গাজা আগ্রাসন- সুড়ঙ্গে দেখা হলে by ইউরি আভনেরি
ইংল্যান্ডের একটি গ্রাম তিরন্দাজদের জন্য খ্যাত ছিল। সেই গ্রামের প্রতি বর্গফুটে তিরবিদ্ধ বড় বড় বোর্ড ছিল, এগুলো সেখানকার তিরন্দাজদের দক্ষতার নিদর্শন হিসেবে দেখা হতো। দেখা গেছে, প্রতিটি তিরই একদম লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। একজন উৎসাহী পরিদর্শক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এটা কীভাবে সম্ভব হলো? উত্তরটা ছিল খুব সোজাসাপটা, ‘প্রথমে আমরা তির মারি, তারপর চারদিকে বৃত্ত এঁকে দিই।’
গাজায় চলমান আগ্রাসনের ক্ষেত্রেও ইসরায়েল সরকার এ নীতি গ্রহণ করেছে। প্রতি মুহূর্তেই ইসরায়েলের লক্ষ্য পরিবর্তিত হচ্ছে। আগ্রাসন যখন শুরু হয়, তখন আমাদের লক্ষ্য ছিল শুধু ‘সন্ত্রাসীদের ডেরা ধ্বংস করা’। হামাস যখন প্রথমে রকেট হামলা শুরু করে, তখন লক্ষ্য ছিল এই রকেট ধ্বংস করা। ইসরায়েলের সেনারা গাজার সীমান্ত অতিক্রম করার পর সেখানে তাঁরা বিস্তৃত জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বহু সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করেন। তারপর সেগুলোই হয়ে যায় যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য। হামাস ইসরায়েলের সীমানাপাঁচিলের নিচ দিয়ে গিয়ে ইসরায়েলে আঘাত করার লক্ষ্যে এই সুড়ঙ্গ খুঁড়েছিল। গাজায় যে এই সুড়ঙ্গ আছে, সেটা সবাই জানত। কিন্তু এর সংখ্যা ও কার্যকারিতা দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে যায়। এই সুড়ঙ্গের অনেকগুলোই আবার আন্তসম্পর্কিত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সুড়ঙ্গগুলোই এই আগ্রাসনের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
আবার রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হলে এই আগ্রাসনের লক্ষ্য আগামীকালই বদলে যেতে পারে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোও একেবারে নতজানু হয়ে গেছে। ‘সামরিক প্রতিনিধিদের’ গাজায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে এখন কোনো স্বাধীন সাংবাদিকতার সুযোগ নেই। তাঁরা নিজেরাও সেনাবাহিনীর শেখানো বুলি আওড়েই খুশি। অনেক সাবেক জেনারেলকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ানো হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, তাঁরা ঘুরেফিরে একই শব্দ ব্যবহার করছেন। জনগণও ধর্মগ্রন্থের মতো এসব গিলছে। হারেৎস পত্রিকার মৃদু সমালোচনা এবং গিডিওন, লেভি ও আমিরা হাসের মতো যাঁরা ভিন্নমত দেওয়ার চেষ্টা করছেন, সবকিছুই এ ডামাডোলের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। এসব মগজধোলাই থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমি একটি পন্থা অবলম্বন করেছি: সব সময়ই আমি ইসরায়েলি টিভি ও আল-জাজিরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখি। এতে মনে হচ্ছে, দুটি ভিন্ন দুনিয়ায় দুটি ভিন্ন যুদ্ধ চলছে।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমের দর্শকদের কাছে হামাস যেন সাক্ষাৎ শয়তান। সে জন্য ইসরায়েল ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে লড়ছে, হামাসের যোদ্ধারা কখনো নিজেদের ‘প্রত্যাহার’ করেন না, তাঁরা পালান। তাঁদের নেতারা মাটির নিচের পরিচালনাকেন্দ্র থেকে এ যুদ্ধ পরিচালনা করছেন না, তাঁরা ‘লুকিয়ে’ আছেন। হামাস নৈরাশ্যবাদীদের ঢঙে বেসামরিক লোকদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে (উইনস্টন চার্চিল যেভাবে লন্ডনের অধিবাসীদের ব্যবহার করেছেন), ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার আরবের চোখ দিয়ে দেখলে এই যুদ্ধের আরেকটি ভাষ্য পাওয়া যায়। হামাস একটি দেশপ্রেমিক সংগঠন, তারা অমিত সাহস নিয়ে বিপুল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ছে। তারা কোনো বিদেশি শক্তি নয়, বরং এ মাটিরই সন্তান তারা। ফলে স্থানীয় জনগণের সমস্যা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। এদের আত্মীয়স্বজন বিপুল হারে মারা পড়ছে, বাড়িঘর ধ্বংস হচ্ছে। তাদের মা-বোনেরা জাতিসংঘের শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে, তাঁরা না পাচ্ছে পানি, না পাচ্ছে বিদ্যুৎ। শরীরটুকু ঢাকার কাপড় ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই বললে চলে।
