পিয়াস করিমের দাফন আজ -মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়েও রাজনীতি
জনপ্রিয় টকশো আলোচক ও ব্র্যাক
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিমের দাফন আজ। বাদ জুমা রাজধানীর
বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা
হবে। পিয়াস করিমের বোন এডভোকেট তৌফিকা করিম গতকাল সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত
করেছেন। তিনি জানান, স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে পিয়াস করিমের মরদেহ সকাল
৯টায় ধানমন্ডির বাসায় আনা হবে। সেখানে ভক্ত, আত্মীয়স্বজন ও সর্বস্তরের
জনসাধারণ শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তার মরদেহ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে
নেয়া হবে। সেখানে বাদ জুমা মরহুমের জানাজা হবে। এরপর বনানী কবরস্থানে তাকে
দাফন করা হবে। এদিকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের লাশ নিতে
অনুমতি না দেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বুদ্ধিজীবীরা। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে
সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, যেহেতু সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের
কারণে আমরা তাকে শহীদ মিনারে নিতে পারলাম না সেহেতু তার বাসার সামনেই
সম্মান জানানো হবে। ২ ঘণ্টা পর সেখান থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নেয়া হবে।
জানাজার পর সেখানেও কেউ যদি সম্মান জানাতে চান তাকে সে সুযোগ দেয়া হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন
নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি
দেয়নি। কর্মসূচির ব্যাপারে তিনি জানান, পিয়াস করিমের বাসার সামনে বর্তমান
পরিস্থিতি নিয়ে সকালেই একটি প্রেস ব্রিফিং করা হবে। এরপর অন্যান্য
কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে নাগরিক সমাজ। এদিকে আগামীকাল শনিবার
ধানমন্ডি ৭নং এলাকার জামে মসজিদে পারিবারিকভাবে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা
হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য শুভানুধ্যায়ীদের
অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওদিকে ড. পিয়াস করিমের মৃত্যুতে আজ সারা দেশে শোক
দিবস পালন করবে বিএনপি। এদিকে গতকাল বিকালে ড. পিয়াস করিমের সর্বশেষ
কর্মস্থল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের
উদ্যোগে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই
বিভাগে সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান পড়াতেন। এর আগে ১৭ বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে
একই পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, পিয়াস করিম এই
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো কবিতা, গান, হাস্যরসাত্মক এবং অনানুষ্ঠানিক
আলাপচারিতার মধ্যে পার করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বন্ধুসুলভ। গত ১৩ই
অক্টোবর বরেণ্য এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারা যান। এ সংবাদ পেয়ে তার বড় দু’বোন
গতরাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন। তাদের দেশে ফেরার পরই তাকে দাফনের
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শহীদ মিনারে লাশ নিতে রিট
অধ্যাপক পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন। শহীদ মিনারে কার মরদেহ নেয়া হবে এবং কার মরদেহ নেয়া হবে না- এ বিষয়ে একটি বিধিমালা প্রণয়নেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে বিবাদী করা হয়েছে। আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, মৃত ব্যক্তির প্রতি সবার দয়া থাকা উচিত। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে শহীদ মিনারে যে কারও মরদেহ নেয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সমপ্রতি মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়েও রাজনীতি করা হচ্ছে। মরদেহ নিয়ে রাজনীতি করা থেকে বিরত রাখতে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
No comments