ইবোলা ভাইরাস নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ -লড়াইয়ের আহ্বান বিশ্বনেতাদের
মারাত্মক রকম সংক্রামক ও প্রাণঘাতী ইবোলা
ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে বিশ্বনেতারা ‘ব্যাপক মাত্রায়’
সাড়া দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তাঁরা একে গত বেশ কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের
সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। গত বুধবার মার্কিন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালির
শীর্ষ নেতাদের প্রতি আরও উল্লেখযোগ্য রকম অবদান রাখার আহ্বান জানান। খবর
এএফপি ও রয়টার্সের।
গত রোববার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া হিসাব অনুসারে, ভয়াবহ ইবোলা এ পর্যন্ত প্রাণ কেড়েছে চার হাজার ৪৯৩ জনের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন। বিশ্বের সাতটি দেশ এখন ইবোলার ভয়াবহতার শিকার।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ওবামা ইবোলার সংক্রমণ রোধে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নিয়ে নজরদারি করার জন্য রোড আইল্যান্ড ও নিউইয়র্কে তাঁর সফর বাতিল করেন। তিনি বুধবার শীর্ষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সূত্র জানায়, বিশ্বনেতারা ইবোলাকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা একমত হন যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ নিয়ে আরও অনেক কিছু করতে হবে এবং তা করতে হবে দ্রুত।
ওবামা দেশবাসীকে আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইবোলার সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম। যুক্তরাষ্ট্রে ইবোলায় একজনের মৃত্যু ও কমপক্ষে দুজনের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইবোলার ভয়াবহতার শিকার পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে আরও বেশি সহায়তা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পরিষদের ১৫ সদস্যের সবাই অভিন্ন মত পোষণ করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ইবোলার সংক্রমণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব ব্যর্থ হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা গতকাল বৃহস্পতিবার ইবোলা নিয়ে ব্রাসেলসে বৈঠক করেন। এসময় তাঁরা ইবোলার সংক্রমণ রোধে তাঁদের দেশগুলোতে বাইরে থেকে প্রবেশের বিষয়ে নীতিমালা নতুন করে পর্যালোচনার ঘোষণা দেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় সেনা মোতায়েন ও আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
ভারত ইবোলা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সভা করেছে গতকাল। ভারতের মন্ত্রিপরিষদের সচিব ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্য সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইবোলার সংক্রমণ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সতর্কতা: এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ইবোলায় আক্রান্ত দ্বিতীয় সেবিকার সঙ্গে একই বিমানে ভ্রমণকারী যাত্রীদের নিয়েও ভয় দেখা দিয়েছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ওহাইওর ক্লিভল্যান্ড থেকে টেক্সাসে যাওয়া ওই বিমানের যাত্রীদের প্রতি সতর্কবার্তা জারি করেছে। সিডিসি উড়োজাহাজটির ১৩২ যাত্রীর সবার সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান টমাস ফ্রাইডেন পরিস্থিতিকে খুবই বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিচর্যায় যেসব স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত থাকেন, তাঁদের গণপরিবহন পরিহার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখার দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতারাও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ভ্রমণের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বানে কণ্ঠ মিলিয়েছেন।
দক্ষিণ আমেরিকার নেতারা বসছেন: দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশের নেতারা ইবোলা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে আগামী সোমবার কিউবার রাজধানী হাভানায় বৈঠকে বসছেন। কিউবা, বলিভিয়াসহ ১০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ওই বৈঠকে অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশে এখন পর্যন্ত ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা জানা যায়নি। বিমানবন্দরে পরীক্ষা করার প্রক্রিয়ার চেয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপ সেন্ট লুইস ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া পশ্চিম আফ্রিকা থেকে লোক আসার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বুধবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইবোলায় আক্রান্ত দেশগুলোর যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়ার পর এবার ফ্রান্সও দেশটির বিমানবন্দরে পশ্চিম আফ্রিকার যাত্রীদের পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে চীনের সিহুয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল হোল্ডিং ড্রাগস লিমিটেড নামের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি কয়েক হাজার ইবোলার ওষুধ পাঠিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকায়। জেকে-০৫ নামের ওই ওষুধ সেখানে থাকা চীনের সাহায্যকর্মীরা ব্যবহার করবেন। পশ্চিম আফ্রিকায় ওই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।
No comments