শত্রুকে দানব বানানোর মধ্যে আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। কলুষিত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার মধ্যে কোনো মর্যাদা নেই। আসুন স্বীকার করি, ইসরায়েলের শত্রু হামাস প্রচণ্ড সাহসের সঙ্গে কার্যকর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব এখনো ভালোই কাজ করে যাচ্ছে, এটা এক দৈবাৎ ঘটনাই বটে। বেসামরিক মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠলেও তাদের প্রায় সবাই হামাসকে সমর্থন করছে। দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা চার সপ্তাহ ধরে লড়েও টিকে আছে, এটাই বা কম কী। এটা স্বীকার করে নিলে মুদ্রার অন্য পিঠ দেখতে সুবিধা হয়। যুদ্ধ করা, শান্তি স্থাপন করা ও এমনকি যুদ্ধবিরতি করার জন্যও এটা প্রয়োজন। শত্রু বা নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে যুদ্ধবিরতিও কঠিন হয়ে ওঠে।
যেমন, মাহমুদ আব্বাসের কাছ থেকে আমরা কী চাই? বহু বছর ধরে ইসরায়েল প্রকাশ্যেই তাঁর সমালোচনা করে আসছে। তাঁর সম্পর্কে অ্যারিয়েল শ্যারোনের মন্তব্য বিশেষভাবে খ্যাত৷ তিনি বলেছিলেন, আব্বাস হচ্ছে ‘পালকহীন মুরগি’। ইসরায়েলের ডানপন্থীরা তাঁকে ‘হামাসের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক’ মনে করে। নেতানিয়াহু তাঁর সহজাত চটকদার ভঙ্গিতে বলেছেন, ‘হয় আমাদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করো, অথবা হামাসের সঙ্গে।’
কিন্তু এই সপ্তাহে আমাদের নেতারা ব্যাকুলভাবে আব্বাসের দ্বারে ছুটছেন। ইসরায়েলি নেতারা তাঁকে ফিলিস্তিনের জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, যিনি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করতে পারেন। ইসরায়েলের সব ধারাভাষ্যকার জোর গলায় বলছেন, এ যুদ্ধের একটি বড় অর্জন হচ্ছে এর মাধ্যমে ইসরায়েল, মিসর, সৌদি আরব, দ্য গালফ এমিরেটস ও আব্বাসের মধ্যে একটি রাজনৈতিক জোট গড়ে ওঠা। গতকাল যে সহযোগী ছিল না, আজ সে একনিষ্ঠ ‘মিত্র’। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অনেক ফিলিস্তিনিই এখন আব্বাসকে ঘৃণার চোখে দেখছেন, কিন্তু হামাসের প্রশংসা করছেন—তাঁরাই এখন আরব মর্যাদার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইউরোপের চেয়ে আরব সংস্কৃতিতে মর্যাদার মূল্য অনেক বেশি।
এদিকে পশ্চিম তীরেও মানুষ গাজা আগ্রাসনের বিরোধিতা করছেন। তরুণেরাসহ সব বয়সের মানুষই তৃতীয় ইন্তিফাদার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইসরায়েলি সেনাও কালান্দিয়া, জেরুজালেম, বেথলেহেম ও অন্যান্য স্থানে গুলিবর্ষণ করছে। ফলে সেখানেও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। সে কারণেই আমাদের জেনারেলরা গাজার যুদ্ধবিরতি চান। ইসরায়েলের লক্ষ্য পরিবর্তনশীল হলেও হামাসের তা নয়, তারা চায় গাজা উপত্যকার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে বহু কিছুই হতে পারে। তবে আমার একটি আশা আছে, এটাকে পাঠক অলীক কল্পনা বলতে পারেন: ইসরায়েলি সেনারা শত্রু তাড়ানোর ইচ্ছায় একটি সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকেছে। অন্য প্রান্ত দিয়ে হামাসের সেনারা ঢুকেছে। মৃদু আলোয় একে অন্যের মুখোমুখি হলে, তাঁরা গোলাগুলি না করে করমর্দন করলেন। আমি কি পাগল?
