শুভ লক্ষণ নয় by সাহস রতন
জন্মলগ্ন থেকেই রাজনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে লাগাতার আন্দোলনের ফলে প্রায়ই আমাদের অর্থনীতি খুব নাজুক হয়ে পড়ে। যদিও গত জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিরোধীদের তৎপরতা কিছুটা স্তিমিত হয়ে আছে। তবে ইদানীং নির্বাচনে অংশ না নেয়া দলটির নেতারা যেভাবে হম্বিতম্বি করছে, তাতে মনে হচ্ছে সামনে রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়া মানেই তো আবারও হরতাল, আবারও অবরোধ। এর সঙ্গে গান পাউডার আর পেট্রল বোমার আগুনে ঝলসে যাওয়া মানুষের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে উঠবে। মানুষ হবে দিশাহারা। বিগত চল্লিশ বছরে অসংখ্যবার এই দৃশ্য দেখতে দেখতে সাধারণ মানুষের মনে রাজনীতির প্রতি চরম ঘৃণা জন্মে গেছে। এটি কোন শুভ লক্ষণ নয়। আমরা চাই বা না চাই, পছন্দ করি বা না করি, রাজনীতিবিদরাই দেশ শাসন কিংবা শোষণ করবেন, গণতন্ত্রে এটাই চিরায়ত নিয়ম।
ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের শেষ ধাপ হচ্ছে অসহযোগ কিংবা চলতি ভাষায় হরতাল। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্মই হয়েছে ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলন, হরতাল এবং সর্বশেষ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এরপর সব বড় বড় রাজনৈতিক আন্দোলনে আমরা সহস্রবার হরতালের মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু এত হরতালের মধ্যে, তৎকালীন পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে এবং স্বৈরশাসক এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময়, মনে হয় এই দুই বারই সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল সমর্থন করেছিল। এছাড়া আর কোন হরতালেই সাধারণ মানুষের তেমন সম্পৃক্ততা ছিল না, থাকেও না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে হরতাল বা অবরোধ সমর্থন করেন এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। এর প্রধান কারণ, একমাত্র হরতালই হচ্ছে সেই কর্মসূচি যেখানে পক্ষ-বিপক্ষ নির্বিশেষে, আম কিংবা জাম, সব পাবলিকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি থাকে চরমে। বেশ ক’মাস আগে একটি টিভি চ্যানেলে ঢাকার বাইরে দেশের বড় বড় শীতের সবজি পাইকারি বাজারগুলোর সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হচ্ছিল। হরতালের আগে আর হরতালের দিন বাজারটির তুলনামূলক চিত্র দেখে বিবেকবান মানুষজন ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সবজি ব্যবসায়ীরা তাদের হতাশার কথা বলেছেন। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এটি কোন খণ্ডিত চিত্র নয়। সমগ্র বাংলাদেশেরই এই অবস্থা। হরতালে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে। শাসক দল হরতালকে বর্ণনা করে ‘ভয়তাল’ হিসেবে। সত্যিই তো, সাধারণ মানুষ হরতাল অপছন্দ করলেও পিকেটারদের তৎপরতার ভয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয় না। যদিও ক্ষমতাসীন দল নানাভাবে হরতালের বিপক্ষে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করে, সরকারি গাড়িগুলো রাস্তায় চলে, তবুও হরতালের ক্ষতি তাতে মোটেও কমে না। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে এই সহিংসতা আর কতকাল দেখতে হবে আমাদের? অথচ হরতাল আহ্বানকারী দলের নেতারা হরতাল ডেকে দিয়ে তাদের নিজের কারখানা খোলা রাখেন। আবার অনেক নেতা হরতালে গাড়ি চালিয়ে গিয়ে পিকেটিংয়ে যোগ দেন। বিগত বছরগুলোয় আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান কলহ আর হাজারো রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের কাছাকাছি। আমাদের ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে একমাত্র হরতাল বা অবরোধই আমাদেরকে স্তব্ধ রাখতে পারে। আর কিছু নয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করার জন্য তেমন কিছুই করতে হয় না। শুধু মিডিয়াকর্মীদের ডেকে এনে অফিসে বসে একটা ঘোষণা দিলেই হলো। জনবিচ্ছিন্ন সব রাজনৈতিক দল এটা করছে গত চার দশক ধরে। আমাদের প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াও এর দায় এড়াতে পারে না। চিহ্নিত কিছু লোক সারাদিন ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় এসে বলে দিলো আগামীকাল হরতাল। আর অমনি খবর বিক্রেতারা এই খবরটা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার শুরু করে, কেন? তাই সময় এসেছে হরতাল নিয়ে বিকল্প কিছু করার। সময়োপযোগী বিধি বিধানের। তবে গণতন্ত্র আর ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে একমত হবেন না, এটা নিশ্চিত। ঈদের পর কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে আবারও আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার আগে, বেশ কিছুদিন থেকে রাস্তায় ব্যানার, বিলবোর্ডে একটা একটা স্লোগান নজর কাড়ছে- আওয়ামী লীগ পারে, আওয়ামী লীগই পারবে। এ স্লোগান যে স্রেফ স্লোগান নয় তা এ ক্ষেত্রে দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের শেষ ধাপ হচ্ছে অসহযোগ কিংবা চলতি ভাষায় হরতাল। