বিচারের অপেক্ষায় তাঁরা by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার
সঙ্গে জড়িত—স্রেফ এই সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মৌরিতানিয়ার যুবক আহমেদ
আবদেল আজিজ। সেটা ২০০২ সালের কথা। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩২ বছর। পাকিস্তানি
কর্তৃপক্ষ তাঁকে পাকড়াও করে তুলে দেয় মার্কিন কর্মকর্তাদের হাতে। আজিজের
ঠিকানা নির্ধারিত হয় কিউবার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত গুয়ানতানামো বের মার্কিন
বন্দিশিবিরে।
এরপর শুরু হয় বিচারের অপেক্ষায় আজিজের দিন গোনা। এক বছর, দুবছর করে এর মধ্যে এক যুগ পার হয়ে গেছে। তবু শেষ হয়নি আজিজের অপেক্ষার পালা। মুক্ত জীবনের বাতাসে বুক ভরে কোনো দিন স্বস্তির শ্বাস টানতে পারবেন কি না, এ নিয়ে ৪৪ বছরের আজিজ এখন সন্দিহান। তিনি বরাবরই দাবি করে এসেছেন, আল-কায়েদার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। কর্মকর্তারাও তদন্তে ওই সংগঠনের সঙ্গে আজিজের জড়িত থাকার কোনো তথ্যপ্রমাণ পাননি।
আজিজ যখন বন্দী হয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী ছিলেন সন্তানসম্ভবা। সেই স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলেটি এখন কৈশোরের দ্বারপ্রান্তে। অথচ এখনো সে ছেলের মুখ দেখতে পাননি আজিজ। আজিজের মতো এমন অনেক দুর্ভাগা বিচারের অপেক্ষায় দুঃসহ প্রহর গুনে চলেছেন। গুয়ানতানামো নামের মার্কিন কারাগার, যা বন্দীদের কাছে ‘জীবন্ত এক কবরখানা’ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এরপর শুরু হয় বিচারের অপেক্ষায় আজিজের দিন গোনা। এক বছর, দুবছর করে এর মধ্যে এক যুগ পার হয়ে গেছে। তবু শেষ হয়নি আজিজের অপেক্ষার পালা। মুক্ত জীবনের বাতাসে বুক ভরে কোনো দিন স্বস্তির শ্বাস টানতে পারবেন কি না, এ নিয়ে ৪৪ বছরের আজিজ এখন সন্দিহান। তিনি বরাবরই দাবি করে এসেছেন, আল-কায়েদার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। কর্মকর্তারাও তদন্তে ওই সংগঠনের সঙ্গে আজিজের জড়িত থাকার কোনো তথ্যপ্রমাণ পাননি।
আজিজ যখন বন্দী হয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী ছিলেন সন্তানসম্ভবা। সেই স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলেটি এখন কৈশোরের দ্বারপ্রান্তে। অথচ এখনো সে ছেলের মুখ দেখতে পাননি আজিজ। আজিজের মতো এমন অনেক দুর্ভাগা বিচারের অপেক্ষায় দুঃসহ প্রহর গুনে চলেছেন। গুয়ানতানামো নামের মার্কিন কারাগার, যা বন্দীদের কাছে ‘জীবন্ত এক কবরখানা’ ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিশ্বের কোথাও আইন বা বিচারবিষয়ক অনিয়ম দেখলে যুক্তরাষ্ট্রই প্রথমে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। বিশেষ করে বিনা বিচারে বন্দীদের দিনের পর দিন আটকে রাখার বিষয়টিকে তারা খুব নিন্দনীয় মনে করে। এ ব্যাপারে শীর্ষ পর্যায়ের মার্কিন নেতা ও কর্মকর্তাদের কণ্ঠ বরাবরই সরব। অথচ তাঁরা বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও নিন্দিত কারাগারে শতাধিক বন্দীকে বিনা বিচারে বছরের পর বছর আটকে রেখেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে কথা দিয়েছিলেন, আবার নির্বাচিত হলে ঘৃণ্য ওই কারাগার বন্ধ করে দেবেন। ক্ষমতায় আসার পর গুয়ানতানামোর বিষয়টি তাঁর কাছে উত্থাপিত হলে ওয়াদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন বলে একটা ভাব দেখান তিনি, তবে শেষ পর্যন্ত সে প্রসঙ্গ সমসাময়িক কিছু জ্বলন্ত সমস্যার তলে চাপা পড়ে যায়।
