী হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনারা আমার স্বামীকে গোপন করে রেখেছেন। তাকে বের করে না দিলে আমি আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।’ নিহতের ভগ্নিপতি নাজমুল অভিযোগ করেন, ঘরোয়া বৈঠকের পরদিন বুধবার পিন্টু নামে কল্যাণপুরের এক ডিম ব্যবসায়ীও তার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে হুমকি দিয়েছে। ওই ব্যক্তি তাকে বলেছেন, ‘বাঁচতে চাইলে লাবণীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি সমাধান করেন।’
সূত্রমতে, মঙ্গলবার ওই বৈঠক শেষে স্বজনরা চলে গেলে সালাহ উদ্দিন ও লাবণীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সালাহ উদ্দিন বাসা থেকে বের হয়ে যান। কিছু সময় পর আবার বাসায় ফেরেন। বাসায় ফেরার পরই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ মনে করে। সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী লাবণী পুলিশকে জানিয়েছেন, ঝগড়ার আগে সালাহ উদ্দিন বাসায় বসে ইয়াবা সেবন করেন। এ সময় দু’জনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে সালাহ উদ্দিন তাকে বঁটি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করলে তিনি তা প্রতিহত করেন। ওই বঁটি দিয়েই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে হত্যা করেন লাবণী। এ ঘটনাটিকে সাজানো বলে দাবি করেছে পুলিশ। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন জানান, নিহতের শরীরে বঁটির আঘাত নেই। বাসা থেকে পুলিশ যে বঁটি জব্দ করেছে তাতে রক্তের কোন দাগ নেই। রক্তের দাগ রয়েছে বঁটির ধারালো অংশের মধ্যখানে। বরং সালাহ উদ্দিনের ঘাড়ে যে আঘাত করা হয়েছে এটি ধারালো কোন চাকুর আঘাত। এ রকম কয়েকটি আঘাত রয়েছে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে। পুলিশের ধারণা পরিকল্পতিভাবে কয়েকজন মিলে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সালাহ উদ্দিন ছিল সুঠাম দেহের অধিকারী। তাকে একা কারও পক্ষে এভাবে হত্যা করা সম্ভব না বলে পুলিশের ধারণা। এ ছাড়া নিহত সালাহ উদ্দিন মাদকাসক্ত ছিলেন না বলে পুলিশ জানিয়েছে। হত্যার পরিকল্পনা অনুসারেই ওই দিন মিরপুর থানায় সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন লাবণী। এতে তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন, দ্বিতীয় বিয়ে ও যৌতুকের জন্য মারধরের অভিযোগ করেন তিনি। ওই জিডির তদন্ত করতেই বুধবার রাতে কল্যাণপুরের এই বাসায় যান মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এ সময় সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান লাবণী। এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, সালাহ উদ্দিনকে তিনি হত্যা করেছেন। পরে বাসার ওয়্যারড্রোবে রাখা লাশ দেখিয়ে দেন। লাশের মাথা নিচে ও পা উপরের দিকে করে ভাঁজ করা ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে লাবণীকে আটক করা হয়। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। এ সময় আদালত তার দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
গতকাল কল্যাণপুরের তিন নম্বর সড়কের ৪৪/১ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, সালাহ উদ্দিন যে বাসায় থাকতেন তা তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ছয় তলা ওই বাসার তৃতীয় তলার তিনটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন সালাহ উদ্দিন-লাবণী দম্পতি। তাদের পাঁচ বছর বয়সী সাদিয়া ও তিন বছর বয়সী ছোঁয়া নামে দু’টি কন্যা সন্তান রয়েছে। ওই বাসার তত্ত্বাবধায়ক আবদুল বারেক জানান, তিন মাস আগে সালাহ উদ্দিন এই বাসাটি ভাড়া নেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন সমস্যা ছিল বলে তারা কেউ জানতেন না বলে আবদুল বারেক জানান। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের আগ থেকেই ঢাকায় থাকতেন সালাহ উদ্দিন। মুরগির ব্যবসা করতেন মিরপুরের কল্যাণপুরে। ওই এলাকায় থাকার সুবাদেই ১৩ বছর আগে লাবণীর সঙ্গে পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম ও বিয়ে। লাবণীর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার কাঁচেরফুল গ্রামে। তার পিতা মুহাম্মদ সেলিম। বিয়ের পর বেশ সুখেই ছিল তাদের সংসার। কিন্তু গত ছয় বছর আগে মাহমুদা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সালাহ উদ্দিনের। মাহমুদা ছিলেন অন্য একজনের স্ত্রী। সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে প্রেমের পর ওই স্বামীকে ডিভোর্স দেন তিনি। ২০১০ সালে গোপনে মাহমুদাকে বিয়ে করেন সালাহ উদ্দিন। দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদার গর্ভে সালাহ উদ্দিনের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মাহমুদা ওই কন্যা সন্তান নিয়ে দক্ষিণ পীরেরবাগের আমতলার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। সেখানে প্রায়ই রাত কাটাতেন সালাহ উদ্দিন। বিষয়টি প্রথম স্ত্রী লাবণী জানার পর সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে কলহ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়। নিহত সালাহ উদ্দিন শরিয়তপুরের নড়িয়া থানার আটপাড়া মাল বাড়ির নূর উদ্দিন মালের পুত্র। এ ঘটনায় লাবণী ও লাবণীর মা মায়া বেগম, বোন তিনা বেগম, ভাই জাহাঙ্গীর আলম, চাচা বাছন মিয়া ও নুরে আলম নূরেকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন। এ ব্যাপারে মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকেই অন্য আসামিরা পলাতক। লাবণীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই দম্পতির সন্তানদের পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
খুনের বর্ণনা দিলো শাহনাজ: ‘ঈদের দিন রাতে সে ঘরে ঢুকে। এরপর আমার সঙ্গে ঝগড়া করে। এক পর্যায়ে কথাকাটাকাটি হয়। আমি বলি ঝগড়ার কারণ কি। সে আমার নানা দোষ ধরে। আমি নাকি আড়ালে কার বাড়িতে যাই। তার সঙ্গে অকারণে ঝগড়া করি। এ সব কথা শুনে রাগ ধরে। এই নিয়ে দুইজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে সে আমাকে খুন করার হুমকি দেয়। তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। গভীর রাতে ধারালো বঁটি দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করি। ভোররাতে সবাই কিছু বুঝে উঠার আগেই বাড়ির পাশের এক লোকের সহায়তায় ঘরের ভেতর মাটির নিচে লাশ লুকিয়ে রাখি।’ চট্টগ্রামে স্বামীকে হত্যার পর এভাবেই সেই ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে শাহনাজ বেগম (২৬)। রাউজানের চিকদাইর ইউনিয়নে টানা ১০ দিন খোঁজাখুঁজির পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুদু মিয়া (৩৩) নামের এক ব্যক্তির লাশ মাটিচাপা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আটক করা হয় তার স্ত্রী শাহনাজ বেগমকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার নানান তথ্য। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাবুল নামের আরও এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তার সহায়তায় দুদু মিয়ার লাশ মাটিতে পুঁতে রাখার পরিকল্পনা করে স্ত্রী শাহনাজ। দুদু মিয়া পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। ঘাতক শাহনাজের সঙ্গে তার বিয়ে হয় ১৪ বছর আগে। তাদের সংসারে দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। শাহনাজের পিতার বাড়ি হাটহাজারীর উপজেলার উত্তর মাদার্শা এলাকায়। তার পিতার নাম আবুল খায়ের। গতকাল সকালে শাহনাজ বেগমকে আটক করার পর পরই নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। এই সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে শাহনাজ বেগম পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। খুনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘটনাটি ঘটে ঈদের দিন রাতে। দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয় প্রথমে আর্থিক অনটন নিয়ে। পরে পরকীয়ার বিষয়ে তা গড়ায়।
