বাঁচা-মরার লড়াই
দু’দলের হাতে উঠেছে এ পর্যন্ত ছয়বারের
বিশ্বকাপ শিরোপা। ১৯৩০ ও ১৯৫০’র শিরোপা জয়ের গৌরব উরুগুয়ের। আর ইতালির
বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব দ্বিতীয় সর্বাধিক চারবার। গ্রুপ পর্বে আজ শেষ ম্যাচে
মোকাবিলায় নামছে বিশ্ব ফুটবলের জায়ান্ট দল দু’টি। এ ম্যাচে ফল যা-ই হোক, এর
এক চ্যাম্পিয়ন দল বিদায় নিচ্ছে নিশ্চিত। রেসিফের মাঠে ইতালি-উরুগুয়ের
ম্যাচটি শুরু হবে রাত ১০টায়। বিশ্বকাপে উরুগুয়ের এটি ৫০তম ম্যাচ। তিন সাবেক
চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে এটি ‘ডেথ গ্রুপ’-এর আখ্যা পাচ্ছিল এমনিতেই। তবে
কোস্টারিকার চমকে গ্রুপের সমীকরণ হয়ে পড়ে আরও কঠিন। টানা দুই জয়ে ‘ডি’
গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ড আগেই নিশ্চিত করেছে মধ্য আমেরিকার দল
কোস্টারিকা। আর নিজেদের শেষ ম্যাচে নামার আগে বিদায় নিশ্চিত হয় ১৯৬৬’র
চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের। জমাট ডিফেন্স নিয়ে ফুটবল খেলার ইতিহাস ইতালির। আজ
উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি ড্র রাখতে পারলেই গোল পার্থক্যে পরের রাউন্ডে
পৌঁছে যাবে কোচ সিজারে প্রানদেলির ইতালি। তবে গ্রুপের বাধা পার করতে হলে আজ
জয়ের বিকল্প নেই উরুগুয়ের। গ্রুপ পর্বে ইতালির সর্বশেষ অভিজ্ঞতাটা তিক্ত।
২০০৬’র চ্যাম্পিয়নরা গতবার বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। তবে নিজেদের
পরিসংখ্যানেই প্রেরণা খুঁজছেন ইতালি অধিনায়ক জিয়ানলুইজি বুফন। উরুগুয়েকে
মোকাবিলার আগে বুফন বলেন, ইতিহাস ঘাঁটলে দেখবেন, বিশ্বকাপে গ্রুপের দ্বিতীয়
ম্যাচে আমাদের ভাল করার নজির কম। তবে তৃতীয় ম্যাচে অপ্রতিরোধ্য ইতালিকে
দেখা গেছে বরাবরই। উরুগুয়ের বিপক্ষে দুর্বার ফুটবল খেলে ভক্তদের আশ্বস্ত
রাখতে চাই আমরাও। বুফন বলেন, প্রয়োজনে আমরা মাঠে দ্রুত ফরমেশন বদলে খেলতে
সক্ষম। আমাদের দলে এমন দক্ষ ফুটবলার রয়েছে বেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়
নিয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে উরুগুয়ে শিবিরেও। কোচ অস্কার তাবারেজ বলেন,
শক্তিধর দল ইংল্যান্ডকে সাফল্যের সঙ্গে সামাল দিয়েছি আমরা। ইতালির বিপক্ষে
আরও ক্ষুরধার উরুগুয়েকে দেখতে পাবেন সবাই। গ্রুপের দুই ম্যাচে ৪-১-৪-১
পদ্ধতির সতর্ক ফুটবল খেলেছে ইতালি। তবে আজ ৩-৫-২ কৌশলে খেলতে দেখা যেতে
পারে তাদের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেননি উরুগুয়ের চোটগ্রস্ত অধিনায়ক
দিয়েগো লুগানো। আজও তার খেলার সম্ভাবনা কম। চোটের কারণে আজ ইতালি কোচ
প্রানদেলি দলে পাচ্ছেন না গত দুই ম্যাচে ইতালির মাঝমাঠে সেরা তারকা
ড্যানিয়েল ডি রোসিকে। গ্রুপে ইংল্যান্ড ও কোস্টারিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচে
দলের সর্বাধিক ২১২ সফল পাস দেখান রোসি। গ্রুপে শুরুর দুই ম্যাচে খুঁত
