৫ই জানুয়ারির নির্বাচন- মুন, ক্যামেরন, মাহমুদ আলী কে সত্য? by সাজেদুল হক
সময়ের ফারাক এক মাস। চরিত্রও আলাদা। কিন্তু বিষয় একই এবং আবারও বিভ্রান্তি। একটি প্রশ্ন ক্রমেই জোরালো। সত্য বলছেন কে? ডাউনিং স্ট্রিটে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয় ২২শে জুলাই। বৈঠকের পর এবং সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ওই বৈঠকের ব্যাপারে সাংবাদিকদের অভিহিত করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্যামরন বলেছেন, ইলেকশন ইজ ওভার। ইট ইজ পাস্ট। নাউ উই লুক টু দ্য ফিউচার। কিন্তু একই দিনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্রের বক্তব্য সম্পূর্ণ বিপরীত। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র অলস্টার ক্যাম্পবেল জানান, বাংলাদেশের গত ৫ই জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ডেভিড ক্যামেরন হতাশা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ক্যামেরন এ হতাশা প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ক্যামেরন বাল্যবিয়ে রোধ, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন, উন্নয়ন লক্ষ্য ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিষয়ে কথা বলেন। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি উদার গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্বের ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রী একমত পোষণ করেন। একই দিনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্রের বিপরীতমুখী বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কে সত্য বলছেন, এ প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র। তবে এ ধরনের বিভ্রান্তি এবারই প্রথম নয়। গত ১৯শে জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বৈঠক করেন জাতিংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে। ওই বৈঠক নিয়ে প্রচারিত খবরেও প্রথম তৈরি হয় চাঞ্চল্য। জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি আবদুল মোনের বরাতে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বৈঠকে বলেছেন, সংলাপের ব্যাপারে সরকারের কোন কার্পণ্য নেই; তবে তা হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষে। কেউ যদি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে সংলাপ হবে কিভাবে? জাতিসংঘ মহাসচিবও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেন বলে জানান আবদুল মোমেন। এ সংবাদে বাংলাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন খুব দ্রুতই নিজ অবস্থান পরিষ্কার করেন। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে খোলাসা করা হয়। বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার মনোভাব অজানা নয়। শুরুতে ভারত ছাড়া কোন বড় শক্তি এ নির্বাচন সমর্থন না দিলেও নানা দেনা-পাওনার হিসাবে রাশিয়া এবং চীনও পরবর্তী সময়ে নির্বাচনকে সমর্থন জানায়। তবে পশ্চিমা দুনিয়া এখনও বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নতুন নির্বাচনের পক্ষে রয়েছে। এ জন্য সরকারকে সংলাপেরও তাগিদ দিয়ে আসছে তারা। যদিও সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সঙ্গে কোন ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
No comments