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্মই হয়েছে ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলন, হরতাল এবং সর্বশেষ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এরপর সব বড় বড় রাজনৈতিক আন্দোলনে আমরা সহস্রবার হরতালের মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু এত হরতালের মধ্যে, তৎকালীন পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে এবং স্বৈরশাসক এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময়, মনে হয় এই দুই বারই সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল সমর্থন করেছিল। এছাড়া আর কোন হরতালেই সাধারণ মানুষের তেমন সম্পৃক্ততা ছিল না, থাকেও না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে হরতাল বা অবরোধ সমর্থন করেন এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। এর প্রধান কারণ, একমাত্র হরতালই হচ্ছে সেই কর্মসূচি যেখানে পক্ষ-বিপক্ষ নির্বিশেষে, আম কিংবা জাম, সব পাবলিকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি থাকে চরমে। বেশ ক’মাস আগে একটি টিভি চ্যানেলে ঢাকার বাইরে দেশের বড় বড় শীতের সবজি পাইকারি বাজারগুলোর সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হচ্ছিল। হরতালের আগে আর হরতালের দিন বাজারটির তুলনামূলক চিত্র দেখে বিবেকবান মানুষজন ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সবজি ব্যবসায়ীরা তাদের হতাশার কথা বলেছেন। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এটি কোন খণ্ডিত চিত্র নয়। সমগ্র বাংলাদেশেরই এই অবস্থা। হরতালে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে। শাসক দল হরতালকে বর্ণনা করে ‘ভয়তাল’ হিসেবে। সত্যিই তো, সাধারণ মানুষ হরতাল অপছন্দ করলেও পিকেটারদের তৎপরতার ভয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয় না। যদিও ক্ষমতাসীন দল নানাভাবে হরতালের বিপক্ষে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করে, সরকারি গাড়িগুলো রাস্তায় চলে, তবুও হরতালের ক্ষতি তাতে মোটেও কমে না। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে এই সহিংসতা আর কতকাল দেখতে হবে আমাদের? অথচ হরতাল আহ্বানকারী দলের নেতারা হরতাল ডেকে দিয়ে তাদের নিজের কারখানা খোলা রাখেন। আবার অনেক নেতা হরতালে গাড়ি চালিয়ে গিয়ে পিকেটিংয়ে যোগ দেন। বিগত বছরগুলোয় আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান কলহ আর হাজারো রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের কাছাকাছি। আমাদের ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে একমাত্র হরতাল বা অবরোধই আমাদেরকে স্তব্ধ রাখতে পারে। আর কিছু নয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করার জন্য তেমন কিছুই করতে হয় না। শুধু মিডিয়াকর্মীদের ডেকে এনে অফিসে বসে একটা ঘোষণা দিলেই হলো। জনবিচ্ছিন্ন সব রাজনৈতিক দল এটা করছে গত চার দশক ধরে। আমাদের প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াও এর দায় এড়াতে পারে না। চিহ্নিত কিছু লোক সারাদিন ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় এসে বলে দিলো আগামীকাল হরতাল। আর অমনি খবর বিক্রেতারা এই খবরটা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার শুরু করে, কেন? তাই সময় এসেছে হরতাল নিয়ে বিকল্প কিছু করার। সময়োপযোগী বিধি বিধানের। তবে গণতন্ত্র আর ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে একমত হবেন না, এটা নিশ্চিত। ঈদের পর কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে আবারও আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার আগে, বেশ কিছুদিন থেকে রাস্তায় ব্যানার, বিলবোর্ডে একটা একটা স্লোগান নজর কাড়ছে- আওয়ামী লীগ পারে, আওয়ামী লীগই পারবে। এ স্লোগান যে স্রেফ স্লোগান নয় তা এ ক্ষেত্রে দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
No comments