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ইউরি আভনেরি: ইসরায়েলি লেখক।
গাজায় চলমান আগ্রাসনের ক্ষেত্রেও ইসরায়েল সরকার এ নীতি গ্রহণ করেছে। প্রতি মুহূর্তেই ইসরায়েলের লক্ষ্য পরিবর্তিত হচ্ছে। আগ্রাসন যখন শুরু হয়, তখন আমাদের লক্ষ্য ছিল শুধু ‘সন্ত্রাসীদের ডেরা ধ্বংস করা’। হামাস যখন প্রথমে রকেট হামলা শুরু করে, তখন লক্ষ্য ছিল এই রকেট ধ্বংস করা। ইসরায়েলের সেনারা গাজার সীমান্ত অতিক্রম করার পর সেখানে তাঁরা বিস্তৃত জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বহু সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করেন। তারপর সেগুলোই হয়ে যায় যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য। হামাস ইসরায়েলের সীমানাপাঁচিলের নিচ দিয়ে গিয়ে ইসরায়েলে আঘাত করার লক্ষ্যে এই সুড়ঙ্গ খুঁড়েছিল। গাজায় যে এই সুড়ঙ্গ আছে, সেটা সবাই জানত। কিন্তু এর সংখ্যা ও কার্যকারিতা দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে যায়। এই সুড়ঙ্গের অনেকগুলোই আবার আন্তসম্পর্কিত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সুড়ঙ্গগুলোই এই আগ্রাসনের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
আবার রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হলে এই আগ্রাসনের লক্ষ্য আগামীকালই বদলে যেতে পারে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোও একেবারে নতজানু হয়ে গেছে। ‘সামরিক প্রতিনিধিদের’ গাজায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে এখন কোনো স্বাধীন সাংবাদিকতার সুযোগ নেই। তাঁরা নিজেরাও সেনাবাহিনীর শেখানো বুলি আওড়েই খুশি। অনেক সাবেক জেনারেলকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ানো হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, তাঁরা ঘুরেফিরে একই শব্দ ব্যবহার করছেন। জনগণও ধর্মগ্রন্থের মতো এসব গিলছে। হারেৎস পত্রিকার মৃদু সমালোচনা এবং গিডিওন, লেভি ও আমিরা হাসের মতো যাঁরা ভিন্নমত দেওয়ার চেষ্টা করছেন, সবকিছুই এ ডামাডোলের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। এসব মগজধোলাই থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমি একটি পন্থা অবলম্বন করেছি: সব সময়ই আমি ইসরায়েলি টিভি ও আল-জাজিরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখি। এতে মনে হচ্ছে, দুটি ভিন্ন দুনিয়ায় দুটি ভিন্ন যুদ্ধ চলছে।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমের দর্শকদের কাছে হামাস যেন সাক্ষাৎ শয়তান। সে জন্য ইসরায়েল ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে লড়ছে, হামাসের যোদ্ধারা কখনো নিজেদের ‘প্রত্যাহার’ করেন না, তাঁরা পালান। তাঁদের নেতারা মাটির নিচের পরিচালনাকেন্দ্র থেকে এ যুদ্ধ পরিচালনা করছেন না, তাঁরা ‘লুকিয়ে’ আছেন। হামাস নৈরাশ্যবাদীদের ঢঙে বেসামরিক লোকদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে (উইনস্টন চার্চিল যেভাবে লন্ডনের অধিবাসীদের ব্যবহার করেছেন), ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার আরবের চোখ দিয়ে দেখলে এই যুদ্ধের আরেকটি ভাষ্য পাওয়া যায়। হামাস একটি দেশপ্রেমিক সংগঠন, তারা অমিত সাহস নিয়ে বিপুল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ছে। তারা কোনো বিদেশি শক্তি নয়, বরং এ মাটিরই সন্তান তারা। ফলে স্থানীয় জনগণের সমস্যা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। এদের আত্মীয়স্বজন বিপুল হারে মারা পড়ছে, বাড়িঘর ধ্বংস হচ্ছে। তাদের মা-বোনেরা জাতিসংঘের শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে, তাঁরা না পাচ্ছে পানি, না পাচ্ছে বিদ্যুৎ। শরীরটুকু ঢাকার কাপড় ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই বললে চলে।
