সত্যের জয় হলো by সাখাওয়াত হোসেন
অবশেষে সত্যের জয় হলো। মামলা থেকে মুক্তি
পেলেন র্যাবের গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির কলেজছাত্র লিমন হোসেন। তিন বছর
পর তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দ্বিতীয় মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন তিনি।
ঝালকাঠি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু শামীম আজাদ গতকাল এ অব্যাহতির
আদেশ দেন। মামলা থেকে অব্যাহতির প্রতিক্রিয়ায় লিমন বলেন, র্যাবের করা
দু’টি মামলা থেকেই অব্যাহতি পাওয়ায় আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। তবে যাদের
কারণে আমি পঙ্গু হয়েছি সেই র্যাব সদস্যদের বিচারের কাঠগড়ায় দেখলে খুশি
হতাম। লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বলেন, র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে আমার মামলা
এখন বিচারাধীন আছে। সেই মামলায় র্যাব সদস্যরা শাস্তি পেলে আমরা ন্যায়বিচার
পাবো। সরকারের কাছে লিমনের পড়ালেখার জন্য মানবিক আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
২০১১ সালের ২৩শে মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়ায় র্যাবের গুলিতে লিমন গুলিবিদ্ধ হয়। এর পর র্যাব বাদী হয়ে লিমনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করে। একটি অস্ত্র আইনে। অপরটি সরকারি কাজে বাধাদান মামলা। ব্যাপক সমালোচনা এবং জনগণের দাবিতে গত বছরের ৯ই জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দু’টি মামলাই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৯শে জুলাই ঝালকাঠির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিচারক কিরণ শংকর হালদার অস্ত্র মামলার দায় থেকে লিমনকে অব্যাহতির আদেশ দেন। দীর্ঘদিন ঝালকাঠি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক না থাকায় সরকারি কাজে বাধাদান মামলাটি প্রত্যাহার হয়নি। বৃহস্পতিবার আদালতে বিচারক উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে লিমন, লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম ও লিমনের আইনজীবী আককাস সিকদার এবং সরকার পক্ষের আইনজীবী মো. হোসেন খোকন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সকলের উপস্থিতিতে আদালতের বিচারক মো. আবু শামীম আজাদ লিমনকে অব্যাহতির আদেশ দেন। পরে লিমনের আইনজীবী আক্কাস সিকদার বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে লিমনের ব্যাপারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পুরোপুরি ন্যায়বিচার সেদিন প্রতিষ্ঠিত হবে যে দিন র্যাবের ওই ৬ সদস্য বিচারের মুখোমুখি হবে। সরকারপক্ষের আইনজীবী মো. হোসেন খোকন জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আদালতে বিচারক থাকায় এ মামলা থেকে অব্যাহতি পেল লিমন। তবে অপর ৭ আসামির বিরুদ্ধে এ মামলা যথারীতি চলবে। ২০১১ সালের ২৩শে মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোর্শেদ জোমাদ্দারকে ধরতে যায় বরিশাল র্যাব ৮-এর একটি দল। সাতুরিয়ার জোমাদ্দার হাটে সন্ত্রাসী মোর্শেদ জমাদ্দারকে না পেয়ে মাঠে গরু আনতে যাওয়ার সময় লিমনকে আটক করে পার্শ্ববর্তী একটি কলাবাগানে নেয়ে র্যাব সদস্যরা। সেখানে লিমনের বাম পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে তারা। ওই ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব। এ ঘটনায় ২৩শে মার্চ রাতে র্যাব ৮-এর তৎকালীন ডিএডি লুৎফর রহমান বাদী হয়ে রাজাপুর থানায় লিমনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেন। একটি অস্ত্র আইনে এবং অপরটি সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে। লিমনকে আটক করে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হলে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ওই বছর তার বাঁ পা কেটে ফেলা হয়। এর পর লিমনের মা বরিশাল র্যাব ৮-এর তৎকালীন ডিএডি লুৎফর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৬ র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে ঝালকাঠি আদালতে একটি মামলা করেন।
No comments