গাজায় মারা গেছেন সিলেটের হামিদুর -‘আব্বু যুদ্ধে যাচ্ছি বেঁচে থাকলে দেখা হবে’ by ওয়েছ খছরু
‘আব্বু যুদ্ধে যাচ্ছি, বেঁচে থাকলে দেখা হবে, নতুবা তোমাদের সঙ্গে বেহেশতে দেখা হবে।’- এ কথা চিরকুটে লিখে ঘর থেকে বের হয়ে গাজা যুদ্ধে গিয়েছিলেন বিশ্বনাথের হামিদুর রহমান। গাজা উপত্যকায় সশস্ত্রযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। কিন্তু মায়ের কোলে ফিরে আসা হলো না তার। তার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন হামিদুর রহমান। যুদ্ধের ময়দান থেকে টেলিফোনে হামিদুর মারা যাওয়ার খবর জানিয়েছেন তার সহযোদ্ধারা। এ খবরে মাতম চলছে হামিদুরের পরিবারে। হামিদুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথের মীরের চক গ্রামে। তার পিতা আবদুল হান্নান। দীর্ঘদিন ধরে আবদুল হান্নান বসবাস করছেন যুক্তরাজ্যে। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে হামিদুর রহমান তৃতীয়। তিনি ছোটকাল থেকে ধর্মভীরু ছিলেন। তাবলিগ জামাতে শরিক হতেন। সব সময় নামাজ-রোজা পালন করতেন। লন্ডনে তার সহযোদ্ধারা সবাই তাবলিগ জামাতের লোক। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, এবার গাজা উপত্যকায় যখন ইসরাইল হামলার প্রস্তুতি শুরু করেছিল তখনই বন্ধুদের সঙ্গে গাজা যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে হামিদুর রহমান। যুক্তরাজ্য থেকে ১০ জনের একটি টিম গাজা যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। আর ওই দলে নাম লেখান হামিদুর রহমান। রমজানের আগেই তিনি বন্ধুদের সঙ্গে গাজার পথে রওনা হন। যাওয়ার আগে পরিবারের অনুমতি পাওয়া যাবে না- এমন আশঙ্কায় তিনি পরিবারকে সরাসরি জানান নি। যাওয়ার আগে তার পিতা আবদুল হান্নানকে চিরকুট লিখে গিয়েছিলেন। আর ওই চিরকুট পাওয়ার পর থেকে ছেলের প্রতীক্ষায় ছিলেন আবদুল হান্নান। হামিদুর রহমানের চাচা সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মীরের চক গ্রামের বাসিন্দা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল মনাফ গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হামিদুর রহমান গাজা উপত্যকায় যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের হয়ে অংশ নেন। আর সশস্ত্রযুদ্ধে তিনি বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। একটি সম্মুখযুদ্ধে ইসরাইলি সৈন্যদের তোপের মুখে ছিলেন তারা। আর ঈদের আগের দিন ওই যুদ্ধে মারা যান হামিদুর রহমান। তার মারা যাওয়ার খবর সহযোদ্ধারা যুদ্ধের ময়দান থেকে লন্ডনের বাসায় জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তার মৃত্যুর খবর শুনে লন্ডনে শোকের মাতম চলছে। বিশ্বনাথের বাড়িতেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এদিকে, গত শনিবার মীরের চক গ্রামে নিহত হামিদুর রহমানের কুলখানি হয়েছে। আর ওই কুলখানিতে গ্রামের লোকজন অংশ নেন। আবদুল মনাফ জানান, হামিদুর রহমান খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। প্রায় ৪ বছর আগে তার ভাই হান্নান পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশে এসেছিল। তখন হামিদুর রহমানও তাদের সঙ্গে দেশে আসে।
No comments