শত্রুকে দানব বানানোর মধ্যে আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। কলুষিত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার মধ্যে কোনো মর্যাদা নেই। আসুন স্বীকার করি, ইসরায়েলের শত্রু হামাস প্রচণ্ড সাহসের সঙ্গে কার্যকর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব এখনো ভালোই কাজ করে যাচ্ছে, এটা এক দৈবাৎ ঘটনাই বটে। বেসামরিক মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠলেও তাদের প্রায় সবাই হামাসকে সমর্থন করছে। দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা চার সপ্তাহ ধরে লড়েও টিকে আছে, এটাই বা কম কী। এটা স্বীকার করে নিলে মুদ্রার অন্য পিঠ দেখতে সুবিধা হয়। যুদ্ধ করা, শান্তি স্থাপন করা ও এমনকি যুদ্ধবিরতি করার জন্যও এটা প্রয়োজন। শত্রু বা নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে যুদ্ধবিরতিও কঠিন হয়ে ওঠে।
যেমন, মাহমুদ আব্বাসের কাছ থেকে আমরা কী চাই? বহু বছর ধরে ইসরায়েল প্রকাশ্যেই তাঁর সমালোচনা করে আসছে। তাঁর সম্পর্কে অ্যারিয়েল শ্যারোনের মন্তব্য বিশেষভাবে খ্যাত৷ তিনি বলেছিলেন, আব্বাস হচ্ছে ‘পালকহীন মুরগি’। ইসরায়েলের ডানপন্থীরা তাঁকে ‘হামাসের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক’ মনে করে। নেতানিয়াহু তাঁর সহজাত চটকদার ভঙ্গিতে বলেছেন, ‘হয় আমাদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করো, অথবা হামাসের সঙ্গে।’
কিন্তু এই সপ্তাহে আমাদের নেতারা ব্যাকুলভাবে আব্বাসের দ্বারে ছুটছেন। ইসরায়েলি নেতারা তাঁকে ফিলিস্তিনের জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, যিনি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করতে পারেন। ইসরায়েলের সব ধারাভাষ্যকার জোর গলায় বলছেন, এ যুদ্ধের একটি বড় অর্জন হচ্ছে এর মাধ্যমে ইসরায়েল, মিসর, সৌদি আরব, দ্য গালফ এমিরেটস ও আব্বাসের মধ্যে একটি রাজনৈতিক জোট গড়ে ওঠা। গতকাল যে সহযোগী ছিল না, আজ সে একনিষ্ঠ ‘মিত্র’। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অনেক ফিলিস্তিনিই এখন আব্বাসকে ঘৃণার চোখে দেখছেন, কিন্তু হামাসের প্রশংসা করছেন—তাঁরাই এখন আরব মর্যাদার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইউরোপের চেয়ে আরব সংস্কৃতিতে মর্যাদার মূল্য অনেক বেশি।
এদিকে পশ্চিম তীরেও মানুষ গাজা আগ্রাসনের বিরোধিতা করছেন। তরুণেরাসহ সব বয়সের মানুষই তৃতীয় ইন্তিফাদার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইসরায়েলি সেনাও কালান্দিয়া, জেরুজালেম, বেথলেহেম ও অন্যান্য স্থানে গুলিবর্ষণ করছে। ফলে সেখানেও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। সে কারণেই আমাদের জেনারেলরা গাজার যুদ্ধবিরতি চান। ইসরায়েলের লক্ষ্য পরিবর্তনশীল হলেও হামাসের তা নয়, তারা চায় গাজা উপত্যকার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে বহু কিছুই হতে পারে। তবে আমার একটি আশা আছে, এটাকে পাঠক অলীক কল্পনা বলতে পারেন: ইসরায়েলি সেনারা শত্রু তাড়ানোর ইচ্ছায় একটি সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকেছে। অন্য প্রান্ত দিয়ে হামাসের সেনারা ঢুকেছে। মৃদু আলোয় একে অন্যের মুখোমুখি হলে, তাঁরা গোলাগুলি না করে করমর্দন করলেন। আমি কি পাগল?
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ইউরি আভনেরি: ইসরায়েলি লেখক।
No comments