মার্কিন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, গুয়ানতানামোতে এখন প্রায় ১৫০ জন বন্দীকে বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নন। তাঁদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে আদৌ কোনো দোষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন বন্দীদের ব্যাপারে ২০০৯ বা ২০১০ সালেই তাঁদের নিজ দেশে বা মধ্যস্থতাকারী তৃতীয় দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত ওই নেওয়া পর্যন্তই। আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এমনটি ভাবা হচ্ছিল যে দোষের তালিকায় না থাকা বন্দীদের শিগগিরই মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ নিয়ে আর কোনো কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে না। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে গুয়ানতানামো থেকে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া বা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত মুলতবি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাননি তাঁরা।
গত জুনে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছিলেন, ব্যয়বহুল ও রাজনৈতিকভাবে কলুষিত গুয়ানতানামো কারাগার বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে ওবামা যে কথা দিয়েছেন, এর বাস্তবায়নে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। কিন্তু এ বছর এ পর্যন্ত মাত্র একজন বন্দী মুক্তি পাওয়ায় গুয়ানতানামোর বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে মার্কিন সিনেটর ডায়ান ফাইনস্টাইন বলেন, ‘গুয়ানতানামো বন্ধ করার ব্যাপারে বারবার বিলম্ব করার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। হয় কংগ্রেসের কিছু নেতা, নয় তো প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ওই কারাগারটি বন্ধ করার বেলায় বারবার বাদ সাধছেন।’
মার্কিন ও ব্রিটিশ সাংবাদিকের শিরশ্ছেদ করা ভিডিও চিত্রে যে জিহাদিদের ছবি দেখা গেছে, তাদের পরনে ছিল কমলা রঙের পোশাক। গুয়ানতানামোর বন্দীদেরও ঠিক একই পোশাক পরানো হয়। জিহাদিরা এ পোশাক পরে সুস্পষ্টভাবে এটাই ইঙ্গিত করছে যে ওই বন্দী শিবিরকে তারা কতটা ঘৃণার চোখে দেখে।
মার্কিন প্রশাসন সূত্র জানায়, গুয়ানতানামো থেকে কিছু বন্দীকে স্থানান্তরের অনুমোদন মিললেও চূড়ান্ত পর্বটি এখনো বাকি রয়েছে। আইন অনুযায়ী মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হ্যাগেলের অনুমোদন মিললেই কেবল গুয়ানতানামো থেকে স্থানান্তর বা মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু সমস্যাটা হলো, এই অনুমোদন মিলতে সময় যত গড়াবে, নির্দোষ অনেক বন্দীর ‘এক জীবন’ অপচয় হবে কারাবাসে। পৃথিবীর কোনো কিছুর বিনিময়ে এর ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। যুবক বয়সে বন্দী শিবিরে যাওয়া কোনো কোনো বন্দী ছাড়া পাবেন প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ বয়সে।
মৌরিতানিয়ার বন্দী আজিজের আইনজীবী আনা হল্যান্ড এডওয়ার্ডস বলেন, ছেলের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন আজিজ। কথা বলার সময় তিনি মাঝেমধ্যে এমন আচরণ করেন যেন গুয়ানতানামোতে নন, কবরস্থানে আছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কোনো বন্দীর ব্যক্তিগত তথ্যাদি দেন না। তবে তাঁরা বলেছেন, পৃথক এক পদক্ষেপে মুক্তির অনুমোদন পাওয়া গুয়ানতানামোর ছয়জন বন্দীকে উরুগুয়ে পাঠানোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এসব বন্দীর মধ্যে চারজন সিরিয়ার, একজন তিউনিসিয়ার ও একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, গুয়ানতানামোর যে ৭৯ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার অনুমোদন মিলেছে, তাঁদের প্রত্যেককে ওই কারাগার থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
তবে সিনেটর ফাইনস্টাইন বলেন অন্য কথা। তাঁর ভাষ্য, ‘গুয়ানতানামো বন্ধ হবে, সেটা অনেক দূরে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটা কুৎসিত একটা দাগ। প্রতিদিন এটা খুলছে, আর উগ্রপন্থীদের দুঃসাহসী করে তোলার মাধ্যমে আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা দুর্বল করে ফেলছি। আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছি নিজেদের এবং করদাতাদের অর্থের শ্রাদ্ধ করছি।’
No comments