এস এম আলী : প্রখ্যাত সাংবাদিক by আহমদ-উজ-জামান
এস এম আলী বাংলাদেশের সংবাদপত্র অঙ্গনে একটি অত্যন্ত উজ্জ্বল নাম। তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভার-এর রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকজীবনের শুরু। পরবর্তীকালে ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় খ্যাতিমান সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ব্যাপক পরিচয় লাভ করেছিলেন।
এস এম আলী [সৈয়দ মোহাম্মদ আলী] ১৯২৮ সালে ৫ ডিসেম্বর সে সময়কার সিলেট জেলার মৌলভীবাজার মহকুমার বিখ্যাত আলী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সৈয়দ মোস্তফা আলীর বড় ছেলে। মোস্তফা আলীর বাবা সৈয়দ সিকান্দার আলী ডিস্ট্রিক্ট স্পেশাল রেজিস্ট্রার ছিলেন, যার দ্বিতীয় ছেলেও সুলেখক সৈয়দ মুর্তজা আলী ছিলেন রাজশাহী বিভাগের কমিশনার। তিনি বাংলা একাডেমির পরিচালনা বোর্ডের সভাপতিও ছিলেন। তৃতীয় ছেলে সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক। সৈয়দ মোস্তফা আলী অবিভক্ত ভারতের সিলেট জেলার মহকুমা করিমগঞ্জে এসডিসি (সাব ডেপুটি কমিশনার) ছিলেন। এস এম আলী করিমগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। তার বাবা শহরের পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বহু বই এনে ছেলেকে পড়তে দিতেন। নিজেও ‘গোগ্রাসে’ বই পড়তেন। সৈয়দ মোস্তফা আলী একসময়ে ঝিনাইদহে এসডিও ছিলেন। তার স্মৃতিচারণ গ্রন্থের নাম আত্মকথা। এস এম আলী কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছিলেন ১৯৪৭ সালে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন। ১৯৫০-৫১ সালে ছাত্রাবস্থায় ঢাকার ওয়ারী থেকে DACCA News নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা বের করেন। সম্ভবত এটা ছিল এ দেশে ভারত বিভাগোত্তর প্রথম ইংরেজি পত্রিকা। এস এম আলী তখন কর্মচঞ্চল তরুণ। পত্রিকাটি বিক্রি করতেন নিজেই। জীবনের লক্ষ্য একটিই ছিল, সাংবাদিক হওয়া। লাহোরে দ্য ডেইলি পাকিস্তান টাইমস ও করাচির দ্য ডেইলি ডন পত্রিকায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ডন এডিটর আলতাফ হোসেন এবং পাকিস্তান টাইমস-এর এডিটর জেড এ সুুলেরির সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন তিনি। একপর্যায়ে লন্ডনে পাড়ি দেন। সেখানে সাংবাদিকতার ওপর উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পেশাগত সফরে গেছেন। তখন একপর্যায়ে মিসরের বহুলালোচিত প্রেসিডেন্ট গামাল আবদুল নাসেরের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন, যা ডেইলি অবজারভারে প্রকাশিত হয় European Diary শিরোনামে।
এস এম আলী পরে ১৯৬২ সালে হংকংয়ে এশিয়া ম্যাগাজিনে আসেন। তারপর দ্য ব্যাংকক পোস্টে সিনিয়র এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া দ্য নিউ নেশন, সিঙ্গাপুর (১৯৭১-৭২), দ্য হংকং স্ট্যান্ডার্ড (১৯৭৩-৭৫) ছিল তার কর্মক্ষেত্র।
আশির দশকের শেষ দিকে এস এম আলী সস্ত্রীক দেশে ফিরে আসেন। স্ত্রীর নাম ন্যান্সি ওয়াং। দেশে ফিরে প্রথমে পুরনো অবজারভার পত্রিকায় এডিটর পদে যোগ দিয়েছিলেন। কিছু দিন পর দ্য ডেইলি স্টার বের করেন। পত্রিকার এডিটোরিয়াল কলামের ওপরে ছাপা হতো Founder Editor SM Ali: ওই পত্রিকার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন পাতায় বের হতো তার আত্মজীবনী MY WORLD. এস এম আলীর বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের সহপাঠী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে লিখেছিলেন