দেখা গেছে ইতালির আক্রমণেও। দুই ম্যাচে ইতালি তারকারা অফসাইডের ফাঁদে পড়েন
১৮ বার। তুলনায় নিখুঁত আক্রমণের পরিসংখ্যান উরুগুয়ের। কোস্টারিকা ও
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে উরুগুইয়ানরা প্রতিপক্ষ গোলবারে নিখুঁত শট
নিয়েছে পাঁচবার। এর তিন শটে গোল আদায় করে উরুগুয়ে। আজ দর্শকদের আলাদা নজর
থাকবে মারিও বালোতেলি ও লুইস সুয়ারেজের দিকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতালির
জয়সূচক গোলটি পান বালোতেলি। আর আসরে দু’ম্যাচে প্রতিপক্ষ গোলবারে ইতালি দলে
সর্বাধিক ৬ বার শট নিতে দেখা গেছে এ মিলান স্ট্রাইকারকেই। দক্ষিণ আফ্রিকায়
২০১০’র বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে নামার পথে উরুগুয়ে স্ট্রাইকার সুয়ারেজ পান ৩
গোল। আর এবারের বিশ্বকাপ সুয়ারেজের কাছে এ পর্যন্ত রূপকথার মতো। আসর শুরুর
মাত্র ২৮ দিন আগে হাঁটুতে বড়সড় অস্ত্রোপচার নিতে হয় এ লিভারপুল
স্ট্রাইকারকে। এতে তার এবারের বিশ্বকাপ খেলা নিয়েই ছিল সন্দেহ। তবে
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেই সুয়ারেজ দেখান জোড়া গোলের ভেলকি। আর
ইনজুরিফেরত সুয়ারেজের নৈপুণ্য দেখে সরগরম সংবাদমাধ্যম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে
সুয়ারেজ ডোপ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন কিনা, প্রশ্নে তোলে ইংলিশ মিডিয়া।
পরস্পর মোকাবিলায় হারজিতে এগিয়ে লাতিন দল উরুগুয়েই। এ পর্যন্ত ৯ মোকাবিলায় দুই হারের বিপরীতে উরুগুয়ে জয় পেয়েছে ৩ বার। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে দল দু’টি সর্বশেষ মুখোমুখি হয় ব্রাজিলে গত বছর কনফেডারেশন্স কাপে। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের ১২০ মিনিট শেষ হয় ২-২ গোলের সমতায়। পরে ৩-২ ব্যবধানে ইতালি সাফল্য পায় টাইব্রেকারে। আর বিশ্বকাপে লাতিন আমেরিকার প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় বরাবরই দুর্জয় দেখা গেছে ইতালিয়ানদের। বিশ্বকাপে ১৯ মোকাবিলায় লাতিন প্রতিপক্ষের কাছে ইতালি হার মেনেছে মাত্র তিনবার। হার তিনটি দূর অতীতের ঘটনা। ১৯৭০ ও ১৯৭৮’র আসরে ইতালিয়ানরা হার মানে দুর্বার দল ব্রাজিলের কাছে। ইতালির অন্য হারটি ১৯৬২’র বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে স্বাগতিক চিলির বিপক্ষে। আর বিশ্বকাপের দুই সাক্ষাতে ইতালির বিপক্ষে উরুগুয়ের পরিসংখ্যানটা লাতিন দলটির ভক্তদের জন্য ভয়ের। বিশ্বকাপে ইতালির বিপক্ষে উরুগুয়ের ১ ড্র ও ১ হার। আর এ দুই ম্যাচে উরুগুয়ে গোলের দেখা পায়নি একবারও।
সম্ভাব্য একাদশ
ইতালি: বুফন (গোলরক্ষক), বোনুচ্চি, বারজালি, কিয়েলিনি, দারমিয়ান, ডি সিলিও, পিরলো, ভেরাত্তি, মার্কিসিও, ইম্মোবাইল ও বালোতেলি।
উরুগুয়ে: মুসলেরা (গোলরক্ষক), পেরেইরা, গিমেনেস, গোদিন, ক্যাসেরেস, ম্যাক্সি পেরেইরা, গারগানো, রদ্রিগেস, আরেভালো, সুয়ারেজ ও কাভানি।
No comments