ষড়যন্ত্রের জালে জিটুজি by মাসুদ করিম
একশ্রেণীর রিক্রুটিং এজেন্সির ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে পড়েছে মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর বর্তমান পদ্ধতি জিটুজি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট)। কম খরচে ও অপেক্ষকৃত বেশি বেতনে কর্মী পাঠানোর সরকারের এই উদ্যোগকে ব্যর্থ করতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে কতিপয় আদম ব্যবসায়ী। মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীদের ‘ম্যানেজ’ করে অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ে স্টুডেন্ট বা ভিজিট ভিসা অথবা পেশাজীবীর নামে অর্ধেকের চেয়েও কম বেতনে কর্মী পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন তারা। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন নিরীহ সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জিটুজি পদ্ধতিতে প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মী পাঠানোর স্বাভাবিক গতি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
আদম ব্যবসায়ীদের এই অপতৎপরতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকলে আবারও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বেসরকারি খাতের একশ্রেণীর রিক্রুটিং এজেন্সি মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় নেয়ার কারণে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া। বিগত মহাজোট সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১২ সালে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে সরকারি পর্যায়ে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। ২০০৯ সালে শ্রমবাজারটি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কয়েক লাখ টাকায় যে কর্মী পাঠিয়েছে, সেখানে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এতে কম অভিবাসন ব্যয়ে বেশি বেতন পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন কর্মীরা। পাশাপাশি চাকরি পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েই মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করতে পারছেন তারা। কিন্তু অধিক মুনাফা লাভে গুটিকয়েক আদম ব্যবসায়ীর অপতৎপরতায় হুমকিতে পড়েছে জিটুজি পদ্ধতি। আর এ কারণেই চুক্তি সই হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজার কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়েছে। যদিও ২০১২ সালের নভেম্বরে চুক্তি সই হওয়ার সময় বলা হয়েছিল, কয়েক মাসেই কমপক্ষে ১০ হাজার কর্মী পাঠানো হবে।
বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্তমান সরকার। ইতিমধ্যেই জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) জিটুজি পদ্ধতির বাইরে কোনো কর্মীকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ করেছে। বিএমইটি বিদেশগামী কর্মীদের ছাড়পত্র ইস্যু করে থাকে, যেটির মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অতিক্রম করতে হয়। এরপরও ছাড়পত্র ছাড়াই কিছু কিছু কর্মীর জিটুজির বাইরে ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ার হাইকমিশনে চিঠি দিয়ে জিটুজির বাইরে কোনো কর্মীকে ভিসা না দেয়ার অনুরোধ জানায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এতেও বন্ধ হয়নি কর্মীদের বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়া গমন। এখন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটে ওঠা ৩২ জন কর্মীকে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় নিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্যে শিগগিরই শুরু করা হচ্ছে জিটুজিতে কম অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠানো সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মসূচি। কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাচ্ছে কম। মালয়েশিয়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গে জিটুজি করেনি। এই সুযোগে নেপাল বাংলাদেশের কর্মীর চাহিদা পূরণ করছে। এতে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আদম বেপারিরা স্টুডেন্ট ভিসা কিংবা বেড়ানোর নামে ভিজিট ভিসা দিয়ে মানব পাচার করছে। এটা ঠেকাতে কালই (মঙ্গলবার) ৩২ জনকে বিমান থেকে নামিয়ে এনেছি। এভাবে আদম বেপারিরা বাংলাদেশের লোকজনের ক্ষতি করছে।’ জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীরা কর্মী নিয়োগে আগ্রহী না হওয়ায় নেপালের দখলে এই শ্রমবাজার চলে যাচ্ছে বলে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভিযোগ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশীরা ভালো কাজ জানেন। ফলে এদেশের কর্মীর কাজ নেপালের লোক দিয়ে হবে না। তাছাড়া নেপালি রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের কর্মীদের কাছ থেকে এত বেশি অর্থ নিয়ে প্রতারণা করে না।’ মন্ত্রী আরও জানান, সমুদ্রপথে নৌকা দিয়েও মানব পাচার হচ্ছে। তিনি এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভিমত, মালয়েশিয়ায় চিকিৎসক কিংবা পেশাজীবী পাঠানোর ক্ষেত্রে জিটুজি পদ্ধতি কার্যকর নয়। ফলে জিটুজির পাশাপাশি বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো সম্ভব। এতে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান বুধবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, একশ্রেণীর লোক পেশাজীবী নামে ৪-৫ হাজার রিঙ্গিত বেতন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোক পাঠাচ্ছে। এখানে এসে তারা ৪০০ রিঙ্গিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। রিক্রুটিং এজেন্সির সংগঠন বায়রার (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি) লোকরা মালয়েশিয়ায় নিয়োগকারীদের অর্থ দিয়ে এসব করানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করছে।’ তিনি আরও জানান, বায়রার এই ‘অপচেষ্টা’ ঠেকাতে মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীদের কাছে জিটুজি পদ্ধতিতে কম খরচে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে প্রচার অভিযান চালাবে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন।
জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী কম যাচ্ছে এমন অভিযোগ স্বীকার করে হাইকমিশনার আতিকুর রহমান বলেন, ‘আগামী ৩ নভেম্বর মালয়েশিয়ার সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং গ্র“পের বৈঠক হবে। সেখানে জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে ১২ হাজার লোক নিয়োগের চুক্তি চূড়ান্ত হবে। তাছাড়া বনায়ন ছাড়াও এখন জিটুজি পদ্ধতিতেই অপরাপর খাতে আগামী মাস থেকেই লোক নেয়া শুরু করবে মালয়েশিয়া। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা করতে চাই যাতে বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় আসতে পারে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিটুজি চুক্তি মোতাবেক, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীরা মাসে ৯০০ রিঙ্গিত (২১ হাজার টাকা) বেতন পান। তবে সারওয়াক প্রদেশে নিুতম মজুরি কম থাকায় সেখানে মাসিক বেতন হবে ৮০০ রিঙ্গিত (১৯ হাজার টাকা)।
জানতে চাইলে বায়রা সভাপতি আবুল বাশার যুগান্তরকে বলেন, জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে শুধু বনায়ন খাতে কর্মী নিয়োগ করছে মালয়েশিয়া। আর নির্মাণ, শিল্প এবং সেবা খাতে নিয়োগ হচ্ছে নেপালসহ অন্য দেশ থেকে। বায়রা সভাপতি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মাসে মালয়েশিয়া যাবেন। ওই সময়ে তিনি কিছু একটা করবেন, যাতে বাংলাদেশ থেকে বেশি লোক মালয়েশিয়ায় যেতে পারে।’ অর্থ দিয়ে মালয়েশিয়ায় নিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল বাশার বলেন, ‘বায়রা এসব কাজে মোটেও জড়িত নয়। তাছাড়া কেউ পেশাজীবী, স্টুডেন্ট কিংবা ভিজিট ভিসায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার জন্য ওই ব্যক্তি দায়ী। বায়রা এটাকে ব্যবসা বলে মনে করে না।
আদম ব্যবসায়ীদের এই অপতৎপরতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকলে আবারও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বেসরকারি খাতের একশ্রেণীর রিক্রুটিং এজেন্সি মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় নেয়ার কারণে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া। বিগত মহাজোট সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১২ সালে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে সরকারি পর্যায়ে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। ২০০৯ সালে শ্রমবাজারটি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কয়েক লাখ টাকায় যে কর্মী পাঠিয়েছে, সেখানে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এতে কম অভিবাসন ব্যয়ে বেশি বেতন পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন কর্মীরা। পাশাপাশি চাকরি পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েই মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করতে পারছেন তারা। কিন্তু অধিক মুনাফা লাভে গুটিকয়েক আদম ব্যবসায়ীর অপতৎপরতায় হুমকিতে পড়েছে জিটুজি পদ্ধতি। আর এ কারণেই চুক্তি সই হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজার কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়েছে। যদিও ২০১২ সালের নভেম্বরে চুক্তি সই হওয়ার সময় বলা হয়েছিল, কয়েক মাসেই কমপক্ষে ১০ হাজার কর্মী পাঠানো হবে।
বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্তমান সরকার। ইতিমধ্যেই জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) জিটুজি পদ্ধতির বাইরে কোনো কর্মীকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ করেছে। বিএমইটি বিদেশগামী কর্মীদের ছাড়পত্র ইস্যু করে থাকে, যেটির মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অতিক্রম করতে হয়। এরপরও ছাড়পত্র ছাড়াই কিছু কিছু কর্মীর জিটুজির বাইরে ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ার হাইকমিশনে চিঠি দিয়ে জিটুজির বাইরে কোনো কর্মীকে ভিসা না দেয়ার অনুরোধ জানায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এতেও বন্ধ হয়নি কর্মীদের বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়া গমন। এখন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটে ওঠা ৩২ জন কর্মীকে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় নিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্যে শিগগিরই শুরু করা হচ্ছে জিটুজিতে কম অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠানো সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মসূচি। কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাচ্ছে কম। মালয়েশিয়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গে জিটুজি করেনি। এই সুযোগে নেপাল বাংলাদেশের কর্মীর চাহিদা পূরণ করছে। এতে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আদম বেপারিরা স্টুডেন্ট ভিসা কিংবা বেড়ানোর নামে ভিজিট ভিসা দিয়ে মানব পাচার করছে। এটা ঠেকাতে কালই (মঙ্গলবার) ৩২ জনকে বিমান থেকে নামিয়ে এনেছি। এভাবে আদম বেপারিরা বাংলাদেশের লোকজনের ক্ষতি করছে।’ জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীরা কর্মী নিয়োগে আগ্রহী না হওয়ায় নেপালের দখলে এই শ্রমবাজার চলে যাচ্ছে বলে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভিযোগ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশীরা ভালো কাজ জানেন। ফলে এদেশের কর্মীর কাজ নেপালের লোক দিয়ে হবে না। তাছাড়া নেপালি রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের কর্মীদের কাছ থেকে এত বেশি অর্থ নিয়ে প্রতারণা করে না।’ মন্ত্রী আরও জানান, সমুদ্রপথে নৌকা দিয়েও মানব পাচার হচ্ছে। তিনি এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভিমত, মালয়েশিয়ায় চিকিৎসক কিংবা পেশাজীবী পাঠানোর ক্ষেত্রে জিটুজি পদ্ধতি কার্যকর নয়। ফলে জিটুজির পাশাপাশি বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো সম্ভব। এতে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান বুধবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, একশ্রেণীর লোক পেশাজীবী নামে ৪-৫ হাজার রিঙ্গিত বেতন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোক পাঠাচ্ছে। এখানে এসে তারা ৪০০ রিঙ্গিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। রিক্রুটিং এজেন্সির সংগঠন বায়রার (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি) লোকরা মালয়েশিয়ায় নিয়োগকারীদের অর্থ দিয়ে এসব করানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করছে।’ তিনি আরও জানান, বায়রার এই ‘অপচেষ্টা’ ঠেকাতে মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীদের কাছে জিটুজি পদ্ধতিতে কম খরচে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে প্রচার অভিযান চালাবে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন।
জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী কম যাচ্ছে এমন অভিযোগ স্বীকার করে হাইকমিশনার আতিকুর রহমান বলেন, ‘আগামী ৩ নভেম্বর মালয়েশিয়ার সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং গ্র“পের বৈঠক হবে। সেখানে জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে ১২ হাজার লোক নিয়োগের চুক্তি চূড়ান্ত হবে। তাছাড়া বনায়ন ছাড়াও এখন জিটুজি পদ্ধতিতেই অপরাপর খাতে আগামী মাস থেকেই লোক নেয়া শুরু করবে মালয়েশিয়া। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা করতে চাই যাতে বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় আসতে পারে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিটুজি চুক্তি মোতাবেক, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীরা মাসে ৯০০ রিঙ্গিত (২১ হাজার টাকা) বেতন পান। তবে সারওয়াক প্রদেশে নিুতম মজুরি কম থাকায় সেখানে মাসিক বেতন হবে ৮০০ রিঙ্গিত (১৯ হাজার টাকা)।
জানতে চাইলে বায়রা সভাপতি আবুল বাশার যুগান্তরকে বলেন, জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে শুধু বনায়ন খাতে কর্মী নিয়োগ করছে মালয়েশিয়া। আর নির্মাণ, শিল্প এবং সেবা খাতে নিয়োগ হচ্ছে নেপালসহ অন্য দেশ থেকে। বায়রা সভাপতি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মাসে মালয়েশিয়া যাবেন। ওই সময়ে তিনি কিছু একটা করবেন, যাতে বাংলাদেশ থেকে বেশি লোক মালয়েশিয়ায় যেতে পারে।’ অর্থ দিয়ে মালয়েশিয়ায় নিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল বাশার বলেন, ‘বায়রা এসব কাজে মোটেও জড়িত নয়। তাছাড়া কেউ পেশাজীবী, স্টুডেন্ট কিংবা ভিজিট ভিসায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার জন্য ওই ব্যক্তি দায়ী। বায়রা এটাকে ব্যবসা বলে মনে করে না।
No comments