When he speaks English, it comes out of his mouth like oil. হুবহু না হলেও অনেকটা ওই রকমই বলেছিলেন। কবি শামসুর রাহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অন্যতম সহপাঠী। পঞ্চাশের দশকে এ দেশে সেই সময়ের একমাত্র ভাস্কর শিল্পী নভেরা আহমদের প্রতিভা ও কর্মের ওপর এস এম আলী অবজারভারে বিস্তৃত কভারেজ দিতেন। এই ছেলে যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাংবাদিক জগতে ভাস্করসম অবস্থান করছেন, তার প্রবীণ বাবা তখন রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা নগরীতে সাংস্কৃতিক, সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন বার্ধক্য সত্ত্বেও। লেখা ও অধ্যয়নের প্রতি মোস্তফা আলীর তীব্র আকুলতা ছিল, লিখতেন সিলেটের প্রাচীনতম সাপ্তাহিক (এখন দৈনিক) পত্রিকায় রাজধানীর চিঠি নিয়মিত কলাম। সাংবাদিকতার প্রতি তারও ছিল নেশা।
এস এম আলী RAINBOW OVER PADMA & AFTER THE DARKNIGHT : PROBLEMS OF SHEIKH MUJIBUR RAHMAN শীর্ষক গ্রন্থ লিখেছেন। মৌলভীবাজারের মনু নদী তার হৃদয়ে দাগ কেটেছিল; যেমন তার যশস্বী চাচা ড. সৈয়দ মুজতবা আলীর মন থেকে সুরমা নদী মুছে যায়নি। ‘সঙ্গীবিহীন অন্ধ ঘরে আসন্ন সন্ধ্যায়/সুরমা নদীর দেশের গানে উদাসী মন ধায়।’ সূত্র প্রবাসীর চিঠি : ড. সৈয়দ মুজতবা আলী। বরোদা, গুজরাট থেকে কার্তিক ১৩৬০, ১৯৪৩ সালে তিনি তার ভাতিজাকে ‘শ্রীমান খসরু বাবাজিউ’ প্রীতিপূর্ণ সম্ভাষণে এক দীর্ঘ কবিতা লিখে পাঠিয়েছিলেন। এটি ১৯৪৫ সালে কিশোর মাসিক মৌচাক-এর জয়ন্তী পালন উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যায় মুদ্রিত হয়। ‘খসরু’ এস এম আলীর ডাকনাম।
সৈয়দ মোহাম্মদ আলী ব্যাংককের এক হাসপাতালে মেডিক্যাল চেকআপ করাতে গেলে সেখানে ১৯৯৩ সালের ১৭ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, শ্রদ্ধেয় পিতৃসুলভ সৈয়দ মোস্তফা আলীর সাথে এই নিবন্ধকারের পত্র যোগাযোগ ছিল। শ্রদ্ধেয় এস এম আলীকে কাছ থেকে দেখারও আমার সুযোগ হয়েছিল।
এস এম আলী [সৈয়দ মোহাম্মদ আলী] ১৯২৮ সালে ৫ ডিসেম্বর সে সময়কার সিলেট জেলার মৌলভীবাজার মহকুমার বিখ্যাত আলী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সৈয়দ মোস্তফা আলীর বড় ছেলে। মোস্তফা আলীর বাবা সৈয়দ সিকান্দার আলী ডিস্ট্রিক্ট স্পেশাল রেজিস্ট্রার ছিলেন, যার দ্বিতীয় ছেলেও সুলেখক সৈয়দ মুর্তজা আলী ছিলেন রাজশাহী বিভাগের কমিশনার। তিনি বাংলা একাডেমির পরিচালনা বোর্ডের সভাপতিও ছিলেন। তৃতীয় ছেলে সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক। সৈয়দ মোস্তফা আলী অবিভক্ত ভারতের সিলেট জেলার মহকুমা করিমগঞ্জে এসডিসি (সাব ডেপুটি কমিশনার) ছিলেন। এস এম আলী করিমগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। তার বাবা শহরের পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বহু বই এনে ছেলেকে পড়তে দিতেন। নিজেও ‘গোগ্রাসে’ বই পড়তেন। সৈয়দ মোস্তফা আলী একসময়ে ঝিনাইদহে এসডিও ছিলেন। তার স্মৃতিচারণ গ্রন্থের নাম আত্মকথা। এস এম আলী কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছিলেন ১৯৪৭ সালে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন। ১৯৫০-৫১ সালে ছাত্রাবস্থায় ঢাকার ওয়ারী থেকে DACCA News নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা বের করেন। সম্ভবত এটা ছিল এ দেশে ভারত বিভাগোত্তর প্রথম ইংরেজি পত্রিকা। এস এম আলী তখন কর্মচঞ্চল তরুণ। পত্রিকাটি বিক্রি করতেন নিজেই। জীবনের লক্ষ্য একটিই ছিল, সাংবাদিক হওয়া। লাহোরে দ্য ডেইলি