কী ঘটবে ঈদের পর? by আহমেদ সুমন
এবার বৈশাখে ‘কালবৈশাখী’র তাণ্ডব তেমন
লক্ষ করা যায়নি। বর্ষায় পাহাড় ধসের দুঃসংবাদও পাওয়া যায়নি। ঈশান কোণে কালো
মেঘমালা ভেসে বেড়িয়েছে বটে, তবে তা জনমনে আতংক সৃষ্টি করেনি। এসবই আমাদের
জন্য ভালো খবর। এ ভালো খবরের মধ্যেও আমরা পুরোপরি শংকামুক্ত নই। আবহাওয়া ও
জলবায়ুর এ আচরণ মানুষের মনে আতংক সৃষ্টি না করলেও রাজনীতির ঈশান কোণে কালো
মেঘমালা ভেসে বেড়াচ্ছে কি-না, তা নিয়ে ভাবনায় বুক ধড়ফড় করছে।
এ
বুক ধড়ফড় করা নিয়ে যে সংবাদ সূচনা লেখা হয় তাকে স্ট্যাকাটো (Staccato)
সংবাদ সূচনা বলা হয়। সাংবাদিকতার পরিভাষায় নানা ধরনের সংবাদ সূচনার মধ্যে
‘স্ট্যাকাটো’ সূচনা একটি। স্ট্যাকাটোর ইংরেজি আরও সমার্থক শব্দ হলshort,
clipped, separate, characterized by short abrupt sounds, as in speech, a
staccato from staccare to detach ইত্যাদি। সাংবাদিক আতাউস সামাদ
স্ট্যাকাটো সংবাদ সূচনার উদাহরণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘ঈশান কোণে কালো মেঘ।
হঠাৎ ঝড়ো বাতাস। একটা প্রচণ্ড ঢেউ। উল্টে গেল সাম্পান। যাত্রীরা সব
নিখোঁজ।’ তাহলে দেখা যাচ্ছে, স্ট্যাকাটো সূচনার বাক্যগুলো ছোট ছোট কিন্তু
কাটা কাটা। মনে ধাক্কা দেয়। ভয় তৈরি করে। রাজনীতির ময়দানে এখন সরকারি দল
এবং বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাটা কাটা শব্দের ব্যবহারে
আমরা শংকিত। রাজনীতির ঈশান কোণে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। ঈদের পর যদি এর
বজ বর্ষণ হয়, তা থেকে আমরা কেউই রেহাই পাব না। ঈদের পর নির্দলীয় নিরপেক্ষ
সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলনের যে মহাপরিকল্পনার কথা
জানাচ্ছে, তাতে ‘না জানি কী হয়’, শংকা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।
ঈদের পর আন্দোলনের ভাবনা আমাদের শংকায় ফেলে দিলেও ঈদপূর্ব রোজার মাসে এক সম্প্রীতির পরিবেশ বিরাজমান। ইফতারকে কেন্দ্র করে এ সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। রোজার মাসে ইফতারের রাজনীতি বাংলাদেশের দীর্ঘকালের সংস্কৃতি। ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ মাসে ইফতারের আয়োজন করে। সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারা থেকে শুরু করে ভিন্ন মত বা প্রতিপক্ষ দলের রাজনৈতিক নেতাদেরও ইফতার পার্টিতে দাওয়াত দেয়া হয়। বছরজুড়ে বৈরী সম্পর্ক ভুলে গিয়ে একে অপরের দাওয়াত কবুল করেন এবং সময়-সুযোগ পেলে ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণও করেন। রাজনীতির এ সংস্কৃতি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। তবে সাম্প্রতিককালে এখানেও খানিকটা নেতিবাচক দিক যুক্ত হয়েছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতারা পরস্পরকে ইফতারের দাওয়াত দেন বটে তবে তাতে কেউ অংশগ্রহণ করেন না। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে এ দুই দলের সভানেত্রী ও চেয়ারপারসন আগে যেতেন এবং পাশাপাশি বসে সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন। তারও এখন মাঝে মধ্যে ব্যত্যয় ঘটছে। এ দুই দলের বৈরিতা এখন এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা সশস্ত্র বাহিনীর দিবসের অনুষ্ঠানেও যান না। এ কারণে পরস্পরের মধ্যে মুখ দেখাদেখির সুযোগও ঘটে না। এবারের রোজায়ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বাইরের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একে অপরকে ইফতারের দাওয়াত দিয়েছিল। কিন্তু কেউ কারও দাওয়াতে অংশগ্রহণ করে ন্যূনতম সৌজন্যবোধের স্বাক্ষর রাখেনি। রাজনীতির এ কদর্য রূপ আমরা বিগত দুই দশক ধরে লক্ষ করছি। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এরশাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রূপরেখা অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও নির্বাচনে বিজিত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি সরকারকে একদিনের জন্য হলেও শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে জানায়। বাস্তবে হয়েছেও তাই। এখন বিএনপি রমজান মাসজুড়ে বিভিন্ন সভা, সমিতি ও ইফতার পার্টিতে ঈদের পর সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ঈদের পর আন্দোলনের এ হুমকি-ধামকিতে চিন্তায় না পড়ে উপায় কী?
বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে আলোচনা শুরুর করার দাবি জানিয়ে আসছে। সরকার এ দাবি বিবেচনায় না এনে সরকারের মেয়াদ ৫ বছর শেষ করার কথা ভাবছে। এ লক্ষ্যে ঈদের পরে বিএনপির আন্দোলনের হুমকি-ধমকিকে পাত্তা দিচ্ছে না। সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিএনপিকে কাগুজে বাঘ বলে মনে করে। আগের দফাগুলোয় বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া কার্যত কিছু করতে পারেনি। বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে নামেনি। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপির ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পুরোপরি ফ্লপ হয়েছে। আলোচিত বালুর ট্রাক দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ঘেরাও করে তাকে পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে যেতে পুলিশ বাধা দিলে দলীয় নেতাকর্মীরা কেউ এসে পুলিশি বাধা ভাঙার চেষ্টা করেনি। দলের এ নাজুক অবস্থা অনুধাবন করে বিএনপি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের ক্ষেত্রে অনেকটা নমনীয় হয়ে সর্বশেষ হাসিনা বাদে অন্য কাউকে সর্বদলীয় সরকারের প্রধান করার আন্দোলনে এসে পৌঁছেছিল। বিএনপি ঈদের পর যদি নবউদ্যমে আবার আন্দোলন শুরু করে, সেক্ষেত্রে সরকারি দলও বসে থাকবে না বলে জানাচ্ছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তারা শোডাউন করবে এবং রাজপথ দখলে রাখবে। এমন এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে মানুষ নির্ভাবনায় থাকতে পারে না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও একটি বড় রাজনৈতিক দল। সংসদ নির্বাচনে এ দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের কাছাকাছি থাকে। বিএনপি ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে বর্জন করেছিল। প্রতিহত করতে না পারলেও বর্জনে অটল ছিল। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি যে সরকার গঠন করত না, তা কে বলতে পারে? নির্বাচনপূর্ব ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছিল। সুতরাং বিএনপির অংশগ্রহণবিহীন সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে এক প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার। বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যেসব রাষ্ট্র নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল, তারা মনোভাব যে খুব একটা বদলেছে তা মনে হয় না। আওয়ামী লীগ মার্কিন বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মনে করত। কারণ তার অভিমত বিএনপির পক্ষে যেত। তিনি বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছেন। মার্শিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট ঢাকায় ড্যান মজিনার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। তিনিও নির্বাচনের বিষয়ে অভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে তিনিও প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। মার্কিন নয়া রাষ্ট্রদূত সব দলের অংশগ্রহণে নতুন করে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংলাপ শুরুর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। চীনও নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। তবে সম্প্রতি শেখ হাসিনা চীন সফর করে এ বিষয়টি ঘষামাঝা করেছেন।
ঈদের পর রাজনীতিতে বিএনপির আন্দোলনের যে হুমকি, তার বাস্তবে প্রতিফলন যাই ঘটুক না কেন, জনসাধারণের মনে স্বস্তি এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ হওয়া জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সফল সংলাপের মাধ্যমে আরেকটি নির্বাচন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এতে কোনো পক্ষেরই পরাজয়ের কোনো গ্লানি ধাকবে না। দেশের স্বার্থই সর্বাগ্রে বিবেচনার রাখা উচিত। এ বিবেচনাবোধ জাগ্রত হওয়ার মধ্যে দেশের মঙ্গল, অন্যথায় ঈদের পর তো বটেই, নিয়মিত বিরতিতে আগামীতে জনসাধারণকে দুঃখ-দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বিএনপি নিয়মিত বিরতিতে দম নিয়ে মাঝে মধ্যেই আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। এর অবসান হওয়া জরুরি।
আহমেদ সুমন : গবেষক ও বিশ্লেষক
asumanarticle@gmail.com
ঈদের পর আন্দোলনের ভাবনা আমাদের শংকায় ফেলে দিলেও ঈদপূর্ব রোজার মাসে এক সম্প্রীতির পরিবেশ বিরাজমান। ইফতারকে কেন্দ্র করে এ সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। রোজার মাসে ইফতারের রাজনীতি বাংলাদেশের দীর্ঘকালের সংস্কৃতি। ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ মাসে ইফতারের আয়োজন করে। সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারা থেকে শুরু করে ভিন্ন মত বা প্রতিপক্ষ দলের রাজনৈতিক নেতাদেরও ইফতার পার্টিতে দাওয়াত দেয়া হয়। বছরজুড়ে বৈরী সম্পর্ক ভুলে গিয়ে একে অপরের দাওয়াত কবুল করেন এবং সময়-সুযোগ পেলে ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণও করেন। রাজনীতির এ সংস্কৃতি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। তবে সাম্প্রতিককালে এখানেও খানিকটা নেতিবাচক দিক যুক্ত হয়েছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতারা পরস্পরকে ইফতারের দাওয়াত দেন বটে তবে তাতে কেউ অংশগ্রহণ করেন না। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে এ দুই দলের সভানেত্রী ও চেয়ারপারসন আগে যেতেন এবং পাশাপাশি বসে সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন। তারও এখন মাঝে মধ্যে ব্যত্যয় ঘটছে। এ দুই দলের বৈরিতা এখন এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা সশস্ত্র বাহিনীর দিবসের অনুষ্ঠানেও যান না। এ কারণে পরস্পরের মধ্যে মুখ দেখাদেখির সুযোগও ঘটে না। এবারের রোজায়ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বাইরের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একে অপরকে ইফতারের দাওয়াত দিয়েছিল। কিন্তু কেউ কারও দাওয়াতে অংশগ্রহণ করে ন্যূনতম সৌজন্যবোধের স্বাক্ষর রাখেনি। রাজনীতির এ কদর্য রূপ আমরা বিগত দুই দশক ধরে লক্ষ করছি। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এরশাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রূপরেখা অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও নির্বাচনে বিজিত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি সরকারকে একদিনের জন্য হলেও শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে জানায়। বাস্তবে হয়েছেও তাই। এখন বিএনপি রমজান মাসজুড়ে বিভিন্ন সভা, সমিতি ও ইফতার পার্টিতে ঈদের পর সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ঈদের পর আন্দোলনের এ হুমকি-ধামকিতে চিন্তায় না পড়ে উপায় কী?
বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে আলোচনা শুরুর করার দাবি জানিয়ে আসছে। সরকার এ দাবি বিবেচনায় না এনে সরকারের মেয়াদ ৫ বছর শেষ করার কথা ভাবছে। এ লক্ষ্যে ঈদের পরে বিএনপির আন্দোলনের হুমকি-ধমকিকে পাত্তা দিচ্ছে না। সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিএনপিকে কাগুজে বাঘ বলে মনে করে। আগের দফাগুলোয় বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া কার্যত কিছু করতে পারেনি। বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে নামেনি। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপির ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পুরোপরি ফ্লপ হয়েছে। আলোচিত বালুর ট্রাক দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ঘেরাও করে তাকে পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে যেতে পুলিশ বাধা দিলে দলীয় নেতাকর্মীরা কেউ এসে পুলিশি বাধা ভাঙার চেষ্টা করেনি। দলের এ নাজুক অবস্থা অনুধাবন করে বিএনপি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের ক্ষেত্রে অনেকটা নমনীয় হয়ে সর্বশেষ হাসিনা বাদে অন্য কাউকে সর্বদলীয় সরকারের প্রধান করার আন্দোলনে এসে পৌঁছেছিল। বিএনপি ঈদের পর যদি নবউদ্যমে আবার আন্দোলন শুরু করে, সেক্ষেত্রে সরকারি দলও বসে থাকবে না বলে জানাচ্ছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তারা শোডাউন করবে এবং রাজপথ দখলে রাখবে। এমন এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে মানুষ নির্ভাবনায় থাকতে পারে না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও একটি বড় রাজনৈতিক দল। সংসদ নির্বাচনে এ দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের কাছাকাছি থাকে। বিএনপি ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে বর্জন করেছিল। প্রতিহত করতে না পারলেও বর্জনে অটল ছিল। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি যে সরকার গঠন করত না, তা কে বলতে পারে? নির্বাচনপূর্ব ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছিল। সুতরাং বিএনপির অংশগ্রহণবিহীন সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে এক প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার। বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যেসব রাষ্ট্র নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল, তারা মনোভাব যে খুব একটা বদলেছে তা মনে হয় না। আওয়ামী লীগ মার্কিন বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মনে করত। কারণ তার অভিমত বিএনপির পক্ষে যেত। তিনি বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছেন। মার্শিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট ঢাকায় ড্যান মজিনার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। তিনিও নির্বাচনের বিষয়ে অভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে তিনিও প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। মার্কিন নয়া রাষ্ট্রদূত সব দলের অংশগ্রহণে নতুন করে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংলাপ শুরুর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। চীনও নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। তবে সম্প্রতি শেখ হাসিনা চীন সফর করে এ বিষয়টি ঘষামাঝা করেছেন।
ঈদের পর রাজনীতিতে বিএনপির আন্দোলনের যে হুমকি, তার বাস্তবে প্রতিফলন যাই ঘটুক না কেন, জনসাধারণের মনে স্বস্তি এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ হওয়া জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সফল সংলাপের মাধ্যমে আরেকটি নির্বাচন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এতে কোনো পক্ষেরই পরাজয়ের কোনো গ্লানি ধাকবে না। দেশের স্বার্থই সর্বাগ্রে বিবেচনার রাখা উচিত। এ বিবেচনাবোধ জাগ্রত হওয়ার মধ্যে দেশের মঙ্গল, অন্যথায় ঈদের পর তো বটেই, নিয়মিত বিরতিতে আগামীতে জনসাধারণকে দুঃখ-দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বিএনপি নিয়মিত বিরতিতে দম নিয়ে মাঝে মধ্যেই আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। এর অবসান হওয়া জরুরি।
আহমেদ সুমন : গবেষক ও বিশ্লেষক
asumanarticle@gmail.com
No comments