ভারত-পাকিস্তানঃ উত্তেজনা থামছে না by নাজাম শেঠি
নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুটি বিপরীতধর্মী সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষমতাচক্রের লোকজন বলছেন, মোদি একজন কট্টর হিন্দু হওয়ায় পাকিস্তানের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেবে ভারত। অন্যদিকে, শান্তিকামীরা বলছেন, মোদি একজন ব্যবসাবান্ধব মানুষ। তিনি আঞ্চলিক বাণিজ্যের গুরুত্ব বোঝেন। ফলে তিনি তাঁর পূর্বসূরি অটল বিহারি বাজপেয়ি ও এল কে আদভানির মতো তাঁর ‘দেশপ্রেমিক’ ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক পণ্ড হয়ে গেছে। তারপর কাশ্মীরে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে। এতে পাকিস্তান অংশের বহু মানুষ ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। হতাহতও হয়েছে অনেক। এতে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা আবারও ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
এ ঘটনায় পাকিস্তানের যে মানুষটি সবচেয়ে দুঃখ পেয়েছেন, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি ভারতের প্রতি নিঃশর্ত বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে শপথ নেওয়ার সময় নওয়াজ শরিফ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি, মনমোহন সিং তাতে যোগ দেননি। এরপর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও তিনি ভারতের এ বছরের নির্বাচন পর্যন্ত স্থগিত করেন। আশা ছিল, নতুন সরকারের সঙ্গে এ চুক্তি সম্পাদন তাঁর তরফ থেকে ভারতের প্রতি একটি উপহার হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের চুক্তি দুই দেশের জন্যই লাভজনক, তবে বাস্তব কারণে ভারতই এ চুক্তি থেকে বেশি লাভবান হতো। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে বিরাজমান অন্যান্য বিষয়ের সমাধানে চুক্তিটি শর্ত হিসেবেই আরোপ করেছিল ভারত। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের আপত্তি সত্ত্বেও নওয়াজ শরিফ নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন, সেখানে মোদির সঙ্গে একান্তে বৈঠকও করেন। এমনকি তিনি ভারতের অনুরোধে কাশ্মীরের হুরিয়াত নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করা থেকে বিরত থাকেন, যদিও ভারত সফররত পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর জন্য এটা এক বহুল প্রচলিত প্রথা। আর ঠিক একই সময়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর কাশ্মীরবিষয়ক ভারতের সেই পুরোনো অবস্থানই ব্যক্ত করেন। নওয়াজ শরিফ তাতেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এ কারণে তিনি দেশে ফিরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
কয়েক মাস হলো নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসেছেন, আর এর মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক সেই আগের জায়গায় ফিরে গেছে। বন্ধুত্বের সব আবহ কেটে যায় গত আগস্টে। ভারতে পাকিস্তানের হাইকমিশনার হুরিয়াতের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক করার পর ভারত হঠাৎ করেই দুই দেশের মধ্যকার পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনা বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার সব বিষয়ে কাঠামোগত আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। অতীতে পাকিস্তানি কর্মকর্তা ও নেতারা হুরিয়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলে তাঁদের জিহাদের অনুপ্রেরণা দিতেন না, বরং নয়াদিল্লির সঙ্গে আপসের বৈঠকে বসার কথা বলতেন। আর ভারত মনে করত, হুরিয়াত নেতারা ভারতীয় বিধায় পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে বসার কোনো অধিকার তাঁদের নেই।
কিন্তু এবার ভারত তড়িঘড়ি করে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এই আলোচনা বাতিল করায় নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানে এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। ফলে পাকিস্তানের সামরিক–বলয়ে ভারতের প্রতি ঘৃণা আরও বেড়েছে। তারপর ভারত আরও এক ধাপ এগিয়ে ঘোষণা দিয়ে বসে, গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের অধিবেশনের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আলাদাভাবে কোনো বৈঠকে মিলিত হবেন না। আর এখন দুই দেশ কাশ্মীরে একে অপরের বিরুদ্ধে কামান দাগাচ্ছে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ভারত খুবই আক্রমণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। কাশ্মীরের ভারত অংশে এ বছরের শেষভাগে নির্বাচন হওয়ার কথা। নরেন্দ্র মোদি এ এলাকা সফল করেছেন, যথারীতি তিনি সেখানে মুসলিম কাশ্মীরি নেতা ও দলগুলোর বিরুদ্ধে হিন্দু অনুভূতি উসকে দিয়েছেন। এমনকি তিনি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করার মনোভাবও পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যে অনুচ্ছেদের বলে কাশ্মীর ভারতে বিশেষ মর্যাদা ভোগ করে। এতে কাশ্মীরে আবারও ভারতবিরোধিতার আগুন জ্বলে উঠেছে, মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হচ্ছে কাশ্মীর উপত্যকা। ওদিকে ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট এই বিবাদ থেকে পাকিস্তান তেমন একটা লাভবান হতে পারবে না। কারণ, পাকিস্তানি সেনারা করাচি ও বেলুচিস্তানে জঙ্গিবাদ রুখতে গিয়েই গলদঘর্ম হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা শিগগিরই প্রশমন হচ্ছে না। নরেন্দ্র মোদি ভালোই ফর্মে আছেন, আর পাকিস্তানের সামরিক–বলয়ের কাছে নওয়াজ শরিফের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায় গিয়ে পৌঁছেছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