পাকিস্তান টাইমস ও করাচির দ্য ডেইলি ডন পত্রিকায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ডন এডিটর আলতাফ হোসেন এবং পাকিস্তান টাইমস-এর এডিটর জেড এ সুুলেরির সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন তিনি। একপর্যায়ে লন্ডনে পাড়ি দেন। সেখানে সাংবাদিকতার ওপর উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পেশাগত সফরে গেছেন। তখন একপর্যায়ে মিসরের বহুলালোচিত প্রেসিডেন্ট গামাল আবদুল নাসেরের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন, যা ডেইলি অবজারভারে প্রকাশিত হয় European Diary শিরোনামে।
এস এম আলী পরে ১৯৬২ সালে হংকংয়ে এশিয়া ম্যাগাজিনে আসেন। তারপর দ্য ব্যাংকক পোস্টে সিনিয়র এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া দ্য নিউ নেশন, সিঙ্গাপুর (১৯৭১-৭২), দ্য হংকং স্ট্যান্ডার্ড (১৯৭৩-৭৫) ছিল তার কর্মক্ষেত্র।
আশির দশকের শেষ দিকে এস এম আলী সস্ত্রীক দেশে ফিরে আসেন। স্ত্রীর নাম ন্যান্সি ওয়াং। দেশে ফিরে প্রথমে পুরনো অবজারভার পত্রিকায় এডিটর পদে যোগ দিয়েছিলেন। কিছু দিন পর দ্য ডেইলি স্টার বের করেন। পত্রিকার এডিটোরিয়াল কলামের ওপরে ছাপা হতো Founder Editor SM Ali: ওই পত্রিকার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন পাতায় বের হতো তার আত্মজীবনী MY WORLD. এস এম আলীর বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের সহপাঠী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে লিখেছিলেন When he speaks English, it comes out of his mouth like oil. হুবহু না হলেও অনেকটা ওই রকমই বলেছিলেন। কবি শামসুর রাহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অন্যতম সহপাঠী। পঞ্চাশের দশকে এ দেশে সেই সময়ের একমাত্র ভাস্কর শিল্পী নভেরা আহমদের প্রতিভা ও কর্মের ওপর এস এম আলী অবজারভারে বিস্তৃত কভারেজ দিতেন। এই ছেলে যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাংবাদিক জগতে ভাস্করসম অবস্থান করছেন, তার প্রবীণ বাবা তখন রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা নগরীতে সাংস্কৃতিক, সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন বার্ধক্য সত্ত্বেও। লেখা ও অধ্যয়নের প্রতি মোস্তফা আলীর তীব্র আকুলতা ছিল, লিখতেন সিলেটের প্রাচীনতম সাপ্তাহিক (এখন দৈনিক) পত্রিকায় রাজধানীর চিঠি নিয়মিত কলাম। সাংবাদিকতার প্রতি তারও ছিল নেশা।
এস এম আলী RAINBOW OVER PADMA & AFTER THE DARKNIGHT : PROBLEMS OF SHEIKH MUJIBUR RAHMAN শীর্ষক গ্রন্থ লিখেছেন। মৌলভীবাজারের মনু নদী তার হৃদয়ে দাগ কেটেছিল; যেমন তার যশস্বী চাচা ড. সৈয়দ মুজতবা আলীর মন থেকে সুরমা নদী মুছে যায়নি। ‘সঙ্গীবিহীন অন্ধ ঘরে আসন্ন সন্ধ্যায়/সুরমা নদীর দেশের গানে উদাসী মন ধায়।’ সূত্র প্রবাসীর চিঠি : ড. সৈয়দ মুজতবা আলী। বরোদা, গুজরাট থেকে কার্তিক ১৩৬০, ১৯৪৩ সালে তিনি তার ভাতিজাকে ‘শ্রীমান খসরু বাবাজিউ’ প্রীতিপূর্ণ সম্ভাষণে এক দীর্ঘ কবিতা লিখে পাঠিয়েছিলেন। এটি ১৯৪৫ সালে কিশোর মাসিক মৌচাক-এর জয়ন্তী পালন উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যায় মুদ্রিত হয়। ‘খসরু’ এস এম আলীর ডাকনাম।
সৈয়দ মোহাম্মদ আলী ব্যাংককের এক হাসপাতালে মেডিক্যাল চেকআপ করাতে গেলে সেখানে ১৯৯৩ সালের ১৭ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, শ্রদ্ধেয় পিতৃসুলভ সৈয়দ মোস্তফা আলীর সাথে এই নিবন্ধকারের পত্র যোগাযোগ ছিল। শ্রদ্ধেয় এস এম আলীকে কাছ থেকে দেখারও আমার সুযোগ হয়েছিল।
No comments