‘নির্বাচন নাকচ করলেতো ক্যামেরন দাওয়াত দিতেন না’ -প্রধানমন্ত্রী
বৃটেন বাংলাদেশের নির্বাচনকে নাকচ করেনি
উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারাতো নির্বাচন নাকচ করেনি।
আমি প্রধানমন্ত্রী না এটি বলেনি। বললেতো আমাকে দাওয়াত দিতো না। বৃটিশ
প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দাওয়াত করে নিয়েছেন। ৫ই
জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ
করা হয়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শেখ
হাসিনা এসব কথা বলেন। বৃটেন সফর নিয়ে দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন
গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল সরকারের
তরফে বলা হচ্ছে বৃটেন সরকার বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি
দিয়েছে। তারা বলেছে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন এখন অতীত, এখন সামনে তাকানোর
সময়। কিন্তু বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে
জানিয়েছে নির্বাচন নিয়ে ক্যামেরন অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার
অবস্থান কি?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়েতো আলোচনা হবেই। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন, অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন আলোচনায় আসতেই পারে। তবে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন, তা অত্যন্ত সত্য কথা বলেছেন।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, উনিতো বলেননি ইলেকশন নাকচ, বা আপনি প্রধানমন্ত্রী না। হলেতো আমাকে দাওয়াতই দিতেন না। যারা ঘরের বদনাম বাইরে করতে চায় তারা আসলে কি চায় সেটিই বড় কথা।
প্রধানমনন্ত্রী বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশে শান্তি ফিরে এসেছে। একটি শ্রেণীর এটি ভাল লাগে না। দেশে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল আছে। বিদ্যুতের সমস্যা নেই। মানুষ স্বস্থিতে আছে। মানুষ খুশি। কিন্তু খুশি নন গোটা কয়েক মানুষ। তারা চেয়েছিলেন থাইল্যান্ডের মতো পরিস্থিতি হোক। অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক। এলে হয়তো তাদের গাড়িতে পতাকা উড়বে।
এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির সঙ্গে সংলাপ সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, কাদের সঙ্গে সংলাপ করবো। সংলাপের জন্য আমি আগেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। জবাবে তারা আমাকে অপমানিত করলো। আমি কার সঙ্গে সংলাপ করবো। যারা আমার পিতার হত্যাকারী। যারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে। তারপরও আমি চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তাদের ভুলের খেসারত দেশবাসি কেন দেবে? যে ভাবে হোক নির্বাচন হয়েছে। জনগন মেনে নিয়েছে। ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে। তাহলে এখন আবার সংলাপ কেন। যদি দেশ চালাতে ব্যার্থ হতাম তাহলে কথা ছিল। তারা ট্রেন মিস করেছে। এখন নতুন ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।
তারেক রহমান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়েছিল। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে, সেগুলো চলবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। বিচারপতিদের ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। এখন সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল চলতে পারে না। তাই ৭২-এর সংবিধানে আমরা ফিরে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি মৃত্যুকে ভয় পাইনা, মরার আগে মরিনা।
বিরোধী দলের আন্দোলন হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্বলের তর্জন গর্জন বেশি থাকে। তাই আমাকে বারবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। উল্টো আমাকেই দোষারোপ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছি। আমাদের আমলে ৩২ টি টেলিভিশন, ২২ টি রেডিও অনুমোদন দিয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো। যেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করে শাস্তি দেয়া হয়েছে, ঠিক সেভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাজ্য সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনেকরি বাংলাদশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই সফর অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের দু’দেশের সুসম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। সুখী সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
গার্ল সামিটে অংশগ্রহণ ও তিন দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সদ্যপ্রয়াত সাংবাদিক ও সাবেক সংসদ সদস্য বেবী মওদুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
No comments