এই সময় আমার স্বামী উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সে আমাকে ধাক্কা মারে। আমি খাটে পড়ে যাই। রাত সাড়ে ১০টায় আবারও ঝগড়া হয় টাকা-পয়সা নিয়ে। আমি তাকে রেগে কথা বললে সে জানায়, বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোকে কেটে খালে ভাসিয়ে দেবো। এই কথা বলে সে এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়ে। শাহনাজ বলেন, আমি বাড়ির বাইরে গিয়ে বসে থাকি। এরপর রাত একটায় তাকে খুন করার পরিকল্পনা করি। ঝগড়া করার সময় সে আমাকে বলে, আমি নাকি কার সঙ্গে গিয়ে গিয়ে কথা বলি। তার অগোচরে অন্যলোকের বাড়িতে যাই। তাই সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে চাইছি। প্রতিদিন এই কারণে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করি। এসব কথা বারবার আমার কানে বাজছিল। নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। আশপাশের সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন রান্নাঘরে যাই। বেশ কয়েকবার বঁটিটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখি। একবার হাত কাঁপছিল। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই। রাত দুইটায় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেই। এরপর তার হাত-পা বেঁধে ফেলি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুকের ওপর প্রথম কোপ দেই। এই সময় রক্ত বেরিয়ে পড়ে দ্রুত। তারপর গলায় দ্বিতীয় আঘাত করতেই দেখি সে গোঙাচ্ছে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য বারবার কোপাতে থাকি। ততক্ষণে রক্তে ভেসে গেছে পুরো ঘর। আমি দ্রুত বিছানার চাদর ও খাটের কাপড় বদলে ফেলার কথা ভাবি। কিন্তু এই সময় টেনশনে পড়ে যাই কিভাবে লাশ সরাবো। সেদিন ভোররাতেই বাড়ির পাশের বাবুল ভাইয়ের সহায়তা চাই। তিনি আমাকে বলেন, লাশটি সবার ঘুম ভাঙার আগেই স্থানীয় সর্তা খালে ফেলে দাও। আমি টেনেহিঁচড়ে লাশ নিতে গিয়ে বিপদের কথা চিন্তা করি। এরপর ভোরের দিকে বাড়িতেই লাশ পোঁতার পথ খুঁজতে থাকি। শেষমেশ বুদ্ধি আসে যেখানে রান্না করি সেই চুলার নিচেই তার লাশ চাপা দেয়ার। তখন একাই কোদাল ও শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকি। প্লাস্টিকের কাগজ ও কাপড় মুড়িয়ে সেখানে শুইয়ে দিয়ে তাকে মাটিচাপা দিই। তারপর দ্রুত পানি দিয়ে আশপাশের জায়গায় মাটি লেপে দিই। এভাবে একদিন, দুইদিন পর তার খোঁজে গ্রামের লোকজন বাড়িতে আসতে থাকে। জিজ্ঞেস করে সে কোথায়। আমি বলি গাড়ি নিয়ে শহরে গেছে। এভাবে ১০ দিন অতিবাহিত করি। বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেবো। প্রতি রাতে ঘুম আসতো না।
স্থানীয় লোকজন জানান, সিএনজি অটোরিকশা চালক দুদু মিয়ার স্ত্রীর কথাবার্তায় সন্দেহ হয় আশপাশের লোকজনের। কারণ সে একেক সময় একেক রকম কথা বলতো। লাশ পুঁতে রাখার বেশ কিছুদিন পর সেখান থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এর মধ্যে তার কোন খোঁজ না পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ দুদু মিয়ার স্ত্রীর কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সে জানায়, তিনি ১০ দিনের জন্য বেড়াতে গেছেন। অন্যদিকে গ্রামের লোকজনকে বলতেন তিনি শহরে আছেন। নতুন গাড়ি পেয়েছেন। এই ব্যাপারে কথা বলতে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। এসব কথাবার্তায় কোন ধরনের মিল না পাওয়ায় সবার সন্দেহ বাড়ে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুদু মিয়ার এক বোন গিয়ে রাউজান থানার ওসিকে মাটি থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার তথ্য দিলে তারা দ্রুত সেখানে ছুটে যান। এরপর আটক করা হয় শাহনাজ বেগমকে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে লাশ পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাটি থেকে দুদু মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরপরই পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন বাবুল নামের সেই ব্যক্তিও। এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ঘাতক শাহনাজ বেগমসহ দুইজনকে আমরা আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হচ্ছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহানাজ বেগম ধারালো বঁটি দিয়ে আঘাত করার কথা জানিয়েছে। ঘটনার পরপরই সেখানে ছুটে যান সহকারী পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ। তিনি আরও বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে। তবে এর পেছনে নারীঘটিত কোন বিষয় আছে কিনাও তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
No comments