বিধ্বস্ত গাজায় ভুতুড়ে নিস্তব্ধতা
ইসরায়েলের টানা প্রায় এক মাস ধরে চলা নৃশংস অভিযানে ব্যাপক রক্তপাত আর ধ্বংসযজ্ঞের পর অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার শান্ত হয়ে আসে ফিলিস্তিনশাসিত গাজা। চারদিকে ধ্বংসস্তূপের মাঝে ছিল শুধুই নীরবতা। মিসরের মধ্যস্থতায় গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ৭২ ঘণ্টার এক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে গতকাল সকাল আটটা থেকে। মৃত্যুপুরীতে পরিণত গাজা থেকে সেনা সরিয়ে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। বিশ্ববাসীর অব্যাহত নিন্দা ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এর আগের দিন সোমবারও সাত ঘণ্টার জন্য মানবিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল।কিন্তু ওই ঘোষণার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আশ্রয়শিবিরে হামলার মধ্য দিয়ে তা নিজেরাই ভেঙে ফেলে দেশটি।
এরও আগে দুই পক্ষ আরও কয়েক দফা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও প্রতিবারই তা ভেস্তে যায়। তাই সাম্প্রতিকতম এই যুদ্ধবিরতি টেকসই হওয়ার বিষয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।খবর এএফপি ও বিবিসির। গতকাল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিট আগেও ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের যোদ্ধাদের মধ্যে চলেছে তুমুল লড়াই। তবে ইসরায়েলি হামলার ২৯তম এই দিনটিতে বিবদমান দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে আপাতদৃষ্টিতে প্রত্যয়ী ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী ও সংবাদদাতারা জানান, যুদ্ধবিরতি শুরুর কিছু আগেও গাজায় ইসরায়েলি বিমান থেকে অন্তত পাঁচবার বোমাবর্ষণ করা হয়। হামাসও ইসরায়েল সীমান্তের ভেতর ১৬টি রকেট ছোড়ে। এসব রকেটে ক্ষয়ক্ষতি হলেও কেউ হতাহত হননি। ইসরায়েল বলেছে, তারা সীমান্ত অঞ্চলে হামাসের অত্যাধুনিক সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেওয়ার মিশন শেষে গাজা থেকে তাদের সব সেনাসদস্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা এই উপত্যকায় স্থল অভিযান গুটিয়ে আনছে। হামাসের রকেট হামলা বন্ধের অজুহাতে গত ৮ জুলাই গাজার অধিবাসীদের ওপর নির্বিচারে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয় স্থল অভিযান। ইসরায়েল বলেছে, তারা তাদের অভিযানের মূল লক্ষ্য অর্জন করেছে। এ কদিনে হামাসের ৩২টি সুড়ঙ্গপথ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থল অভিযানে অংশগ্রহণকারী সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রসঙ্গে ইসরায়েলের সেনা কর্মকর্তা জেনারেল মটি আলমজ দেশটির সেনা রেডিওকে বলেন, ‘তাদের সবাইকে সরিয়ে আনা হয়েছে।’ আরেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিটার লার্নার বলেন, প্রত্যাহার করে নেওয়া সেনাদের গাজার বাইরে ‘আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে মোতায়েন’ করা হবে এবং তারা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনার পাল্টা জবাব দেবে। হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন,
‘আক্রান্ত হলে আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) তার সমুচিত জবাব দেবে।’ কেবলই ধ্বংসস্তূপ আর নীরবতা: নতুন দফা যুদ্ধবিরতি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গাজার চারদিকে মিলছে কেবলই ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। যে দিকেই চোখ যায়, শুধুই ধ্বংসস্তূপ। সেই সঙ্গে নেমে এসেছে এক অস্বাভাবিক নীরবতা। ঘটনাস্থল থেকে এএফপির একজন সংবাদদাতা বলেন, যুদ্ধবিরতি শুরুর আগের রাতটি ছিল ভয়াবহ ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর সবচেয়ে নীরব-নিস্তব্ধ একটি রাত। চিকিৎসকেরা জানান, সোমবার মধ্যরাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত কারও প্রাণহানি বা আহত হওয়ার ঘটনা জানা যায়নি। তবে ইতিপূর্বে হামলায় আহত দুই ব্যক্তি এদিন মারা গেছেন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে গাজার বাসিন্দারা অপরিহার্য সামগ্রী ও তাঁদের স্বজনদের লাশের সন্ধানে নিজ নিজ বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপে ছুটে যান। খাদ্য ও পানির সন্ধানেও ছোটেন তাঁরা। পাশাপাশি হাসপাতালগুলো থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ছোটেন চিকিৎসাকর্মীরা। গতকাল এসব চিকিৎসাকর্মী এমন সব স্থানে যান, যেখানে সহিংসতার কারণে আগে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ গাজার রাফার নিকটবর্তী এলাকায় গতকাল পাঁচটি লাশ পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে দুটি লাশ হামাস যোদ্ধার এবং তিনটি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠী সদস্যের। প্রতি হাজারে একজনের মৃত্যু: যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত ২৯ দিনের ইসরায়েলি অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজার ৮৬৭ জন। তাঁদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই ৪০০। গাজার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। সে অনুযায়ী প্রতি এক হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে একজন করে নিহত হয়েছেন এই অভিযানে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। জাতিসংঘের অভিনন্দন: যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটির মহাসচিব বান কি মুন এক বার্তায় এই পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানিয়ে যত শিগগির সম্ভব, মিসরে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান।
এলাকাভিত্তিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু
মোট ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ১৮০০
৩ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাব এলাকা শনাক্ত করা যায়নি ৩৭৪
উত্তর গাজা ২৫২, গাজা সিটি ৩৯১
দেইর আল-বালাহ ২০৩ খান ইউনিস ৪৩৪
রাফা ১৪৬ ইসরায়েলি নিহতের সংখ্যা ৬৭
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ) ৬৪
বেসামিরক* ৩
*একজন থাই নাগরিকসহ
সূত্র: ওসিএইচএ, আইডিএফ, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়/বিবিসি
এলাকাভিত্তিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু
মোট ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ১৮০০
৩ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাব এলাকা শনাক্ত করা যায়নি ৩৭৪
উত্তর গাজা ২৫২, গাজা সিটি ৩৯১
দেইর আল-বালাহ ২০৩ খান ইউনিস ৪৩৪
রাফা ১৪৬ ইসরায়েলি নিহতের সংখ্যা ৬৭
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ) ৬৪
বেসামিরক* ৩
*একজন থাই নাগরিকসহ
সূত্র: ওসিএইচএ, আইডিএফ, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়/বিবিসি
No comments