চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা- কাগজে কলমেই প্রকল্প বাস্তবায়ন by মহিউদ্দীন জুয়েল
জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের কাছে ধরনা দিয়ে
বড্ড ক্লান্ত চট্টগ্রামের মেয়র মনজুর আলম! ২৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের
বাস্তবায়ন নিয়ে তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। গত ৪ বছর ধরে বিষয়টি ফাইল
আকারে জমা দেয়া হলেও এখনও তা রয়ে গেছে কাগজে কলমে। সহযোগিতার জন্য বার বার
টাকা চেয়েও পাননি কানাকড়ি বরাদ্দ। শেষমেশ তাই হাল ছেড়ে দিয়ে সীমিত অর্থেই
কাজ করছেন চট্টগ্রামের এই নগরপিতা। শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা। টানা ৩ দিনের
বৃষ্টিতে কোমরপানি। দুর্ভোগে সাধারণ লোকজন। রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ধ্বংস করেছে কোটি টাকার পণ্য। প্রভাব পড়েছে
বন্দরের আমদানি-রপ্তানির কাজেও। এমন পরিস্থিতিতে সবাই দুষছেন নগরপিতাকে।
অথচ যাকে নিয়ে এতো আলোচনা সেই মেয়র কিনা সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গত ৪
বছর ধরে। প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার কথা
জানিয়েছেন বর্তমান মেয়র মনজুর আলম।
বলেছেন, প্রবল বর্ষণে প্রতিবারই প্রচুর পানি জমে শহরের অলিগলিতে। তাতে দুর্ভোগ অনেক বেশি বাড়ে। কিন্তু যতবারই তিনি পানি নিষ্কাশনে নানামুখী উদ্যোগ নেন তখনই এই ব্যাপারে কোন ধরনের সহযোগিতা পান না সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে।
বলেছেন, প্রবল বর্ষণে প্রতিবারই প্রচুর পানি জমে শহরের অলিগলিতে। তাতে দুর্ভোগ অনেক বেশি বাড়ে। কিন্তু যতবারই তিনি পানি নিষ্কাশনে নানামুখী উদ্যোগ নেন তখনই এই ব্যাপারে কোন ধরনের সহযোগিতা পান না সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের অতি বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ লোকজনকে। অতি পানির কারণে বন্ধ ছিলো সব ধরনের বড় গাড়ির চলাচলও। ঘরে পানিবন্দি হয়ে পড়েন এখনকার হাজার হাজার মানুষ।
নগরীর ষোলশহর, চান্দগাঁও, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, হালিশহর, বিবিরহাট, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, চান্দগাঁও, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একই রকম চিত্র দেখা গেছে কাপাসগোলা, কেবি আমান আলী রোড, বাকলিয়া সৈয়দ শাহ রোড, রাহাত্তার পুল, বাকলিয়া, পুরাতন চান্দগাঁও থানা, বহদ্দারহাট ফরিদের পাড়া, মোহাম্মদপুর, সুন্নিয়া মাদরাসা সংলগ্ন এলাকায়ও।
সিডিএ এভিনিউ রোডের ষোলশহর দুই নম্বর গেইট মোড় থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত এবং আরাকান রোডের পুরাতন চান্দগাঁও থানার সামনের রাস্তায় পানি জমে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এতে সড়কের উভয়পাশে যানজট দেখা দেয়।
বহদ্দারহাট এলাকায় পানির চাপ কমাতে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পটি গ্রহণ করে। প্রকল্পের সীমানা নির্ধারণ হয় নতুন বহাদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত। যার প্রস্তাবিত দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার একটি খাল খনন। সর্বশেষ প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে জমা হলেও গত ৪ বছরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। কি কারণে কিংবা কেন তা আটকে আছে সেই বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মানবজমিনের কাছে প্রকল্প আটকে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মেয়র মনজুর আলম। তিনি বলেন, ‘বহদ্দারহাটের ওই খালটি নির্মাণ করা গেলে প্রচুর পানি অপসারণ করা যাবে। যা সরাসরি চলে যাবে কর্ণফুলী নদীতে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের কাছে একাধিকবার গিয়েছে। কিন্তু যখনই যাই তারা বলে বরাদ্দ নেই। দেখছি, দেখবো এইসব আশার বাণী শোনান।’
জলাবদ্ধতা নিরসনে মেয়র আরো বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীতে নতুন তিনটি খাল খননের প্রস্তাব ছিল। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হলে এই খালটি নির্মাণের সুপারিশ করে চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ কমিটি। বৃষ্টির পানি নিয়ে আমাকে অনেক কথা শুনতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পেতে আমাকে কি পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা নগরবাসী জানেন না।
তবে কেবল বহদ্দারহাট প্রকল্পের ওই ফাইল নয়, রাজনৈতিক কারণে আটকে আছে খাল খননের আরো বেশ কিছু উদ্যোগও। যেগুলো মেয়র মনজুর আলম একাধিকবার বাস্তবায়নের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে আলাপে জানিয়েছেন। তার মতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সিডিএসহ সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ প্রয়োজন। ১৯৯৫ সালে মাস্টার প্ল্যানে ২০ বছর মেয়াদি যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো তা যদি বাস্তবায়িত হতো তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে অনেকটুকু মুক্তি মিলতো সচেতন নাগরিকদের। রাজনৈতিক কারণে এই প্ল্যান বাস্তবায়িত না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে জলাবদ্ধতা হওয়ার মূল কারণ বেশির ভাগ খাল ও নালা দখল হয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন একাধিক উদ্যোগ নিলেও সব ক’টি খাল এখনও দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজার ও জুবিলী রোডের জলাবদ্ধতার পেছনে রয়েছে সেখানকার বিদ্যমান কালভার্টের কম প্রশস্ততা।
অন্যদিকে সদরঘাট খাল ক্রমশ ছোট হয়ে আসায় অল্পতেই পানি জমে যায়। আগ্রাবাদ এলাকার মোগলটুলী খালের প্রস্ত ২ মিটার ও দৈর্ঘ্য ৪৭৫ মিটারে উন্নীত করা না গেলে সেখানে পানি নিষ্কাশন করা কখনোই সম্ভব হবে না। হালিশহর, কাট্টলি ও পাহাড়তলী এলাকায় জলাবদ্ধতা শহরের আমবাগান থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত রামপুরা খালটি বৃদ্ধি না হওয়ায় পানি জমে থাকে।
হালিশহর থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত মহেশখালটি ৮ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ কমিটি। একই সঙ্গে চাক্তাই খাল দিন দিন দখল হয়ে যাওয়ার কারণে চকবাজার, দেওয়ান বাজার, জামাল খান, স্টেডিয়াম এলাকা, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতা লেগে রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল হুদা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননের বিকল্প নেই। এই জন্য প্রচুর অর্থের দরকার। পরিকল্পনা নকশা অনুযায়ী চট্টগ্রামে খাল খনন করা গেলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলবে নগরবাসীর।
No comments