দ্য ফ্রাইডে টাইমস থেকে নেওয়া
নাজাম শেঠি: পাকিস্তানের দ্য ফ্রাইডে টাইমসের সম্পাদক।
এ ঘটনায় পাকিস্তানের যে মানুষটি সবচেয়ে দুঃখ পেয়েছেন, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি ভারতের প্রতি নিঃশর্ত বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে শপথ নেওয়ার সময় নওয়াজ শরিফ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি, মনমোহন সিং তাতে যোগ দেননি। এরপর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও তিনি ভারতের এ বছরের নির্বাচন পর্যন্ত স্থগিত করেন। আশা ছিল, নতুন সরকারের সঙ্গে এ চুক্তি সম্পাদন তাঁর তরফ থেকে ভারতের প্রতি একটি উপহার হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের চুক্তি দুই দেশের জন্যই লাভজনক, তবে বাস্তব কারণে ভারতই এ চুক্তি থেকে বেশি লাভবান হতো। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে বিরাজমান অন্যান্য বিষয়ের সমাধানে চুক্তিটি শর্ত হিসেবেই আরোপ করেছিল ভারত। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের আপত্তি সত্ত্বেও নওয়াজ শরিফ নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন, সেখানে মোদির সঙ্গে একান্তে বৈঠকও করেন। এমনকি তিনি ভারতের অনুরোধে কাশ্মীরের হুরিয়াত নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করা থেকে বিরত থাকেন, যদিও ভারত সফররত পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর জন্য এটা এক বহুল প্রচলিত প্রথা। আর ঠিক একই সময়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর কাশ্মীরবিষয়ক ভারতের সেই পুরোনো অবস্থানই ব্যক্ত করেন। নওয়াজ শরিফ তাতেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এ কারণে তিনি দেশে ফিরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
কয়েক মাস হলো নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসেছেন, আর এর মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক সেই আগের জায়গায় ফিরে গেছে। বন্ধুত্বের সব আবহ কেটে যায় গত আগস্টে। ভারতে পাকিস্তানের হাইকমিশনার হুরিয়াতের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক করার পর ভারত হঠাৎ করেই দুই দেশের মধ্যকার পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনা বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার সব বিষয়ে কাঠামোগত আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। অতীতে পাকিস্তানি কর্মকর্তা ও নেতারা হুরিয়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলে তাঁদের জিহাদের অনুপ্রেরণা দিতেন না, বরং নয়াদিল্লির সঙ্গে আপসের বৈঠকে বসার কথা বলতেন। আর ভারত মনে করত, হুরিয়াত নেতারা ভারতীয় বিধায় পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে বসার কোনো অধিকার তাঁদের নেই।
কিন্তু এবার ভারত তড়িঘড়ি করে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এই আলোচনা বাতিল করায় নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানে এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। ফলে পাকিস্তানের সামরিক–বলয়ে ভারতের প্রতি ঘৃণা আরও বেড়েছে। তারপর ভারত আরও এক ধাপ এগিয়ে ঘোষণা দিয়ে বসে, গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের অধিবেশনের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আলাদাভাবে কোনো বৈঠকে মিলিত হবেন না। আর এখন দুই দেশ কাশ্মীরে একে অপরের বিরুদ্ধে কামান দাগাচ্ছে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ভারত খুবই আক্রমণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। কাশ্মীরের ভারত অংশে এ বছরের শেষভাগে নির্বাচন হওয়ার কথা। নরেন্দ্র মোদি এ এলাকা সফল করেছেন, যথারীতি তিনি সেখানে মুসলিম কাশ্মীরি নেতা ও দলগুলোর বিরুদ্ধে হিন্দু অনুভূতি উসকে দিয়েছেন। এমনকি তিনি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করার মনোভাবও পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যে অনুচ্ছেদের বলে কাশ্মীর ভারতে বিশেষ মর্যাদা ভোগ করে। এতে কাশ্মীরে আবারও ভারতবিরোধিতার আগুন জ্বলে উঠেছে, মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হচ্ছে কাশ্মীর উপত্যকা। ওদিকে ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট এই বিবাদ থেকে পাকিস্তান তেমন একটা লাভবান হতে পারবে না। কারণ, পাকিস্তানি সেনারা করাচি ও বেলুচিস্তানে জঙ্গিবাদ রুখতে গিয়েই গলদঘর্ম হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা শিগগিরই প্রশমন হচ্ছে না। নরেন্দ্র মোদি ভালোই ফর্মে আছেন, আর পাকিস্তানের সামরিক–বলয়ের কাছে নওয়াজ শরিফের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায় গিয়ে পৌঁছেছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
দ্য ফ্রাইডে টাইমস থেকে নেওয়া
নাজাম শেঠি: পাকিস্তানের দ্য ফ্রাইডে টাইমসের সম্পাদক।
No comments